ভালোবাসি তোমায়

ভালোবাসি তোমায়

চারপাশে ঘোর অন্ধকার।আজ আকাশে চাঁদের আলো নেই।চাঁদ মামা মেঘের আড়ালে মুখে লুকিয়েছে।আমি হুসাইন।অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।রাতের বেলা একলা হাঁটতে আমার খুব ভালো লাগে। মধ্যরাতে রাস্তায় কোন যানবাহন থাকেনা।থাকেনা মানুষের কোলাহল।নিরব শহর।এই সময় হাঁটার মজাটাই আলাদা।হুমায়ন আম্মেদের হিমু গল্পের নায়ক হিমু হলুদ পান্জাবি পড়ে খালি পায়ে রাস্তায় বেড়িয়ে যেতো।আমার হিমু হবার ইচ্ছে নেই শুধুমাএ রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতেই হাঁটতে আসা।আজ ৪দিন যাবৎ হাঁটা শুরু করেছি।
সামনে কিছু একটা দেখে আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।সাদা পোশাক পরিহিত একজন আমার থেকে কিছু দুরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ঠিক এই মূহুর্তে বুঝতে পারছিনা সামনে দাঁড়ানো এটা মানুষ নাকি কোন পরী নাকি ভূত।মাথার চুলগুলো কোমড় পর্যন্ত নেমে পড়েছে।ল্যামপোষ্টের আলোয় মনে হচ্ছে কোন মেয়ে তবুও কিছুটা ভয় করছে।আস্তে আস্তে পা ফেলে এগিয়ে গেলাম।কাছে গিয়ে ডাক দিলাম
:-কে আপনি?
আমার কথা শুনে মেয়েটি আমার দিকে ঘুরে তাকালে।কী অপুর্ব মিষ্টি চেহারা।প্রথম দেখাতেই আমি ক্রাশ খেলাম।
:-প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমি বাবাকে বলে আপনাদের সব টাকা দিয়ে দিবো।যত টাকা চান তত টাকাই দিবো।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।(মেয়েটি)
এবার আমি পুরোপুরিভাবে শিউর হলাম এটা একটি মেয়ে।তবে মেয়েটির এমন কথা বলার মানে বুঝলাম না।তবে মেয়েটার মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পারলাম।
:-কী হয়েছে আপনার?আর আমি আপনার থেকে কেনো টাকা নিবো?(আমি)
মেয়েটি কী যেনো ভাবলো তারপর হাত ধরে সামনের দিকে দৌঁড়ানো শুরু করলো।মেয়েটির হাতের স্পর্শে আমার মধ্যে শিহরণ জেগে গেলো।আমার হঠাৎ কীহলো জানিনা আমিও মেয়েটির সাথে সাথে দৌঁড়াচ্ছি।কিছুদুর দৌঁড়ে আসার পর মেয়েটি থামলো।
:-আমাকে একটু হেল্প করেন প্লিজ।আমি খুব বিপদে পড়েছি।(মেয়েটি)
:-কিসের বিপদ?(আমি)
:-কিছু লোক আমাকে টাকার জন্য কিডন্যাপ করেছে। আমার বাবার কাছে মোট অংকের টাকা দাবি করছে।টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকী দিয়েছে।
বুঝলাম মেয়েটি কোন বড় ঘরের সন্তান।বড় ঘরের সন্তান নাহলে কিডন্যাপাররা কিডন্যাপ করেনা।
:-আপনি আমার কাছে সাহায্য চাইছেন এমনতো হতে পারে আমি ওই কিডন্যাপার দলের একজন।
মেয়েটির আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।দ্বিতীয় বারের মত মেয়েটির উপর ক্রাশ খেলাম।ভ্রু কুচকে তাকালে মেয়েদের সৌন্দর্য তিনগুন বেড়ে যায় সেটা আগে শুধু শুনেছিলাম আর আজ বাস্তবে দেখলাম।
:-আপনি ওদের দলের লোক হলে আমার সাথে এভাবে দৌড়াতেন না।তাছাড়া আপনার চেহারায় লেখা নেই আপনি কিডন্যাপার হতে পারেন।
কী অদ্ভুদ কথা।মানুষের চেহারায় কী লেখা থাকে কে কিডন্যাপার আর কে ভালো মানুষ।কী জানি।মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়।
:-আপনার বাসা কোথায়?(আমি)
:-রাজশাহী।(মেয়েটি)
:-এতদুর আসলেন কী করে?
:-এতদুর মানে?এটা কোন জায়গা?
:-কুষ্টিয়া।
:-এতদুর আমাকে লোকগুলো নিয়ে এসেছে।আমি কী করে বাড়ি ফিরবো।হু হু হু হু
আমার কথা শুনে মেয়েটি কান্না শুরু করে দিলো।আমি ধমক দিয়ে বললাম
:-চুপ করেন।আপনার নাম কী?
:-মনি।
:-আপনাকে কোথা থেকে কিডন্যাপ করেছে?
:-আমি ভার্সিটি থেকে ফিরলাম তখন।
:-ও।
:-আপনার ফোনটা একটু দিবেন আমি বাসায় ফোন করবো।
আমি ফোন বাড়িয়ে দিলাম মেয়েটির দিকে।
মনি ওর বাড়িতে কথা বলার পরে ফোনটা আমাকে আবার ফিরিয়ে দিলো।
:-কী বললো বাসার সবাই?(আমি)
:-বললো নিরাপদে থাকতে আব্বু আম্মু এখনি বের হচ্ছে। (মনি)
:-ভালো।
:-রাজশাহী থেকে আসতে কত সময় লাগতে পারে?
:- এই ধরুন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা।
:-এত সময়?
:-হুম।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমার চোখ কপালে ওঠলো।রাত ১টা বেজে গেছে খেয়ালই করিনি।আজ বাসায় গেলে আমার কপালে শনি আছে সেটা বুঝতে পারছি।কিন্তু রাতের বেলা এই মেয়েটিকে কোথায় রাখি।
:-কী ভাবছেন?(মনি)
:-আমাকে বাসায় যেতে হবে।আরেকটু পরে গেলে আম্মু আমাকে বাসায় ঢুকতে দিবেনা। (আমি)
:-তাহলে চলুন।
:-চলুন মানে?আপনিও কী আমার সাথে যাবেন?
:-হুম।নাহলে আমি এই রাতের বেলা কী রাস্তায় থাকবো?
:-আপনাকে যদি এখন সাথে করে বাসায় নিয়ে যায় তাহলে আম্মু আমাকে মেরে ফেলবে।
:-আপনি কী আপনার আম্মুকে ভয় পান?
:-হুম।
:-তাহলে আপনার আব্বুকে বলে সবকিছু মেনেজ করুন।
:-আব্বুকে বললো?তাকেতো আরো বেশি ভয় পাই।
:-তাহলে এখন কী হবে?
:-আপনাকে রাস্তায়ই থাকতে হবে।
আমার কথা শুনে মেয়েটি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
:-থামুন।দেখছি কী করা যায়।
আমার ধমক শুনে মনি চুপ হয়ে গেলো।কী করবো মাথায় কিছু ঢুকছেনা।মেয়েটিকে একলা রাস্তায় রেখে যেতেও পারছিনা।ধ্যাত কেনো যে আজ হাঁটতে বের হয়েছিলাম।
অনেক ভেবে চিন্তেু মনিকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম।বাসায়তো আগে যাই পরে যা হবার হবে।
বাসায় দরজায় সামনে গিয়ে দেখি ভিতর থেকে দরজা আটকানো।বাইরে থেকে বেল বাঁজালাম।আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে আম্মু একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার মনির দিকে তাকাচ্ছে।এদিকে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
মনি গিয়ে আম্মুর পা ধরে ছালাম করবো।আম্মু ভদ্রতার খাতিয়ে মনির মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করলো।
:-আম্মু ও মনি।কিছুলোক ওকে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছে।(আমি)
আমার কথা শুনে আম্মু কী জানি ভাবলো তারপর মনিকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।আমি জানতাম আম্মু আমার কথা বিশ্বাস করবে এতটুকু বিশ্বাস ছিলো।আমি দরজা আটকিয়ে পিছু পিছু গেলাম।আম্মু ড্রয়িংরুমে মনিকে বসিয়ে রেখে আব্বুকে ডাকলো।আব্বুও আসলেন।আমি ঝড়ের আভাস পাচ্ছি।জানিনা আজ আমার কপালে কী আছে।
:-আন্টি আমাকে প্লিজ আজকের রাতটা আপনাদের বাসায় থাকতে দিন।আমি খুব বিপদে পড়েছি।আব্বু আম্মু রওনা দিয়েছে তারা আসলেই চলে যাবো।(মনি)
কথাগুলো বলে মনি কাঁদতে শুরু করলো।মনিকে কাঁদতে দেখে আব্বু বললো
:-চুপ করো মামনি।তোমার যতদিন ইচ্ছে এখানে থাকতে পারো আমাদের কোন সমস্যা নেই।(আব্বু)
হু দরদ কত!আমি একদিন রাত করে বাসায় ফিরলে কত বকা দেয় অথচ বাইরের একটা মেয়েকে কত আদর দেখাচ্ছে।আমার কেমন জানি হিংসে হচ্ছে।
:-আন্টি আমার খিদে পেয়েছে।(মনি)
কী মেয়েরে বাবা!অপরিচিত একটা বাড়িতে এসে নিজে থেকেই খেতে চাচ্ছে?কোন লজ্জা নেই।
:-তুমি বসো আমি এখনি খাবার আনছি।হুসাইন তুই আমার সাথে আয়।(আম্মু)
আমি আম্মুর পিছু পিছু কিচেনে গেলাম।
:-তোর জন্য যে খাবার আছে সেটা মনিকে দিচ্ছি আর তুই ফ্রিজ থেকে কিছু একটা খেয়ে নে।(আম্মু)
:-ঠিক আছে।(আমি)
ধ্যাত কী হচ্ছে এসব।আমার দিকে কারো নজরই নেই।যত নজর ওই মনির দিকে।ফ্রিজ খুলে দুইটা আপেল খেলাম।ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি আম্মু পরম যত্নে মনিকে খাওয়াচ্ছে।মনিকে দেখে মনে হচ্ছে ওর খুব ক্ষুদা লেগেছে।
খাওয়া দাওয়া শেষে।
:-মনি আমার আমার সাথে ঘুমাবে।হুসাইন তুই গিয়ে ঘুমা।তুমি(আব্বুকে) পাশের রুমে ঘুমাও।(আম্মু)
আম্মু মনিকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো।আমি নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।চোখে ঘুম নেই।শুধু মনির মায়াবী মুখ ভেষে ওঠছে।এই প্রথম কোন মেয়েকে আমার এত ভালো লাগলো।এর আগে কোনো মেয়ের জন্য এতটা ভালোলাগা মনের মধ্যে কাজ করেনি।আমি সবসময় স্বপ্নে এমন একটা মেয়েকেই দেখেছি।নিজের কাছের মানুষ হিসেবে এমন একটা মেয়েকেই চেয়েছি।আমি জানিনা প্রথম দেখাতে ভালোবাসা হয় কীনা তবে আমি মনিকে ভালোবেসে ফেলেছি। রাতে মনিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছি।
সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।আম্মু আমার রুমে এসে হাতে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিলো।
:-বাজার থেকে মাংশ নিয়ে আয়।(আম্মু)
:-আব্বুকে পাঠাও আমি যেতে পারবোনা।(আমি)
:-কী বললি তুই?আবার বল কথাটা?
:-না কিছু বলিনি। দাও যাচ্ছি।
আম্মুর কাছ থেকে টাকা আর ব্যাগ নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।গেটের কাছে আসতেই মনি পিছন থেকে ডেকে বললো
:-আমিও যাবো।(মনি)
:-আপনাকে যেতে কে বলেছে?(আমি)
:-আন্টির থেকে অনুমতি নিয়েছি।
:-কী আর করার আম্মু যখন বলেছে আপনাকে নিয়ে যেতেই হবে।চলুন

মনিকে নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।মনি আর আমি পাশাপাশি হাঁটছি।মনি চারপাশ দেখছে আর আমি ওকে দেখছি।রাস্তার মানুষগুলো আমাদের তাকিয়ে দেখছে।কারণ এর আগে কখনো কোন মেয়ের সাথে আমাকে দেখেনি।
:-আপনি কী প্রতিদিনই বাজারে আসেন?(মনি)
:-হ্যাঁ।বাসার কাজগুলো আমিই করি।(আমি)
:-ওয়াও।জানেন আমারো বাজারে যেতে খুব ভালো লাগে।
রাস্তায় আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হলো।
:-কোথায় যাচ্ছিস এখন?(শিপন)
:-ওই তোর চোখ গেছে না আছে? দেখছিস বাজারের ব্যাগ হাতে তারপরেও এই কথা জিঙ্গেস করছিস।(আমি)
:-তোকে দেখে বিশ্বাস হচ্ছেনা তুই বাজারে যাচ্ছিস।
:-কেনো বিশ্বাস হচ্ছেনা তোর?
:-এর আগে কখনো দেখিনিতো তাই।
:-দোস পরে কথা হবে এখন যাইরে।
:-মেয়েটা কে?(আমার কানের কাছে আস্তে করে বললো)
:-তোদের ভাবি।
আমি কথাটা একটু জোরেই বলে ফেলেছি।মনি আমার কথা শুনে রাগী একটা লুক নিয়ে আমার দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললোনা।
:-বিকেলে মামার ক্যান্টিনে আসিস।
শিপন চলে গেলো।আমি আর মনি আবার হাঁটতে শুরু করলাম।
:-ওই আপনি এত মিথ্যাবাদী কেনো?(মনি)
সারছে!যেটার ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো।শিপন তোকে আমি আজ খেয়ে ফেলবো।মেয়েটার কাছে একটু ভালো সাঁজবো সেটার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেলো।
:-আরে মিথ্যা বলিনিতো।আমি বাজারে আসি। আমার ওই ফ্রেন্ড মিথ্যা বলেছে।(আমি)
:-আমি বাজারে আসার কথা বলছিনা।
:-তাহলে?
:-আমি আপনার বউ হলাম কবে?
এবার আমার হাতে হাড়ি ভাঙ্গার অবস্থা।
:-বাজারের মধ্যে চলে এসেছি।
কথাটা ঘুরিয়ে ফেললাম।
বাজার শেষ করে ফেরার সময় একটা রিক্সা নিলাম।মনি আমার পাশে বসেছে।রিক্সাতে বসে মনি চারপাশ দেখছে আর ওর অবাধ্য খোলা চুলগুলো উড়ে এসে আমার মুখে পড়ছে।আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি।মনি যখনি আমার দিকে তাকাচ্ছে তখনি আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছি।মনির প্রেমে ভালোভাবে ফেসে গেছি সেটা বুঝতে পারছি।
বাসার সামনে এসে রিক্সা থাকলো।রিক্সা থেকে নেমে বাসার মধ্যে গেলাম।বাসায় ঢুকে দেখি অনেক মানুষজন এসেছে।মনি দৌঁড়ে একটা মহিলার কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলো।বুঝলাম এরাই মনির বাবা মা।আমি ভিরতে গিয়ে কিচেনে বাজার রেখে নিজের রুমে চলে আসলাম।মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেলো।মনি চলে যাবে।মনিকে না দেখে আমি থাকতে পারবোনা।
:-হুসাইন বাবা এইদিকে আয়তো।(আব্বু)
আব্বুর ডাক শুনে বাইরে আসলাম।আব্বু মনির বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।তারা অনেক ধন্যবাদ জানালো।ওনাদের কথা বলা শেষ হলে আবার নিজের রুমে চলে আসলাম।
:-আপনার কী মন খারাপ?(মনি)
আমার রুমে এসে মনি বললো।
:-না।(আমি)
:-তাহলে এত চুপচাপ।
:-আচ্ছা একটা মানুষের কাছ থেকে যখন তার প্রিয় জিনিস হারিয়ে যায় তখন তার কেমন লাগে?
:- অনেক খারাপ লাগে।
:-আমারো ঠিক একই অবস্থা।আমার কাছ থেকে একটা প্রিয় জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে তাই মন খারাপ।
:-আপনি যা ভাবছেন তা সম্ভব নয়।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।সরি আমাকে ক্ষমা করবেন।
মনি চলে গেলো।মনি অন্য কাউকে ভালোবাসে এটা শুনে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেলো।জীবনের প্রথম কাউকে নিয়ে স্বপ্ব দেখলাম তাও সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।অনেক খারাপ লাগছে এখন।
মনি ওর বাবা মায়ের সাথে চলে গেলো।আমি ভদ্রতার খাতিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসলাম।মনি চলে গেলো সাথে আমাকে উপহার দিয়ে গেলো হাজারো কষ্ট।নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।একটুও ভালো লাগছেনা।বুক ফেটে কান্না আসছে কিন্তু কাঁদতে পারছিনা।ভুলটা আমার কেনো যে না জেনে মনিকে ভালোবাসতে গেলাম।মনি দেখতে অনেক কিউট আমার থেকে কত ভালো ভালো ছেলে ওর পিছনে লাইন দিয়ে আছে।আমিতো একটা আনস্মাট ছেলে।আমাকে কেনো মনি পছন্দ করবে।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখি শিপন ফোন দিয়েছে।
:-দোস কই তুই?(শিপন)
:-বাসায়।কেনো?(আমি)
:-আজ বিকেলে একটা ক্রিকেট ম্যাস আছে।৩টায় কলেজে চলে আসিছ।
:-নারে আজ আমার শরীলটা ভালো নেই।আমি আজ যাবোনা।
:-কী হয়েছে তোর?
:-কিছুটা।তুই সন্ধায় একবার বাসায় আসিছ।
:-আচ্ছা।
কোন কিছুই ভালো লাগছেনা।শুধু মনির মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠছে।দুইদিনের মধ্যে মনিকে এতটা ভালোবেসে ফেলবো বুঝতেই পারিনি।আচ্ছা মানুষ নাকি জীবনের প্রথম প্রেম ভুলতে পারেনা তবে কী আমি মনিকে কোনদিন ভুলতে পারবোনা?হয়তোবা পারবো হয়তোবা না।যাদের ৩,৪ কিংবা ৫ বছরের রিলেশন ভেঙ্গে যায় তাহলে তাদের কেমন লাগে সেটা ভাবতেই গা শিউরে ওঠছে।
আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হলাম।তবে রাতের আধারে যখন একা থাকি তখন মনির কথা ঠিকই মনে পরে।তখন অনেক কষ্ট হয়।মনি চলে গেছে আজ ৪দিন হচ্ছে।প্রথমদিন বাসায় পৌঁছে মনির বাবা আব্বুর নম্বরে একবার ফোন দিয়েছিলো তারপর আর দেয়নি।মানুষ এমনি। আজ আপনি যার উপকার করবেন দুদিন পর সে ঠিকই ভুলে যাবে(সবাই এক না)।মনির এত বড় একটা উপকার করলাম নিজেতো একটা ফোন দিতে পারতো কিন্তু দেয়নি।হয়তো সময় পায়নি।ওর বিএফের সাথে কথা বলায় বিজি থাকে।লাইফে কখনো প্রেম করিনি ভেবেছিলাম বিয়ের পর একবারে বউকে ভালোবাসবো কিন্তু তার আগেই মনির প্রেম পড়ে গেলাম।আসলে কথাটা সত্যি প্রেম ভালোবাসা কখনো বলে আসেনা।হঠাৎই জীবনে চলে আসে।একটি মেয়ের ভালোবাসা পারে একটি ছেলের লাইফটাকে গড়ে দিতে আবার অন্যদিকে সেই মেয়েটাই পারে একটা ছেলের গোছানো জীবনকে নষ্ট করে দিতে।
বিকেলবেলা বেলকনিতে বসে আছি এমন সময় একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলো।আমি রিচিভ করলাম।
:-আসসালামুআলাইকুম।(আমি)
:-ওলাইকুমআসসালাম।কেমন আছেন?
একটা মেয়েলি কন্ঠ।আমি আবার ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলাম নম্বরটা চিনি কীনা।না চিনিনা।তবে মেয়েটার কন্ঠটা অনেক সুইট।
:-কে আপনি?
:-আমাকে চিনতে পারছেন না?
:-না।পরিচয় দিন।
:-না চেনারি কথা।
:-পরিচয় দিন নাহলে আমি ফোন রেখে দিচ্ছি।
:-এইযে মিঃ হুসাইন এত ভাব দেখান কেনো আপনি?
:-আমি মোটেও ভাব দেখাই না।আমি ফোন রাখছি।
:-এই না ফোন রাখবেন না।আমি মনি।
মনি!মনি নামটা শুনেই বুকের হাটবিট বেড়ে গেলো।
:-কীহলো চুপ করে আছেন যে?(মনি)
:-এতদিন পর কী মনে করে ফোন দিয়েছেন?(আমি)
:-আপনার খোজ খবর নেওয়ার জন্য।
:-আমি ভালো আছি। আবার বাসার সবাই ভালো আছে।আর কিছু জানার আছে?
:-হ্যাঁ।আরো অনেককিছু জানার আছে।
:-যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন আমার কাজ আছে।
মনির সাথে কথা বলতে কেমন জানি কষ্ট অনুভব করছি।বেশিক্ষণ কথা বললে কষ্টটা তিন গুন বেড়ে যাবে তাই তাড়াতাড়ি ফোন কাটতে হবে।
:-আপনার কিছু জানার নেই?(মনি)
:-না।(আমি)
:-আমার উপর রেগে আছে?
:-আমি কারো উপর রাগ করিনা।তাছাড়া প্রিয় মানুষগুলো ছাড়া অন্যকারো উপর রাগ করে থাকা যায়না।ভালো থাকবেন বাই।
আমি ফোন কেটে দিলাম।মনির সাথে কথা বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। এই কয়দিনে কিছুটা হলেও ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু আজ কথা বলে আবার সবকিছু মনে পড়ে গেলো।
ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠলো।মেসেজটা দেখে আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।মনির নম্বর থেকে ছোট্র একটা মেসেজ এসেছে।
“”আমি তোমাকে ভালোবাসি হুসাইন।সত্যিই ভালোবাসি। সেদিন তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম।আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো।আমি প্রতিদিনই তোমার ফোনের অপেক্ষা করেছি কিন্তু তুমি ফোন দাওনি তাই আজ নিজে থেকেই ফোন দিলাম।আজ বুঝলাম আমার প্রতি তোমার মনে ঘৃনা জন্নে গেছে।তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি।পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।”””
মেসেজটা পড়ে তাড়াতাড়ি ফোন ব্যাক করলাম। প্রথমবার রিং হতেই রিচিভ হলো।
:-তোমাকে এখন হাতের কাছে পেলে ঠাস করে দুইটা থাপ্পর দিতাম।আগে বলোনি কেনো আমায় ভালোবাসো।জানো এই কয়দিন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি।আমিও তোমাকে বড্ডা ভালোবাসি।(আমি)
:-তাহলে এসবই চলছে দুজনার মাঝে।দাঁড়াও তোমার আম্মুকে ফোন দিয়ে এখনি বলছি সবকিছু।
এইযা মনির আম্মু ফোন ধরেছে।২মিনিট আগেইতো মনি এই নম্বর দিয়ে ফোন দিলো।অনেক লজ্জা লাগছে এখন।
:-না মানে আন্টি।কিছুনা।আমি ভেবেছিলাম মনি ফোন ধরেছে।মনি কোথায়?
:-ও ছাদে চলে গিয়েছে।
:-ওর কাছে ফোনটা একটু দিন।
:-আচ্ছা দিচ্ছি।তোমাদের বাসা থেকে আসার পর মনি সবসময় মন খারাপ করে বসে থাকে।আমি আজ সবকিছু জিঙ্গেস করেছি।তারপর তোমাকে ফোন দিতে বললাম।
:-(চুপ করে শুধু শুনছি)
:-আমি শুধু ওর মা নই ভালো একজন ফ্রেন্ডও তাই মনি কোনকিছু আমার কাছে লুকায় না।যাইহোক তোমার আম্মুরা সবাই কেমন আছে?
:-জ্বি ভালো।আপনি কেমন আছেন?
:-ভালো। এই নাও মনির সাথে কথা বলো।
কিছুক্ষণ নিরবতা।নিরবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম
:-চুপ করে আছেন যে?(আমি)
:-কিছু বলার নেই।(মনি)
:-সত্যিই কিছু বলার নেই?
:-বললামতো না।
:-তাহলে ফোন রেখে দিলাম।আমাকে আর কোনদিন খুজে পাবেনা।
:-ওই ফোন রাখলে তোকে আমি মরে ফেলবো।এই কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছে আবার বলছে ফোন রেখে দিবো।
:-সত্যিই আমাকে ভালোবাসো?
;-না মিথ্যা ভালোবাসি।
:-এই তোমার ইমু নম্বরটা দাওতো।
:-কী করবে?
:-অনেকদিন হলো তোমাকে দেখিনা।
:-আমার এই নম্বরেই ইমু খোলা।
আমি ফোন কল কেটে নেট ওপেন করে ইমুতে গিয়ে ফোন দিলাম।ওপাশ থেকে রিচিভ হলো।
:-ওই তোমার চোখে পানি কেনো?(আমি)
:-এমনিতেই।(মনি)
:-এখনি মুছে ফেলো।
:-তুমি মুছিয়ে দাও।
:-আমি কাছে থাকলেতো দিতামই।
:-হুম।
মনি ওর ওড়না দিয়ে চোখ মুছে নিলো।
:-ভালোবাসি।
:-কাকে?
:- যেই পাগলটার সাথে কথা বলছি।
:-আমিও আমার পাগলিটালে ভালোবাসি।
:-এই তোমার মাথার উপর তেলাপোকা।
আমি তাড়াতাড়ি মাথায় হাত দিলাম।আমাকে মাথায় হাত দিতে দেখে মনি হাঁসতে শুরু করলো।আমাকে বোকা বানানোর জন্য মনি একথা বলেছে বুঝতে পারলাম।মনি হাঁসছে।সেই ভুবন ভোলানো হাঁসি।আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি সেই হাঁসি।

…………………………………………..সমাপ্ত…………………………………………

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত