সুপ্ত ভালোবাসা

-এই ছেলেরা হচ্ছেটা কি এখানে?
-কইইই….না তো কিছু না।
-আবার মিথ্যা বলে!দিমু একটা..!
-না মানে কিছু না।আমরা যাই আপু!
-ঠিক আছে।আর ঘুর ঘুর করবে না এখানে!
.
কি মেয়েরে বাবা! এমন মেয়ে জীবনে দেখি
নাই।ছেলেদের ও মারতে চায়!তবে আমি পিছনে
ছিলাম।চুপচাপ শুধু শুনছি।ক্যাম্পাসে এই একটা মেয়ে
যারে দেখলে ভয় লাগে আমার! রাজু কথা
বলছিলো। আর আমি পিছনে ছিলাম। এমন
মেয়েকে বিশ্বাস নেই! যে কোন সময় ধুমধাম
শুরু করে দিতে পারে! তাই আগেই সাবধান হয়ে গেছি!
.
আসলে রাজু এই ডিপার্টমেন্টের এক মেয়েরে
পছন্দ করে! দেখতে আসছে আমারে নিয়া! এটাও
জেনেও যে রোদেলা মেয়েটারে আমি ভয়
পাই! দেখলেই মনে হয় দৌড় দেই।কিন্তু লজ্জার
ভয়ে দিতে পারি না। যদিও আমরা সেম ব্যাচ। কিন্তু
ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন! রাজুর বাচ্চা আর লোক পায় না।
আমারেই আনবো টেনে হিচরে! কেউ আসতে
চায় না এ মেয়ের জন্য! কারন সবাই ভয় পায়! তবে
আমি একটু বেশি! যেখানে বাঘের ভয় সেখানে
সন্ধ্যা হয়! এখন কত অপমান করে কথা শুনিয়ে
দিলো!
.
-সাদিইক্কা চল যামু আবার!
-না দোস্ত তুই যা।শরীর টা ভালো লাগছে না!
-এসব কিছু না।সব তোর ছলনা।তুই সেই মেয়ের
ভয়েই এমন করতাছোস!
-দোস্ত বুঝেও কেন বুঝিস না?
-তুই যাবি কিনা বল?
-এবার গেলে নিশ্চয় কেলানি দিবো।তখন কি করবি?
-এহহহ! কইলেই হলো? আমি কম কিসে?
-হ।তা তো দেখায় গেছে।পরে বিড়াল হয়ে যাস!
-দোস্ত তুই ও বলিস এ কথা!
-হইছে, ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করিস না!
.
ভালো বন্ধু হওয়াতে না করতে পারি না।মাঝে মাঝে
রাজুর প্রতি রাগ হয়! কেন যে ওই ডিপার্টমেন্টের
লগে সম্পর্ক করতে গেলো! না ভুল কইলাম।
মেয়ের সাথে রিলেশন করতে চায়! একটা
মেয়ের কারনেই যত গন্ডগোল! মেয়ে তো
নয় যেন মহিলা গুন্ডি! আর কাপড় চোপড়ও পড়ে
একদম পোলা পোলা টাইপ! তবে শালীনতা বজায়
রেখে! কই রানী গোলাপি রংয়ের শাড়ি পড়বো
সেখানে পড়ে…!  মেয়েটাকে শাড়িতে মানাবে
অনেক!
.
-তুমি ফোনে কথা বলনা কেন?
-না মানে লজ্জা করে! প্রথম প্রথম হবেই এমন!
-শোনো রিমু, তুমি কিন্তু কথা বলবা। না বললে কষ্ট
পাই!
-শালা রাখ তোর কষ্ট।
-কি হয়ছে সাদিইক্কা! একটু দেখা করতে এলাম
এখানেও এমন করতাছোস!
-শালা,ওই দিকে দেখ।রোদেলা আসছে। চল
কেটে পড়ি!
-হালা,আগে কইবি না।যাই জানু! তাড়াতাড়ি বাগ।নয়তো
এবার
কেলানি নিশ্চিত!
.
-ওই রাজু দাড়া!
-কেন?
-এইডা আমাগো ভবন!
-ওহ।চল জিরিয়ে নেই!
-কি দৌড়টাই না দিলাম
-মেয়েটা আসার সময় পেলো না।
-চল পানি খেয়ে আসি!
-হুম চল।ভয়ে আর দৌড়ে গলা শুকিয়ে গেছে!
-তোর জন্যই হয়ছে!
.
-কিরে সাদিইক্কা মুখ কালো করে বসে আছিস
কেন?
-দোস্ত ডায়রিটা হারায় গেছে!
-কোনটা?
-রোদেলার নামে যেটাতে সব লিখা।
-কস কি?তাইলে আমার প্রেম কি হবে?
-দুর শালা,তুই আছোত তোর প্রেম নিয়া।
-তাইলে..??
-আমি ভাবতেছি সামনে পাইলে রোদেলা কি
করবো ওইডার কথা!
-কেন?
-শালা,ডায়রিতে রোদেলার নামে যা লিখা আছে তার
নাম হইছে “ক্যাম্পাসের লেডি ডন”
-কি কইতাছোস এই ডা তুই?
-ঠিকই কইতাছি।
-তাইলে আমার এই প্রেমটাও শেষ?
-মনে হয়!
-রাজু মুখ কালো করে চলে গেলো!বেচারা যাও
একটা পাইছিলো সেটাও গেলো!আর আমার নাই!
কাজেই চিন্তাও নাই।তবে চিন্তা হইতেছে
রোদেলারে নিয়া!আমারে পাইলে নিশ্চিত কেলানি
দিবো!আপাতত কদিন ক্যাম্পাসে আসা যাবে না!
.
-ঠাসসসসস!
-কে মারলো?চেয়ে দেখি রোদেলা হেটে
যাচ্ছে!
যা ভাবছিলাম তাই হইলো।মানে ডায়রিটা রোদেলার
কাছে পৌছে গেছে! সাতদিন পর ক্যাম্পাসের মাঠে
বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। উল্টো দিক করে বসে ছিলাম
যাতে রোদেলার চোখে না পরি! কিন্তু এটা কি
হলো? কলার ধরে টেনে তুলে ঘুরিয়েই একটা
মেরে দিয়ে চলে গেলো! আর আমি গালে হাত
দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি! অবাক হচ্ছি এ জন্য
যে মেয়েটা আজ রানী গোলাপি রংয়ের শাড়ি
পরে ক্যাম্পাসে এসেছে! তার মানে সব কিছু
পড়েছে মেয়েটা।ডায়রিতে লিখেছিলাম যে
তাকে শাড়ি পড়লে ভালো লাগবে।এটাও লিখা আছে
যে তাকে একটু একটু…! তার মানে হয়েই যাচ্ছে!
.
তাহলে পেলাম খুজে! ক্যাম্পাসের সামনে ইট
পাথরে বানানো বেঞ্চ টাতে বসে আছে
রোদেলা।খুজতে খুজতে হয়রান হয়ে গেছি।
এবার রাগ না ভাঙাতে পারলে আমার চিরকুমার থাকতে
হইবো! পাশে গিয়া বসি!
.
-এই রোদ(বলে হাত টা স্পর্শ করলাম)
-…(এক ঝটকাতে সরিয়ে দিছে হাত)
-এই রোদ এ দিকে তাকাও
-….?
-আমি কি চলে যাবো?
-…..?
-আচ্ছা যাচ্ছি….
বলেই চলে আসতে চাইলাম।আর পেছনের
কলারে টান অনুভব করলাম।ঘুরে তাকাতেই দু হাতে
কলারচেপে ধরে চোখে তাকিয়ে বলতে
লাগলো..
-ওই আমি লেডি ডন?
-হ্যা না মানে
-ওই ভালো করে বল
-শুধু এটায় পড়েছো?
-ওই কথা ঘুরাবি না!
-শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে(সুযোগ
নিলাম।কলার ছেড়ে দিছে।এবার লজ্জা পেতে শুরু করছে)
-তাই! আগে বলো নি কেন?
-ভয় পাইতাম যে তোমায়
-এখন পাও না বুঝি?
-না
-কেন?
-তুমি পটে গেছো
-ও রে শয়তান পোলা।কেমনে পটে গেছি বুঝলা?
-এই যে আজ শাড়ি পরে এসেছো রানী গোলাপি
রংয়ের! সাথে ম্যাচিং করে লাল নেল পালিশ!
-তাই বুঝি।যদি বলি পটে যায় নি?
-তবে অন্য মেয়ে খুজতে হবে!
-ওই কি বললি তুই? (কলার চেপে ধরে)
-না। বলছিলাম লেডি ডন আমারি থাক।তবে শাড়ি পড়ে বাঙালি মেয়ের সাজে….!