সারাদিনে একটা ফোন ও আসলো না। বারবার ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা মেসেজের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে রাত্রি। পুরো বাড়ি জুড়ে পায়চারি করছে।
নাওয়া খাওয়া একরকম বন্ধ তাঁর বললেই চলে। সব কিছু থেকে ও কী যেনো নেই। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রাত্রি। তাঁর বোন দোলনা আমের আচার নিয়ে এসে বললোঃ-
– রাত্রি, আয় আচার খাই। দেখ মা মাত্র বানিয়ে দিলো।
রাত্রি কোনো জবাব দিলো না। আবারো দোলনা বললোঃ-
– কী রে, মন খারাপ না কী? ডাকছি শুনিস না?
– খাবো না। তুমি খাও।
– ওরেহ বাপরে, মেয়ের রাগ দেখো। এই ছেমড়ি কী হইছে বল না?
– কিছু না।
– যাহ তোর রাগের গোষ্ঠী কিলাই। আমি একাই খাবো। পরে আবার বলিস না। আমি একা একা সব গিলি।
বলে দোলনা টিভির সামনে আচার নিয়ে চলে গেলো। আচার খেতে খেতে টিভি দেখা। আহ ব্যাপারটাই অন্যরকম। দেয়ালে হেলান দিয়ে মাত্র টিভির রিমোটটা হাতে নিলো দোলনা। এর মাঝেই রাত্রি আসলো।
এসেই সেই বাচ্চাকাচ্চা থাকাকালীন সময়ের মতো জড়িয়ে ধরে উঁ উঁ করে কাঁদতে লাগলো রাত্রি। দোলনার হাত থেকে আচারের বাটিটা পরে গেলো।
অবাক হয়ে দোলনা হয়ে বললোঃ-
– কী রে? কী হইছে? কাঁদছিস কেনো?
রাত্রি কেঁদেই যাচ্ছে দেখে দোলনা আবারো বললোঃ-
– লক্ষ্মী আপু আমার বল কী হইছে?
রাত্রি তবু ও কিছু বলছে না। দোলনা মনে করলো আচারের জন্য এভাবে কাঁদছে।
– আচারের জন্য এভাবে কান্না করতে হয়? আচার আমি খায় নি। কিন্তু তুই তো আচারের বাটিটাই ফেলে দিলি।
– আপু।
– হ্যাঁ আপু বল।
– আমাকে মনে হয় ও আর ভালোবাসে না।
– ও টা কে? তোর বলদ মার্কা জামাই?
– আপু! একটু সুযোগ পেলেই বলদ বলতে হয়?
– সরি বাপ। আচ্ছা যা আর তোর বলদ জামাইটাকে বলদ বলবো না। এবার কান্না থামা আর বল কী হইছে?
– আবারো বলদ বলছো কেনো?
– তোর জামাই একটা বলদ না।
– আবার!
– আচ্ছা এইবার প্রমিস আর বলদ বলবো না।
– আমি আছি আমার জ্বালায় আর তুমি কী না আমাকে নিয়ে মজা করো।
– তো বললেই তো হয়। তোর বলদ জামাই আবার কী করছে? এই দেখ আবারো বলদ বলে ফেলছি। জিহ্বার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেছে রে।
রাত্রি রেগে গিয়ে উঠে চলে যেতে চাইলে দোলনা হাতে ধরে বললোঃ-
– শুন, লোকে বলে বলদ ছেলে জামাই হিসেবে ভালো। বৌ যা বলে তাই শুনে।
রাত্রির রাগ এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো। কিন্তু রাগ ও দেখাতে পারছে না। অনেক দিন পর যে তাঁর বোনের সাথে খুনসুটি। বছরের শুরুতে একবার শ্বশুরবাড়ি গেলে আরেকবার বছরের শেষে আসে দোলনা।
রাত্রি বসে নীরব হয়ে বললোঃ-
– ও আর বলদ নাই আপু। আগে অফিস থেকে ফিরতো সময়মত। আর এখন কী সব খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি আসে। যে ছেলে সাধারণ টিভির সামনেই যেতো না সে আজ নাইট ক্লাবে যায়। সারাক্ষণ ফোন বিজি থাকে। কার সাথে কথা বলে আল্লাহ্ জানে। আমার সাথে কথা বলে না ঠিকমতো। যে ছেলে আগে আমার কথা ছাড়া এক পা ও নড়তো না সে তো চুল পরিমাণ কারণ নিয়ে ঝগড়া করতে ছাড়েই না বরঞ্চ আমাকে এখন প্রতিনিয়ত ধমক দেয়! আগে একটু বাপের বাড়ি চলে আসবো বলতেই ভয়ে জড়িয়ে ধরে রাখতো। আর এবার কী করলো? আমি আসলাম এক সপ্তাহ হয়ে গেলো একটা ফোন পর্যন্ত করলো না। ও আমাকে আর ভালোবাসে না আপু।
– কী বলিস? তোর বলদ জামাইটা এরকম হিরো মার্কা হলো কীভাবে? নিশ্চিত কোনো মেয়ের পাল্লায় পরছে। তোর কী হবে রে এবার?
– সেটাই তো। আমার কী হবে আপু এখন? একটা মুহূর্ত ও ওকে ছাড়া থাকতে পারছি না।
– এই না হলে বর। সাব্বাস সাব্বাস।
– এরকম করো কেনো? আমি মরি দুঃখে আর তুমি ভাসো হাসির সমুদ্রে। ভালো ভালো। যখন নিজের জামাই এমন হবে না। তখন বুঝবে জামাই এমন করলে কেমন লাগে।
– মু হা হা হা। তোর দুলাভাইয়ের সাথে আমি প্রতি ঘণ্টায় তিনবার ঝগড়া করি। কই দিনশেষে বাবুর মা বলে তো কাছে টেনেই নেয়। কিন্তু তোর জামাই বলদ। এইটারে দিয়া এসব হবে না।
– তুমি না আসলে একটা ডাইনি। না না ডাইনি না তুমি কচ্ছপ। কচ্ছপ ও না। তুমি হচ্ছো একটা বিষাক্ত সাপিনী। কোনো বিষয়ই তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না।
– রাগ করে লাভ নাই। শেষমেশ বলদটার কাছেই যেতে হবে। সময় থাকতে থাকতে যাও মনু। পরে আর সম্মানের সহিত যেতে পারবে না।
রাত্রি রাগে চিৎকার করলো। এক চিৎকারে সব ঠাণ্ডা। এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে। তবু ও শব্দ ফোন করছে না। রাত্রি মনে মনে ভাবছে। রাগ দেখিয়ে এসে বড় ভুল করে ফেলেছে। ঐ মানুষটার মনে আর ভালোবাসা নাই। হঠাৎ ফোন এলো! রাত্রি খুশিতে আত্মহারা হয়ে ফোন তাড়াহুড়ো করে তুললোঃ-
– হ্যালো।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– কেমন আছেন?
– কে?
– আপনি।
– আপনি কে? আচ্ছা রাত্রি কই? রাত্রিকে ফোনটা দিন তো।
– আমিই রাত্রি।
– তুই আবার সালাম দেয়া কবে থেকে শিখলি?
– এটা শিখার কী আছে? সালাম বুঝি দেয়া যাবে না?
– বাদ দে তো। শুন, তুই আর আসিস না। রাগ করে গেছিস তো গেছিস। আমি এখন স্মার্ট হইছি। কালকেই আরেকটা বিয়া করবো।
বলেই শব্দ ফোন কেটে দিলো। রাত্রি তারপর বারবার চেষ্টা করেই যাচ্ছে কিন্তু ফোন আর ঢুকছে না। রাত্রি আর শব্দকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
যা ছন্নছাড়া হয়েছে ছেলেটা। সত্যিই সত্যিই আরেকটা বিয়ে করে বসবে। সে ভয়ে রাত্রি পরের দিনই শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিলো। মনে মনে ঠিক করছে। আর শব্দকে নিজের মতো করে বেঁধে রাখবে না।
ছেলেটাকে একটু স্বাধীন হতে দিবে। আল্লাহ এবারের মতো ছেলেটাকে মানুষ করে দাও। বাড়িতে ঢুকতেই কারেন্ট চলে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
এই অন্ধকারের মাঝে হঠাৎ কেউ যেনো রাত্রিকে বাহুবন্ধি করলো! রাত্রি ভয় পেলো। তখনই পুনরায় লাইটগুলো জ্বলে উঠলো আর সবাই বলতে লাগলো, ” হ্যাপি ম্যারেজ এনিভার্সারি টু শব্দ এন্ড রাত্রি ”
রাত্রির বুঝার আগেই যেনো সব শেষ হয়ে গেলো। সবাই খাওয়াদাওয়া করে চলে ও গেলো। রাত্রি অবশেষে বললোঃ-
– এতো রাগ কোথ থেকে আসলো আপনার? আর তা ই বা গেলো কোথায়?
– চুপ থাক।
– এজন্য সবসময় তুই করে বলতে হবে?
– তুই কী আমার থেকে বয়সে বড় হবি?
– হইছে তো।
– কী হইছে?
– আর খবরদারী করবো না।
– ক্যান?
– জানি না।
– করবি।
– না।
– করবেন।
– না।
– করবেন।
– না।
– করবা যাও।
– না।
– এতো কথা কস ক্যান? করবি বলছি করবি, ঠিকাছে? খালি বেশি কথা বলে।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক