জীবনের এই চলার পথে, ঝরে পরে কত ক্লান্তি
 ক্লান্তি ক্লান্তি আর ক্লান্তি শুধু দিন শেষে সবার মুখে
 ফুটলে হাসি সকল কিছু দুরে অবশ্রান্তি”
 শুধু কাজ আর কাজ। বেলা তিনটা বেজে গেছে এখনও দুপুরের খাওয়া হয়নি। নাহ কিছু খাওয়া দরকার। পেট যদি অশান্তিতে থাকে তাহলে লাভ কি এত অশ্রান্তিত হয়ে। আজিজকে ডাকা উচিৎ।
 -এই আজিজ ভিতরে আসোতো…
 আমার ডাক শুনে আজিজ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসল।
 >স্যার ডাকলেন… (আজিজ)
 -হুম। শোনো আমি একটু খেতে যাব। আর কি কেউ আছে। থাকলে ৪টার দিকে এ্যাপয়েন্ট করো।
 >ওকে স্যার। স্যার…
 -হুম বলো…
 >আর একজন মহিলা আছে। অনেক দূর থেকে এসেছেন। তার সিরিয়াল আগে ছিল কিন্তু আসতে দেরি করছে। বেচারি আবার বাসায় যাবে। আপনি যদি একটু দেখে যেতেন…
 -না না এখন আর পারবো না। অপেক্ষা করতে বলো। তারা টাইম মেইনটেন করতে পারবে না তো আমরা কি করব।
 >আচ্ছা স্যার।
 বলেই চলে যেতে লাগল। মহিলা মানুষ আবার অনেক দুর থেকে এসেছে। নাহ্ একজনকে দেখতে তো আর বেশি সময় লাগবে না। কি মনে করে যেন আজিজকে বললাম,
 -তোমরা যে কি কর না বুঝি না। আমিও তো মানুষ নাকি।
 >স্যার… (আজিজ)
 -আবার হ্যাবলাদের মত তাকিয়ে কি দেখছো পাঠিয়ে দাও…
 >আপনি অনেক ভাল স্যার…
 -হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না। তারাতাড়ি পাঠিয়ে দাও…
 বলেই কিছু রিপোর্ট দেখতে শুরু করলাম। কয়েক মিনিট পর একটা মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসল…
 >আসবো…
 -হুম আসেন। বসেন… (রিপোর্ট দেখতে দেখতে বললাম।)
 >ধন্যবাদ। (মেয়েটা)
 -হুম…
 ততক্ষণে রিপোর্ট দেখা শেষ। তাই মুখের সামনে থেকে ওটা নামিয়ে লিখতে শুরু করলাম। কিন্তু মহিলা চুপচাপ। জিজ্ঞেস করলাম,
 -নাম কি…
 >…???
 কোন কথা শুনতে পারলাম না। আবার বললাম,
 -নাম কি বলেন…
 >উপমা
 -হুম বাসা কোথায়…
 >…???
 উফফ কোন কথার উত্তর পাচ্ছি না। তাই লেখা বাদ দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম,
 -আপনি কি কানে শোনেন….আ আ আ
 মুখটা দেখে আমিও যেন নির্বাক। অনেকটা চমকে উঠেছি এই মুখখানা দেখে। কিছু সময় দুজনেই নিরব হয়ে রইলাম।
 অতঃপর নিরবতা ভেঙ্গে বললাম,
 -কেমন আছো…
 >এই তো দেখছো। তুমি কেমন আছো… (উপমা)
 -ছাড়ো আমার কথা। তোমার স্বামী কি করে…অনেক সুখে রেখেছে তোমায় (আমি)
 >ও গার্মেন্টস্ সুপারভাইজার। এই তো দেখছো।
 -হুম।
 আবার নিরবতা। তবে এবার ও ই নিরবতা ভেঙ্গে বলল,
 >বিয়ে করেছো…
 -না।
 >কেন…
 -জীবনে তো একবারই বিয়ে হয়।
 >হুম। বিয়ে করে নিলেই তো পারো…
 -হুম করতে হবে। বাসা থেকে মেয়ে দেখা হচ্ছে।
 >তাহলে তুমিই জ্যোতি। ডাঃ জ্যোতিবিন্দ্রনাথ বর্মণ…
 -হুম। সার্টিফিকেটে তো তাই আছে।
 >বাসায় সবাই কেমন আছে। নিশ্চই অনেক ভাল…
 -হুম। আচ্ছা এসব কথা তোমাকে দেখতে দেখতে বলি…
 >হুম।
 -তো বলো তোমার সমস্যা…
 >জানিনা কেমন একটা অসস্তি লাগে। রাতে ঘুমাতে পারিনা।
 মুখ দেখে বুঝতে পারতেছি আমার কাছে কিছু লুকাতে কায়দা করে মিথ্যে বলছে। সত্য উদঘাটন করার কোন আগ্রহ নেই আমার মাঝে।
 -হুম আর কি সমস্যা…
 >খেতে পারিনা। কেমন জানি লাগে। বমি আসে…
 -হুম। বুক জ্বালা করে। মাথা ব্যথ্যা করে। রাতে মাঝে মাঝে শরীর শীথিল হয়ে আসে…
 >হুম।
 -আচ্ছা জিহ্বা দেখি,
 >অ্যা…
 -হুম চোখ দেখি…
 >হুম।
 -হুম বুঝলাম। এই যে ঔষধ লিখে দিচ্ছি সামনের ডিসপেনসারি থেকে আমার নাম করে নিয়ে যেও।
 >আচ্ছা তাহলে আসি। তোমাকে শুধু বিরক্ত করলাম।
 -আচ্ছা ঠিক আছে।
 >ভাল থেকে। আর হ্যা একটা পরীর মত মেয়েকে বিয়ে করিও কেমন…
 বলেই চলে গেল মলিন শাড়ি পরা মেয়েটা। শুধু অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম তার দিকে। কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে যেন মিলিয়ে গেল। নিয়তির কি পরিহাস যেখানে একদিন অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়েছে নিজের ক্ষমতা বলে সেখানে আজ পদে পদে তাকে অত্যাচারিত হতে হচ্ছে।
 কিছু ভাল লাগছেনা আর। সেই দিনের কথা গুলো বারবার মনে পরছে। কাজে কিছুতেই মন বসাতে পারছি না। প্রায় দশ পনেরো মিনিট পর রুম থেকে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। পিছন থেকে আজিজ কয়েকবার ডাক দিল। কিন্তু আমার কানেই যেন পরল না। ড্রাইভারকে সোজা বাসায় নিয়ে যেতে বললাম। পুরোনো কথা দিন গুলো চোখের সামনে ভাসছে। কিভাবে পাল্টে গিয়েছিল একটা ছেলে আর একটা মেয়ের জীবন।
 আট বছর পূর্বে…
 সময়টা ফাগুন মাস। ইন্টার সেকেন্ডিয়ার পড়ুয়া আমি। তিন ভাই বোনের মধ্যে মেঝো। প্রাইভেট পড়ছিলাম। হাসি ঠাট্টা আর পড়ালেখা হত প্রাইভেটে। স্যার তখনও অবিবাহিত। স্যারকে প্রায় বলতাম স্যার বিয়ে করবেন কবে। স্যার হেসে বলত, তোমার বিয়ে না খেয়ে আমি আগে বিয়ে করছি না। পরে তুমি আমার মিষ্টি শালিদের সাথে ভোমর হয়ে বসবে। আর একটা হাসির রোল পরে গেল স্যারের কথা শুনে। হঠ্যাৎ করে বাড়ি থেকে ফোন চলে আসল। আমাকে বাসায় যেতে হবে। তারপর মামার বাসায়। কি যেন দরকার। স্যার বলে চলে আসলাম বাসায়। মাকে বললাম,
 -মা এত জড়ুরি তলব ব্যপার কি…
 একটু হেসে বলল,
 >তোর মামার বাসায় কোন এক মেয়ে এসেছে তাকে দেখে আয়… (মা)
 মায়ের কথা শুনে মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চেপে গেল। মাকে বললাম,
 -কেন দাদার জন্য কি মেয়ে দেখছো নাকি…
 >তোর জন্য…তারাতাড়ি যা
 -আরে বাবা তুমি তো ডিজিটাল মা। ছেলেকে পাঠাচ্ছো মেয়ে দেখতে। ঘরে ঘরে তোমার মত মায়ের দরকার উম্মা…
 মেয়ে দেখতে যাচ্ছি তাই একটু সেজেগুজে পারফিউ দিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। বিকাল হতে হতে পৌছালাম মামার বাসায়। বাসায় যেতেই আলাদা খাতির দারি। কিন্তু মাথায় কিছু আসছে না। হঠ্যাৎ করে মামা আমাকে ডেকে একটা রুমে নিয়ে গেল। যেতে বলল,
 >শুনেছি তোর মেয়েলি ব্যপারে অনেক অভিজ্ঞতা। আজকে সেটা যাচাই করব দেখি কেমন।
 মামার কথা না বুঝতে পেরে বললাম,
 -মানে…
 >একটা মেয়ের সাথে কথা বলবি একা একা। তারপর আমাকে বলবি…
 -ওহ আচ্ছা কোন ব্যপার না…
 রুমে ঢুকতেই কেমন একটা মাতাল করা ঘ্রাণ পেলাম। কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করে সেই ঘ্রানটা উপভোগ করলাম। চোখ খুলতেই খোলা চুলওয়ালা একটা মাথা দেখতে পেলাম। ঘ্রাণটা ওখান থেকেই আসছে। বুঝলাম তাহলে এনার সাথেই কথা বলতে হবে। মামা আমাকে সোফায় বসিয়ে দিল। আর দুজনকেই বলে গেল,
 >তোমরা কথা বল…আমি বাইরে থেকে আসছি।
 কথাটা মনে হয় আমার কানে যায় নি। আমি তাকিয়ে আছি কারো মুখ পানে। চোখ গুলো দেখছি মাতাল করা কত মায়াবি হরিণী চোখ। কোন এক মায়া পরীর মায়ায় পরেছি। ডুবে গেছি তার মায়ায়। আমাকে আটকে ফেলেছে সে তার মায়ায়। ছাড়ানোর যত চেষ্টা করছি তত যেন বেশি করে জড়িয়ে পরছি তার পাতানো জালে।
 -আউচ… (আমি)
 জলের ছিটায় বাস্তবে ফিরে আসলাম। অবশ্য আমি খানিকটা লজ্জাও পেলাম। মেয়েটার থেকে মুখটা নামিয়ে নিচু করে রাখলাম। কিছু সময় নিরবতা পালন করলাম। নিরাবতা ভেঙ্গে মেয়েটা বলতে শুরু করল…
 >এই যে মিস্টার চোখটা এবার উপরে তো তুলুন…
 -না আর তুলব না ভয় হয়… (আমি)
 >কেন…
 -যদি আবার আপনার মায়া জালে আটকে যাই…
 >ওহ তাই…
 -…??? আমি নিরব।
 >তা নাম কি আপনার…
 -বলব না…
 >কেন…
 -যদি আমার নাম দিয়ে মায়া করেন আমাকে…
 >ওহ আচ্ছা।
 -জ্বি। আপনার নাম কি…
 >কি নামে ডাকতে চান…
 কথাটা শুনে মুখটা উপরে তুললাম। মেয়েটা আমার দিকে চেয়ে আছে। কোন কিছু না ভেবে একটা নাম স্থির করে ফেললাম
 -উপমা! কি দেব তোমার উপমা পাগল করছ যে আমায়
 মেয়েটার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকা দেখে একটু ভয় পেয়ে বসলাম। তা দেখে হেসে বলল,
 >হ্যাঁ আমার নাম উপমা। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে…
 -আমি তো বাস্…
 >কি হল বলেন…
 -মানে আপনার সাথে একটু হাটবো পাশাপাশি….
 >কিহ্ এত বড় সাহস কে আপনি যে আপনার সাথে আমি হাটব… (চোখ বড় বড় করে)
 -ইয়ে মানে আমি লিটন। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। আপনি…
 আমার কথা শুনে ভ্রুযুগল কুচকে আমার দিকে তাকাল। তারপর নিজের চোখ গুলো একটু ঘষে নিয়ে বলল,
 >তাহলে তো তুমি আমার ছোট।
 কথাটা শূনে এমন মনে হল সারাদিনের খাটুনি যেন বৃথা চলে গেল। তবুও সন্দেহ দূর করার জন্য বললাম,
 -কত ছোট…
 >আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ার।
 -ওও আচ্ছা। তাহলে এখন আসি…
 >এই কি হল। কথা শেষ। আমার সাথে না হাটতে চাইলে…
 -না ইয়ে মানে আমার পা গুলো খুব ব্যথ্যা করছে হাটতে পারবো না। অন্যদিন হাটবো।
 বলেই চলে আসলাম। আর ওদিকে উনি
 >হা হা পাগল কোথাকার…
 কথাটা কানে পরেছে। তবে পাগল বলাতে খারাপ লাগেনি। বরং বেশ মজাই লেগেছে। বাইরে বের হতেই একটা হাত আমাকে টেনে নিয়ে গেল রুমে। চিৎকার দিতে চাইলাম কিন্তু দেখি মামা। বলল,
 >কি বাবা কি বুঝলে…
 -ভালই… (আমি)
 >ভালই বলতে তোর পছন্দ হয়েছে…
 -কি যে বলনা মামা। ভাল বলতে ভালই তবে একটু অহংকারি আর হিংসুটেও বটে। যার বউ হবে তার কপালে বহুত দুঃখ আছে…
 বলেই মামার ওখান থেকে পালালাম। আর মেয়েটার সাথে কথা বলিনি। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে রাতেই বাসায় চলে আসলাম। মামা বলেছিল থাকার জন্য কিন্তু থাকতে ইচ্ছে না করায় চলে আসলাম।
 তারপর ভালই সব চলতে লাগল। কিন্তু হঠাৎ মাস দুয়েক পরে মা ঘরে এসে বলল,
 >তোকে একটা খুশির সংবাদ দেওয়া হয়নি…
 -কি সংবাদ… (আমি)
 >তোর চাকরি হয়েছে পুলিশে…
 -হা হা হা মা এখন দেখছি তুমিও মজা করতে শিখে গেছ দেখছি। তবে বেশ ভাল…
 >হাসছিস কেন বেহায়াগুলোর মত করে…
 -তো কি কাদবো। ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ…
 >চুপ থাক বজ্জাত ছেলে।
 -আচ্ছা চুপ করলাম…এখন এটা বলো আমার চাকরি হয়েছে এটা তোমাকে কে বলল…
 >তোর হবু শশুড়।
 -হা হা হা মা তুমিও না…যাও তো
 মা চলে গেল। আমার যেন হাসি থামে না। লাইনে দাড়ালাম না। আবেদন করলাম না। আমার চাকরি হল অথচ আমি জানতে পারলাম না। নাহ আজ আর পড়াশোনা হবে না। ঘুমিয়ে পড়াই ভাল।
 পরদিন…
 বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য গেলাম। সবাই কেমন জানি করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বঝতে পারলাম না। বললাম,
 -কিরে খবর কি…
 >খবর তো তোর। বিয়েতে কিন্তু জোস মাস্তি করব আমরা। মনে রাখিস… (রাসেল)
 -কার বিয়ে…
 >কার আবার তোর। একা একটা মেয়ে দেখে আসিস একবার বলিশও না। যাই হোক মাস্তি কিন্তু আমরা করবই তোর শালিদের সাথে…
 -আবে কি বলছিস উল্টা পাল্টা…
 >এ আমাদেরও ওরকম একটা ধরে দে না। সরকারি চাকরি সাথে আবার বউ ফ্রি…
 ধুর তোদের এখানে থাকবই না। কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না। রাগ করে বাসায় চলে আসলাম। কিন্তু এই অল্প সময়েই আমুল পরিবর্তন। কেমন একটা অন্য রকম ভাব ধারণ করেছে। ছোট বোনটাকে জিজ্ঞেস করলাম,
 -কিরে বাড়িতে কি হবে…
 >বিয়ে… (বোন)
 -কার বিয়ে…
 >কার আবার তোর…
 সব কিছু উল্টা পাল্টা মনে হচ্ছে। বুঝতে বাকি রইল না আমার জীবনে কিছু ঘটতে চলেছে। তাই সরাসরি মায়ের কাছে গেলাম
 -মা মা…
 >হুম বল শুনতে পাচ্ছি…
 -এসব কি হচ্ছে…
 >দেখতে পারছিস না…
 -হুম কিন্তু ঘটনা আমাকে কি খুলে বলবে…
 >আর কি খুলে বলব। তোর বিয়ে হবে বুধবারে। আর জানুয়ারীতে চাকরিতে জয়েন করবি…
 মায়ের কথা বুঝলাম না। তাই বললাম,
 -মানে কি…খুলে বল…
 >বস। বলছি…তোর মামার বড় শালির স্বামী তো কাস্টম অফিসার।
 -হ্যাঁ তো…
 >তার হাতে একটা ক্ষমতা আসছে এই বছর। তিনি একজনকে চাকরি দিতে পারবেন। মানে তার সুপারিস পেলেই চাকরি হয়ে যাবে। আর তোর মামা তোর কথা বলেছে। কিন্তু উনি বলেছেন যে তোর চাকরি হবে। কিন্তু তার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। আর তাই হচ্ছে। তোর চাকরি হয়েছে। শুধু জয়েনের অপেক্ষা। তাই বিয়েটা এখনই সেরে ফেলবেন উনি।
 -তোমরা আমাকে না জানিয়ে সব ঠিক করে ফেলেছো… তোমরা জানো না আমার কি ইচ্ছা…
 >ওসব ইচ্ছা বাদ দাও এখন। পায়ের কাছে লক্ষি ঠেলে ফেলে দিতে নেই বাবা। তুমি আদ্যে চান্স পাবে কি না। তার চেয়ে ভাল তুমি চাকরি কর। আর করতেও হবে তোমায়। (মা)
 -কিন্তু বিয়ে…
 >বিয়ে আর কি আজ হোক কাল হোক তো করতেই হবে। আর এমন তো নয় যে মেয়ে তোমার পছন্দ নয়। তাই সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো।
 “ধ্যাৎ” বলেই চলে আসলাম। আমার যেন কোন মূল্যই নেই। কিছু জানার পযন্ত প্রয়োজন বোধ করল না। কি করব কপালে যা আছে তাই হবে…
 বিয়ের দিন…
 দেখতে দেখতে দিনগুলি কেমন জানি চলে গেল। বাসায় আত্মীয় স্বজন আসতে শুরু করেছে। কয়েকটা দিন আর বাইরে বের হইনাই। শুধু ঘর আর ঘর। খাওয়ার সময় হলে খেয়ে আবার ঘরে বসে থাকতাম। কালকে বউদিরা আমাকে ঘর থেকে বের করছিল গায়ে হলুদ মাখানোর জন্য। অনেক হাসি ঠাট্টা করেছে। অনেকে আবার আমার কপাল ঘষে নিয়েছে। আমি খুব ভাগ্যবান এই বয়সে রাজ্যসহ রাজকণ্যা দুটোই পাচ্ছি।
 রাত প্রায় আটটা বাজে। আমার বোন সমেত কয়েকজন মেয়ে এসেছে আমাকে সাজানোর জন্য। বেশ করে সাজিয়ে তাড়া চলে গেল। অতঃপর দুজন জামাইবাবু আসল। আমাকে নানা রকম শলা-পরামর্শ দিতে দিতে ধূতি পাঞ্জাবী পরিয়ে দিল। বাসা থেকে বের হতে হতে প্রায় রাত দশটার দিকে বের হলাম। ওখানে পৌছানোর সাথে সাথে বিয়ে বাড়িতে যেমনটা হয় গেট ধরা। নতুন জামাই বরণ করা। সব একের পর এক হয়ে চলেছে।
 অতঃপর বিয়ে আরাম্ভ হল। কণেকে আনা হল। মনে মনে ভাবনা আসছে কেমন হবে দেখতে আমার বউ। আমার মনের মত হবে কি। মা তো বলেছে আমার পছন্দের। তবুও মনটা ভার ভার হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কনের মুখ দেখার একটা সুযোগ এসেছে। পুরোহিত মশাই শুভ দৃষ্টির কথা বলছেন। মেয়েটা ধীরে ধীরে তার মুখের সামনে ধরে রাখা পান পাতা সরিয়ে আমার সামনে চলে আসছে আর আমার মনের ধুক ধুকি বেড়েই চলেছে। যখন সম্পূর্ণ রুপে আড়াল কেটে গেল। তখন এক প্রকার মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলাম। এ তো উপমা। এখন বুঝতে পারছি কেন আমাকে সেদিন তার সাথে কথা বলতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেতো আমার বড়। হে হে সিনিয়র বউ। প্রায় সারা রাত লেগে গেল বিয়ে সম্পন্ন হতে। ভোর ছয়টার দিকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। বউকে আমার পাশে বসানো হল। গাড়িতে শুধু আমরা দুজন আর ড্রাইভার। মেয়েটা অনেক কান্নাকাটি করে গাড়িতে বসল। হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিলাম। আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল। আমিও সঙ্গি হলাম তার। অতঃপর বলে উঠল,
 >উফফ বাবা অনেক ঘুম পাইছে…
 আমি কোন কথা না বলে আমার কাঁধটা ঝাড়তে লাগলাম। আমার কান্ড দেখে একটা মিষ্ট্ িআওয়াজ তুলে বলল,
 >হা হা পাগল একটা…
 বলেই হাতটা জড়িয়ে নিয়ে কাধে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। আমি একটু তাকিয়ে রইলাম। তাকিয়ে থাকতে থাকতে যে কখন ঘুমিয়ে পরেছি বলতেই পারিনা। চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গল। চোখ খুলে দেখলাম বাড়িতে চলে এসেছি। গাড়ি থেকে নামতেই যত নিয়ম কানুন শুরু হয়ে গেল বধু বরণ, মিষ্টি মুখ করা এটা সেটা কত কি। প্রায় এক ঘন্টা লাগল সব শেষ করতে।
 সব শেষে ঘরে আসলাম। ঘুম আর হল না। বাইরে বউভাতে আয়োজন চলছে। সেখানে গেলাম সবাই কর্ম ব্যাস্ত। আমাকেও ব্যাস্ত হয়ে উঠতে হল। সবার সাথে কথা বললাম। বিকেল থেকে খাওয়া দাওয়া শুরু। প্রায় সন্ধ্যা সাতটা পযন্ত সবাই ব্যাস্ত। সারা রাত ঘুম হয় নাই তাই ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক। কিন্তু আমাকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হলনা। খুব চিন্তায় পরে গেলাম। জামাই বাবু আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন শুধু বুদ্ধি আর বুদ্ধি। কিভাবে কি করতে হবে। আবার কথা গুলো শুনে লজ্জাও পাচ্ছি বেশ। যাক অবশেষে ঘুমানোর অনুমতি পেলাম। রাত সাড়ে দশটার দিকে আমাকে আমার রুমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হল। ভিতরে ঢুকতেই পা বাইরে নিয়ে আসলাম। জামাইবাবুকে বললাম,
 -আমরা মনে হয় ভুল রুমে চলে এসেছি…
 >চুপ কর। যা ভিতরে যা (জামাইবাবু)
 বলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে দরজা টেনে দিল। আমি আর কি দরজা লাগিয়ে বিছানার কাছে আসলাম। ক্লান্ত খুব ঘুম পাচ্ছে। তাই বললাম,
 -আপনি ঐ দিকটাতে শুয়ে পরেন। আমি এই দিকটাতে শুইতেছি…
 কথাটা শুনে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন গিলে খেয়ে ফেলবে। অতকিছু না দেখে আমি শুয়ে পরলাম। কিন্তু আমার যে এটা কাল হবে সেটা কে জানে। ভো ভো করে ফোনটা বেজে উঠল। জামাইবাবু ফোন করছে। বুঝলাম কিছু অন্যায় করে ফেলেছি। তাই কেটে দিয়ে বললাম,
 -আমার অন্যায়টা কি…
 >কি এতগুলো অন্যায় করে বলছো কি অন্যায়… (উপমা)
 -যাহ্ বাবা আমি আবার কি করলাম। আমি তো আপনাকে ছুয়েও দেখিনী।
 >ওইটা এক নম্বর অপরাধ। দুই নম্বর আমাকে আপনি করে বলেছো তুমি আর তিন হল…
 -হ্যা জানি ঘুমিয়ে পরেছি…কিন্তু আপনাকে তো আপনি করেই বলতে হবে। আপনি আমার সিনিয়র…
 >হ্যাঁ ছিলাম। এখন আমি তোমার বউ। তাই তুমি এখন আমার সিনিয়র। তাই তুমি করে বলবা। না হলে মাকে বলে দিব…
 -আচ্ছা বলব… এখন ঘুমাই…
 >কিহ্ আবার ঘুম। আজকে আমরা সারা রাত গল্প করব…
 -কিহ্… আমি পারব না…
 বলেই শুয়ে পরলাম।
 >বললেই হল পারবে না…দাড়াও
 বলেই ঠোট যুগল এক করে ফেলল। শরীরে যেন শিহরণ দিয়ে যাচ্ছে। ঘুম কোথায় যে হারিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।
 >এবার হয়েছে…
 -হুম… হয়েছে…
 বলেই বালিশ উচু করে নিয়ে উঠে বসলাম। আমার বুকে মাথা রেখে বলা শুরু করল যত কথা….
 *
 সব ঠিক ঠাক চলছে। বাবা-মা পরিবার খুবই সুখী। চলে গেল প্রায় পাঁচ মাস। আমারও জয়েনিং লেটার আসল। আগামী মাসে জয়েন করতে হবে। সেই রাতে খেয়ে আমি বিছানায় এসে শূয়ে আছি। উপমা খেয়ে একটু পরে আসল। কিছু বুঝলাম না। তার আচরণ কিছুটা অন্যরকম। কেমন জানি রোমান্টিকতা মিশ্রিত। সকাল থেকেই দেখছি একটু সাজু গুজু করে আছে। এখন আবার খেয়ে এসে সাজতেছে। আমি আধ শোয়া হয়ে দেখছি। দেখতে দেখতে বললাম,
 -তোমাকে এই অবস্থায় খুব ভাল লাগে। দারুণ লাগছে। (আমি)
 >আচ্ছা তাই… (উপমা)
 -হুম তাইতো বারবার তোমার প্রেমে পরে যাই। হারিয়ে যাই তোমার মায়ায়…
 >ও আচ্ছা…
 বলতে বলতে উঠে চলে আসল। সাজু গুজু করা শেষ। এসে আমার পাশে বসল। কাধে মাথা রাখল। আমি ওর চুলের গন্ধটা চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমাকে মাতাল করে বারবার এই গন্ধটা। হঠাৎ বলে উঠল…
 -তুমি চলে আমার খুব কষ্ট হবে… (উপমা)
 >তাহলে না যাই… (মজা করে আমি)
 -কি বললে…
 >না কিছু না… কষ্ট হবে কেন সবাই তো আছে…
 -নাহ্ আমার শুধূ তোমাকে চাই। আমি কার সাথে কথা বলব বলো তুমি…
 >কেন আমার সাথে… তবে ফোনে…
 -আমি কার সাথে খেলব…
 >হে হে কি খেলবে…
 -উফফ তুমি কিচ্ছু বোঝ না…
 >হুম। তুমি একটু বুঝিয়ে দাও না…
 কিছুক্ষণ নিরব হয়ে রইল। তারপর কি যেন ভেবে আমার কানে কানে এসে বলল,
 >আমার বেবি চাই…
 কথাটা শুনে ওর দিকে তাকালাম লজ্জায় মুখ লাল করে রেখেছে। বললাম,
 -কি বললে…
 >কেন শোনো নাই কানে কি কম শোন নাকি হুম…
 -হুম…
 *
 জয়েন করলাম। পুলিশের জব। তাই ট্রেনিং এ পাঠানো হল। ছয় মাস ট্রেনিং হবে। সারাদিন খাটুনি শেষে রাতে এসে কথা হত। কিন্তু মাস তিনেক যাওয়ার পর কেমন জানি সব বদলে যেতে শুরু করল। কথা খুব কম হয়। হঠ্যাৎ একদিন পাশের বাসার ভাবি ফোন করে জানালো, “বাড়িতে নাকি খুব অশান্তি চলছে। উপমা সবার সাথে খারাপ আচরণ করে। কোন কাজ করেনা। সব সময় ফোনে কার সাথে যেন কথা বলে। কিছু বলা যায়না তাকে। সব সময় একটা আলাদা ভাব।” ভাবিকে বললাম, “অল্প বয়স কিনা। আর এই সময় এমন একটু হয়। আমি কথা বলব এখন।”
 পাশের কথা কানে নেই নি আমি। জানি তারা সব সময় একটা প্যাচ বসানোর জন্য লেগে থাকে। যদি এমন কিছু হত তবে ঠিক আমাকে জানাতো বাড়ি থেকে। আবার সময়ের চাকা চলতে শুরু করল…
 ট্রেনিং শেষ। বাসায় ফিরলাম। এক মাসের ছুটি। বাসায় আসলাম। সব কিছু স্বাভাবিক আবার অস্বাভাবিক। কিছূ বুঝতে পারছি না। কয়েক দিন চলে গেল। দেখলাম আসলেই উপমা অনেক সময় ফোনে ব্যস্ত। ভাবির কথাগুলো মনে হল। তাহলে কি তাই…কয়েকদিন যাওয়ার পর ভাবির কথা গুলো সব মিলে গেল। এবং সেটা আরো বাজে ভাবে। আমি রেগে উঠলাম হঠ্যাৎ করেই। গালে একটা থাপ্পর দিলাম।
 -চাকরি আমি করি। কাকে কি করব না করব সেটা তুমি বলার কে… (আমি)
 >তুমি চাকুরি কর তাতে কি হয়েছে। চাকরি কে নিয়ে দিয়েছে… আমার বাবা না থাকলে তোমার বাবার সাধ্যি ছিলনা পুলিশের চাকরি করার। (উপমা)
 -কি বললে তুমি…আমার বাবা মার কোন যোগ্যতা নেই…
 >হ্যাঁ নেই। শুধু তোমাকে জন্ম দিয়েছে মাত্র। আর কিছু নয়। কিন্তু তোমার ভবিষৎ গড়ে দিয়েছে আমার বাবা…আর এখন ধ্বংসও করবে আমার বাবা।
 বলেই ঘরে ঢুকে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে চলে গেল। শুধু চেয়ে দেখলাম। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিতেছি নিজেকে এ কাকে আমি ভালবাসলাম। চলে যাওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল। রাগটা অনেকটা কমেছে। ভাবলাম গিয়ে নিয়ে আসি। বাবাও বলল উপমাকে নিয়ে আসতে। তাই চলে গেলাম। আমাকে দেখে শাশুড়ি মা বসতে দিলেন। হালকা নাস্তা করার পর বললাম, “উপমা কোথায় মা?” উনি কোন কথা না বলে ঘর থেকে একটা কাগজ নিয়ে এসে দিলেন। আর বললেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে সাইন করে দিও বাবা।” বলেই চলে গেলেন। আমি নির্বাক। একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে এমন হবে ভাবতে পারিনি। আর সম্পর্ক ছেদ করবে। মাথায় কিছু আসছে না। প্রচন্ড রাগ মনের মধ্যে জমে গেল। ঐখানেই সাইন করে রেখে চলে আসলাম।
 *
 চাকরিতে ফিরে গেলাম। কিন্তু আমাকে বের করে দেওয়া হল। আমার চাকরি চলে গেছে। অপরিণত বয়েসে বিয়ে করার দরুণ চাকরি চলে গেছে। আর এই রিপোর্ট করেছে আমার শ্রদ্ধেয় শশুড় মশাই নিজে। মন ভার করে বাসায় চলে আসলাম। ইচ্ছে করছে জীবনটা শেষ করে দেই। মা আমাকে দেখে মুখ ভার করে বলল,
 -আমাদের ক্ষমা করে দিস বাবা। তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।
 কিছু বলতে পারলাম না। শুধু কাদলাম ঘরে এসে। কিছু দিন প্রায় অস্বাভাবিক ছিলাম।
 উপমার পেটে আমার বাবুটা কথা চিন্তা করলাম। সে কবে হবে। হলে আমি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসব। কিন্তু আমাকে কি দেবে। অবশেষে অনেক কষ্টে একদিন উপমাকে ফোন করে বললাম,
 -আমার বাবুটা কবে হবে। বাবুটা হলে আমাকে দিয়ে দিও… (আমি)
 >তুমি কেন ফোন করেছো…আর তুমি এটা কি করে ভাবলে যে তোমার কোন কিছু আমি রাখব… (উপমা)
 -মানে…
 >মানে কিছু না। আমি বাচ্চাটাকে নষ্ট…
 *
 বাসায় চলে আসছি। আর ভাবতে পারছি না। সেদিন আর বাকি কথাটা শুনিনি। কেন জানি সেদিন দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। বিধাতাকে প্রশ্ন করেছিলাম,
 -কেন এমন হল আমার সাথে।
 কোন উত্তর আসে নি এই কথার। অনেক কষ্টে স্বাভাবিক হয়েছিলাম। মনকে বলেছিলাম এবার যোগ্যতা প্রমানের লড়াইয়ে নামতে হবে। পরের বছর ইন্টার পাশ করলাম গোল্ডেন নিয়ে। মা বলেছিল, “বাবা তোর ইচ্ছা এখন তোকেই পূরণ করতে হবে” হ্যাঁ পেরেছি। আজ আমি একজন সফল ডাক্তার। আ সেটা আমার নিজের যোগ্যতা বলে।
 *
 >লিটন ওঠ বাবা। সন্ধ্যা হয়ে আসল। আর কত ঘুমাবি… (মা)
 -হুম মা উঠছি। মাথাটা ধরে আসছিল। (আমি)
 >হুম। ফ্রেশ হয়ে আয় তোর মামা এসেছে কি যেন বলবে…
 -আচ্ছা আমা যাও যাচ্ছি…
 বলে ফ্রেশ হতে চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে মামার সামনে আসলাম। মামার সাথে কুশল বিনিময় হল। কথায় কথায় মামা বলে ফেলল, “বাবা বিয়ে তো করতে হবে নাকি। আমার হাতে ভাল একটা মেয়ে আছে। তাকে একবার দেখিও সময় করে। আর দেখা দেখির কি আছে। একবারে বিয়ে করে নেও।”
 “বিয়ে করলেই তোমার স্বাস্থ্য অফিসার পদ নিশ্চিত।”
 
  
 Loading...
Loading...













