ছেলেটার বিকট গানের আওয়াজে বাসার সামনে থাকা গাছটার কাক তার বাসাশুদ্ধ নিয়ে পালালো।পাশের দোকানের ডিমওয়ালা ডিমের ঝুড়িসহ আছাড় খেলো।একটা পাগলা কুকুর দিক-বিদিক ছুটে পালালো। আমি জাস্ট অসহ্য হয়ে গেলাম।এই নিয়ে তিন তিনদিন মানা করেছি এভাবে বেসুরো গলায় গান না গাইতে।আর,আমারো কি কপাল! আমি আর রিয়া মিলে নতুন যে বাসাটা ভাড়া নিয়েছি ঠিক তার পাশেই ছেলেটার রুম।তার বারান্দা আর আমাদের বারান্দা একদম লাগোয়া। একটা পিন পড়লেও যেনো শব্দ শোনা যাবে এতটা ক্লোজ।
রিয়া দু’হাতে কান চাপা দিয়ে বললো-রিশা,তুই কিছু বলে আয় যা।অসহ্য লাগছে। আমি বারান্দায় গিয়ে চেঁচাতে লাগলাম-প্লিজ সামওয়ান হেল্প মি, প্লিজ। কাজ হয়েছে।ছেলেটা গান বন্ধ করে দৌড়ে বারান্দায় আসলো।আমার দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো-কি হয়েছে,কি হয়েছে আপনাদের? আমি ঠান্ডা গলায় বললাম-আপনার এই ত্যানা মার্কা গান কবে বন্ধ করবেন? মুহুর্তেই ছেলেটার মুখ কালো মেঘে ঢেকে গেলো।মাথা নিচু করে বললো- দুঃখিত! আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম-বারবার বলতে ভালো লাগে না।নেক্সট আর একদিন যদি শুনি তাহলে মরিচ মাখানো পানি ছুঁড়ে মারবো। ছেলেটা মাথা আরো নিচু করে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।দেখে আমারই লজ্জ্বা লাগছে। মনে হয়,আমাদের বিপদ হয়েছে ভেবে শার্ট না পড়েই দৌড়ে চলে এসেছে।নয়তো সচরাচর কোনো ছেলে এভাবে কোনো মেয়ের সামনে বস্ত্রহীন অবস্থায় থাকতে পারে না।
আমার ফাইনাল ইয়ার এ মাসের শেষে। আর,দিন পনেরোর মতো আছি।এরপর এই ভাড়া বাসা ছেড়ে একদম নিজেদের বাসায় চলে যাবো।আমি হলে সিট নেই নি ইচ্ছে করে।একরুমে গাদাগাদি করে এত মেয়ের সাথে থাকতে অসহ্য লাগে।তাই আমি আর রিয়া বছর কয়েক যাবত এরকম বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছি। নতুন বাসায় একদম সমস্যা নেই কোনো।শুধু পাশের বাসার ছেলেটার বিকট গান ছাড়া।যাই হোক স্বস্তি পেলাম অবশেষে।গান গায় নি আপাতত এক সপ্তাহ ধরে।
একদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে দেখি সেই ছেলেটা একটা গিটার নিয়ে বাসার দিকে ঢুকছে।কি আপদ! গিটার ও কিনেছে আবার।আমি বললাম-এই যে দেখলাম ঘুরে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেললো।আমি এগিয়ে এসে বললাম-এই কাঠের ডান্ডা নিয়ে কই যান? উনি মাথা নিচু করেই বললো-এটা তো গিটার আমি যেতে যেতে বললাম-খালি একবার বাজিয়ে দেইখেন.. উনি করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। রাতে গিটারের টুংটাং হালকা আওয়াজ শুনলাম।কিন্তু গান গাইলো না। রিয়া বললো-শুভ নাম নাকি ভাইয়াটার। আমি অবাক হয়ে বললাম- নাম কি করে জানলি? রিয়া মুচকি হেসে বললো-এটা জানা কোনো ব্যাপার নাকি? আমি বিরক্ত হয়ে বললাম-যাই হোক, একবার খালি গলায় সুর তুলুক।মরিচ পানি ছুঁড়ে মারবো রিয়া আতঙ্কিত গলায় বললো-না,না,ওসব করতে যাস না।
আমি ওর কথায় কান দিলাম না।আমি জানতাম যেহেতু একটা কাঠের ডান্ডা কিনেছে সেহেতু গান গাইবেই।আমার ধারণাটাই ঠিক হলো। তবে ছেলেটা একটু কৌশল খাটিয়েছে আর কি।কাক ডাকা খুব ভোরে উঠে আস্তে নিচু স্বরে গান গাইতে লাগলো। আমিও বারান্দায় গিয়ে চিৎকার করে বললাম-আগুন..আগুন। গান-টান বন্ধ করে দৌড়ে আসলো শুভ।ব্যস কেল্লাফতে। এক মগ চিনিতে গোলানো পানি ছুঁড়ে মারলাম ওর দিকে।মরিচ পানি মারি নি এই ভয়ে কানা না হয়ে যায়। উনি মুখ গোমড়া করে চলে গেলো।বেশ হয়েছে। এই শীতে এখন গোসল করে মজা বুঝুক।যত চিনি দিয়েছি, শরীর আঠা আঠা হয়ে থাকবে গোসল না করা পর্যন্ত। ভার্সিটি যেতে যেতে রিয়া বিরক্তি নিয়ে বলতে লাগলো-এটা তুই ঠিক করিস নি একদম।ভাইয়াটা সহজ-সরল বলে এমন করতে হবে? আমি চুপ করে রইলাম।ওর সাথে তর্ক করার মুড নেই। কাল রাতে কিচেনে শসা কাটতে গিয়ে নিজের হাত কেটে ফেলেছি।প্রচুর রক্ত বেরিয়ে গেছে।খুব পেইন হচ্ছে জায়গাটায়।
ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে একা হয়ে গেলাম।রিয়া আগেই চলে গেছে।আমি রিকশার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম।অনেকক্ষণ পর পর একটা একটা করে রিক্সা আসছিলো।প্রচন্ড বিরক্ত লাগছিলো আমার।দূর থেকে একটা রিক্সা আসতে দেখে ইশারা করে থামালাম। কাছে আসতেই দেখি, ওমা!একি!! এ যে শুভ নামক আপদ টা!
আমি হতাশা নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।শুভ একটু দূর থেকে রিক্সা থেকে নেমে বললো-আমি উঠবো না রিক্সায়।
আপনি উঠুন আমি চান্সটা ছাড়লাম না।উঠে পড়লাম।শুভ দাঁড়িয়ে রইলো।রিক্সা চলতে লাগলো।আমার একটু খারাপ লাগলো।আমাকে হেল্প করলো আর,আমি কিনা তাকে রেখে চলে যাচ্ছি।রিক্সা থামিয়ে পেছন ঘুরে ডাক দিলাম।বললাম- এই যে এদিকে আসেন,একসাথে যাই উনি মাথা নিচু করে বললো-ঠিকাছে,সমস্যা নেই।আপনি যান,আমি পরে যাবো। আমি রেগে বললাম- এই কাঠের ডান্ডা (গিটার) নিয়ে অতদূর হাঁটতে পারবেন না।উঠুন বলছি অবশেষে তিনি উঠলেন।কাঠের ডান্ডা রে এমনভাবে জড়ায়া ধরলেন যেনো ব্যাথা পাবে।যত্তসব! দু’দিন পর বারান্দায় বসে আছি এমন সময় দেখলাম তিনি গিটার নিয়ে বারান্দায় এসে আমাকে দেখে চলে যাচ্ছিলেন। আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলাম-‘কাঠের ডান্ডা নিয়ে বারান্দায় বসেন।ডান্ডারে বাতাস খাওয়ান।পারলে গোসল ও করাইয়েন।’ উনি মুখ কালো করে চলে গেলেন।
ইউটিউব দেখে দেখে রিয়া একটা চমৎকার কেক বানালো।কিন্তু,খেতে এমন বাজে হয়েছে।কোকো পাউডার বেশী পড়ে একদম তিতকুটে একটা স্বাদ চলে এসেছে।রিয়া মন খারাপ করে বসে রইলো।আমি কেকটা পিস পিস করে কেটে বারান্দায় নিয়ে চেঁচিয়ে বললাম- শুভ ভাইয়া,শুভ ভাইয়া,এদিকে আসেন উনি হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন।আমি এবার একটু নরম কণ্ঠে বললাম- কেক বানিয়েছি।প্রতিবেশী হিসেবে দিলাম।খেয়ে দেখেন তো কেমন হলো” বলেই এগিয়ে দিলাম।উনি মাথা নিচু করে নিলো। আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম- এখন তাহলে কেক খেয়ে ঘুমান।সকালে জেনে নিবো কেমন হয়েছে।
সকালে উঠে ওনাকে ডাকাডাকি শুরু করলাম।উনি তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন।আমি সবেমাত্র গোসল করেছিলাম।চুল মুছতে মুছতে বললাম- কেক’টা কেমন? উনি একটা মেকি হাসি হেসে বললো-খুবই ভালো আমি নির্লিপ্ত ভাবে বললাম- খাইছেন? নাকি ফেলে দিছেন? উনি বললো-খেয়েছি আমি পুরোটা।একটুও ফেলি নি। আমি বললাম-এটা হচ্ছে আমেরিকান কেক।খেতে তিতা হয়।কিন্তু বেশ উপকারী।আর,তিতা জিনিস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। উনি মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে আমার কথায় সায় দিলেন। রিয়া খুশী খুশী গলায় বললো-শুভ ভাইয়া বলেছে তাহলে যে,কেকটা ভালো হয়েছে? আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম-হ্যাঁ,বলেছে।কিন্তু,সেটা মিথ্যে বলেছে।কেকটা একদমই ভালো হয় নি।এতটাই বাজে হয়েছে যে,কোনো সুস্থ মানুষ সেটা মুখে তুলতে পারবে না। রিয়া আবার মুখ গোমড়া করে বসে রইলো।
দু’দিন পর বিকেলে বারান্দায় একটু উঁকি মারতেই দেখি, গিটার টা যত্ন করে মুছছেন তিনি।আমি একটু কেশে জোরে বলে উঠলাম-ডান্ডাটা বাজান না এখন আর? উনি চমকে আমার দিকে ফিরে, কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকার পর বললেন-একটু সমস্যা হয়েছে এটার।ঠিক করতে হবে। আমি হেসে বলে উঠলাম-একদম উচিত হয়েছে। উনি মুখ কালো করে ফেললেন। আমার পরীক্ষার ডেট পড়লো।পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।দেখতে দেখতে এক্সাম ও শেষ হয়ে গেলো।আমি ঢাকা যাওয়ার জন্য রেডী হতে লাগলাম।রিয়া দু’দিন আগেই চলে গেছে।আমি ও আজ যাচ্ছি।যাওয়ার আগে উনাকে ববললাম- চলে যাচ্ছি,এবার ইচ্ছেমতো ডান্ডাটা বাজাইয়েন।আর,বিরক্ত করবো না। উনি মুখ গোমড়া করে বললেন-আমিও এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
ঢাকা আসার পর পর আমার মাথায় যেনো বাজ পড়লো।বাবা-মা এর মধ্যে বিয়েও ঠিক করে ফেলেছে।আমি একদম প্রিপেয়ার্ড ছিলাম না।বাবা বললো-অত প্রিপারেশন লাগবে না।মা ও তাতে সায় দিলো।যেহেতু আমার কোনো পছন্দ ছিলো না,সেহেতু আমিও চুপচাপ রাজি হয়ে গেলাম।বিয়ের আগে দু’জনের দু’জনকে সামনাসামনি দেখার জন্য একটা ডেট পড়লো।আমার এত ইচ্ছে ছিলো না।তবুও,ফ্যামিল ি বললো-‘বিয়ের আগে একটু বোঝাপড়া হওয়া ভালো’ দেখা করতে যখন গেলাম তখন দ্বিতীয় বারের মতো মাথায় বাজ পড়লো।এ কি! এ যে শুভ নামক উল্লুকটা! আমি বললাম- আপনি! উনি মাথা নিচু করে করেই বললো-ভালো আছো, রিশা? আমি হতাশা নিয়ে বলে উঠলাম-ভালো ছিলাম।আপাতত নেই।আপনি কি সেই উল্লুক যার সাথে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে? উনি মুখ কালো করে বললেন-হ্যাঁ। আমি ভেংচি কেটে বললাম- ১টা শর্ত আছে। উনি আস্তে করে বললেন-কি? আমি বাটিতে চামচ ঘোরাতে ঘোরাতে বললাম- কাঠের ডান্ডাটা বাজাইতে পারবেন না। উনি অনিচ্ছাসত্ত্বে মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দিলো।
বিয়ের আগে একবার ওনাকে নিয়ে শপিং-এ গেলাম।শপিং মলে ঢোকার পর যখন এটা সেটা দেখছিলাম,এরই ফাঁকে ওনাকে বললাম- আপনার ঘড়ি পছন্দ? উনি বললো-ঘড়ি আছে তো আমি বললাম- আজই বাসায় গিয়ে পুরোনো সব ঘড়ি ফেলে দিবেন। এখন থেকে নিজের বউয়ের চয়েজ করা ঘড়ি পড়বেন। উনি বললেন-‘আচ্ছা’ আমি বললাম- শার্ট ও ফেলে দিবেন,প্যান্টও ফেলে দিবেন। উনি আনমনা হয়ে বললেন-চুল ও কি ফেলে দিতে হবে? আমি রাগী চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম-তাহলে বিয়ের দিন সবাই টাকলু জামাই বলবে না? উনি নিচুস্বরে বললেন-তুমিই তো বললা সব ফেলে দিতে। আমি বিরক্তিতে ভ্রুঁ-কুঁচকে ফেললাম।এই ছেলেটা এত অবুঝ কেন?
আমাদের ‘হলুদ সন্ধ্যা’ একসাথে হলো।হলুদের দিন উনি হাসিহীন মুখে আমার পাশে বসে রইলো।ফটোগ্রাফার বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো-বর হাসে না কেন? অতঃপর উনি এক চিলতে হাসি দিলো।তাও কয়েক সেকেন্ডের জন্য।আমি ওনাকে বললাম- আপনি আমাকে ধরে একটা পোজ দেন,ছবি সুন্দর উঠাতে হবে।উনি আমাকে না ধরে চেয়ার ধরলো।আমি ঠান্ডা গলায় বললাম- আমি কোনো জড় বস্তু কে ধরতে বলি নি।আমাকে ধরতে বলেছি।
অনেক ইতঃস্ততের পর উনি হালকাভাবে আমাকে ধরলো।আমি একদম শক্ত করে খামচি দিয়ে ধরলাম।ওনার ফর্সা মুখ মুহুর্তেই লজ্জ্বায় লাল হয়ে গেলো।আজব তো! লজ্জ্বার কি আছে এখানে বুঝলাম না। বিয়ের দিন আমি ওনার পাশে খুব হাসি হাসি মুখ নিয়ে বসে আছি।উল্লুকটার সাথে বিয়ে হচ্ছে বলে কি হাসবো না নাকি? না হাসলে ছবি তো সুন্দর হবে না।এত টাকা খরচ করে মেকাপ করেছি কি মুখটা পেঁচার মতো করে রাখার জন্য নাকি! ফটোগ্রাফার বললো-আপনারা একটু ক্লোজ হয়ে দাঁড়ান।ছবি সুন্দর হবে।
আমি ওনার কাছে গিয়ে হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।ওমা একি! ধরতেই দেখি উনি পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেলেন মুহুর্তেই।আমি বিরক্ত নিয়ে বললাম- ইজিলি দাঁড়ান,এমনে মূর্তির মতো দাঁড়ায়া আছেন কেন? উনি নড়লেন না।আমি শাড়িতে আটকানো পিন দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওনাকে নরম করলাম।উনি বিরস মুখে বললেন-‘এমনে খোঁচাচ্ছো কেনো,ব্যাথা পাচ্ছি।’ আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম- নরমালি দাঁড়ান,আর হাসুন।ছবি সুন্দর হতে হবে।ভবিষ্যতে নয়তো বাচ্চা-কাচ্চা বলবে ‘আম্মু,বাবা এমন গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছে কেনো?’ বিয়ে পর্ব শেষ হলো।আমাকে ওদের বাসায় নিয়ে গেলো।বাসর ঘর নাকি এখনো সাজানোর প্রক্রিয়া চলছে।আমাকে ড্রয়িং রুমে বসানো হলো ওর সাথে।একদল একদল করে আসছে আর ছবি তুলছে।সামনে আপেল,কমলা,মিষ্টি,দই এত খাবার দেখেই বমি বমি লাগছে আমার। নিজের বিয়েতে এতকিছু খাওয়া যায় নাকি? উনি আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি।দেখেই বোঝা যাচ্ছে,লজ্জ্বায় কুঁকড়ে গেছে বেচারা।
প্রায় মধ্যরাতে আমি ওর রুমে ঢুকলাম।রুমটা কাঁচা ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।বেশ সুন্দর হয়েছে।তাজা গোলাপ আর,বকুলের একটা মিষ্টি ঘ্রাণে পুরো ঘর মৌ মৌ করছে। উনি রুমে ঢুকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করছিলেন। আমি বিরক্ত নিয়ে বললাম- ভেতরে আসেন। উনি চুপচাপ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।আমার এত বিরক্ত লাগছিলো।সব কি বলে বলে দিতে হবে নাকি! আমি বললাম- বসেন না কেনো? উনি বসে চুপচাপ মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলেন।আমি বললাম- এত বড় ঘোমটা দিয়ে আছি আপনি এসে ঘোমটা উঠিয়ে আমাকে দেখবেন বলে।আর আপনি কিনা উনি ঘোমটা উঠালেন তবে,তাকালেন না। আমি বললাম-কেমন লাগছে বলেন উনি এবার প্রথম মুখ খুললেন,আস্তে করে বললেন-এত মেকাপ না করলে আরো বেশী ভালো লাগতো। আমি হতাশ হলাম।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললাম-কাছে আসেন তো উনি আঁতকে উঠে দূরে সরে গিয়ে বললেন-কাছে এসে কি হবে? আমি বললাম- চুলের খোঁপাটা থেকে ক্লিপগুলো খুলে দিন।
উনি এবার ধীরে ধীরে আসলেন।আমি বললাম-একটা চুলও যদি ছিঁড়ে তবে আপনার সবকটা চুল আমি ছিঁড়ে নিবো।
উনি খুব যত্ন করে একটা একটা করে ক্লিপ খুলে দিলো।খোলা শেষ হলে আমি বললাম- আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।আপনি ঘুমাবেন না।আজ রাত জেগে কথা বলবো। উনি বিরস মুখে বললেন ‘আচ্ছা’। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি উনি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি ওনার কাছে গিয়ে বললাম-এই যে..এই যে উঠেন।আজকে আমাদের বাসর রাত। শুভ ঘুমের ঘোরেই বলে উঠলো- বাসর রাত কি?বাসর রাত কেনো হয়? আবার কবে আসবে….