লঙ্ঘন

লঙ্ঘন

আকাশটা বড্ড মেঘলা ছিল সেই সকাল থেকেই
।তাই বাসা থেকে বের হবার সময় ছাতাটা না নিয়েই বের হয়েছি।কি ভাবছেন? আকাশ মেঘলা থাকলে সবাইতো ছাতা নিয়েই বের হয়। তবে আমি কেন হলাম না? আসলে বৃষ্টিতে ভিজতে আমার খুব ভাল লাগে। এইরে বৃষ্টিতো নেমে গেল….
এখন কি হবে? আপাতত একটা নিরাপদ জায়গাতে যাই। নয়তো আপনাদের গল্প শুনাতে পারব না।ঐতো যাত্রী ছাউনিটা, ওখানেই যাই পুরোটাই একদম শূন্য,কোন মানুষ নাই। আর মানুষ ওখানে থাকবেই বা কেন? বাসইতো থামে না এখানে। সে যাই হোক আমরা গল্পে ফিরে যাই…….
তার আগে আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই। আমি অবাক রায়হান শিশির সংক্ষেপে অবাক। অবাক নামেই সবাই চিনে। পেশায় মাস্টার্স পাশ করা
T. T. C.M……..
কি কিছু বুঝলেন না? আরে মামা টোটো কোম্পানির ম্যানেজার।তাই বলে ভাববেন না বেকার। কারণ পৃথিবীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই আমি করছি।হুমমমম চাকরি খুঁজছি!
এবার চলেন গল্প শুরু করি…..
আমি তখন অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ি।ভার্সিটি গিয়ে খেলাম এক ক্রাশ। তাও একেবারে আমাদের নতুন ম্যামের উপর। যদিও পরে জেনেছি নীলন্তি রায়হান আমাদের নতুন ম্যাম।মনটা একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গেল। কিন্তু আমিতো আর থেমে যাবার পাত্র না। ম্যাডামের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম ম্যাম আমার দু বছর আগে এইচ. এস.সি পাশ করেছেন। আর জন্ম সন অনুযায়ী সে আমার মাত্র ১ বছরের বড়।সেদিনতো খুশিতে বন্ধুদের দিয়েছিলাম এক বিশাল পার্টি ১২৩১ টাকা খরচ করে। সেও আবার মাসের ২৮ তারিখে…
ক্লাসে আমার উপস্থিতিও বেড়ে গেল তখন। আর ক্লাসটা যদি নীলন্তি ম্যামের হয় তবে কথায় নেই।
ম্যামের সাথে ভাব জমিয়ে ফেললাম খুব তাড়াতাড়ি।ম্যামের ফোনে কল দেয়া শুরু করলাম পরিচয় লুকিয়ে।প্রথম প্রথম উনি কথা বলতে চাইতেন না। কিন্তু আমি এতই ফোন দিতাম যে উনি আমার পরিচয় জানতে আমার সাথে কথা বলা শুরু করেন। উনি মনে করেছিলেন আমাকে খুঁজে বের করে সায়েস্তা করবেন। এভাবে কথা বলতে বলতে কখন যে আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব হয় আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি।আমাদের মাঝে এতোটাই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় যে উনি আমাকে এবং আমি উনাকে একজন অন্যজনের জীবনের অংশ করে ফেলেছি। আমরা আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছি। আমি তাকে নীলু বলে ডাকি। বেশ খুশি হয় সে। এভাবেই কেটে যায় আটটি মাস। একদিন নীলু হঠাৎ করে আমাকে বলে—
– আমাদের দেখা করা উচিত।
-কেন? (আমি)
-না আসলে আমরা এতোদিন থেকে কথা বলছি। আর তাছাড়া আমরাতো এখন বন্ধু। (নীলু)
-হুমম আমরা বন্ধু। তাতেতো কোন সন্দেহ নাই…(আমি)
-তবে আমাদের দেখা করা উচিত। আমি তোমাকে দেখব। তুমি কি আমাকে দেখবে না? (নীলু)
-আমিতো তোমাকে দেখিই। (আমি)
-মানে?(নীলু)
-না মানে আমি তোমাকে আমার হৃদয়ের চোখ দিয়ে দেখিইতো রোজ। (আমি)
-না আমি এতো কিছু বুঝি না। আমি তোমাকে দেখব। (নীলু)
-এই ঘটনা কি? প্রেমে পড়নিতো আবার? (আমি)
-হ্যা প্রেমেই পড়েছি। (নীলু)
-কিহ!কি বলছো এসব?(আমি)
-হ্যা সত্যিই আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক ভালবেসে ফেলেছি তোমায়। আমি তোমাকে ছাড়া ভাবতে পারি না কিছু। (নীলু)
-সত্যিই ভালবাস আমায়? (আমি)
-হুমম।(নীলু)
-তাহলে আমি যাদি কিছু চাই দিবা তুমি? (আমি)
-দিব। তুমি যা চাইবে তাই দিব। কথা দিলাম। (নীলু)
-তাহলে আজকের পর থেকে আমি যতদিন না চাইব তুমি দেখা করতে বা আমার কোন ছবি চাইবে না। (আমি)
-কিন্তু কেন?( নীলু)
-মনে কর এটা ভালবাসার পরীক্ষা
তুমি চাকরিজীবী আর আমি বেকার। তোমার এটা আবেগ না প্রেম তা দেখব না আমি? (আমি)
-ওকে তবে তাই হোক।(নীলু)
এভাবেই খুব সাধারণ ভাবে শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৩ বছর আগে আমদের ভালবাসার পথচলা। আজও আমরা এক সাথেই আছি। আমি তাকে মাঝে মাঝেই ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে আসি, কথা বলি। কিন্তু সে জানে না আমিই তার অদেখা ভালবাসা নীল। যার আসল নাম অবাক রায়হান শিশির। যাকে ঘিরে তার হাজার স্বপ্ন আমিই সেই মানুষ।
নাহ আবার ফোন বাজে কেন? গল্পটাও শেষ করতে দিবে না দেখছি। সবাই চুপ করেন নীলু ফোন দিয়েছে। দেখি কি বলে….
-কি কর জানু? (নীলু)
-রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। (আমি)
-কিহ! তোমার না জ্বর? আর তুমি এই বৃ্ষ্টিতে রাস্তায়?যাও তোমার সাথে কোন কথা নাই।(অনেকটা রাগ নিয়ে নীলু)
-এই শোন না আমিতো যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়িয়ে। চাকুরীর একটা ভাইবা ছিল। (আমি)
-জানু কি খবর চাকুীিটা হবে এবার? (নীলু)
-তার আগে বল আমি কি করেছি? জানু বলতেছো কেন? (আসলে খুব রেগে গেলে নীলু আমাকে জানু বলে)
-তার আগে বল তুই কি আমার সাথে টাইমপাস করিস? (নীলু)
-নাতো! আমি ভালবাসি তোমায় হৃদয়ের সবটুকু উজার করে।
-তাইলে কালকেই আমাকে বিয়ে করবি।(নীলু)
-আইচ্ছা কিন্তু আমি বেকার জন্য আর কালো জন্য পরে কাইন্দোনা কইলাম।
-ঐ তোরে আমি চিনি না? ফাজিল তুই যে আমার সাথে কথা বলতে আসতি আমার দেওয়া পারফিউম লাগিয়ে। তখন আমি ঠিক বুঝতাম তুই কোন অবাক ?আমি অনেক আগেই বুঝে গেছিলাম নীল আর কেউ না।অবাক রায়হান শিশিরই আমার নীল। (নীলু)
-তাইতো বলি ম্যাম আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকাই থাকে কেন?
-ঐ ভাল হবে না কিন্তু।একদম ম্যাম ম্যাম করবি না। কাল ১০টার মধ্যে আমার সাথে দেখা করবি(নীলু)
-কিন্তু আমিতো ঢাকায়।
-জানি।কিন্তু জানু তুমি হয়তো জাননা আমিও ঢাকায় চলে আসছি।(নীলু)
-কালকেই আসতে হবে?ভেব দেখ সমাজ কি মেনে নিবে?
-কুত্তা পটানোর সময় মনে ছিলনা? তুই আসবি না আমি…..(নীলু)
-আমি কাল অবশ্যই আসব।কিন্তু কোথায় আসব?
-উত্তরা কাজী অফিস।সময় ঠিক সকাগল ১০.০০ টা।(নীলু)
– এখন রাখি নীলু?কালকের প্রস্তুতি নিতে হবে না?
-ওকে। টাটা। আর হ্যা ভুলেও দেরি করিস না। তাইলে বিয়ের আগেই বিধবা হব আমি।(নীলু)
-ওকে। ভালবাসি আমার পেত্নীকে..
-হুমমম।আমিও ভালবাসি আমার নিধির আব্বুকে….(নীলু)
আরে বাবা বিয়ে না করতেই মেয়ের নাম ঠিক করে ফেলল?সিনিয়রের সাথে প্রেমে কত মজা। আমার চাইতে বেশিই বুঝে।যাই বৃষ্টি থামল, গিয়ে বন্ধুদের দ্বারস্থ হই।আপনাদের গল্পটা অন্য একদিন শুনাব।
ঘড়িতে ১১.১৫ মিনিট নীলুর আসার কোন নাম নেই,ফোনটাও বন্ধ। তবে কি নীলু আসবে না? আমার সাথে অভিনয় করল?কিন্তু তিন বছরেতো কখনো এমন মনে হয়নি?নাহ কিছুই বুঝতেছিনা। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। এই সময়ে আবার কে ফোন দিল?নীলু ফোন দিয়েছে। আগে ফোনটা ধরি…
-হ্যালো বাবু আমি সরি। (নীলু)
-কেন?আর তুমি কোথায়?
-আসলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। সমাজ আমাদের কখনো মানবে না। (নীলু)
-ওহ তাই বল…..ওকে ভাল থেকো।
আমার সব কিছুই আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেছে অনেক আগেই।আমিও ধীরে ধীরে পড়ে যাচ্ছি। কিন্তু একি আমি এখনও পড়ছি না কেন? কেউ আমাকে ধরে আছে। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। কেউ একজন বলছে – কী হল তোমার এমন করছো কেন? কন্ঠটা বেশ পরিচিত। নীলু মনে হচ্ছে। কিন্তু নীলুতো আসবে না। তবে আমি কেন ওর কথা শুনতে পাচ্ছি? চোখ দুটো খোলার চেষ্টা করছি কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে। কেউ একজন চিৎকার করছে। আমাকে একটু সাহায্য করুণ, প্লীজ কেউ একটু আসুন।কারও চোখের জল আমার কপলে পড়ছে টপটপ করে। আর আমি ক্রমশ ফিরে পাচ্ছি শক্তি। কারণ আমি বুঝতে পেরে গেছি কল্পনায় নয় আমার নীলু বাস্তবতায় এসেছে। আমাকে ফিরে আসতেই হবে। এইতো আমি স্পষ্ট দেখছি নীলু কাঁদছে আর বলছে আমি তোমায় ছেড়ে কোথায় যাব?ভালবাসিতো একবার চোখ খোল।নীলু এত মানুষের সামনেই সমাজের রীতি লঙ্ঘন করে বলছে ভালবাসে আমায়। আমি আস্তে করে দু হাত বাড়িয়ে নীলুকে জড়িয়ে নিলাম…
-নীলু ভালবাসি আমিও তোমায় তোমার থেকে বেশি।
-জানিতো গাধা। (নীলুর কান্নার মাঝেও একচিমটি হাসি মুখ)
কেউ একজন বলল উনাকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি বললাম না নীলু আমার হাতে সময় আছে। চল আজ এইখানে সমাজের সকল নিয়ম লঙ্ঘন করব দুজনে।তোমার লাল শাড়ীকে দিব পূর্ণতা। তাররপর অন্য কিছু।কাজী সাহেব আপনি কাজ শুরু করেন। অপরিচিত কাজীও অশ্রু জল মুছে তার কাজ শুরু করলেন।
নীলুু আমার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল আর কখনো এমন দুষ্টমি করব না। সব কিছুরই আজ হল লঙ্ঘন।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত