বখাটের পেত্নী

বখাটের পেত্নী

সকাল ৭.০০!!

পরম শান্তির ঘুমটা সবার সকালেই বেশি হয়। কিন্তু রাব্বির কপালে সেটা গত কয়েকবছর ধরে হারাম হয়ে গেছে। সকাল হতেই শুরু হয়ে যায় বউয়ের ঘ্যানঘ্যান!! আরে যে এই শুভ সময়ে অশুভ কাজটি প্রতিদিন করেন সেই মিষ্টি মহারাণীটার নাম হলো মায়া.!!

মায়াঃ কয়টা বাজে এখনো ঘুমিয়ে আছো!! অফিসে যাবেনা?
.
রাব্বিঃ আরেকটু ঘুমাই প্লিইইইজ !!
.
মায়াঃ আচ্ছা ঘুমাও, আমিও পানির বালতিটা আনছি।
.
রাব্বিঃ আর ৫ মিনিট।
.
মায়াঃ ৫ সেকেন্ডও না। উঠো!! উঠতে বলছি না!!
.
জোর করে উঠিয়ে গোসল করতে পাঠিয়ে দিলো। রাব্বি অফিসের জন্য রেডি হয়ে আসতে আসতেই টেবিলে তার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি। রাব্বি খাচ্ছে আর তার পাশে দাড়িয়ে আছে মায়া।
.
রাব্বিঃ তুমি খেয়েছো?
.
মায়াঃ না, তুমি আগে খেয়ে নাও, তারপর খাবো।
.
রাব্বি আর কোনো কথা না বলে বাম হাত দিয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা পেত্নীটার কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে খাবার খাইয়ে দিয়ে অফিসের দিকে ছুটলো।

ব্যাস্ত এই শহরে রাব্বি আর মায়ার টম এন্ড জেরির মতো সংসার। তাদের বিয়েটা পারিবারিকভাবে নাকি প্রেম করে সেটা নিয়ে কনফিউজড তাদের পরিবার। ঘটনার শুরুটা হয়েছিলো একটা ছোট্ট ধাক্কা থেকে……
.
কয়েকবছর আগে…..

এমবিএ কমপ্লিট করা ভবঘুরে ছেলে রাব্বি, আর তার সাথে তার রক্তের সম্পর্কীয় দুই আপন বন্ধু নয়ন আর, রোমান। তিনজনেরই কাজ প্রতিদিন বিভিন্ন ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে মেয়ে দেখা। আজও ব্যাতিক্রম কিছু নয়। বাইকের উপর বসে রাব্বি সিগারেট ফুঁকছে, রোমান আর নয়ন মেয়ে দেখছিলো। হঠাত রোমানের সাথে একটা মেয়ের ধাক্কা লাগে, আর মেয়েটা অমনি তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আর রাব্বি ছুটে আসে….

রাব্বিঃ Excuse me!! আপনি আমার বন্ধুকে মারলেন কেন?

মেয়েটাঃ আপনিও খাবেন নাকি?? সুন্দরি মেয়ে দেখলেই ধাক্কা মারতে ইচ্ছা হয়?

রাব্বিঃ মেরেই দেখেন, দাত ফেলে দিবো!!!

মেয়েটাঃ হাত লাগিয়ে দেখেন, মাথা ফাটিয়ে দিবো।

রাব্বিঃ পেত্নীর মতো চেহারা আর নিজেকে বলে সুন্দরি!!

মেয়েটাঃ কিহ!! আমি পেত্নী!!

রাব্বিঃ জ্বি হ্যা….

তাদের ঝগড়ার ভাব ভালো না পেয়ে রোমান আর নয়ন রাব্বিকে দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যায়।
.
রাব্বিঃ শালা বাইন**!! এইখানে আনলি কেন?? মাইয়াডারে আজকে সাইজ কইরা ফেলতাম।

রোমানঃ বাদ দে!! দোস্তো তোর না আজকে বিয়ের জন্য মেয়ের বাসায় যাওয়ার কথা!?

রাব্বিঃ তাই!! তো যা!! পছন্দ হলে করে নিস বিয়ে!! আমি ওসব বিয়ে-টিয়ে করতে পারবোনা।

নয়নঃ আন্টি আমাদের বলছে তোকে ধরে নিয়ে আসতে, চল ভাই, অন্তত দেখে তো আসি, হবু ভাবিজান কেমন!!

রাব্বি আর তার পরিবার রাব্বির বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেছে। রাব্বির বাবার বন্ধুর মেয়ে!! মেয়েকে দেখেই রাব্বির মেজাজ ৩৬০° ডিগ্রী হয়ে গেলো। এটাতো সেই মেয়েটা, যার সাথে আজ তার ঝগড়া হয়েছে।তাদের দুজনকে আলাদাভাবে সময় দেওয়া হলো নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য। দুজনেই মাথা নিচু করে আছে, একজন রাগে আর একজন লজ্জায়।

রাব্বিঃ এখানে আমরা নীরবতা পালন করতে আসিনি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।

মেয়েটাঃ আপনি!!

রাব্বিঃ হ্যা আমি!! এই বিয়ে অসম্ভব!!

মেয়েটাঃ একদম কথা বলবেন না, আমার বিয়ে আটকানোর আপনি কে!!

রাব্বি কোনো কথা না বলে চলে গেলো। সে এই বিয়েতে রাজি নয়। কিন্তু মেয়েটি বলেছে সে নাকি রাজি। সবকিছুই রাব্বির মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।

রাত ১২:২৪ মিনিট!!

রাব্বির মোবাইলে একটা কল আসলো। কলটা রাব্বির হবু বউ করেছিলো, মানে সেই মেয়েটা যাকে দেখলেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কল রিসিভ করতেই ধমক…..

মেয়েটাঃ এতো রাত অব্দি জেগে আছেন কেন!! ঘুম নেই চোখে!! চোখে মরিচ ডলে দিবো??

রাব্বিঃ আপনি কে বলছেন?? সাহস তো কম নয়!!

মেয়েটাঃ আমি আপনার হবু বউ। এতো রাত অব্দি কি করা হচ্ছিলো হুম??

রাব্বিঃ আচ্ছা আপনি কি পাগল!! আপনি বিয়েতে রাজি হলেন কেন??

মায়াঃ রাজি না হলে আপনাকে শায়েস্তা করবো কিভাবে!! এখন চুপচাপ লক্ষি ছেলের মত ঘুমান!!

রাব্বিঃ আপনার নাম কি?

মেয়েটাঃ আমারা নাম মায়া…
.
পরদিন বিকালে মায়া আবার রাব্বিকে কল করলো…

মায়াঃ এই বখাটে ছেলে, কোথায় আপনি??

রাব্বিঃ আমি বখাটে ছেলে নই!!

মায়াঃ জ্বি হ্যা, আপনি ওইটাই!! ১০ মিনিটের মধ্যে এসে আমার বাসার সামনে থেকে আমাকে নিয়ে যাবেন!! দুজনে মিলে ঘুরবো!!

রাব্বিঃ জ্বি না ম্যাডাম। আমি পারবো না।

মায়াঃ আপনার সিগারেট খাওয়ার বিষয়টা কি বাসায় জানাতে হবে!!

রাব্বিঃ আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন!!

মায়াঃ সেটা ছোটবেলা থেকেই!! এখন সময় নষ্ট না করে তারাতারি চলে আসেন।

সিগারেট খাওয়ার এই ব্যাপারটা নিয়ে মায়া রাব্বিকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নিতো। রেগে গেলেও রাব্বি কিছুই করতে পারতো না। একদিন বিকালে রাব্বি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো, তখন সিগারেটের এই বাহানা দিয়ে মায়া রাব্বিকে ডাকলো, বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়ায় রাব্বি প্রচুর রেগে গেলো।

রাব্বিঃ আমাকে এভাবে ডাকলেন কেনো? আপনার সমস্যা কি!! কেন আমার জিবনটা এভাবে তেজপাতা করে দিচ্ছেন? আমি নিজের মত করে সময় কাটাতে পারিনা, আপনার জন্য!! এইযে চলে এসেছি আমি, বলেন কি করতে হবে? আপনাকে কোলে নিয়ে ধেইধেই করে নাচতে হবে!!? নাকি আপনার সাথে ঘুরতে যেতে হবে?? প্লিজ আমাকে আমার মত থাকতে দিন। আমাদের দুজনের আলাদা জিবন আলাদাভাবেই পার করতে দিন। প্লিজ!! (রাব্বির এমন ব্যাবহারে মায়া কষ্ট পেয়ে কাঁদতে শুরু করলো)

মায়াঃ আমিতো আপনার জীবন নষ্ট করার জন্য এসব করিনা। আপনি যাতে ওই খারাপ কাজগুলা না করতে পারেন তাই করি!! আনাদের বিয়ে দুই পরিবার থেকে হচ্ছে, সেখানে আমি রাজি থাকা আর না থাকা সমান কথা। আমি চলে যাচ্ছি, আর আপনাকে বিরক্ত করতে আসবো না।

মায়া চলে যাওয়ার পর রাব্বি সব আগের মতো করতে চাইলেও আর পারলো না। আজকাল সকাল সকাল একাই ঘুম ভেঙে যায় তার। সিগারেটও আগের মত ভালো লাগেনা। বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করলেও কোনো একটা অপূর্ণতা কাজ করে তার মধ্যে। এটা কি মায়ার অপূর্ণতা!! তবে কি সে, মায়াকে……

৩ দিন পর.!!

রাব্বিঃ হ্যালো।

মায়াঃ হুম।

রাব্বিঃ এই পেত্নী!! কোথায় আপনি!??

মায়াঃ কেনো? কি চাই?

রাব্বিঃ ৫ মিনিটের মধ্যে বাসার নিচে আসবেন, নইলে খবর আছে।

মায়াঃ কি খবর??

রাব্বিঃ সেটার জন্যই নিচে আসতে বলছি!!
.
মায়া নিচে আসলো, দুজনেই চুপ। কেউ কিছু বলছেনা।

মায়াঃ ডাকলেন কেন? কিছু বলবেন?

রাব্বিঃ আরে ভাই, আমিতো বলার জন্যই আসছি, তাইনা?

মায়াঃ শেষ করেন।

রাব্বিঃ শেষ করার কি আছে? বুঝেন না আপনি??

মায়াঃ বুঝিয়ে বলেন।

রাব্বিঃ আরে, এতে বুঝানোর কি আছে!! এতো বড় হইছেন, আর বুঝেন না!! অদ্ভুত তো!!

মায়াঃ বলতে হবে না, আমি যাচ্ছি। (মায়া চলে যেতেই রাব্বি তার হাত ধতে আটকে দিলো)

রাব্বিঃ ভালোবাসি!! (কথাটা শোনার পর মায়া ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো)
মারলেন কেন আমাকে??

মায়াঃ স্টুপিড!! এই কথাটা বলতে এতো দেরি লাগলো কেন?? (রাব্বিও ঠাস করে একটা মেরে দিলো) আপনি মারলেন কেন??

রাব্বিঃ আমিতো ভালোবাসি সেটা বুঝতে পারিনি। আপনি বুঝিয়ে দিলেন না কেন??

মায়াঃ বুঝিয়ে কি করবো??

রাব্বিঃ বাহ রে!! বিয়ে করবো!!

মায়াঃ বিয়ে করে কি হবে??

রাব্বিঃ ১১ টা বাচ্চা হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম। আপনি আর আমি হবো আম্পায়ার!!

মায়াঃ বিয়েটা কখন হবে?

রাব্বিঃ আগামি এক ঘন্টার মধ্যে!!

সেখান থেকে দুজনেই কাজি অফিসে যায় আর বিয়ে করে নেয়, আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিলো। আর ওদের ফ্যামিলি থেকেও কোনো সমস্যা হয়নি কারন ওদের বিয়ে ঠিক করাই ছিলো। শুধু মাঝখান থেকে একজনের পালিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছেটা পুরণ হয়ে গেলো!!

এতোক্ষন যা শুনছিলেন তা ছিলো অতিতের কথা। এখন বর্তমানে ফিরে আসা যাক। আজ রাব্বি অফিস থেকে লেট কতে ফেলেছে, সে জানে বাসায় একটা পেত্নী তার জন্য মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। তাই বাসায় যাওয়া আগে আইস্ক্রিম কিনে নিয়ে গেলো। তার পেত্নীটা আইস্ক্রিম পেলে বাচ্চাদের মতো সব ভুলে যায়।

আর আপনাদেরকে বলছি, এতোক্ষন অনেক শুনেছেন মায়া আর রাব্বির ব্যাপারে, এবার যার যার কাজে যান তোহ্!! সারাদিন পর তাদের একটু একা থাকতে দিন!! আপনাদের কোনো কাজ নেই?? আজিব ক্যারেক্টার মাইরি!!!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত