– দেখি একটু আমাকেও দাও তো.. (আমি)
– কি… ? (মিথি)
– এইযে তুমি আমার সামনে চকলেট খাচ্ছো আমারও তো খেতে ইচ্ছে করছে।
– তো আমি কি করব?
– আমাকে একটু চকলেট দাও।
– না, দেব না।
– কেন?
– আমি একাই খাব।
– আমাকে একটু দিলে কি হবে?
– ফুরিয়ে যাবে!
– কিইইই???? আমি চকলেট এনে দিলাম আর আমাকে দিলেই ফুরিয়ে যাবে???
– তুমি আনছো বলেই কি তোমাকে চকলেট দিতে হবে নাকি??
– তো আমার সামনে খাচ্ছো কেন? আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে।
– আমি দেব না।
– ওকে। না দিলা। আবার যখন বলবা না বাবু আমাকে চকলেট এনে দাও। তখন দেখব কে তোমাকে চকলেট এনে দেয়।
– কে আবার এনে দেবে?? তুমিই এনে দিবে।
– একদম আমি আনব না।
– তাহলে আমি কান্না করব।
– তুমি যা খুশি কর আমি আনব না।
– আচ্ছা দেখা যাবে।
– হুহ।
.
একটু রাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলাম।
.
পরিচয় টা দেই, না হলে খারাপ দেখায়। আমি হলাম ফাগুন। একটা ছোটখাটো ব্যবসার সাথে যুক্ত। আর ও হলো আমার বউ মিথি। পাগলী একটা। আমাকে ছেড়ে থাকতেও পারব না, আবার আমি ওর কাছে কিছু চাইলেও মনে হয় আমি মহা অন্যায় করে ফেলেছি। কিচ্ছু দিতে চায় না আমাকে। কিছুই না..!
.
দেখলেনই তো কিরকম স্বভাবের। আমি চকলেট এনে দিলাম আমাকে না দিয়ে একা একা খেতে শুরু করছে। আবার আমাকেই দিবে না। পাগলী একটা। আমি জানি ওর এই পাগলামী গুলোর মাঝে আছে হাজারো দিনের সৃতি জড়ানো ভালবাসা।
.
আমাকে অন্য কিছু না দিলে কি হবে! ভালবাসার দিক টা ঠিক আগে এনে দেয়। তাই জন্যই তো আমি ওকে এতো ভালবাসি।
.
আমি আর আম্মু আব্বু ছিলাম আমাদের পরিবারের সদস্য। বাবা মাকে ছেড়ে দূরে থাকতে পারি না তাই.. বাধ্য হয়ে রংপুরেই রয়ে গেলাম বাবার ব্যবসা সামলাতে। তারপর, দীর্ঘ ৭ বছর প্রেমের পর মিথিকে বউ করে ঘরে আনলাম।
.
বৌ আর মা বাবা কে সুখেই আছি….! এই কয় মাসেই ওনাদের মাঝে মা মেয়ের খুব ভালো সম্পর্ক হয়েছে… আব্বু তো মিথিকে আমার থেকে বেশি আদর করে
.
সবাই বলে আমি নাকি খুবই ভাগ্যবান। তার জন্যই নাকি মিথি মতো একটা এতো ভালো বউ পাইছি। কিন্তু আমি তো জানি আমার বউ কেমন। সারাদিন অফিসে থাকি, রাতে বাড়ি ফিরলে কই একটু আদর যত্ন করবে, তা না করে, এটা দাও, ওটা দাও, কি আনছো??
আমি তোমাকে খাওয়ার সময় এটা দিব না ওটা দিব না, উফফফ অসহ্য।
.
আমি কেন যেন দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছি। মিথি আগেও এমন পাগলামী করত, আর আমি ওর সাথে সায় দিতাম কিন্তু এখন কেন যেন রাগ হয় ওর পাগলামী দেখলে।
.
.
এখন বলি মা বা আমি কিভাবে ওকে আমার বউ করে এনেছিলাম।
.
.
ফ্লাশব্যাক
,
৩ বছর।
.
বাসর ঘরে ঢুকলাম। কিন্তু অনেক কে ঘুষ দিয়ে ঢুকতে হইছে এ ঘরে। টাকা ছাড়া নাকি এ ঘরে কেউ ঢুকতে দিব না। তাই বাধ্য হয়ে নগদ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। হারামজাদারা, ওদের যদি আজ টাকা না দিতাম তাহলে বোধ হয় আমাদের দুজন কে পুকুর পাড়ের বাশ বাগানে পাঠাতো।
.
ঘরে ঢুকে দেখি মেয়ে খাটে বসে আছে। ধুররর আমাকে এসে সালামও করল না। পাজি মেয়ে একটা। আমার হাতে পরছে না, দুদিনে ভালো করে দেব। হুহ।
.
আমি খাটে গিয়ে একপাশে বসলাম। কিন্তু ও তখন এমন একটা কথা বলবে ওটা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
– এই শুন আমার চকলেট লাগবে। চকলেট দেও
– কিইইইইই????????
– বয়রা নাকি শুন নাই।
– চকলেট দিয়ে কি করবা?
– খাবো
– ভাত খাও।
– আমি চকলেট খাব, সো চকলেট আনো।
– আমি পারব না।
– আমি কিন্তু এবার কান্না করব?
– করো।
ভ্যা ভ্যা ভ্যা ভ্যা
– আরে আরে আরে এ তো সত্যি সত্যি ভেড়ার মতো কান্না করছে।
– কি আমি ভেড়া।
– না। তুমি ভেড়ী।
– আম্মুওওওওওও।
– ওই থামো থামো।
– তাইলে আমার চকলেট দাও।
– দাড়াও আনছি।
.
.
আমি এ কারে বিয়ে করে আনলাম। ভাবছি আমি আমার বউকে শাসন করব। যা বলব তাই পালন করব। কিন্তু এখন দেখি তার উল্টো টা হচ্ছে। আমারে আমার বউ আমার ঘাড় ধরে নাচাচ্ছে।
.
উফফফ হায় কপাল শেষে এমন মেয়ে কে বউ করে আনলাম। কি যে করি, ধুর মনে কয় নিজেই বাড়ি ছাইড়া বৃন্দাবন গিয়ে থাকি।
.
.
.
.
তারপর আর কি বলব?? তারপর থেকে আজ পর্যন্ত এভাবেই চলে আসছে। কিন্তু আমাদের মাঝে ভালবাসার কোনো অভাব নেই। মিথি যতই দুষ্টামি পাগলামী আর বাচ্চাদের মতো করুক না কেন,,,, তবুও ও আমাকে অনেক ভালবাসে।
.
আমি যেদিন অফিস থেকে আসতে ইচ্ছে করে রাত করে দেরীতে ফিরে তখন দেখি কেদে পাগলীটা চোখ লাল করে ফেলে, আমি আসা মাএই আমাকে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কিল ঘুসি যা পারে সেগুলো দিয়ে আবার কান্না শুরু করে।
কেন আমি এতো রাত করে ফিরছি?
এতখন কই ছিলাম?
বাড়ি আসি নাই কেন?
তুমি জানো আমার কত ভয় করছিল?
আমি একা তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না।
তবুও কেন তুমি দেরী করে আসো?
আবার এমন হলে কিন্তু আমি বাপের বাড়ি চলে যাব।
.
এটা ওটা আরও কত কিছু যে বলে পাগলীটা।
.
.
বর্তমান।
.
.
আমাকে চকলেট না দেওয়ার জন্য, আমি ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে বসে আছি। কিন্তু হটাৎ করে কোথা থেকে যেন পাগলীটা দৌড়ে এসে আমার কোলে বসে পড়ল।
– এই এখানে বসলা কেন সরো।
– একদম না।
– কেন?
– এমনি। রাগ করছো?
– হুম।
– আচ্ছা দাড়াও চকলেটের চেয়ে ভালো টা দিচ্ছি।
– কি?
– চোখ বন্ধ করো।
– ওকে।
উমমমমমমমমমমমমম
– এই কি করছো? সব লিপ্সটিক আমার মুখে দিলা।।
– কেন? ভালো লাগে নি?
– না সেটা না,
– তাহলে?
– না এমনি কিছু না।
– আচ্ছা বসে থাকো।
– হুম।
– হুম কি হ্যাঁ? আর একটু শক্ত করে ধরতে পার না।
– আচ্ছা বাবা ধরছি। হইছে এবার?
– হুম। এবার বসে আকাশ দেখ।
– ওকা.. আমি আকাশে তারা হই দেখিও তখন..!
– চুপ….! আমার নিচের ফাগুন টা সবসময় আমার মনের আর চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। এটা তো তাই সবসময় দেখি।
– হুম।
– হুম ২, হিহিহি।
– পাগলী।
– পাগল।
.
.
.
এভাবেই চলছে আমাদের জীবন, ভালবাসা আর ছোট্ট সংসার। হয়তো যতদিন বেচে আছি ততদিন আমার পাগলীর ভালবাসা নিয়েই বেচে থাকতে পারব। যদিও পাগলীটা একটু বেশীই পাগলামো করে, তবুও আমাদের ভালবাসা অটুট থাকবে। আগে পৌষি ছিলো এখন কল্পনায় মিথি
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক