-আচ্ছা নয়ন শোনো!!তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো… করি…?
-যদি ‘না’ বলি তাহলে কি আর করবেনা..?
-অফ কোর্স! তা’ও করবো…
-কিন্তু আমি’তো তখন উত্তর দিবোনা।
-মানে কি নয়ন? উফফ, তুমি এমন কেন?সব কথার ভীতরেই একটা না একটা প্যাচ তৈরী করো!…যাও তোমার সাথে কোনো কথা নাই।
-আচ্ছা আচ্ছা সরি বাবা,মাফ করে দাও!!
আমাকে কি যেন প্রশ্ন -টশ্ন জিজ্ঞেস করবে বলছিলে,তুমি বরং সেটাই করো।
-শুধু প্রশ্নই জিজ্ঞেস করবো,টশ্ন নয় বুদ্ধু।(একটু হেসে)
-হ্যা বুঝলাম,করো…
-ঠিক ঠাক উত্তর দিবা তো..?
-হুম দিবো।
-এই ধরো, বাই চান্স আমাদের লাইফে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত একটা প্রব্লেম চলে আসে যেটার বলতে গেলে কোনো সমাধান নেই,তখন তুমি কি করবে?? আমাকে ছেড়ে চলে যাবে??
–উমম…(ভেবে)তোমার এই প্রশ্নের উত্তরটা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই…হয়তো যেতেও পারি আবার নাও যেতে পারি ~~ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সেটা না হয় সময়ই একদিন বলে দিবে!
-হুম, ওই সময় এর অপেক্ষাতেই তো আছি……..(আস্তে কন্ঠে)
-তাছাড়া কিন্তু “আই লাভ ইউ!”
-হুম,লাভ ইউ টু!
.
তো এভাবে বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর একটা সময় নয়ন নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো এবং হিয়াকে বললো~~~
-আচ্ছা হিয়া,শোনো -অনেকটা সময়’তো পার হয়ে গেলো ,এখন তাহলে আমি আসি।পরে একসময় কথা হবে কেমন?
-কিহহ..?এইতো সবেমাত্র এলে আবার কোথায় যাবে?(হিয়া)
-জরুরী কিছু কাজ বাকি ছিলো..!সেগুলোই সারতে হবে আরকি!
-ওহ,ঠিক আছে. ..সাবধানে যেও..আর হ্যা!
-আর কি বলো….?
-জানি তোমার হয়তো মনে থাকবেনা, তবুও বলে রাখলাম.. ফ্রি হয়ে অন্তত একটা কল দিও!
-‘ওকে’~~
এই শব্দটা বলেই একটু তাড়াহুড়ো দেখিয়ে নয়ন ওখান থেকে চলে গেলো।হিয়া নয়নের দূরে মিলিয়ে যাওয়াটা অপলক চোখে দেখতে থাকলো।
.
সত্যি কথা বলতে, নয়নের এভাবে চলে যাওয়াতে হিয়া নিজে একটু মন খারাপই করলো।আর করবে’ই না বা কেন?একে’তো ছেলেটা ওকে খুবই কম সময় দেয় তার উপরে দেখা করতে চাইলে এই কাজ সেই কাজের বাহানা দিয়ে ঠিক করে দেখাও করতে চায়না।
.
একটা মেয়ে সব সময় চায় তার প্রিয় মানুষটা তাকে কিছু সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিক।এমন কিছু মুহূর্ত যেখানে থাকবে” না বলা কিছু কথা” যে কথা গুলো বলবে স্থির অচঞ্চল দু’টি চোখ~~ সময়ের কোনো তাড়া থাকবেনা, থাকবে শুধু দুটি মনের মানুষের কাছে আসার অপেক্ষা~~আর থাকবে ভালোবাসার কিছু দুষ্টু -মিষ্টি খুনসুটি যা একটা সম্পর্কের ভীতকে আরো মজবুত আরো মধুর করে তুলবে। কিন্তু হিয়ার ক্ষেত্রে বোধহয় ব্যাপারগুলো আদৌ খাটে না।
.
”আচ্ছা নয়ন এমন কেন?আমি কি চাই না চাই সেটা কি ও একদমই বুঝেনা?নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে ~~ আমাকে অ্যাভোয়েড করে!!না’কি আগের মতো এখন আর আমাকে ভালোবাসেনা?..না, না!এসব কি উল্টা-পাল্টা ভাবছি একটু আগেই তো আমায় “আই লাভ ইউ” বললো।ভালোবাসে তবেই তো বলেছে কথাটা!তাহলে..?তাহলে প্রব্লেম কোথায়? ভালোবাসি বলে আমাকে এতোটা ইগনোর করার কোনো মানে হয়?আমার কি কস্ট হয়না?(হিয়া অন্যদিকে মুখ করে বসে মনে মনে কথাগুলো ভাবছে)
.
|২|
↓
-কিরে পাগলী! এখানে এভাবে ঘোমড়া মুখ করে বসে কি ভাবছিস..?
.
(আওয়াজটা শুনামাত্রই হিয়া সামনের দিকে লক্ষ্য করে তাকালো, ~~ কেউ পরিচিত একজন ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, যাকে মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ভাবে চিনে…হুম ছেলেটির নাম হৃদয়…প্রাণোচ্ছল এবং হাসিখুশি মানুষ দের একজন। এককথায় হিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড যার সাথে সব কথা শেয়ার করা যায়)
.
-কিরে মটূ কি ভাবছিস?(চোখের সামনে চুটকি বাজিয়ে)
-এইতো কিছুনা এমনি..!(হিয়া)
-আরে বলনা এভাবে গুমসুম হয়ে কি ভাবছিলি?
-ছাড় তো,কিছুনা।তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি হৃদয়?
-কি কথা?আচ্ছা কর!
-আমার লাইফে যদি কোনোদিন কোনো প্রব্লেম চলে আসে তবে তুই কি আমাকে সেই অবস্থায় হেল্প না করে ছেড়ে আসবি?
-বুদ্ধু, এটা কি কোনো জিজ্ঞেস করার মতো কথা হলো?তোর মাথায় এসব আজগুবি চিন্তাভাবনা কোথাথেকে আসে বলতো?
.
-যেটা জিজ্ঞেস করছি সেইটার উত্তর দে তো…আমার সঙ্গ ছেড়ে যাবি কি না?
-ধুর পাগলী অবশ্যই তোর পাশে থাকবো.. যেমনটা ছোটকাল থেকে এখন অবধি আছি।এরকম অদ্ভুত কল্পনা আর করবিনা ঠিক আছে?
-কেন করবোনা?আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস বাট আমি’তো তোকে শুধু ফ্রেন্ড ভাবি আর তুই তো জানিসই আমি অন্য একজনকে লাভ করি।
-হুম, জানি।কিন্তু তাতে কি? তুই আমাকে ভালো নাইবা বাসতে পারিস কিন্তু আমি তো তোকে বাসি।ওয়ান সাইড লাভ লাভ নয় কি?
.
-(হিয়া কিছু না বলে চুপচাপ শুনছে)
-একটি ভালোবাসার গল্পে ভালোবাসা পাওয়া বা হারানো জরুরি নয় একজনের জন্য অন্যজনের মনে কি ফিলিংস আছে সেটা জরুরী…. বুঝলি রে পাগলী?
-হুম হৃদয় বুঝলাম।তুই আমার লাইফে খুব স্পেশাল একজন রে, খুব জরুরি একজন মানুষ…!সারাজীবন ঠিক এভাবেই আমার ফ্রেন্ড হয়ে পাশে থাকিস….কি থাকতে পারবিনা?
-হুম,পারবো রে পাগলী পারবো।এখন তাহলে চল…
-কোথায়?
-সারাদিন কি এখানে এভাবে একা একা বসে কাটানোর প্ল্যান আছে নাকি তোর হ্যা?বাসায় যাবি আর কোথায়?চল তোকে পৌছে দিয়ে আসি।
-হিহি,তুইওনা..!(হেসে)আচ্ছা চল।
.
(অত:পর ওরা দুজন সেখান থেকে এটা সেটা নিয়ে কথা বলতে বলতে বাড়ি চলে গেল)
.
: গল্পটা এখনো শেষ হয়নি:
বাকি আছে
.
.
ঠিক সাত দিন পর….
-ওই তুমি এ ক’টা দিন কই ছিলা হ্যা?আর চেহারার এ অবস্থা কেন?(নয়ন)
-ইয়ে মানে আমি অ্যাকচুয়ালি….( কিছু বলার আগেই হিয়া কাদতে থাকে)
-কোথায় ছিলা বলো?আর এভাবে কাদছো কেন?
– এক সপ্তাহ আগে আমার রেপ হয়েছিল।(একপ্রকার ফ্যাকাশে মুখে ককলথাটা বলল হিয়া)
-হোয়াটটটট..?
-হ্যা নয়ন!
-তাহলে তো আমার ফ্যামিলি তোমাকে কখনো এক্সেপ্ট করবেনা, তোমাকে আমার থেকে দূরে সরে যেতে !
-প্লিজ নয়ন এভাবে কথা বলোনা, আমার শুনতে কস্ট হচ্ছে।আচ্ছা তুমি না আমাকে ভালোবাসো?তবে? আমাদের না কথা হয়েছিল সারাজীবন পাশে থাকার?তাহলে এখন কেন আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো?
-সরি হিয়া!আমি আমার ফ্যামিলির বিরুদ্ধে যেতে পারবোনা।
(কথাটা শুনে মেয়েটা মুখ বুঝে ফুপিয়ে কাদতে থাকে)
.
আচমকা হিয়া একটা হাতের স্পর্শ পেল। হাতটি হিয়াকে নিজের দিকে টেনে জড়িয়ে ধরেছে।হিয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। হাতটি ওর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে..এবং বলছে … “এই বোকা মেয়ে এভাবে কেউ কাদে নাকি হুম?তুই কি ভুলে গিয়েছিস তোকে দেয়া আমার প্রমিসের কথা?এই ছেলেটা তোর পাশে থাকবেনা তো কি হয়েছে আমি আছি তো?সারাটাজীবন এভাবে তোর পাশে থেকে যাবো বুঝলি?
.
হিয়া চোখ উচিয়ে দেখে; হৃদয় জড়ে ধরিয়ে আছে ওকে।
-এতোক্ষন আড়াল থেকে দেখলাম তোর তামাশা। তোর মতো ছেলের হিয়ার ধারে কাছে থাকারো যোগ্যতা নাই।ভালোবাসিস আর কঠিন পরিস্থিতি তে নিজের প্রিয় মানুষ এর হাত ছেড়ে দিস!ইউ নো হোয়াট?তোর মতো ছেলেদের ভালোবাসার জন্যে পবিত্র মন থাকেনা থাকে শুধু আবেগ,লোভ আর ধোকা।আর কিছু বলবো নাকি এখান থেকে বিদায় হবি?(হৃদয়)
.
(নয়ন সেখান থেকে চুপচাপ চলে গেলো)
-ওর মতো তুই ও এখান থেকে চলে যা হৃদয়। আমার লাইফটা তো বরবাদ হয়েই গেছে।
-কখনোই না
-বোঝার চেষ্টা কর হৃদয়,আমি এখন আর কারোরই যোগ্য নই।
-তুই কে হস এই কথা বলার?আমি তোকে বলেছিলাম না সারাজীবন তোর পাশে থাকবো…….আমাকে বিয়ে করবি?(হৃদয়)
.
হিয়া কিচ্ছু না বলে সোঝা হৃদয় কে জড়িয়ে ধরে বলে… ”’ভালোবাসি তোকে আই লাভ ইউ!”
-লাভ ইউ টু(হৃদয়)
.