ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

শ্রাবণী আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। শ্রাবণী কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
– পিয়াস তোর সমস্যাটা কি?
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
— আমার তো কোন সমস্যা নেই।
শ্রাবণী এইবার আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
– তুই আমার চোখের দিকে তাকাতো।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— তোর চোখের দিকে তাকানোর কি আছে?

শ্রাবণী এইবার আমার কাছে এসে আমার শার্টের কলারটা চেপে ধরে বললো,
– ইদানিং যে তোর চেহারার মাঝে একটা চোর চোর ভাব এসেছে সেটা কি তুই বুঝতে পারছিস? আগে তুই আমার দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকাতি কিন্তু এখন কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি তোর চোখে আমার চোখ পড়লেই তুই চোখ নামিয়ে নিচ্ছিস। তোর চোখের মাঝে এখন একটা ভয় ভয় ভাব এসে গেছে। বিষয়টা কি বলতো?

আমি কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললাম,
— আমি আজ আসি রে। টিউশনিতে যেতে হবে। কাল দেখা হবে।

এই কথা বলে আমি শ্রাবণীর কাছ থেকে এসে গেলাম। শ্রাবণী বেশ কয়েকবার আমাকে পিছন থেকে ডেকেছিলো কিন্তু আমি তা শুনিনি। কারণ ও যে প্রশ্নগুলো করেছিলো সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার কাছে নেই। আমি নিজেও জানি না হুট করে আমার কি হলো। শ্রাবণীর সাথে আমার বন্ধুত্ব ৩ বছরের। এই ৩ বছরের মধ্যে আমার চোখে শ্রাবণীকে অন্য রকম লাগেনি। কিন্তু সমস্যাটা হলো সেদিন যেদিন আমি প্রথম শ্রাবণীকে খোলা চুলে সবুজ রঙের শাড়ি কপালে সবুজ টিপ আর হাতে কাচের চুরি পরা অবস্থায় দেখেছিলাম। ভার্সিটি নবীন বরণ অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম। তারপর থেকে কেন জানি শ্রাবণীকে দেখলে আমি স্বাভাবিক থাকতে পারি না। ওর কাছে গেলেই আমার বুকের ভিতরটা কেমন যেন চিনচিন করে উঠে। ওর চোখের দিকে তাকালেই আমার ভিতরে একটা অজানা ভয় কাজ করে….

আফজাল সাহেব লক্ষ্য করলেন তার মেয়ে শ্রাবণী খুব রেগে আছে। বাসায় এসেই শ্রাবণী জুতাগুলো একদিকে, আর আরেকদিকে ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে সোফায় এখন চুপ করে বসে আছে। আফজাল সাহেব মেয়ের পাশে বসতে বসতে মুচকি হেসে বললেন,
~আজকেও কি কোনো কাজ হয় নি?

শ্রাবণী মাথা নিচু করে বললো,
– না বাবা, আমার মনে হয় হাদারাম কখনোই আমাকে প্রপোজ করবে না।

আফজাল সাহেব চোখ থেকে চশমা খুলে রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বললো,
— তুই ও তো নিজ থেকে প্রপোজ করতে পারিস না কি? ৩ বছর ধরে শুধু পিয়াসকে ভালোবাসেই গেলি অথচ নিজের ভালোবাসার কথাটা ওকে জানালি না।

আফজাল সাহেবের কথা শুনে শ্রাবণী কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
— আমি কেন প্রপোজ করবো? ঐ গাঁধাটা কি বুঝতে পারে না যে আমি ওকে ভালোবাসি। প্রতি সপ্তাহে যে নিজ হাতে রান্না করে ওর পছন্দের খাবার খাওয়ায়। সবুজ রঙ আমার সবচেয়ে অপছন্দ রঙ হওয়া সত্ত্বেও ওর প্রিয় রঙ সবুজ দেখে সবুজ রঙের শাড়ি পরে ওর সামনে ঘুরঘুর করি। ও লম্বা চুল পছন্দ করে দেখে এই গরমের মাঝেও আমি চুল না কেটে এত লম্বা চুল নিয়ে আছি! এইসব দেখেও কি ও বুঝতে পারে না যে আমি ওকে ভালোবাসি?

মেয়ের কথা শুনে আফজাল সাহেব হাসতে হাসতে বললো,
— ঐ যে বললি গাঁধা। গাঁধা দেখেই বুঝতে পারে না….

৩ ঘন্টা ধরে চেষ্টা করছি শ্রাবণীকে নিয়ে কিছু লেখার জন্য কিন্তু পারছি না। তাই মেজাজ খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝ রাতে আমার রুমমেট মামুন ভাইয়ের মুখে কিছু অশ্লীল শব্দ আর আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। বুঝতে পারছিলাম উনি উনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। কিন্তু এমন সব টপিক নিয়ে কথা বলছে যে বিষয়গুলো একান্তই ব্যক্তিগত। তাই আমি যখন বাধ্য হয়ে বের হয়ে যাবো তখন বড় ভাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– পিয়াস, তুমি ঘুমাও নি?

আমি মাথা নিচু করে বললাম,
— জ্বী ভাই। ঘুমিয়েছিলাম কিন্তু আপনার কথা শুনে ঘুম ভেঙে গেলো।

বড়ভাই তখন আলতো করে হেসে দিলেন। তারপর বললেন,
– মাঝরাতে কথা বললে এই রকম একটু-আকটু হয় আর কি। তুমি তো প্রেম করো না। যখন
প্রেম করবে তখন তুমিও এমন করবে।

আমি অবাক হয়ে ভাইয়াকে বললাম,
— এইসব বাদে কি প্রেম করা যায় না?

বড় ভাই সিগারেটে আগুন ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন,
– এইসব ছাড়া প্রেম টিকে নাকি? এইগুলোই তো প্রেমের আসল ধাপ। আজকাল প্রেম করেই বিয়ের মজা নেওয়া যায়।

আমি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— মানে?
বড় ভাই বললো,
– তুমি এখন বুঝবে না। যখন প্রেম করবে তখন বুঝবে। তখন তুমিও গার্লফ্রেন্ডকে বলবে মাঝ রাতে ফোন সেক্স করার জন্য। মাঝে মধ্যে বলবে ন্যুড পিক দেওয়ার জন্য। বৃষ্টির দিনে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে রিকশা করে ঘুরতে বের হবে। রিকশার হুড লাগিয়ে তুমিও নীল পর্দার আড়ালে গার্লফ্রেন্ডর ওড়নার নিচে হাত দিবে। পার্কের নিরিবিলি পরিবেশে তুমিও গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে গিয়ে ওর ঠোঁটের স্বাদ নিবে। আর যদি কখনো সুযোগ হয় গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে গিয়ে হোটেলের কোনো আবদ্ধ রুমে দুইঘন্টা সময়ও কাটিয়ে আসবে।

আমি বড় ভাইয়ের কথাগুলো হা করে শুনলাম। তারপর ভাইয়াকে বললাম,
— একটা মেয়ে কি চায়?
বড় ভাই সিগারেটের আগুনটা নিভিয়ে বললো,
– একটা মেয়েও এই সবকিছুই চায়….

গতকাল রাতে একটুও ঘুম হয় নি। মাথাটা এখনো ব্যাথা করছে। ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম। আমি রাস্তায় হাঁটছি আর গতকাল রাতে ভাইয়ের বলা কথাগুলো ভাবছি। রাস্তার পাশে যে ড্রেনের কাজ চলছিলো আমি সেটা খেয়ালই করি নি। আমি কখন হোঁচট খেয়ে ড্রেনে গিয়ে পড়লাম, নিজেও জানি না। আশেপাশের লোকজন আমায় টেনে তুললো। মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি আমি হাসপাতালে শুয়ে আছি। আর আমার পাশে শ্রাবণী বসে অনবরত কান্না করছে। আমি শ্রাবণীকে বললাম,
— ব্যাথা পেয়েছি আমি কিন্তু তুই কেন কান্না করছিস?

শ্রাবণী রাগে আমার গালে থাপ্পড় মেরে বললো,
-কেন কান্না করছি সেটা যদি তুই বুঝতি তাহলে আজ নর্দমার ড্রেনে না, আমার প্রেমে পড়তি।

আমি তখন শ্রাবণীর চোখে চোখ রেখে বললাম,
— তোকে মাঝ রাতে ফোন করে কখনোই নিজের সেক্সুয়াল ফিলিংসের কথা বলবো না বরং তোকে ভালোবাসি বলে ফোনটা রেখে দিবো। তোর কাছে আমি কখনোই তোর ন্যুড পিক চাইবো না বরং মাঝে মধ্যে তোকে বলবো শাড়ি পরে খোলা চুলে একটা পিক তুলে দেওয়ার জন্য। বৃষ্টির দিনে হুডতোলা রিকশায় সবার আড়ালে তোর বুকে কখনোই আমি স্পর্শ করতে চাইবো না বরং চাই বৃষ্টির দিনে হুড তোলা খোলা রিকশায় দুইজনে কাকভেজা হয়ে পুরো শহর ঘুরতে। পার্কের নিরিবিলি পরিবেশে কখনোই আমি তোর ঠোঁটের স্বাদ নিতে চাইবো না বরং চাইবো নিরিবিলি পরিবেশে তোকে আমি সুনীল কিংবা নির্মলেন্দু গুণের কবিতা শুনাতে। তোকে নিয়ে আমি হোটেলের কোন রুমে দুই ঘন্টার জন্য আবদ্ধ হয়ে থাকতে চাইবো না বরং চাইবো তোর হাত ধরে জনসমুদ্রে হারিয়ে যেতে। এবার বল, তুই কি আমার হাতটা ধরবি?

আমার কথা শুনে শ্রাবণীর কান্নার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে আর আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমি অবাক হয়ে ওর কান্না ভেজা চোখগুলো দেখছি…

মেসে এসে রুমে ডুকতেই দেখি সারা রুম সিগারেটের ধোঁয়ায় ভরে আছে। মামুন ভাই একের পর এক সিগারেট খাচ্ছে। আমি ভাইকে বললাম,
— ভাই আপনি ঠিক আছেন তো?

মামুন ভাই চিৎকার করে বললো,
– শালীর বেটি আমায় ধোঁকা দিছে। আমার সাথে রিলেশন ব্রেক আপ করে দিছে।

আমি অনেক কষ্টে নিজের হাসিটা আটকে রেখে বললাম,
— প্রেমের এত মজা পাওয়ার পরেও আপনাকে ছ্যাঁকা দিলো?

বড় ভাই রাগী চোখে আমার দিকে তাকাতেই আমি হেসে দিয়ে বললাম,
— ভাই, আমরা সবাই শুধু প্রেমিক হতে চাই কিন্তু আমরা কেউ ভালোবাসতে চাই না। যাকে ভালোবাসবেন তাকে নিয়ে কখনোই খারাপ চিন্তা মাথায় আসবে না। আর যদি কখনো খারাপ চিন্তা মাথায় আসে তাহলে ধরে নিবেন সে আপনার চোখে শুধু মাত্র প্রেমিকা এখনো ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠেনি ….

রাত ২টা বেজে ১০ মিনিট। শ্রাবণী ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করলো আর অপর প্রান্ত থেকে শুধু ৩টা শব্দ শুনা গেলো,
” ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। “

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত