:-দোস্ত কি করিস?
আবিরের কথা শুনে একটু বিরক্তকির ভাব দেখিয়ে বললাম,
:-ঘাস কাটছি।
:-কেন ভাত খাস নি।
এবার একটুু রেগে গিয়ে বললাম
:-দেখতে পাচ্ছিস বসে বসে এসাইনমেন্ট করছি তবুও জিজ্ঞাসা করছিস কেন?
:-রাগ করছিস কেন।
বলেই আবির পাশে ধপাস করে বসে পড়লো।।
কিছুক্ষন পর নিলয়,আকিব আর ইরা আসলো।।
কিরে মানিক জোড় কি করস তোরা।।
:-কুতকুত খেলছি খেলবি।(আমি)
:-হুম খেলবো।
বলেই সব বসে পড়লো পাশাপাশি।
না আর এসাইনমেন্ট টা করা হবে না।।
হঠাৎ ওদের ভিতর থেকে নিলয় বলে উঠল,
:-দোস্ত তুই কি প্রেম করবি না।
:-হুম করবো।
:-করবো করবো করে তো সেমিষ্টার শেষ এর দিকে তারপর যে যেখানে খুশি সেটেল হয়ে যাবো তখন কি প্রেম করবি নাকি,আর তখন করলে তো আমরা কেও দেখতেও পাবো না।
নিলয় এর কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম তারপর বলতে শুরু করলাম।
:-প্রেম করবো না সেটা তো বলি নাই,তবে মনের মতন কাওকে পেলে ঠিকি করবো।
আমার কথা শুনে ইরা বলে উঠলো,,
:-তো মহাদয় আপনার কেমন মেয়ে লাগবে শুনি।
:-সেটা এখন বলতে পারবো না,তবে যাকে ভালোবাসবো সে ১ম যেদিন সামনে আসবে সেদিন ই তার প্রেমে পড়ে যাবো।
:-সেই দিন টা মনে ক্যালেন্ডার এর পাতা থেকে হারিয়ে গেছে।
বলেই সবাই হাসতে শুরু করে দিলো।
এমন সময় আবির বললো,দোস্ত চল সবাই মিলে আজকে কফি খাবো।।
যেই বলা সেই কাজ,সবাই মিলে হাটা শুরু করলাম কফিশপের দিকে।
আমাদের ক্যান্টিনের পাশে একটা ভালো কফিশপ আছে অনেক বড়।
কফিশপ এ ঢুকতেই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম,মেয়েটির পোষাক আশাক দেখে মনে হলো,মেয়েটি খুব সাধারন একটা পরিবারের মেয়ে হাতে একটা বই আর খাতা আছে। তারমানে আমাদের কলেজেই পড়ে।
ভিতরে গিয়ে টেবিলে বসলাম,আর নিলয় ওয়েটারকে ডাক দিলো।
কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে আসলো অর্ডার নিতে,তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটি যার সাথে একটু আগে ধাক্কা লেগেছিলো আমার।।
বুঝলাম মেয়েটি স্টাডির পাশাপাশি এখানে জব ও করে।।
সবাই কফি খাবো বললাম মেয়েটি আসতে করে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলো।।
কিছুক্ষন পর মেয়েটি চারটি কফি নিয়ে আসলো আর আমাদের কে দিতে গিয়ে একটা কফি নিচে পড়ে গেলো টেবিলের উপর।।
পড়বি তো পড় ইরার সামনেই পড়লো,ইরা সাথে সাথে মেয়েটাকে একটা চড় মেরে দিলো।
:-বেয়াদপ কোথাকার কানা নাকি,কাজ করতে পারো না তো কাজ করতে এসেছো কেন।।এদের কে যে কে কাজে নেই।।
:-ইরা চুপ কর,তোর গায়ে তো পড়ে নি।।
:-চুপ করবো কেন? গায়ে পড়েনি তো কি হয়ছে যদি পড়তো তখন কি হতো,এরা এমনই একটু সুযোগ দিলেই মাথাই উঠে বসে।।
:-আচ্ছা যখন পড়তো তখন দেখা যেতো,এখন যেহেতু পড়ে নি তো চুপ করে থাক।।
এই যে আমরা অন্য টেবিলে বসছি।।
মেয়েটি এতক্ষন অপরাধীর মতন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলো,আর আসতে আসতে সরি বলছিলো।।
সরি ম্যাডাম আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি আম এক্সট্রেমলি সরি।।
অতঃপর আমরা অন্য টেবিলে গিয়ে বসলাম আর ইরার জন্য আবার নতুন করে কফি নিয়ে আসা হলো।।
আমরা সবাই কফি খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম,আর আমি কফি খাওয়ার ফাকে মেয়েটির দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছিলাম।।
আসলেই মেয়েটি অনেক সুন্দর আসার চেহারার ভিতরে একটা অদ্ভৃত মায়া আছে,যখন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলো তখন তার চেহারার প্রতি কেমন জানি একটা মায়া কাজ করছিলো।।
কফি খাওয়া শেষ করে বিল টা দিয়ে বার হয়ে গেলাম।।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সুয়ে পড়লাম,কিন্তু মেয়েটার মায়াভরা মুখটা আমাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না,বার বার মেয়েটার মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।।
কেমন জানি একধরনের ভালো লাগা কাজ করছে মেয়েটার উপরে,কতই না মেয়ে দেখেছি ওর থেকেও অনেক সুন্দরি কিন্তু কখনো এমন অনুভূতি হয় নি আজকে যেমন টা হচ্ছে ঐ মেয়েটাকে দেখার পর।।
মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নাই।।
সকালে রোদের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙ্গলো।।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্য।।
আজকে আমার প্রধান কাজ হলো ভার্সিটি শেষ করে কফিশপে যাবো আর মেয়েটাকে দেখবো।।
ভার্সিটি শেষ করে একা একা গেলাম কফিশপে গিয়ে ডাক দিলাম,,গতদিনের মতনই ডাক শুনে মেয়েটি ভিতর থেকে বার হয়ে আসলো।।
:-জ্বি বলুন স্যার।
:-একটা কফি।
:-আর কিছু।
:-না শুধু কফি।
:-ওকে স্যার ধন্যবাদ।
বলেই মেয়েটি চলে আসলো,আমি শুধু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকি আর কথা গুলো শুনতে থাকি।।
কারন মেয়েটার কন্ঠটা এতোই মিষ্টি যে সারাক্ষন শুনতে মন চাই।।
এভাবে প্রাই কফিশপে যেতে লাগলাম কখনো বন্ধুদের সাথে আবার কখনো বা একা একা।
কিন্তু মেয়েটার সাথে বেশিকথা বলতে পারতাম না,শুধু অর্ডার আর বিল পেমেন্ট করার সময় ছাড়া।
ভাবলাম এবার মেয়েটার সাথে বাইরে কোথাও দেখা করতে হবে কথা বলার জন্য।
কারন কফিশপে তো মেয়েটার সাথে তেমন ভাবে কথাই হয় না।।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম মেয়েটি দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত কফিশপে থাকে।।
সেদিন রাতে দাড়িয়ে মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।।
অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর দেখলাম মেয়েটা আসছে।।
আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার হাটা শুরু করে দিলো।।
আমি মেয়েটিকে পিছন থেকে ডাক দিলাম।।
:-এই যে শুনেন একটু।
মেয়েটি আমার ডাক শুনে থমকে দাড়ালো।।
আমি কাছে এগিয়ে গেলাম।
:-আপনার নাম টা কি জানতে পারি।
:-নাম শুনে কি করবেন।
:-কিছু না এমনিতেই জানতে চাইলাম আর কি।
:-আমার নাম নীলাদ্রি।
:-ওহ্ নাইস নেম আমি রিফাত।
:-ওহ্ আচ্ছা,আর কিছু বলবেন।।
:-আপনি কি বাসায় যাচ্ছেন।
:-হ্যা।
:-কোথাই আপনার বাসা।
:-শাহ্ বাগ
:-ওহ্ আমি ওদিক হয়ে যাবো,কিছু মনে না করলে আপনি আমার সাথে যেতে পারেন।
:-ধন্যবাদ,তার আর দরকার পড়বে না।
বলেই নীলাদ্রি একটা অটো দেখে চলে গেলো।।
পর দিন আবার ঠিক সময়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।।
সেদিনও নীলাদ্রি আমাকে এভোয়েড করে অটো করে চলে গেলো।।
তখন একটু রাগ হলো মেয়েটার উপর,এতো দেমাগ দেখাই কেন।
আমি তো লিফ্ট ই দিতে চেয়েছি।।
সেদিন রাতে থেকে প্রচন্ড জ্বর শুরু হলো আমার।।বিছানা গত হয়ে গেলাম,বিছানাতে সুয়ে সুয়ে সারাক্ষন নীলাদ্রির কথাই ভাবতাম,মেয়েটাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।।
কিন্তু মেয়েটা কি রাজি হবে।টানা একসপ্তাহ পর জ্বর ছাড়লো,শরির টা এখনো দুর্বল তবুও থাকতে পারলাম না।।
কারন এই এক সপ্তাহে নীলাদ্রিকে অনেক মিস করেছি,তাই দুর্বল শরিরটাকে নিয়ে আসতে আসতে গিয়ে বসলাম ।।
একটু পর নীলাদ্রি আসলো,আপনি এতো দিন কোথাই ছিলেন।।
আমি নীলাদ্রির কথা শুনে ওর মুখের দিকে তাকালাম,দেখলাম ওর চোখে মুখে একধরনের বিষন্যতার ছাপ ফুটে উঠেছে।।
:-জ্বর এসেছিলো।
:-এখন কেমন আছেন?
:-হুম আগের থেকে ভালো সেই জন্য তো এখানে আসতে পারলাম।।
:-এখনো তো পুরোটুরি সুস্থ্য লাগছে না আপনাকে আপনার এখন রেষ্ট এর প্রয়োজন।।
:-হুম,কিন্তু একা একা আর যেতে পারবো বলে মনে হয় না।
:-তো কি করবেন।
:-এখনি তো আপনার কাজ শেষ হয়ে যাবে আপনি কি যাবেন আমার সাথে একটু।
অতঃপর নীলাদ্রি আর আমি একটা রিক্সাতে উঠে বসলাম।।
কিছুক্ষন চুপ চাপ বসে থাকার পর আমি কথা বলা শুরু করলাম।।
:-আচ্ছা আপনি লেখাপড়ার পাশাপাশি যে জব করেন, কষ্ট হয় না।
:-না কষ্ট হবে কেন,জবটা করতে ভালোই লাগে একসাথে সবার সাথে মিলে মিশে থাকা হয়।
:-ওহ্””””কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি।
:-হুম বলেন।
:-আপনার সেল নং টা কি পেতে পারি।
অবশ্য আপনার যদি অপত্তি না থাকে।
নীলাদ্রি একটু সংকোচ বোধ করলেও নং টা দিয়ে দিলো।।
এরপর থেকে আমি আর নীলাদ্রি ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম।।
প্রায়ই দুজনে সময় কাটাতাম,ওর কিছু হলে আমাকে সেয়ার করতো আর আমিও সবকিছু সেয়ার করতাম।।
একটা সময় বুঝতে পারলাম,একজন ভালো বন্ধুই পারে একজন ভালো লাইফপার্টনার হতে।।
তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নীলাদ্রিকে আমার মনের কথা জানাবো।।
নীলাদ্রিকে ফোন দিয়ে দেখা করার কথা বললাম,
বসে বসে নীলাদ্রির জন্য অপেক্ষা করছি,কখন আসবে সে।।
অনেক্ষন বসে থাকার পর নীলাদ্রির দেখা মিললো।।
:-কি এতো জরুরি তলব কিছু হয়ছে নাকি।
:-হুম অনেক কিছু হয়ছে।
:-কি হয়ছে বলো।
:-আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
:-কি বলো।
:-কিভাবে বলবো বুঝতেছি না।
:-ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলার কি আছে সোজাভাবে বলো।
:-আমি তোমাকে ভালোবাসি(চোখ,কান নিঃস্বাস সব বন্ধ করে)বলে দিলাম।
:-এই সহজ কথাটি বলতে এতোদিন লাগিয়ে দিলে।
:-ভয় লাগতো যদি ভালোবাসি কথাটি বলার পর তোমাকে হারিয়ে বসি।
:-তো আজকে কিভাবে বললে।
:-কথাটি রোজ আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো রাতে ঘুমাতে পারতাম না কেমন যানি দম বন্ধ লাগতো।
:-তুমি তো ভালোই জানো আমি কেমন পরিবারের মেয়ে।।
:-হুম যানি আর সেই জন্য তোমাকে ভালোবাসি।
:-কিন্তু আমি ভালোবাসতে পারবো না।
:-কেন?
:-কারন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা কখনো ভালোবাসা পাই না।
আর আমি চাই না তোমার আর আমার এই বন্ধুর সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাক।।
:-কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।
:-তাহলে বিয়ে করতে পারবা।
:-এখনই।
:-হ্যা এখনই বিয়ের পর ভালোবাসবো কেমন।
:-আচ্ছা আজকের রাত টা সময় দাও তারপর কালকে তোমাকে বলবো।।
:-আচ্ছা ঠিক আছে আজকে সারারাত ভাবো তুমি।।
সারারাত ভাবলাম,আসলেই তো আমি তো নীলাদ্রিকে ভালোবাসি আর ভালো যেহেতু বাসি সুতরাং বিয়ে তো করবোই,আর এই কইমাসে নীলাদ্রির সাথে মিশে যেটা বুঝেছি ওহ্ খুব ভালো একটা মেয়ে।।
অতঃপর সিদ্ধান্ত নিলাম,
নীলাদ্রিকে বিয়ে করবো।।
পরদিন নীলাদ্রির সাথে দেখা করে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম।
আমার পরিবার নীলাদ্রির পরিবারের সাথে কথা বললো,এবং দু পরিবার থেকে মেনে নিলো।সবকিছু জেনো স্বপ্নের মতন লাগছিলো।।
খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো আমার আর নীলাদ্রির।।
আজকে আমার বাসর রাত,আমি অনেক খুশি কারন যাকে ভালোবেসেছি তাকে পেয়েছি।।
রুমে ঢুকেই নীলাদ্রির পাশে গিয়ে বসলাম।।
:-কি এখন তো প্রেম করতে আর বাধা নেই।
ঘোমটা সরিয়ে জবাব দিলো।
প্রেম টা বিয়ের আগে হয় এখন যা হবে সেটা ভালোবাসা,আর আমার প্রেমে বিশ্বাস ছিলো না কিন্তু ভালোবাসাতে অনেক বিশ্বাস।
নীলাদ্রির কথা মাথাই কিছুই ঢুকলো না,যাই হোক ওসব নিয়ে চিন্তা করে আজকের রাতটাকে মাটি করতে চাই না।
সবাই বিয়ের আগে প্রেম করে আর আমরা না হয় বিয়ের পরে করবো।।
অতঃপর নতুন জীবনের একটা অধ্যায় খুললাম।।