স্পর্শের অনুভূতি

স্পর্শের অনুভূতি

-সরি , সরি ,সরি ……
>থাক আর বলতে হবে না ……(আমি)
-সরি বাবু , আর দেরি হবে না ……(সে)
>বাবু মানে ? আমাকে এখনো কি বাচ্চা মনে হয়???
-না, তা নয় … একটু আদর করে ডাকলাম …
>এইসব বাবু- টাবু আমার ভাল লাগে না …(আমি)
-তো কি বলে ডাকবো?? জান, সোনা , ময়না, কলিজা কোনটা? ??
>একটাও ডাকতে হবে না … যাস্ট তুমি বললেই চলবে …(আমি)
-আচ্ছা , একটা কথা বলো তো তুমি এত আন-রোমান্টিক কেন ??? আর এইসব জান, সোনা , বাবু , ইত্যাদি তো তোমার আমাকে ডাকা কথা আর তুমি নিজে তো ডাকোই না উল্টা আমাকেও ডাকতে দাও না …
>আসোলে এইসব ডাকার মাঝে যে ভালবাসা লুকায়িত থাকে তা নয় …
ভালবাসা মানে একজন আরেকজন কে মন থেকে অনুভব করা , হৃদয় দিয়ে হৃদয় ছোয়া , একজন আরেকজন কে বুঝতে পারা ,ভালবেসে ভালবাসার মানুষটীর পাশে থাকা , যা এই ঠুনকো কথার মধ্যে লুকায়িত থাকতে পারে না ……
-তাই তো তোমাকে আমি এতটা ভালবাসি …বাবুটা …
> এই যে আবার বাবু ……!!
-সরি, সরি, সরি …
>আচ্ছা তুমি কথায় কথায় এত সরি বলো কেন?
-আচ্ছা , সরি আর বলবো না …
> হা হা হা …আবারো কিন্তু সরি বল্লা …
-হি হি হি …আচ্ছা আর বলবো না …
>তো ডেকেছো কেন???
-তোমাকে দেখতে …
>তাই !!!
-জি , আমাকে তো আর তোমার দেখার ইচ্ছা করে না …… তাই আমাকেই ডাকতে হয় তোমাকে দেখার জন্য ……
>আসলে অনেক দেকতে ইচ্ছা করে , …(আমি)
-কই একদিন ও তো ডাকো নি , আমিই সবসময় ডাকি …
>ডাকি না এই জন্য যে , প্রতিনিয়তই দেখা হলে তোমার প্রতি , রুচি, আগ্রহ, ভালবাসা সবটাই কমে যাবে …
আজ থেকে তো দুই-তিন প্রজন্ম আগেও প্রেম ভালবাসা ছিল । তখন তো আর এই আধুনিক প্রজুক্তির বিভিন্ন ডিভাইস – মোবাইল , টেলিফোন , ইন্টারনেট ইত্যাদি ছিলো না । কিন্তু ভালবাসা টা ছিলো গভীর ……
বর্তমানে এই প্রযুক্তির ছোয়ায় একে অপরের বেশি কাছে আসছে কিন্তু ভালবাসার গভীরতাটা কমে গেছে …
তাই আমি তোমার সাথে কম দেখা করি …… (আমি)
-তারমানে তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো … (সে)
>সেটা তুমি বুঝে নাও …
-জানি তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো …
>জি ,ম্যডাম …
-তাহলে একটু হাত টা ধরি …
>কক্ষনই না , আসোলে প্রেম করলে বা কাউকে ভালবাসলেই যে “হাত” ধরতে হবে “কিচ” করতে হবে এটা তে আমি রাজি না ……
কারন এইসব অবাধ মেলামেশা কোন সামাজিকতার দৃষ্টিভংগীতে পরে না , আমার মতে প্রেম ভালবাসা একটা পবিত্র জিনিস এটাকে এভাবে অপবিত্র করা ঠিক না ……
আর আজ কাল আমরা এই পবিত্র জিনিসটাকে অপবিত্র করার ফলে এর অস্তিত্ব হারায় যাচ্ছে , পরিনতি এটা
আজ রিলেশন শুরু তো দুই মাস পর ব্রেকাপ । কারন , যে ফুলে মধু নাই সেখানে তো আর ভ্রমর বসবে না …
চাহিদা আর ইন্টারেস্ট শেস তো রিলেশন রেখে কি লাভ ? ?? এই ধরনের মন-মানসিকতা চলে আসে আমদের মাঝে …
তাই আমি চাইনা তোমার প্রতি আমার এতটুকু ভালবসা কমে যাক ……(আমি)
-সত্যিই তোমার মত কাউকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার … (সে)
>সেটা জানি না তবে আজো আমার মত অনেক ছেলে আছে যারা এতটা সততার সাথে বেচে আছে …
-এজন্যই আমি তোমাকে এতটা ভালবাসি …
>জি আমি ও …
-সত্যিই ,আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য পাশে পাবো তো ???
>কথা দিতে পারছি না তবে পেতে পারো যদি সততার সাথে আমার সাথে চলতে পারো …(কারন আমি আগেই কথা দেই না যদি পরে তা রাখতে না পারি )
-আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য আর আল্লার কাছে এতটুকুই চাইবো যে, আমাদের পবিত্র ভালবাসা টা যেন সত্যি হয় ……।।
>আমিন …আল্লাহ তোমার দোয়া যেন কবুল করে …
-আচ্ছা আমি চলে যাবো …
>চলো রেস্টুরেন্টে যাই আজ তোমায় খাওয়াবো …
-থাক , আমাকে দশটাকার বাদাম খাওয়ালেই চলবে …
>তাই !!! কেন আমার টাকা নষ্ট হবে তাই যাবা না???
-আরে না , আমার খেতে ইচ্ছা করছে না , আর বাসায় খেয়েই আসছি …
> যদিও বুঝলাম সে আমার টাকা খরচ করাবে না , কিন্তু সে তা আমাকে বুঝতে দিলো না … (মনে মনে ভাবলাম)
-আচ্ছা আমি যাই , ভাল থাকিও নিজের খেয়াল রেখো …
>আচ্ছা তুমিও , আর বাসায় পৌছায় একটা ফোন করে দিও …
-আচ্ছা বাই …
***এতক্ষন কথা হচ্ছিলো আমার ভালবাসার মানুষটির সাথে , একটা মানুষ একটা মানুষ কে যে এতটা ভালবাসতে পারে তা বলে বুঝানো যাবে না ।
ওর সাথে পরিচয় টা অন্যরকম ভাবে , আমি প্রতিদিন নামাজে যাইতাম মসজিদে ।
ঠিক ওই সময় মসজীদের সামনের রাস্তা দিয়েই সে যাইত । কোনদিন আমি রাস্তার মেয়েদের দিকে তাকইতাম না , প্রায়ই দেখা হইত রাস্তায় শুধুমাত্র সালাম পাইতাম।
যাস্ট উওর টাও দিতাম ……… কোনদিন কথা হয় নি …
***একদিন আমি এই যায়গাটাতেই বসে ছিলাম
-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া …
>ওয়ালাইকুম আসসালাম ।
-কেমন আছেন ভাইয়া?
>জি , আলহামদুলিল্লাহ । আপনি???
-জি , আলহামদুলিল্লহা । আর আমাকে আপনি করে বলবেন না , আমি আপনার অনেক ছোট, আর আমি আপনাকে চিনি …
>তাই !!! কিভাবে ???
-আমি যে সময় প্রাইভেটে যাই , ওই সময় আপনি নামাজে যান ।
>ওহ আচ্ছা , কি নাম আপনার ?কোথায় থাকেন ?
-আমার নাম মোছাঃ বিথী আক্তার । আপনার নামটা ভাইয়া ?আর আমি আপনার পাশের ফ্লাটেই থাকি…
>নাইছ নেম । আমি মোঃ ইমরুল কায়েস । একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি।
– ভাইয়া একটা হেল্প লাগবে ?
>জি বলেন___
-আপনার ফোনটা একটু দিবেন প্লিজ
>কেন???
-না মানে আমার ফোনের চার্জ শেষ তাই , বাসায় একটু কথা বলা লাগতো তাই …
>অহ আচ্ছা , এই নিন ……
-আচ্ছা ভাইয়া অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
> আচ্ছা …… ওকে স্‌বাগত …
আচ্ছা বাসায় যেতে যেতে আপনাদের কাহিনীটা শুনাই _____
***সেদিন রাতেই সে আমাকে ফোন দেয়, অন্য একটা নাম্বার থেকে …
>হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম …
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাইয়া
>কে চিনতে পারলাম না তো ?
-ভাইয়া আমি বিথী ,কি করেন ?
>ওহ , আচ্ছা । এইতো শুয়ে আছি । আপনি?
-সেম, ভাইয়া আমি না আপনার অনেক ছোট প্লিজ তুমি করে বলবেন
>ওহ , আচ্ছা ঠিকাছে…
-রাতে খাইছেন ?
>জি , আপনি সরি তুমি?
-জি ভাইয়া খাইছি ।ভাল থাকবেন , আল্লাহ হাফেজ।
>আল্লাহ হাফেজ।
*** এভাবেই ওর সাথে আমার পরিচয় আর রিলেশন । অনেক ভাল মনের একটা মানুষ আর আমার মতই ৫ওয়াক্ত নামজী ।
আর আমাদের বিষয়টা এতদিনে ওর বাবা মায়ের কান প্রজন্ত পৌছাইছে ।
***আজ আমাদের বিবাহ কাজ সম্পন্ন হলো … আল্লাহর ইচ্ছায় দুজনার চাওয়া টা দুই পরিবারের মতেই সম্পন্ন হলো …
ঘরে ঢুকেই দেখি লাল বেনারসিতে খুব সুন্দর ভাবে সাজানো একটা পরী
আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই বিছানা থেকে নেমে, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো
তাকে বিছানার উপরে উঠালাম আর কুশলাদি জিজ্ঞাস করলাম , পবিত্র ভালবাসার পরিপূর্ণতা আজ ,তাই দুজনেই অনেক হ্যপি ।
-তোমার হাতটা একটু ধরতে পারি প্লিজ ???(বিথী)
>কেন নয় , আজ থেকে তো দুজন দুজনার আর কোন বাধা নয় ।
ভালবাসার পূর্ণতায় পরিপূর্ণ করতে চাই আজ তোমায়।
-সে আমার হাত দুটো ধরে আছে ,আর এটাই আমার ভালবাসার প্রথম “স্পর্শের অনুভূতি”।
>সারারাত কি হাত ধরেই বসে থাকবা ???
-ওহ তাই তো ঘুমাতে হবে , তারাতারি লাইট অফ করো …
>জি করছি …এই এইটা কি করলা !!! বালিশ ছুরে মারলা কেন???
-আজ আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো …
>ওহ আচ্ছা, প্রব্লেম নাই … …দারাও লাইট টা অফ করছি …

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত