নীল খাম ও ভালোবাসা

নীল খাম ও ভালোবাসা

রুপা…. রুপা….
মা,,,কি হয়েছে। একটু ঘুমাতে দাও।
বেলা হয়ে যাচ্ছে, ওঠ। শ্যূটিং এ যাবে না। হিমম।
এই নাও। মিসেস.শামীমা একটা নীল রংয়ের খাম তার মেয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
ঘুম ঘুম চোখে, একটু অবাক হয়ে সে খামটা নিলো।
তুমি ফ্রেস হয়ে নাও। আমি নাস্তা রেডি করছি।
রুপা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে,খামটা খোলে। তার হাত কাঁপছে। সে পড়তে শুরু করে—-

পাগলী রুপা,
শুভ সকাল। চমকে গেলে। এই চিঠি যখন তোমার হাতে পৌঁছাবে,তখন আমি সাত সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছি। গন্তব্য সুদূর আমেরিকা। তোমাকে জানাইনি, অনেকটা ইচ্ছা করেই। তোমার খুব শখ ছিলো,আমি তোমাকে একদিন চিঠি লিখি। সেই চিঠি তুমি অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়বে আর যত্ন করে আলমারির ড্রয়ারে রেখে দিবে। ফেস বুকে চ্যাটিং করতে করতে তুমি বিরক্ত হয়ে যেতে। আমাকে প্রায়ই বলতে নীল খামে চিঠি দিতে। হিমম। এখন অবশ্য এই সব আবেগে তোমার কোন আগ্রহ নেই।
আমি চলে যাচ্ছি রুপা। এই শহর ছেড়ে,তোমার থেকে দূরে ,,,,বহুদূরে। তুমি স্বাধীন,মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে-বেড়াবে শহর, বন্দর, গ্রামে। ব্যাস্ত হয়ে যাবে তোমার স্বপ্ন পূরনে। মডেলিং নিয়ে। আমি চলে যাচ্ছি রুপা। আহত হৃদয় নিয়ে,বিশাল শূন্যতাকে সাথী করে।

স্কলারশিপ এর অফারটা আমার বরাবরই ছিলো। কিন্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। একটা সময় মনে হচ্ছিলো, তুমি আর সেই রুপা নেই। তোমার চোখে কেউ রঙিন চশমা পড়িয়ে দিয়েছে। মডেল হওয়ার জন্য তুমি বেপরোয়া হয়ে গেছো। তোমার ভিতরের সেই সত্ত্বাটাকে তুমি মেরে ফেলেছ।

আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমেরিকা যাওয়ার। তাই তোমাকে জানানো হয়নি। আমি চলে যাচ্ছি রুপা। আমার সেই সবুজ চত্বর,দীপ্ত দের বাড়ীর ছাদ,আঁকাশ ভরা জ্যোৎস্না, সোনাদির ফুল বাগান সব তোমাকে দিয়ে গেলাম। আমার আত্নাটাকেও রেখে গেলাম। তুমি তাকে করুনার চোখে দেখো।

আমি চলে যাচ্ছি রুপা। তোমার দৃষ্টির সীমানা থেকে দূরে বহুদূরে। হাজারটা উদাস দুপুর আমি নিয়ে যাচ্ছি। বিনিময়ে তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি অনেক রঙিন বিকাল।
আমি তোমাকে খারাপ ভাবি না বা কোন দোষও দেইনা। তুমি ঠিকই করেছ। এখনকার যুগে ভালোবাসা নিয়ে কে পড়ে থাকে। ক্যারিয়ার, পার্সোনালিটি এইসব এর প্রায়োরিটি আগে। কিন্ত আমি শুধু সেকেলে।

আমার ভালোবাসা সেকেলে। তোমার চুলের মিষ্টি গন্ধ নেওয়া সেকেলে। তোমার দীঘল কালো চোখের ওপর আদর দেওয়া সেকেলে। তোমাকে জড়িয়ে বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখা সেকেলে।

তোমার কথা মনে হলে,বুকের ভিতর বোবা-কান্না ওতলে ওঠে,, আ আ আ রবে চিৎকার করতে ইচ্ছা করে। বলো এটাও সেকেলে। তোমাকে ভালোবেসে নিজের করে পেতে চাওয়াও সেকেলে।
ইতি,
জামি চৌধুরী।

আহ্ জামি। থামো,থামো। আমি আর পারছি না। রুপা র যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। দ্রুত সে জানালার গ্রীল ধরে দাড়ায়। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে। নীল-আঁকাশ,সোনাদির ফুলবাগান সবই আছে। শুধু জামি নেই। তার জামি এদেশ, এ শহরে নেই। সে যে তাকে ভুল বুঝেই চলে গেলো। গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে,খোলা আঁকাশে তাকিয়ে থাকে রুপা। তার দুচোখ প্লাবিত হয়ে ঝরতে থাকে অশ্রু ধারা।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত