০১. তুমি তাহলে যাবেই
তুমি তাহলে যাবেই? জানতে চাইল সাঈদ।
এ আবার কি ধরনের প্রশ্ন! স্যুটকেসে দুটো শাড়ি ভরল ঝর্ণা, মুখ তুলে স্বামীর দিকে তাকাল। আমার যাবার কথা তো বেশ কদিন আগেই ঠিক হয়েছে।
তুমি খুব ভাল করেই জানো যে এটা তোমার স্বাভাবিক বেড়াতে যাওয়া নয়। বলছ বটে ঢাকায় বান্ধবীর বাড়িতে উঠবে, কিন্তু হাসি সিদ্দিকী তোমাকে দুএকদিনের বেশি ধরে রাখতে পারবে না। কোলকাতা হয়ে দিঘায় চলে যাবে তুমি, সেই মধুরিমার কাছে। কিনা কি দেখেছে, শোনার পর থেকে এক মুহূর্তের জন্যেও শান্তি নেই তোমার মনে।
তাহলে তো দিন কতকের জন্যে আমাকে চোখের সামনে থেকে দূর করতে পারলে খুশি হবার কথা তোমার।
একটা ভূতকে জ্যান্ত করে কি লাভ, বলতে পারো আমাকে?
কে বলল জ্যান্ত করতে চাইছি? আমি আসলে ঘাড় থেকে নামাতে চাইছি ওটাকে। দীর্ঘশ্বাস চাপল ঝর্ণা।
যদি জানতাম…যদি বুঝতাম যে..তোমার সিকি ভাগও আমার কপালে জুটবে না, তাহলে…।
সব মিলিয়ে আমি যা, এমন বহু মানুষ আছে যারা আমার আট ভাগের এক ভাগ পেলেও ধন্য হয়ে যেত, বলল ঝর্ণা, কৌতুক ঝিক করে উঠল তার চোখের তারায়।
তোমার ভেতর আসলে কোন নীতিবোধ নেই, ঝর্ণা। মাঝে মধ্যে তোমাকে আমি এত ঘৃণা করি। আমাকে যখন বিয়ে করলে, তখনও তোমার মাথার এক কোণে আশরাফ ছিল। বিয়ের পর এই যে এক বছর আমরা একসঙ্গে আছি, আমার সন্দেহ প্রতিটি দিন তুমি তার কথা ভেবেছ।
যদি ভেবেও থাকি, তুমি চিৎকার করলে সেটা বন্ধ হবে না। কেন চিল্কার করছ তাও বুঝি-কাজের বুয়াকে শোনাচ্ছ।
চোখ-মুখ লাল হয়ে উঠল সাঈদের। ঝর্ণা, তোমাকে আমি বহুবার বলেছি, উনি আমাদের কাজের বুয়া নন। ভুলে যেয়ো না, আয়েশা আন্টি বি. এ. পাস, এককালে তিনি স্কুল মিসট্রেস ছিলেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিল সে, তারপর আবার বলল, উনি মিনিট খানেক হলো চলে গেছেন, দরজা বন্ধ হবার আওয়াজ পেয়েছি আমি।
তবু, তোমার এই চিৎকার-চেঁচামেচি আমার ভাল লাগছে না। সব যদি যুক্তি দিয়ে বিচার করতে পারতে, এই অশান্তি সৃষ্টিই হত না। আমাদের বিয়ের আগে আমার মনের অবস্থা কি ছিল, তুমি জানতে। আমি তোমাকে সাবধানও করেছি, কিন্তু আমার কোন কথাই তুমি শোনোনি। ঝুঁকিটা সেই নিলেই।
জানি। আমি বোধহয় আবারও তা নেব, স্বীকার করল সাঈদ, তবে শুধু যদি নিশ্চিত হতে পারি যে আমাকেই তুমি চাও।
সম্ভবত এই অনিশ্চয়তা বোধটুকুই আমার প্রতি তোমার আকর্ষণের কারণ—অন্তত আংশিক। তারপর ঠোঁটের কোণ কামড়ে কি যেন চিন্তা করল ঝর্ণা, বলল, এবার থামো তো, অনেক হয়েছে। আমার যাবার কথা, আমি যাচ্ছি। তোমারও তো সিলেট যাবার কথা, ইচ্ছে হলে যাও। আর না গেলে এখানে বসে লেখাটা শেষ করো।
লেখাটা ভাল হচ্ছে না, বলল সাঈদ।
শান্তাও তাই বলছিল বটে। সে তত তোমার অন্ধ ভক্ত। প্রিয় লেখকের লেখার মান ভাল না হলে চিন্তায় মরে যায়।
শান্তা খুব ভাল মেয়ে।
একটু বেশি নরম। তোমাকে ভালবেসে ফেলছে, যদিও নিজে তা রোঝে না এখনও। সুটকেস বন্ধ করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ঝর্ণা। তোমাকে নিয়ে সমস্যা হলো, সাঈদ, মেয়েদের সম্পর্কে খুব কম জানো তুমি। হালকাভাবে নিয়ো না, তোমার আসলে সত্যিকার একটা লাভ অ্যাফেয়ার দরকার।
আবার চোখ-মুখ লালচে আর গরম হয়ে উঠল সাঈদে তেতো একটা লাভ অ্যাফেয়ার তো চলছেই তোমার সঙ্গে আমার, তারপর আরও একটা?
হ্যাঁ, বড় বেশি তেতো। তোমাকে আমি খেপিয়ে তুলেছি, বোধহয় রশি দিয়ে বেঁধেও রেখেছি। তুমি আর তোমার কাজ, দুটোর স্বার্থেই ভাল হবে যদি শান্তার দিকে ঝেকো তুমি, এমনকি প্রয়োজনে নিজের ওপর জোর খাটিয়ে হলেও…।
স্থির পাথর হয়ে গেল সাঈদ, চোখ দুটো থেকে আগুন ঝরছে। এমন কুৎসিত কথা তুমি বলতে পারলে? আমার জন্যে যদি নাও থাকে, শান্তার জন্যে তোমার কোন মায়া বা দরদ নেই? সে না তোমার খালাতো বোন?
হাসি পেলেও হাসল না ঝর্ণা। এতে তারও কোন ক্ষতি হবে, বলল সে। বড় বেশি নরম, বলেছি না? একটু ছ্যাকা লাগার দরকার আছে। বাইশে পা দিয়েছে, কিন্তু আমার সন্দেহ এ-সব ব্যাপারে তার কোন অভিজ্ঞতা হয়নি এখনও। তোমার কাছ থেকে প্রথম স্বাদ পেলে তার জন্যেও ভালই হবে।
ছি, তুমি এত নোংরা! এসব কথা কোন স্ত্রী তার স্বামীকে বলে? নিরীহ, লক্ষ্মী একটা মেয়ের সঙ্গে নিজের স্বামীকে তুমি মিছিমিছি জড়াতে চাইছ …!
হয়তো ভাল কিছু পাবার আশায় চাইছি, বলল ঝর্ণা। মনে করো, তোমাদের উপকারী বন্ধু হতে ইচ্ছে হয়েছে আমার। অভিজ্ঞতাটা থেকে তোমরা দুজনেই উপকৃত হবে। মেয়েদের সম্পর্কে আনকোরা নতুন কিছু শিখবে তুমি, আর শান্তার ভেতর সচেতনতা সৃষ্টি হবে, বলা যায় তার ঘুম ভাঙবে—অবশ্যই তোমার __রা, তবে তোমার কাছে বাঁধা পড়বে না সে, অন্তত ব্যাপারটা স্থায়ী হবে না। এক সময় তার গ্রহণ ক্ষমতা এতটাই বাড়বে, তখন আর অন্য কারও আকর্ষণে সাড়া দিতে দ্বিধা করবে না।
স্ত্রীর কাছাকাছি চলে এল সাঈদ। তার চেহারার মায়াভরা ভাবটুকু অদৃশ্য হয়েছে, রাগে জ্বলজ্বল করছে চোখ দুটো, দৃষ্টিতেও আশ্চর্য ধরনের একটা নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠেছে। হঠাৎ একটু ভয় লাগল ঝর্ণার, শিরশির করে উঠল তার শরীর।
ধ্যেত, তুমি দেখছি বড় বেশি সিরিয়াসলি নিচ্ছ, তার গলায় ধৈর্য হারানোর সুর।
যখন তুমি দুজনের জীবনই নষ্ট করার হুমকি দাও, আমার সিরিয়াস না হয়ে উপায় কি! তুমি একটা শয়তান মেয়েলোক…কোন্ দিন না সীমা ছাড়িয়ে যাও!
ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমার কথা যদি এতই খারাপ লাগে তোমার, এখন থেকে আর কোন ভাল পরামর্শ দেব না।
এরইমধ্যে অনেক বেশি বলে ফেলেছ। তোমাকে আমি ভালবাসি, কিন্তু কোন কোন সময়, এই যেমন এখন, মনে হয় তোমাকে খুন করতে পারলে দারুণ একটা তৃপ্তি পেতাম। কারণ বুঝতে পারি, একমাত্র শুধু তখনই তোমাকে পুরোপুরি পাওয়া হবে আমার।
এ তোমার পাগলামি, বলল ঝর্ণা। সরো তো, সুটকেসটা বন্ধ করতে দাও। নিহত স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
তুমি তো চিরকালই তা-ই, অভিনেত্রী, বলল সাঈদ। আমি ভালবাসলে কি হবে, আমার প্রতি তোমার ভালবাসাটা নির্জলা অভিনয়। কিন্তু এখন যেটা ঘটছে সেটা অভিনয় নয়, ঝর্ণা। একমাত্র মৃত্যুর মাধ্যমেই তোমাকে আমি আপন করে পেতে পারি…।
সাঈদ, এরকম সাহিত্যের ভাষায় আমার সঙ্গে কথা বোলো না তো! প্রায় চিৎকার করে উঠল ঝর্ণা। সে কিছু বোঝার আগেই সাঈদ তার একটা হাত ধরে সজোরে মোচড় দিল, হ্যাঁচকা টানে নিয়ে গেল পিঠের দিকে। স্বামীর গায়ে এত শক্তি, আজই যেন প্রথম উপলব্ধি করতে পারল ঝর্ণা। ছাড়ো আমাকে! রাগে আবার চিৎকার করে উঠল, তবে এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে।
কেন ছাড়ব? তার হাতে তোমাকে তুলে দেয়ার জন্যে? বলো তো কেমন লাগে সেই লোকের, যে তার স্ত্রীকে একটা বছর যতবার বুকে নিয়ে শুয়েছে ততবার তার মনেহয়েছে, স্ত্রী অন্য এক পুরুষের কথা ভাবছে? প্রতিটি আদরে সাড়া দিয়েছ তুমি আমাকে সে মনে করে, আমাকে আমি মনে করে নয়।
তুমি প্রলাপ বকছ! হাঁপিয়ে উঠল ঝর্ণা, ব্যথায় নীলচে হয়ে গেছে চেহারা।
যা সত্যি তাই বলছি। স্বীকার করো তুমিও জানো এ-সব সত্যি !
সাঈদের শক্ত বাঁধনের ভেতর মোড় খাচ্ছে ঝর্ণা। ছাড়ো আমাকে! আমার লাগছে…সাঈদ…সাঈদ…, আর্তনাদ করে উঠল সে।
ঝর্ণাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল সাঈদ, আর্তনাদটা অকস্মাৎ থেমে গেল। ঘরের ভেতর জমাট বাঁধল নিস্তব্ধতা।
কাজ সেরে চলে যাবার আগে লাইব্রেরি রুমের দরজা দিয়ে ভেতরে মাথা গলালেন আয়েশা বেগম, শান্তাকে জিজ্ঞেস করলেন তার কিছু লাগবে কিনা বা আর কোন কাজ করতে হবে কিনা। টাইপরাইটার থেকে একবার মুখ তুলে শান্তা শুধু মাথা নাড়ল। তারপরও দোরগোড়া থেকে নড়লেন না আয়েশা বেগম, বললেন, এই বয়েসে মেয়েদের ঘরের কোণে বসে কাজ করা ঠিক নয়। তোমরা যদি সচেতন না হও, এই যে নারীজাতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ষড়যন্ত্র চলছে, তা ঠেকাবে কে? তোমাদের আসলে বেরিয়ে পড়া উচিত। মাঠে-ময়দানে, রাস্তা-ঘাটে বক্তৃতা দাও, মেয়েদের এক করো। এই যে ওরা কামড়ে-আঁচড়ে কচি মেয়েটাকে রক্তাক্ত করল, তারপর কবর দিল জ্যান্ত, সে তত তোমারই বোন, নয় কি? তার জন্যে তোমরা কিছু করবে না? আজ যদি তার জন্যে কিছু না করো, কাল তোমার অবস্থাও তো তার মত হবে। তখন?,
জ্বী করব, এবার আর কাজ থেকে মুখ তুলল না শান্তা। তবে ভাবছে সে। আয়েশা আন্টি এমন সুরে কথাগুলো বলেন, তার মেয়েকে যেন সম্প্রতি জ্যান্ত কবর দেয়া হয়েছে। অথচ একাত্তর সালে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ঘটনা সেটা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। আয়েশা আন্টির কাছে ঘটনাটা হয়তো এখনও পুরানো হয়নি।
ভুলে যেয়ো না, এই বন্দীদশা থেকে নিজেদের চেষ্টায় মুক্তি পেতে হবে আমাদের। চোখ রাঙিয়ে বললেন আয়েশা বেগম।
না, ভুলব না।
আমি তাহলে যাই, ওদেরকে তৈরি হতে বলি।
জী, ঠিক আছে।
চলে গেলেন আয়েশা বেগম। তিনি চলে যাবার পর নিঃসঙ্গবোধটা আঁকিয়ে বসল শান্তার মনে। এর আগে প্রায়ই আশা ভিলা-য় সারাদিন কাজ করেছে সে, সময়ের হিসাব মনে থাকেনি বা নিঃসঙ্গও লাগেনি। আজ তাহলে একা লাগার কারণ কি? একটা কারণ হতে পারে, সাঈদ হাসান এবার যে উপন্যাসটা লিখছেন, পড়ে একটুও মজা পাচ্ছে না সে।
ময়মনসিংহ খুবই ছোট শহর, চারপাশে গ্রাম আর নদীর বেড়, সেই বেড়েরই এক প্রান্তে গাছগাছালির ভেতর ছোট্ট বাড়িটা। এখানে পাখির কল-কাকলি, নদীর কলকলানি, গাছের পাতায় বাতাসের ফিসফিসানি শোনা যায়, একজন লেখকের জন্যে এই প্রায় নির্জন পরিবেশ খুবই দরকার। তবে তার ঝর্ণা আপা যে প্রায়ই এখান থেকে চলে যেতে চায়, সেজন্যে অবাক হয় না শান্তা। এরকম ছোট শহরের পাশে বসবাস করার মত মানসিকতা তার হবারও নয়। তবে গত এক বছরে প্রতিবেশী অনেকের সঙ্গেই ওদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এবারের ঢাকায় বেড়ানোটা তার ঝর্ণা আপা নিশ্চয়ই দারুণ উপভোগ করছে। এর আগেরবার একা যায়নি, তাকেও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। ঢাকায় গেলে সব সময় হাসি সিদ্দিকীদের বাড়িতে ওঠে ঝর্ণা আপা, হাসি সিদ্দিকীও তার স্বামীকে নিয়ে এখান থেকে একবার বেড়িয়ে গেছেন, সঙ্গে ঝর্ণা আপার ফ্যান সোহানাও এসেছিল। সন্দেহ নেই, ঢাকায় পা দিয়েই নাচ-গান নিয়ে মেতে উঠেছেন ঝর্ণা আপা, রোজ রাতে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে চাইনীজ খাচ্ছেন, নাটক বা রিহার্সেল দেখতে বেইলী রোডেও যাচ্ছেন।
তবে হাসান ভাইয়ের উচিত ছিল আপার সঙ্গে থাকা। তারপর শান্তা ভাবল, কিন্তু না, তা সম্ভব নয়। ঝর্ণার আপার বন্ধু-বান্ধবরা। সবাই ফ্যাশন জগতের রত্ন, নয়ত পারফর্মিং আর্টস-এর তারকা। তাদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন হাসান ভাই, এ চিন্তাই করা যায় না। তিনি বরং যেখানে গেছেন সেখানেই তাকে সবচেয়ে বেশি মানায়। সিলেটের বিপিনবিহারী কলেজে। ওখানে বাংলার এক অধ্যাপক তাঁর পুরানো বন্ধু। হাতের কাজ শেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নতুন যে উপন্যাসটা লিখবেন বলে ভাবছেন, দুই বন্ধু মিলে ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইব্রেরিতে বসে তারই উপাদান ও উপাত্ত সংগ্রহ করছেন।
টাইপরাইটারের চৌকো বোতামগুলোর ওপর অলস পড়ে আছে শান্তার আঙুল, সে তার প্রিয় লেখকের কথা ভাবছে, ভাবছে নিজের কথাও। ঝর্ণা আপার সঙ্গে বিয়ে হবার পর নয়, তারও তিনচার বছর আগে থেকে সাঈদ হাসানের ভক্ত সে। ইতিমধ্যে পনেরো-ষােলোটা উপন্যাস আর বিশ-পঁচিশটা গল্প লিখেছেন তিনি, সবগুলো তিন-চারবার করে পড়া হয়ে গেছে শান্তার। তার মত ভাগ্যবতী ফ্যান গোটা দেশে বোধহয় আর একজনও নেই। প্রিয় লেখকের কাছাকাছি থাকার, তার কাজ করার সুযোগ পেয়েছে সে। সেজন্যে সে তার ঝর্ণা আপার প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ হাসান ভাই লেখার পরিবেশ পাবেন মনে করে সেই প্রায় জোর করে এখানে তাকে টেনে আনে। আসার পর হাসান ভাই জায়গাটার প্রেমে পড়ে গেছেন, যদিও ঝর্ণা আপা পালাতে পারলেই যেন বাঁচে।
তিনি একজন স্বাপ্নিক, তার হাসান ভাই। আদর্শপ্রিয় মানুষ। লম্বা ও সরু মুখ, চোখ দুটো একটু গভীরে, সামান্য অন্যমনস্ক যদি হনও, চেহারায় মায়া মায়া ভাবটুকু বড় বেশি টানে। দেখে ঠিক ঔপন্যাসিক নয়, কবি বলে মনে হবে। হাসান ভাইয়ের উপন্যাস বাজারে মন্দ চলে না, তবে শান্তার দুঃখ এই যে দেশ জুড়ে হৈ-চৈ পড়ে যাবে এমন ঘটনা এখনও ঘটছে না। তিনি যদি একটা বেস্ট সেলার লিখতে পারতেন; শান্তা আর কিছু চাইত না। কিন্তু তা কোনদিন সম্ভব হবে কিনা জানা নেই তার। খুব ভাল একটা উপন্যাস লিখতে হলে লেখকের মনে শান্তি থাকা দরকার। কিন্তু ওদের দুজনের জীবনে শান্তি বলে বোধহয় কিছুই নেই। কথায় কথায় পরস্পরের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ। কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। প্রতিটি পর্ব শেষ হয় তুমুল ঝগড়ার মধ্যে দিয়ে। ওদের বোধহয় জোড়া মেলেনি, ভাবল শান্তা, তবে এটা তাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বীকার করতে হলো-কারণ সে তার ঝর্ণা আপারও ভক্ত, তার ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা করে।
তার হাসান ভাইয়ের মাত্র একটা উপন্যাসই নাটকে রূপান্তর করে দেখানো হয়েছে টিভিতে, মূল নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছিল ঝর্ণা আপা। সেবারই সত্যিকার বড় সুযোগ পায় সে, তার আগে বেলী রোডের নাটকগুলোয় ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করত। টিভি নাটকটায় খারাপ করেছিল, তা বলা যাবে না, তার অভিনয় মোটামুটি প্রশংসাই পেয়েছিল সবার। তবে শু্যটিঙের শেষ দিকে একেবারে ভেঙে পড়েছিল ঝর্ণা আপা। তার এই ব্রেক-ডাউনের জন্যে শুধু শুধু নিজেকে দায়ী করেন হাসান ভাই। এই ব্রেকডাউনের কারণেই ঝর্ণা আপার চোখের অসুখটা দেখা দেয়। ডাক্তাররা দায়ী করেছেন নার্ভাস ডিসঅর্ডারকে, কিন্তু ঝর্ণা আপার কথা হলো শু্যটিঙের সময় সেটে চোখ ধাঁধানো আলো থাকায় তার এই ক্ষতি হয়েছে। সেই থেকে আজও রঙিন সানগ্লাস পরতে হয় তাকে। ফলে তার সৌন্দর্য খানিকটা তো ঢাকা পড়েছেই, সেই সঙ্গে বেঁচে থাকতে হচ্ছে আধাে অন্ধকার একটা জগতে।
জানতে ইচ্ছে করে ঝর্ণা আপার্কে হাসান ভাই বিয়ে করলেন ভালবেসে, নাকি করুণাবশত? বোধহয় দুটোরই অবদান আছে। স্নায়ু তাকে যতই ভোগাক বা বিধ্বস্ত করুক, একহারা গড়ন আর অস্থির হাবভাব নিয়ে আজও ঝর্ণা আপা আশ্চর্য সুন্দরী। সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে তার এই কঠিন এই কোমল মেজাজ। গায়ের রঙে হলদেটে মাখনের মত একটা ভাব আছে, চকচকে আবলুস কাঠের মত চুল, ঠোঁট আর নাক সুগঠিত, চলনে-বলনে আভিজাত্য আর ব্যক্তিত্ব। শুদ্ধ উচ্চারণে, সুরেলা গলায় কথা বলে যখন, মুগ্ধ হয়ে শুনতে হয়।
লেখক সাঈদ হাসানের টাইপিস্ট হিসেবে চাকরি পাবে শান্তা, এটা যেন তার ভাগ্যেই লেখা ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঘরে বসে আছে সে, হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় লেখাপড়া বন্ধ, সে-ও মায়ের মত প্রাইমারী কোন স্কুলে চাকরি নেবে কিনা ভাবছে, এই সময় হঠাৎ ঝর্ণা আপার চিঠি এল, লেখক সাঈদ হাসানকে বিয়ে করেছে সে, স্বামীকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে বেড়াতে আসছে। ভিটা আর বাগান নিয়ে ছয় বিঘা জমি, পাকা দেয়াল আর টিনের চাল দিয়ে বানানো তিনটে ঘর। শান্তার খালু চিরকাল ঢাকাতেই চাকরি করে কাটিয়েছেন, সেখানে তিনি একটা ফ্ল্যাটও কিনেছেন, তবে ইচ্ছে ছিল অবসর জীবনটা দেশের বাড়িতে এসে কাটাবেন। সে-কথা ভেবেই মাটির ঘরগুলো ভেঙে নতুন এই তিনটে কামরা বানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর আর আসা হয়নি। স্ট্রোকে মারা গেছেন বছর তিনেক আগে। বাবা মারা যাবার তিন বছর আগে থেকে লেখাপড়া ও অভিনয়, দুটো একসঙ্গে চলছিল ঝর্ণা আপার। তারপর বিয়ে করলেন, ঢাকার ফ্ল্যাট ভাড়াটে বসিয়ে চলে এলেন আশা ভিলায়। আশা ছিল শান্তার খালাম্মার নাম, তিনি আজ সাতআট বছর হলো মারা গেছেন। হাসান ভাইকে নিয়ে ঝর্ণা আপা মসার আগে বাড়িটা শান্তারাই দেখেশুনে রেখেছিল। আশা ভিলার পাশের বাড়িটাই ওদের। ওদেরও জমিজমা খুব সামান্য, তবে ঝর্ণা আপার মত ওরও আর কোন ভাই-বোন নেই। মা ও মেয়ের ছোট্ট সংসার। ঢাকা থেকে তারা আসার পর প্রথম কদিন শান্তার মা ঝর্ণাকে রান্নাবান্না করতে দেননি। তারপর জানা গেল, বেড়াতে নয়, এখানে বসবাস করতে এসেছে ওরা। শুধু তাই নয়, হাসান ভাইয়ের একজন টাইপিস্টও দরকার। নিজের লেখা অসম্ভব কাটাকাটি করেন তিনি, কম্পিউটর অপারেটররা তার হাতের লেখা পড়তে পারে না, তিনি নিজেও টাইপ করতে পছন্দ করেন না। কাটাকাটি করার পর আবার নতুন করে কপি করবেন, সে সময়ও তাঁর নেই। এসব যখন আলোচনা হচ্ছে, শান্তা মনে মনে শুধু ভাবছে, ঝর্ণা আপা আমার কথা তুলছে না কেন? যে-কোন বেতনে আমার একটা চাকরি দরকার, সেজন্যে আমি. ইংরেজি আর বাংলা দুরকম টাইপ করাও শিখেছি, তাছাড়া প্রিয় লেখকের কাজ করার সুযোগ পেলে আর কি চাই আমার। কিন্তু প্রথম এক মাস লিখতেই বসলেন না হাসান ভাই, তাই টাইপিস্ট রাখার কথাও, আর উঠল না। ইতিমধ্যে ময়মনসিংহেই ছোট একটা চাকরি পেয়ে গেল শান্তা।
নতুন চাকরি করছে সে এক মাসও হয়নি, এই সময় ঝর্ণা আপা মাকে ধরল। হঠাৎ করে লেখার এমন ঝোক দেখা দিয়েছে হাসান ভাইয়ের, প্রতিদিন দশ-বারো পৃষ্ঠা লিখে ফেলছেন, আর সেগুলো টাইপ করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে ঝর্ণা আপা। স্বামীর গল্প-উপন্যাস পড়তে তার ভালই লাগে, কিন্তু টাইপ করাটা তার দুচোখের বিষ। প্রস্তাবটা শুনেই রাজি হয়ে গেল শান্তা, এমনকি বেতন কত না জেনেই।
তবে শান্তার মা, ফানুনী ইসলাম, মৃদু হলেও আপত্তি করেছিলেন। তাঁর আপত্তি করার সঙ্গত কারণও ছিল। ঝর্ণার এখানে কতদিন থাকবে তার ঠিক নেই, ওরা চলে গেলে আবার তত বেকার ঘরে বসে থাকতে হবে শান্তাকে। বেতনও এমন কিছু বেশি নয়। লইয়ারের অফিসে বারোশো টাকা পাচ্ছিল শান্তা, ঝর্ণা আপা দিতে চাইল পনেরোশো। শান্তার মায়ের যুক্তি ছিল, এক আইন ব্যবসায়ী ধীরে ধীরে তার ব্যবসা গড়ে তোলে, সেখানে যারা চাকরি করে তাদের ভবিষ্যৎ আছে। সাইফুল ইসলামের ওখানে মেয়ে চাকরি পাওয়ায় খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি, ভেবেছিলেন মেয়েকে আইন পড়াতে পারলে তার বিয়ের জন্যে আর চিন্তা করতে হবে না। এসব কথা ভেবে একটা সিঙ্গার মেশিন কিনেছেন তিনি, স্কুলের বেতন ছাড়াও বাড়তি কিছু আয় করার জন্যে।
কিন্তু শান্তার আগ্রহ আর ঝর্ণার আবদার তিনি এড়াতে পারেননি।
তরুণ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, যার অফিসে চাকরি করছিল শান্তা, ব্যাপারটা মেনে নেয়। শান্তা অবশ্য জানে না, সে চাকরি ছাড়ায় মনে মনে খুশিই হয় সাইফুল, যদিও ফারুনী ইসলামকে আশ্বস্ত করার জন্যে শান্তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে সাঈদ হাসান ঢাকায় ফিরে গেলে তার অফিসে আবার শান্তা কাজ করার সুযোগ পাবে।
শান্তাকে চাকরি দিয়ে বিপদেই পড়ে গিয়েছিল সাইফুল। মেয়েটার মধ্যে কি আছে কে জানে, শুধু তার উপস্থিতিই কাজে, অমনোযোগী করে তোলে সাইফুলকে। ভেতরের চেম্বারে বসে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজের অজান্তেই কান পাতে সে, সামনের ঘর থেকে ভেসে আসছে শান্তার টাইপ করার আওয়াজ। সারাদিনে পাঁচ-সাতবার শান্তার টেবিল ঘেঁষে আসাযাওয়া করতে হয় তাকে, প্রতিবার দেখে গভীর মনোযোগের সঙ্গে কাজ করছে শান্তা, হাঁটার গতি কমে আসে তার, অপলক হয়ে ওঠে চোখের দৃষ্টি, সব ভুলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ব্যাপারটা কিভাবে যেন টের পেয়ে যায় শান্তা, সে-ও মুখ তুলে তাকায়। চোখাচোখি হয় দুজনের। নিজের চেম্বারে ফিরে পায়চারি শুরু করে সাইফুল, কাজে মন বসাতে পারছে না দেখে রেগে যায় নিজের ওপর।
নারী সংক্রান্ত ব্যাপারে খুব সাবধান সাইফুল, বিশেষ করে নিজের অফিসের কোন মেয়েকে নিয়ে তার নামে কিছু রটলে লজ্জায় আর কাউকে মুখই দেখাতে পারবে না সে। তবে এখন, শান্তা যখন আর তার অফিসে চাকরি করছে না, মেয়েটার প্রতি নিজের আগ্রহ প্রকাশ করতে কোন বাধা অনুভব করে না সে। কাউকে ভাল লাগলে সেটা স্বীকার করতে দোষের কি আছে। সেই থেকে মাঝে মধ্যেই শান্তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করছে। সাইফুল। ফানুনী ইসলাম অত্যন্ত স্নেহ করেন তাকে। ছুটির দিনগুলোয় শান্তাকে নিয়ে বাইরে কোথাও বেড়াবার অনুমতিও দেয়া হয়েছে তাকে।
সাইফুল প্রতিটি কাজ সম্মান বজায় রেখে করতে চায়। এবং কোন কাজে তাড়াহুড়ো করারও পক্ষপাতী নয় সে। প্রেমে পড়েছে ঠিকই, তবে সাতাশ বছর বয়েসে এসে শিখে নিয়েছে কিভাবে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। পরিষ্কার বোঝে সে, শান্তা তার প্রেমে পড়েনি। তবে আশার কথা হলো; তাকে অপছন্দ করে না মেয়েটা, অন্তত বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী হিসেবে গ্রহণ করেছে। সাইফুলের ধারণা, লক্ষণটা শুভ। তার আরও ধারণা, শেষ পর্যন্ত শান্তা তাকে ভাল না বেসে পারবে না। হয়তো একটু সময় নেবে, তা নিক। ধৈর্য ধরবে সে, অপেক্ষায় থাকবে।
শুরুতে আশা ভিলায় কি ঘটছে না ঘটছে শান্তার কাছে জানতে চেয়েছে সাইফুল। কিন্তু শান্তা খুব বেশি কিছু তাকে জানায়নি। শুধু বলেছে, ঝর্ণা আপা নার্ভাস ব্রেক-ডাউনের শিকার, রোগটা এখনও পুরোপুরি সারেনি তার। আর হাসান ভাই খানিকটা খেয়ালি মানুষ, অনুপ্রাণিত না হলে লিখতে পারেন না। তবে দুজনেই তারা অত্যন্ত ভাল ব্যবহার করে শান্তার সঙ্গে। স্বামী-স্ত্রীতে যে প্রায়ই তুমুল ঝগড়া হয়, সে-কথা তাকে আভাসেও বলেনিশান্তা।
আয়েশা আন্টি শান্তাকে আজ বলেছে, কালও নাকি স্বামী-স্ত্রীতে খুব এক চোট হয়ে গেছে। এসব শুনতে চায় না শান্তা, কিন্তু কার সাধ্য আয়েশা আন্টির মুখ বন্ধ করে। তিনি তাকে শোনালেন, ওদের ঝগড়া যখন তুঙ্গে, এই সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। যাবার আগে আড়াল থেকে দেখে গেছেন, দুজনেই যে যার স্যুটকেস, গুছাচ্ছে। তখনই তিনি গৃহকর্তাকে বলতে শোনেন, আশরাফকে ভুলতে না পারলে আমাকে তুমি সুখী করতে পারবে না।
শান্তাকে তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, এই আশরাফটা কে বল তো, মা?
শান্তা বলেছে, আমি জানি না।
শান্তা আজ সকালে টাইপ করতে এসে বুঝতে পারে, ঝর্ণা আপাকে স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে হাসান ভাই সরাসরি সিলেট রওনা হননি, আবার তিনি আশা ভিলায় ফিরে এসেছিলেন। ডাইনিং টেবিলে একটা কাপ ও প্লেট দেখেছে সে, দেখেছে কাদা মাখা একজোড়া বুট। এ-সবই আয়েশা আন্টি ধােবেন, এই আশায় রেখে যাওয়া হয়েছে। বুটে কাদা দেখে শান্তা ধরে নেয়, সিলেট রওনা হবার আগে বাগানে কিছুক্ষণ কাজ করেছেন হাসান ভাই।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টাইপরাইটারে কাভার লাগাল শান্তা, এই সময় ড্রইংরুমে ফোন বেজে উঠল। প্রায় ছুটে এসে রিসিভার তুলল সে। হ্যালো?
ও, তুই, শান্তা…, খসখসে একটা গলা শুনতে পেল শান্তা, চিনতে পারল না। আমি ঝর্ণা রে। ভয় হচ্ছিল কাজ শেষ করে তুই। আবার ফিরে গেছিস কিনা। তোর ভাই বাড়িতে?।
কি ব্যাপার, ঝর্ণা আপা? কি হয়েছে তোমার?
কি বলছিস! আমার আবার কি হবে!
না, মানে, তোমার গলা কেমন যেন শোনাচ্ছে…আমি তো চিনতেই পারছি না।
ঢাকায় খুব শীত পড়েছে, বুঝলি। কাল সারারাত টো টো করে ঘুরেছি তো, তাই খুব ঠাণ্ডা লেগে গেছে। শোন, সোমবারে আমি ফিরব না বলার জন্যে ফোন করছি। ভেবেছিলাম তোর ভাইকে পাব। ঠিক আছে, তুইই তাকে জানিয়ে দিস, কেমন?
ঠিক আছে, ফিরলে জানাব। কেন ফিরবে না, বা আর কিছু বলতে হবে, নাকি সোমবারে আবার তুমি ফোন করবে?
শান্তার মনে হলো, কার সঙ্গে যেন ফিসফিস করে আলাপ করল ঝর্ণা আপা, চাপা হাসির আওয়াজও বোধহয় শুনতে পেল। না, আমি আর ফোন করব না। তাকে শুধু বলবি আমি ফিরছি না…।
কিন্তু ঝর্ণা আপা…, শান্তা তার কথা শেষ করতে পারল না, ওদিকে রিসিভার নামিয়ে রেখেছে ঝর্ণা।
একটা সোফায় বসে গালে হাত দিল শান্তা। তারমানে এবারের ঝগড়াটা আগেরগুলোর মত নয়, আরও অনেক সিরিয়াস। এর মানে কি ওদের বিয়েটা ভেঙে যাচ্ছে? না, অসম্ভব, ঝর্ণা আপা এরকম একটা অন্যায় হাসান ভাইয়ের ওপর করতে পারে না। যত ঝগড়াই হোক, স্ত্রীকে সত্যি ভালবাসেন হাসান ভাই। আপাটা যে কি না! আপন মনে বিড়বিড় করল সে। মনে মনে সান্ত্বনা পাবার চেষ্টা করল এই ভেবে যে সোমবারের আগে হাসান ভাই সিলেট থেকে ফিরছেন না, কাজেই আগামী দুদিন ব্যাপারটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না তাকে। তবে তিক্ত দায়িত্ব শান্তাকেই পালন করতে হবে। স্ত্রী ফিরছে না শুনে তার মনের অবস্থা কি হবে কে জানে।
…রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করোনি, রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন। সাইফুলের সঙ্গে টাউন হলে নাটক দেখতে যাবার পথে ভাবছে শান্তা। রবীন্দ্রনাথ বিধাতার ওপর দোষ চাপিয়ে ছিলেন, তখনকার রীতি অনুসারে। কিন্তু সময় পাল্টেছে, শিক্ষিত মানুষ এখন বোঝে কি থেকে কি হয়, তারা বিধাতার ওপর দোষ না চাপিয়ে দায়ী করেন রাজনীতিকদের, যারা দেশের মঙ্গল করার সোল এজেন্সী নিয়ে যোলো আনা সফল হন শুধু নিজেদের মঙ্গল সাধনে। বাংলাদেশে তাদের কৃতিত্ব এই যে আমাদেরকে তারা বাঙালী করে রাখেননি, পাইকারী হারে রিকশাঅলা বানিয়ে ছাড়ছেন। শুধু ঢাকা না, দেশের সব কটা ছোট বড় শহরই এখন রিকশার দখলে চলে গেছে। আইএ বিএ পাস করেও যুবকরা এখন রিকশা চালাচ্ছে। তার মন্তব্যে সায় দিয়ে সাইফুল বলল, কোটি কোটি মানুষকে বেকার করে রাখতে পারলে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর লাভ, দেশে গরীব মানুষ না-থাকলে তাদের মীটিং-মিছিলে পাঁচ লাখ দশ লাখ লোক হবে কিভাবে!
ময়মনসিংহে দেখার মত ভাল সিনেমা বোধহয় কোন কালেই আসেনি, কাজেই সে পথ না মাড়িয়ে টাউন হলে নাটক দেখতে এসেছে ওরা। এখানকার ছেলেমেয়েরাই অভিনয় করছে, গ্রুপও অনেকগুলো। আজ নতুন ও তরুণ এক নাট্যকারের লেখা নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে, নাটকটার বক্তব্যও সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। নাটকের নাম, এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই। মঞ্চে দুই ডাইনীর দোর্দণ্ড প্রতাপ, প্রত্যেকের দুপাশে কুৎসিত চেহারার রাক্ষসরা দাঁড়িয়ে। মাথায় টুপি আর চিবুকে কয়েক গাছি কাঁচাপাকা দাড়ি নিয়ে একজন ওঝাও আছে। মঞ্চের মাঝখানে পড়ে আছে হীরেজহরত, আর মনি-মানিক্যের একটা স্থূপ, আকৃতি দেখে মনে হবে বাংলাদেশের ম্যাপ। দুই ডাইনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে, উদ্দেশ্য হীরেজহরতগুলোকে রাক্ষসদের দিয়ে লুঠ করানো। এই যুদ্ধে ওঝা একবার এক নম্বর ডাইনীর পক্ষ নিচ্ছে, একবার দুই নম্বরের। আর আছে কিছু পুতুল, ডাইনী দুজনের পায়ের তলায় চিড়ে-চ্যাপ্টা হচ্ছে। তারা, ব্যথায় ফোঁপাচ্ছে।
মাথা ধরেছে, বলে বিরতির আগেই হল থেকে বেরিয়ে এল শান্তা। সাইফুল উদ্বেগ প্রকাশ করতে তাকে জানাল, শরীরটা এমনিতেও আজ আমার ভাল নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা টাইপ করেছি তো।
তাহলে চলো, এক কাপ চা খেলে মাথা ব্যথাটা বোধহয় ছেড়ে যাবে। টাউন হলের সঙ্গেই রেস্তোরা, শান্তাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল সাইফুল। বসার পর ওয়েটারকে ডেকে চা দিতে বলল সে, তারপর শান্তাকে জিজ্ঞেস করল, নাটকটা তোমার ভাল লাগছে না?
এ বক্তব্যের সঙ্গে সবাই একমত হবে না, বলল শান্তা।
কি বলতে চায়, তুমি তাহলে বুঝতে পেরেছ?..
সেটা তো পরিষ্কারই বোঝা যায়; বলল শান্তা। ওদের। ব্যক্তিগত হিংসা আর বিদ্বেষ দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। একটু থেমে চিন্তা করল সে, তারপর আবার বলল, যদিও ডাইনী দুটোর প্রতি আমার খানিকটা দুর্বলতা আছে, স্বভাবতই আমি মেয়ে বলে।
ওদের দ্বারা ভাল কিছু হবার আশা নেই জানার পরও?
যার দ্বারা-ভাল কিছু হবে সে না আসা পর্যন্ত থাক না ওরা, বলল শান্তা। খামচাখামচি করছে করুক, একজন তো জিতবে, তখন সে হয়তো আর ডাইনী থাকবে না, অন্তত মন্দের ভাল কিছু একটা করলেও করতে পারে।
ধন্য আশা কুহকিনী, বলে হেসে উঠল সাইফুল। তোমার কথা শুনে আর কেউ খুশি না হোক, তোমাদের আয়েশা আন্টি অবশ্যই খুশি হবেন। কথাটা কি সত্যি, উনি তোমার মায়ের সঙ্গে একই স্কুলে মাস্টারি করতেন?
ওয়েটার চা দিয়ে গেল।
সত্যি, বলল শান্তা। শুধু তাই নয়, মা আর আয়েশা আন্টি একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেছিলেন।
পুরো ঘটনাটা আমার জানা নেই…।
পাকিস্তানী আর্মি আয়েশা আন্টি, মকবুল আংকেল আর ওদের একমাত্র মেয়ে অনুপমাকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। আন্টির সামনে জবাই করা হয় মকবুল আংকেলকে। ভাগ্যবানই বলতে হবে, কিশোরী মেয়ের দুর্দশা তাঁকে দেখতে হয়নি। দুর্ভাগ্য আয়েশা আন্টির, তার সামনেই ওরা তিন দিন তিন রাত খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারে মেয়েটাকে। তারপরও বেঁচে ছিল অনুপমা। তিন দিন পর ক্যাম্পের সামনে জ্যান্ত কবর দেয়া হয় তাকে। দেশ স্বাধীন হবার পর ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আয়েশা আন্টিকে উদ্ধার করে।
তারপর?
তারপর আর কি, মাথায় গোলমাল দেখা দেয়। প্রথম প্রথম কাউকে চিনতে পারতেন না। কিছু দিন তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেও হয়েছে। বছরখানেক পর খানিকটা সুস্থ হন। আত্মীয়স্বজন কেউ কোথাও নেই, এর বাড়ি তার বাড়ি থাকতেন। একসময় ভিটায় উঠলেন, স্কুলে গিয়ে আগের চাকরিটাও ফেরত চাইলেন। নতুন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া হলো। পড়াবার সময় ধরা পড়ল ব্যাপারটা।
কি?
পুরোপুরি সুস্থ হননি। বাংলা আর ইংরেজি ক্লাস নেবেন, কিন্তু বই না ছুঁয়ে ক্লাসের মেয়েদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। বলেন, দেশ জুড়ে মেয়েদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, ঠেকাতে হলে মেয়েদেরকে এক হতে হবে, হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হবে। আমরা সবাই সুস্থ মানুষ, একটা পাগলকে কিভাবে পাগলামি করতে দিই। চাকরিটা গেল। সেই থেকে যখন যাকে ভাল লাগে তার বাড়িতে হাজির হন, সংসারের সব কাজ করে দেন, বাকি সময় নিজের ঘরে বসে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। আমাদের সয়ে গেছে। কেউ তাকে কিছু বলি না।
কয়েক চুমুকে চায়ের কাপ খালি করে ফেলল শান্তা। এই সময় রেস্তোরায় ঢুকলেন ওদের প্রতিবেশী আজমল সাহেব, স্ত্রীকে নিয়ে। ভদ্রলোক ঠিকাদারী করেন, বেশ ধনী। তার স্ত্রী, ইসমত আরা, ঢাকার মেয়ে, পরচর্চার একনিষ্ঠ ভক্ত। এই যে, শান্তা, তোমরাও বুঝি নাটক দেখতে এসেছ? ভালই হলো। সাইফুল, কেমন আছ? শোনো, শান্তা, ঝর্ণার বরকে আজ বিকেলে ফোন করতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু শুনলাম ওরা কেউ বাড়িতে নেই। কোথায় গেছে জানো,
বলতে পারো কবে ফিরবে?
হাসান ভাই সম্ভবত সোমবারে ফিরবেন, ইসমত আপা, বলল শান্তা। তবে ঝর্ণা,আপা কবে ফিরবে বলতে পারছি না।
লাল, ভাঙাচোরা ফিয়াট গাড়িটা তো আমাদের লেখক জামাইয়ের, তাই না? শুক্রবার সন্ধের দিকে দেখলাম আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে গেল। ব্যাপারটা কি বলো
তো?
কি জানি, এড়িয়ে যাবার সুরে বলল শান্তা
তারমানে স্বামী-স্ত্রীতে আবার ঝগড়া হয়েছে, বললেন ইসমত আরা। আয়েশা বুড়ির মুখে শুনলাম একজন গেছে, সিলেট, আরেকজন গেছে ঢাকা। আবার তুমি এখন বলছ, আমাদের লেখক জামাই সোমবারে ফিরবে, কিন্তু তার বউ কবে ফিরবে কেউ জানে না! ঝর্ণার সাহস আছে বলতে হবে, কি বলো? স্বামীর পাঁজরে খোচা মারলেন তিনি। শালী বাড়িতে রোজ টাইপ করতে আসবে জেনেও স্বামীকে একা রেখে চলে গেল।
চোখ-মুখ লাল হয়ে উঠল শান্তার। অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখল সে, বলল, টাইপ করি ঠিকই, তবে হাসান ভাইয়ের সঙ্গে প্রায় দিনই আমার কোন কথা হয় না। যে যার কাজে ব্যস্ত থাকি আমরা।
তাই? তবে কথা না বললেই বা কি ! অনেক সময় কথা বরং আসল কাজে বাধা সৃষ্টি করে। তাছাড়া, লেখকরা কেমন হয় সবাই তা জানে। সাবধান গো মেয়ে, সাবধান! খিলখিল করে হেসে উঠে রেস্তোরার ভেতর দিকে এগিয়ে গেলেন ইসমত আরা।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল শান্তা, মাথা নিচু করে বেরিয়ে এল রেস্তোরা থেকে। সাইফুলকে বলল, নাটক দেখতে ইচ্ছে করছে না আর। আপনি আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিন।
সাইফুল বলল, এখন মনে হচ্ছে অফিস থেকে তোমাকে ছেড়ে দিয়ে কাজটা বোধহয় ভাল করিনি আমি। আজ হঠাৎ একটা তাগাদা অনুভব করছে সে। বেশি দিন দেরি করলে শান্তা না তার হাতছাড়া হয়ে যায়। শান্তা হয়তো এখনও তাকে ভালবাসতে পারছে না, কিন্তু সে যে ভালবাসে এটা অন্তত ওকে জানানো দরকার। সাঈদ হাসান নামে এক বিবাহিত লেখকের প্রেমে পড়ে যাবে মেয়েটা, এ-ধরনের একটা ঝুঁকি কেন সে নেবে? কিন্তু কিভাবে প্রেম নিবেদন করতে হয় জানা নেই তার। এমনিতে সে লাজুক মানুষ, কি বলবে ভাবতে গিয়ে ঘেমে যাচ্ছে।
রিকশা নিয়ে ফিরছে ওরা, সাইফুলকে অস্থির লাগছে দেখে শান্তা বলল, আপনি সম্ভবত ইসমত আপার কথা শুনে ঘাবড়ে গেছেন?
হ্যাঁ, না, মানে…উনি কেমন মানুষ সবাই আমরা জানি। তবু বিব্রতকর তো বটেই।
আমি মোটেও বিব্রত হইনি, মিথ্যে কথা বলল শান্তা : এধরনের মানুষের কথায় গুরুত্ব দিলে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। চেহারা গভীর করল সাইফুল; ইচ্ছে হচ্ছিল ল্যাং মেরে ফেলে দিই…।
হেসে ফেলল শান্তা। দিলেন না কেন, দেখার মত একটা ব্যাপার হত।
অধিকার পেলে ওই মহিলাকে আমি একটা জুসই জবাব দিতে চাই, বলল সাইফুল। কিন্তু সে অধিকার কি আমি পাব, শান্তা?
ঝট করে সাইফুলের দিকে ফিরল শান্তা। কথাগুলো বলার পর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে সাইফুল। পাশ থেকে আজ তাকে অত্যন্ত সুদর্শন আর ভালমানুষ লাগছে দেখতে। যদিও উত্তরে কি বলবে ভেবে পেল না শান্তা।
আমি কি বলতে চাইছি তুমি বুঝতে পারছ? একটু পর জিজ্ঞেস করল সাইফুল।
হ্যাঁ, বোধহয় পারছি।
তোমাকে আমি সাংঘাতিক ভালবাসি, শান্তা। তুমি বোঝে? তবে আমার ইচ্ছে নয় তোমাকে বিরক্ত বা অস্থির করে তুলি…।
কি বলতে চাইছেন সাইফুল ভাই? প্রথমে শান্তা ভাবল, তার বোধহয় চুপ করে থাকাই উচিত। কিন্তু কৌতুক ও কৌতূহলরোধ দমন করতে পারল না। জিজ্ঞেস করল, ঠিক কি বলতে চাইছেন বলুন তো? & আমার ভালবাসায় কোনরকম জোর-জবরদস্তি নেই, শান্তা। প্রায় অসহায় সুরে কথা বলছ সাইফুল। কারণ আমি ভালবাসলেও তুমি-তোবাসো না। তাই ভেবেছি, বন্ধুত্বটা যদি ধরে রাখতে পারি, এক সময় সেটাই তোমাকে আমার ওপর দুর্বল করে তুলবে। বলবে তুমি, শান্তা, আমার কি সত্যি কোন আশা আছে? আমার কথা তুমি বিবেচনা করে দেখবে?
কিছুক্ষণ কথা বলল না শান্তা। তারপর যা বলল, শুনে তাকে পাবার জন্যে একেবারে যেন পাগল হয়ে উঠল সাইফুলের মন। আপনি খুব সুন্দর মানুষ, সাইফুল, ভাই। আপনি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষও বটেন। আপনার মত আদর্শবান পুরুষ আমার জীবনে আরেকজন আসবে বলে মনে হয় না। অবশ্যই আপনার কথা বিবেচনা করব আমি। কিন্তু, সাইফুল ভাই, প্রেমভালবাসা জিনিসটা আরও অনেক জটিল। আপনার প্রেমে পড়তে চাই আমি, কারণ এরচেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু, সাইফুল ভাই, ভাল বলে উপলব্ধি করলেই প্রেম হয় না।
প্রেম হয়নি, অথচ তুমি আমাকে বিয়ে করলে, এ আমিও চাই না, শান্তা, নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথাগুলো বলল সাইফুল।
আমি জানি আপনি তা চাইবেন না, কারণ নিজের কাছে আপনার একটা মূল্য ও মর্যাদা আছে, একটা মেয়ের সবচেয়ে ভালটুকু আপনি প্রত্যাশা করতে পারেন। সত্যি কথা বলতে কি, সেই মেয়েটি যদি আমি না হয়ে অন্য কেউ হয়, তাকে আমি সহ্য করতে পারব না।
এখন তাহলে কি হবে? শান্তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল সাইফুল।
বন্ধুত্বটা তো থাকছেই। তবে এখন যখন আমার প্রতি আপনার অনুভূতি সম্পর্কে জানি আমি, আমার কাজ হবে নিজের অনুভূতি কি বলে তা ভাল করে বোঝার চেষ্টা করা। আমি কিন্তু ঠিক বুঝতে পারিনি, সাইফুল ভাই। সবাই আজকাল হিসাব কষে প্রেমে পড়ে, সে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত একজন আইন ব্যবসায়ী শান্তার মত অতি সাধারণ একটা মেয়ের প্রেমে পড়বে না, এই ছিল আমার ধারণা। ভেবেছিলাম, আপনি শুধুই ভাল একটা সম্পর্ক রাখতে চান আমার সঙ্গে। এখন আপনাকে আমি অন্য দৃষ্টিতে দেখছি।
মনে হচ্ছিল বলতে দেরি করলে তোমাকে না হারাতে হয়। ভাল যখন বেসেছি, তোমাকে আমার পাবার চেষ্টাও তো করতে হবে। এখন থেকে সে চেষ্টাই করব আমি।
আমি আপনার সাফল্য কামনা করি, ফিসফিস করে বলল শান্তা, তার ঠোঁটে অস্পষ্ট হাসি লেগে রয়েছে।