সারাদিন শেষ না হওয়া প্রচন্ড ব্যাস্ততা, আর হার ভাঙ্গা খাটুনি তদুপরি রাতে বাড়িতে আসার সময় জ্যাম নামক বিভ্রট যন্ত্রনা তো আছেই। এগুলো অতিক্রম করেই দিন অতিবাহিত করছে ইমু। মাঝে মাঝে কাজগুলোর প্রতি একটু ঘৃণা জমে যায় ইচ্ছে হয় যদি বাড়িতে বসেই বসের মত অফিস করতে পারতাম তাহলে কতই না ভাল হতো। তবুও এসকল কস্টগুলোকে জীবিকার তাগিদে মেনে নিতেই হয়। প্রতিদিনকার মত আজও কেবল একটা শো শেষ করে বাড়িতে আসছিল সে। আর বাড়িতে আসতেই বউয়ের ঝাড়ি…..
— কি ব্যাপার আজ এতো দেরি হলো যে….(শারমিন ইমুর বউ)
— নাহ্ এমনিতেই দেখনা রাস্তায় কি পরিমাণ জ্যাম। (ইমু)
— হয়েছে হয়েছে জানিতো জ্যাম তো শুধু বাহানা। কেন দেরি হয় তা কি আমি বুঝিনা নাকি??(শারমিন)
— আশ্চর্য আসতে না আসতেই ঝগড়া শুরু করে দিলে তোমার সন্দেহ বাতিকটা একটু কমাও বুঝলে…(ইমু)
— কিইইই আমি তোমার সাথে শুধু ঝগড়া তাই না (শারমিন)
— আমি আবার কখন এ কথা বললাম…(ইমু)
— বলো নাই তবে তাই বলতে চাচ্ছ…(শারমিন)
— বাহ্ ভালোতো আমার বউতো দেখি অনেক ইন্টেলিজেন্ট আমি ” ক ” বললেই সে কলকাতা পর্যন্ত বুঝে ফেলে…(ইমু)
— মানে তুমি কি বলতে চাচ্ছ ক্লিয়ার করে বলোতো…(শারমিন)
— দেখ শারমিন সারাদিন অনেক খাটাখাটুনি করে এসেছি এখন একটু শান্তিতে থাকতে দাও তারপর যত ইচ্ছা ঝগড়া করো। (ইমু)
— তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ আমি সারাদিন তোমার সাথে ঝগড়া করি.। ওকে আজ থেকে তোমার সাথে আমার আর কেন কথা নেই। হুহহহহহ(রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল)
ইমুও তখন বেশ ক্লান্ত থাকায় আর কথা বেশি কথা বাড়ালো না। ভিতরে গিয়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকলো। এমনিতে অন্যান দিন এ সময় শারমিন তোয়ালে এগিয়ে দেয়, কোন নাইট ড্রেসটা পড়বে সেটা সেই ঠিক করে দেয় কিন্তু আজ যেহেতু মেডাম রাগ করেছে তাই সব কিছু ইমুকেই করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। ফ্রেস হয়ে এসে টেবিলে বসতেই মনে হল। শারমিন তো আমাকে ছেড়ে একা কখন-ই খায় না। তারউপর ও তো বেশিক্ষণ ক্ষুদা সহ্য করে থাকতে পারে না। ওহ মাই গড তাৎক্ষনিক দৌরে চলে গেল বেড রুমে।
— এহম এহম ইসকিউজ মি একটু কথা বলা যাবে। (ইমু)
— চুপ করে আছে..
— আমার লক্ষ্মী সোনা, আমার টিয়া, ময়না, রাগ করেনা প্লিজ। খুব ক্ষুদা লাগছে প্লিজ খেতে আসো??(ইমু)
— যার ক্ষুদা লাগছে সে গিয়ে খেতে পারে…(শারমিন)
— তোমাকে ছাড়া আমি কখনো খেয়েছি বলো…(ইমু)
— আমার সাথে কারো খাওয়া লাগবে না আমি তো সবসময় সবার সাথে ঝগড়াই করি।(শারমিন)
— আচ্ছা বাবা আই এম সো সরি।(ইমু)
— চুপ করে আছে
— আচ্ছা প্লিজ আসোনা আমার সত্যিই খুব ক্ষুদা লাগছে। তাছাড়া তুমিতো জানোই আমি ক্ষুদা সহ্য করতে পারি না(ইমু)
— আপনি আবার কবে থেকে খিদে সহ্য করতে পারেন না(শারমিন)
— আসলে তুমি তো ক্ষুদা সহ্য করতে পারো না। (ইমু)
— এ কথা বলার পর কিছুক্ষন একটি মায়াবী দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিল ইমুর দিকে। আর সে অপলক মায়াবী চোখ যা দেখে যে কেউ ভলকে যাবে….
— এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? সত্যি বলছি আমি ফিল করতেছি তোমার খুব কস্ট হচ্ছে প্লিজ খেতে আসো…(ইমু)
এরপর তেমন কোন কথা হলো না। দুজনেই খেতে চলে গেল আর খাওয়া শেষ করেই। শারমিন ঘরে এসে মাঝখানে কোলবালিশের বর্ডার দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে পরলো।
ইমু তখন চিন্তা করতে লাগলো, কি এমন করলাম যে মেডাম আজ এত রেগে আছে? আজকে কি কোন বিশেষ দিন ছিল? নাহ্ তা তো মনে হচ্ছে না তাহলে কি কিছু আনতে বলেছিল? নাহ তাওতো মনে হচ্ছে না। ধুর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। দেখি ওকেই জিঙ্গেস করি। তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই ৪৪০ বোল্টের শর্টস….
— কেউ যেন আমাকে টাচ না করে…(শারমিন)
— আচ্ছা আমি কি করেছি সেটা কি একবার বলা যাবে?(ইমু)
— উত্তর নেই
— কি হলো বলো…(ইমু)
— আচ্ছা ঐ মেয়েটা কি আমার থেকেও বেশি সুন্দর…(শারমিন)
— ঐ মেয়েটা মানে???(ইমু আশ্চর্য হয়ে)
— কোন মেয়েটা জানো না তাই না? আজকে সংবার পড়ার শুরুতে আবার সংবাদ শেষে তোমার পাশের মেয়েটার দিকে তাকাও নি তুমি। আবার ফিসফিস করে কি যেন কথাও বলছিল।. (শারমিন)
— আমি আবার কখন ওর দিকে তাকালাম..(ইমু)
— ইসসস ভেজা বিড়াল একেবারে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারে না। আমি দেখেছি টিভিতে….(শারমিন)
ওহহো একটা কথাতো বলাই হয় নি। ইমু কম্পিটার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করলেও পার্ট টাইম একটি চ্যানেলের সংবাদ উপস্হাপক হিসেবে আছে অনেকদিন যাবৎ। আসলে সংবাদ উপস্থাপন হওয়ার কথা ইমু কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। ছোট বেলা থেকে ও খুব মিষ্টভাষী ছিল।যার কারনে অল্পতেই সকলের মন জয় করে ফেলতো । তারই ধারাবাহিকতায় ভার্সিটিতে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখছিল । যেহেতু ও খুব মিষ্টভাষী সবাই মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছিল। আর ভাগ্যক্রমে সেদিন যে প্রধান অথিতী ছিল। সে আবার একটি চ্যানেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর । হঠ্যাৎ ইমু দেখেই তার ভাল লেগে গেল। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি ইমুকে এখন সে চাকুরির পাশাপাশি এই সংবাদ উপস্থাপনাও করে।
আর হ্যা আপনারা হয়তো জানেন, যারা সংবাদ উপস্থাপনা করে অনেক ক্ষেত্রে দুজন মিলে সেটা করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে একজন স্মার্ট ছেলে চর একজন স্মার্ট মেয়ে দুজনে মেয়ে উপস্থাপন করে এতে করে দর্শকমহল ঐ চ্যানেলের প্রতি আগ্রহ একটু বেশি তৈরি হয়। বরাবরের মতো ইমু যেহেতু স্মার্ট আর ড্যাসিং ছেলে সো নতুন যত মেয়েই আসুক না কেন ওর সাথেই বেশি মেয়ের ঝুটি দেওয়া হয়। আর ক্যামেরায় ফোকাস অন্তত ভাল আাসার জন্য হলেও দুই উপস্হাক কথা বলছে, হাসাহাসি করবে এমন একটা সিকুয়েন্স করতে হয় সংবাদের শুরুতে এবং শেষে উভয় সময়ই। কিন্তু শারমিন তা মানতে নারাজ। তার কথা একটাই “ইমু আমাকে ছাড়া আর কারো দিকে তাকাতেই পারবে না” আর গত কয়েকদিন নতুন একটা মেয়ের সাথে সংবাদ উপস্থাপনা করার সময় একটু আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভাল করার জন্য মেয়েটার সাথে একটু কথা বলছিল সে আর মেডাম এই কারনেই রেগে ঢোল হয়ে আছে….
— ওহহ মাই গড তুমি এই কারনে রেগে আছ। আচ্ছা দেখ! এইটা সব কিছু ডিরেক্টর আগেই ঠিক করে দেয় সংবাদের উপস্থাপনাকে আকর্ষনীয় করার জন্য একটু হাসি দিতে হয়…(ইমু)
— আমি এত কিছু বুঝি না। তুমি ওর দিকে তাকালে কেন??(শারমিন)
— আচ্ছা বাবা আমার ঘাট হয়েছিল। এবারের মতো মাফ করে দাও আর কোন দিন এমনটা হবে না। (ইমু)
— না না না এত সহজে তো তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না..(শারমিন)
— তার মানে কি করবা??(ইমু)
— কানধরে একশ বার উঠবস করো??(শারমিন)
— ওকে নো প্রবলেম (বলেই শারমিনের কান ধরে বসলো)
— এই ফাজিল আমার কান না তোমার কান ধরে..(শারমিন)
— একশবার পারবো না বাবু। প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও।(ইমু)
— কোন মাফ নাই। তারাতারি করো নাহলে আমি কিন্তু এঘরে চলে গেলাম..(শারমিন)
— না থাক করতেছি দাড়াও।
— হুমমম
— ইয়া আল্লাহ জীবনে কি পাপ করছিলাম যে এই জল্লাদটারে আমার কপালে জুটাইলা।(ফিসফিস করে)
— ঐ কি বলো ফিসফিস করে..(শারমিন)
— নাহ কিছুনা। সবই আমার কপাল..(ইমু)
— কথা কম বলো। যেটা বলছি সেটা করো..(শারমিন)
— ১,২,৩,৪,৫…..
— পঁাচের পর আয় ছয় পর্যন্ত যেতে হয়নি তার মধ্যেই। শারমিন হঠ্যাৎ করে বিজলির ন্যায় ইমুর দুই গালে হাত রেখে ঠোটটা একটু সামনে বাড়িয়ে দিল। আলতো আদরের পরশে রাঙ্গিয়ে তুললো দুজন দুজনকে। আর ইমুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করলো…
— এই পাগলি কান্না করছো কেন??(ইমু)
— ইমু তুমি কেন বুঝতে চাও না। তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখলে আমি সহ্য করতে পারি না…(শারমিন কান্নাস্বরে)
— সরি বাবু..(ইমু)
— ইমু তোমাকে আমি অনেক অনেক ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত অন্য কিছুই কল্পনা করতে পারি না। তুমি সেটা কেন বুঝতে চাও না…(শারমিন)
— আচ্ছা বাবা সরি বললামতো আর এমন হবে না। (ইমু)
— প্রমিস
— হুমমম প্রমিস
— এই শয়তান আমার চকলেট কই হুমমমম??(শারমিন)
— কিসের চকলেট?? (ইমু)
— দেখছো তুমি আবার ভুলে গেছ তোমাকে না বলেছি প্রতিদিন আসার সময় আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবা??(শারমিন)
— ওহহ মাই গড। আই এম সো সরি বেবি।..(ইমু)
— ধ্যাৎ ভাল্লাগেনা কিছু। বুঝছি তুৃমি আমাকে একটুও ভালবাসো না..(বলই মুখ ঘুড়িয়ে ফেললো)
— এই যে মেডাম এই নিন… (ইমু পেছন থেকে চকলেট বের করে দিল)
— ওয়াও তুমি আনছো। থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ……
— আহা শুধু থ্যাংকিউ তে কোন হবে না। আমার মিষ্টিগুলে দাও….(ইমু)
— কিসের মিস্টি হা…(শারমিন)
— ঐযে তোমার ঠোটের…..(ইমু)
— যাহ ফাজিল একটা…(শারমিন)
— আমি ফাজিল না দাড়াও ফাজলামি দেখাচ্ছি….(ইমু)
— এই ইমু এখন না বলছি না পরে হবে…(শারমিন)
— ওহহহ
— কি হলো মন খারাপ করছো কেন?? আচ্ছা বাবা ঘুামনোর সময় সব পুষিয়ে দেব।(শারমিন)
— ওকে
শারমিন বাচ্চাদের মত চকলেট খাচ্ছে আর মুগ্ধ হয়ে। তা দেখছে ইমু। আচ্ছা ও এড সুন্দর কেন? যত দেখি ততই নতুন করে প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয়। তার মানেটাও সোজা ভালবাসার মানুষকে মনের চোখ দিয়ে দেখলে, সে যদি অসুন্দরও হয় তবুও তাকে বিশ্বপরিক্রমা মনে হবে।
— এই ফাজিল এমন করে কি দেখ??(শারমিন)
— তোমাকে….
— আমাকে বুঝি নতুন দেখ…(শারমিন)
— জানিনা। শুধু একটুকো জানি ভালবাসি তোমায়
— ইসসস হঠাৎ করে এত ভালবাসা কোথা থেকে আসলো জনাব..(শারমিন)
— তাও জানিনা শুধু জানি সাগরের ঢেউয়ের মত বিরামহীন ভালবাসি, ঝোছনার মায়ারূপধারীর মত ভালবাসি, আকাশের বিশালতার মতো ভালবাসি
— হয়েছে হয়েছে আর কবি হতে হবে না আপনাকে। এখন একটি কাজ করেন। আমাকে একটু জড়িয়ে ধরেন….(শারমিন)
— এইমাত্র না বললে দূরে যেতে…
— এত কথা বলো কেন যেটা বললাম সেটা করো…(শারমিন)
ইমু শারমিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে আছে আর ও বাচ্চাদের মত আয়েশ করে চকলেট খাচ্ছে। ইমুও একটু এডভান্টেজ নেওয়ার চেস্টা করলো। হঠাৎ করেই শারমিনকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে আসলো…..
— এই ফাজিল। কি হচ্ছে এসব…(শারমিন)
— ভালবাসা আর রোমান্স
— ধ্যাৎ…..তুমি না একটা…
— কি আমি (ইমু)
—ফাজিল…
— তা শুধু তোমার জন্য (ইমু)
এরপর………..
এরপর………..
এরপর……..
বাকিটা….. ইতিহাস