দিনের শেষে

দিনের শেষে

নিজের বাড়ির উঠোনেই দাঁড়িয়েছিলেন নগেনবাবু! হঠাৎ দেখলেন উত্তর দিক থেকে এক বিশাল কুকুর তাঁর দিকেই ছুটে আসছে, খুবই বিভৎস চেহারা কুকুরটার, মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। নগেন বাবু বুঝে উঠতে পারলেন না, কুকুর কোথা থেকে এলো? এদিকটায় তো এত বিশাল কুকুর কারো বাড়িতেই নেই। কুকুরটা পাগলা নয়তো? কুকুর পাগল হয় ভাদ্র মাসে, নগেন বাবু মনে করতে পারছেন না এটা কোন মাস! কুকুরটা আসছে, নগেন বাবুর মনে পড়ে গেলো পাগলা কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক রোগ হয়, কুকুর কামড়ালে নাভির চারপাশে চৌদ্দটা ইঞ্জেকশান দিতে হবে, নগেন বাবুর বয়স হয়েছে, বুড়ো বয়সে সব কিছুতেই ভয়, পাগলা কুকুরে ভয়, ইঞ্জেকশান নিতেও ভয়। কুকুরটা চলে এসেছে, এখনই কোথাও লুকিয়ে পড়া দরকার, কিন্তু পা নাড়াতেই পারছেন না। নগেন বাবু ভীষণ ভয় পেয়েছেন, গলা শুকিয়ে কাঠ।

আরে, এই ত মাত্র উঠোনে ছিলেন, এর মধ্যেই আবার কোথায় চলে এলেন! জায়গাটা ভীষণ অচেনা মনে হচ্ছে, চারদিক ভাল করে একটু দেখে নিবেন বলে নগেন বাবু দাঁড়িয়েছেন, আশেপাশে একটিও বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে না, কোন গাছগাছালিও নেই। ভয়ে নগেন বাবুর গলা শুকিয়ে গেছে, শরীর ঘামছে, প্রস্রাবের বেগ হচ্ছে। ইদানিং খুব ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ হয়। কুকুরটা চলে এসেছে, দেহের সমস্ত শক্তি পায়ে জড়ো করে নগেন বাবু দৌড়োতে শুরু করলেন। সামনে শুধুই ধূ ধূ মাঠ, পেছনে পাগলা কুকুরের ঘেউ ঘেউ, নগেন বাবু ছুটছেন তো ছুটছেনই! কিন্তু আর পারলেন না, কুকুরটা বাম পায়ে কামড়ে ধরতেই নগেন বাবুর তন্দ্রা ছুটে গেলো। কোথায় উঠোন, কোথায় মাঠ, উনি কোথায় আছেন!

বাম পায়ে প্রচন্ড ব্যথা, নাড়ানোর সামর্থ্য নেই! নগেন বাবু বুঝে উঠতে পারছেন না কুকুরটা চলে গেছে নাকি পা কামড়ে ধরেই রেখেছে। ‘মিনতি, মিনতি’ বলে গলা ছেড়ে ডাকছেন অথচ গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না। পাটায় চেপে ধরতে হবে, মিনতিকে ডাকলেন, কিন্তু মিনতি এলো না।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নগেন বাবু বুঝতে পারলেন, উনি দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। কুকুর কামড়ায়নি পায়ে, বাম পায়ের রগে টান পড়েছে, পা বেঁকিয়ে যাচ্ছে। এখনই পা চেপে ধরতে না পারলে পা বেঁকিয়ে শক্ত হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু উনার পক্ষে তো পা চেপে ধরা সম্ভব না। মিনতিকে অযথাই ডাকছিলেন, মিনতিকে কোথায় পাবেন, সে তো চলে গেছে গত বছর। মিনতি ছিল নগেন বাবুর অন্ধের যষ্ঠী। পাঁচ বছর আগে ইভার মা মারা গেলেন, তখন নগেন বাবুর ছোট বোন তাদের গ্রাম থেকে দশ বছরের বালিকা মিনতিকে নগেন বাবুর দেখাশোনা করার জন্য রেখে যায়। মিনতি নগেন বাবুকে দাদু ডাকতো। দাদুর ঘরের লাগোয়া ঘরেই মাটিতে বিছানা পেতে ঘুমাতো।
নগেন বাবুর পায়ের রগে টান পরার সমস্যাটা অনেক দিনের পুরনো। ইভার মা যখন বেঁচে ছিলেন, উনি খুব তটস্থ থাকতেন কখন না জানি পায়ের ব্যথায় নগেন বাবু চীৎকার করে উঠেন। ইভার মায়ের ঘুম ছিল খুব পাতলা, যেদিন নগেন বাবুর পায়ের রগে টান পড়তো, উনি ঘুম থেকে জেগে স্বামীর পা চেপে ধরতেন, এরপর হাতে একটু সরষের তেল ঘষে পাটায় মালিশ করে দিতেন, নগেন বাবু ঘুমিয়ে পরতেন।

মিনতি আসার পর ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান পড়লেই নগেন বাবু চীৎকার দিয়ে উঠতেন, মিনতির ঘুম ভেঙ্গে যেত, মশারীর ভেতর থেকেই বলতো, “ দাদু, ও দাদু, খাড়াও আইতাছি, ঠ্যাং লাড়াইও না, আমি আইসা চাইপা ধরতাছি” বলেই মিনতি নগেন বাবুর পা চেপে ধরে কিছু একটা কায়দা করতো, উনার পা ঠিক হয়ে যেত। গত বছর মিনতিকে ওর মা বিয়ে দেয়ার কথা বলে কাজ ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেছে। মিনতি যেতে চায়নি, পাঁচ বছর শহরে থেকে মিনতির নজর কিছুটা হলেও খুলেছিল, এত অল্প বয়সে শ্বশুরবাড়ি যেতে চায়নি, নতুন জায়গা, নতুন মানুশ সব নিয়েই মেয়েটার মনে খুব ভয় ছিল। নগেন বাবুর কাছে বায়না ধরেছিল, “ ও দাদু, আমি এখন বিয়া করুম না। মায়েরে বুজাইয়া কও, আমি গেলে গিয়া তোমার কি হইব? ঘুমের মইদ্যে যহন পায়ে ভুতে কামড় দিয়া ধরবো, কে তখন তোমার পা থিকা ভুত ছারাইব?”
অভ্যাসবশেই নগেন বাবু বাম পাটিকে খুব ধীরে ধীরে সোজা করার চেষ্টা করলেন। কিছুক্ষণ পর পায়ের ব্যথা একটু কমতেই ধীরে ধীরে উঠে বসলেন। বুকটায় তখনও চাপা যন্ত্রণা, দুঃস্বপ্নটা দেখে ভয়ই পেয়েছেন, অমন ভয়ানক কুকুর জীবনেও দেখেননি। পৃথিবীর কুকুর দেখতে এমন বীভৎস হয় না। কেন জানি নগেন বাবুর মনটায় কুডাক ডেকে উঠলো, তবে কি সময় ঘনিয়ে এসেছে! ঘুমের মধ্যেই যদি চলে যেতে হয়, ওটা কি দুঃস্বপ্ন ছিল নাকি মৃত্যুর পরোয়ানা ছিল!

লুঙ্গি ভিজে গেছে, এখনই বদলাতে হবে, এমন কান্ড জীবনে এই প্রথম ঘটলো, আরও বেশীদিন বেঁচে থাকলে এমন ঘটনা আরও অনেক বেশী ঘটবে। বিপত্নীকের জীবন এত দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়। সন্তানের উপর বোঝা হয়ে যাওয়াটা অন্যায়। সন্তান বাবা-মায়ের বোঝা হয় না, কিন্তু বুড়ো হলে বাবা-মা সন্তানের কাঁধে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ছেলে- ছেলে বউ পূবের ঘরে থাকে, উত্তরের ঘরে উনি, রাত বিরেতে গলা তুলে ডাকলেই ওরা দৌড়ে আসবে। কিন্তু নগেন বাবু কাউকে বিরক্ত করতে চান না। উনার তো এখন সারারাতেও ঘুম আসে না, কতবার ডাকবেন ছেলেকে। সারাদিন ছেলে কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে, রাতে যদি একটু ঘুমাতে না পারে ছেলের স্বাস্থ্যই তো টিকবে না।

বিছানা থেকে নামার পূর্বে মশারি ঝাড়লেন, খুব ধীরে ধীরে পা বের করে মাটিতে ফেললেন। এই ফাঁকেই মশারির ফাঁক গলে এক ঝাঁক মশা মশারীর ভেতর ঢুকে গেল। ঘরে সারারাত নীলচে বাতি জ্বলে, তবুও নগেন বাবু কিছুই স্পষ্ট দেখেন না। বুকটায় কেমন এক সিড়সিড়ে অনুভূতি, সময় ঘনিয়ে এসেছে। একা ঘরে মরে থাকবেন, মুখে এক চামচ জল দিবে না কেউ। জলের কথা মাথায় আসতেই খেয়াল হলো, কুকুরের ভয়ে দৌড়াতে গিয়ে গলা শুকিয়ে গেছিল। খাটের কিনারেই টেবিলে জলের গ্লাস ঢেকে রাখা আছে, সারাদিন কাজ কর্ম সেরে গোপালের মা বাড়ি ফিরে যায়। বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে নগেন বাবুর হাতের কাছে সব সাজিয়ে রেখে যায়।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে নগেন বাবু এই ঘরে একা ঘুমান, মিনতি যে কবছর ছিল পাশের ঘরে থাকতো। মিনতি চলে যাওয়ার পরেই যেন নগেন বাবুর ঘুমের সমস্যা বেশী হচ্ছে। একা থাকেন বলেই কি এই সমস্যা? রাতকে অনেক দীর্ঘ মনে হয়।

আজকাল সন্ধ্যা হতেই নগেন বাবুর মনে অস্বস্তি শুরু হয়, রাত দশটা বাজতেই খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে ছেলে বৌ রান্নাঘরে শেকল তুলে দেয়। রান্নাঘরে শেকল তুলে দেয়া মানেই ওদের ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ওদের ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই নগেন বাবু নিজের ঘরে খিল তুলে দেন। টিভি অন করে বসেন, আজকাল টিভির সাউন্ড সিস্টেম গোলমাল করছে। বাটন ঘুরালেও আওয়াজ বাড়ে না। ( আসলে নগেন বাবু কানে কম শুনছেন আজকাল, টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে এমন উঁচুতে নিয়ে যান যে আশেপাশের সকলের কানেই পৌঁছে যায়। সেদিন ছেলে একটা ইয়ার ফোন কিনে নিয়ে এসেছে বাবার জন্য। বাবাকে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ইয়ারফোন ব্যবহার করতে হয়।

নগেন বাবু ইয়ারফোন ব্যবহার করেন না দুটি কারণে। প্রথম কারণ উনি বিশ্বাসই করেন না যে উনার শ্রবণ শক্তি কমে গেছে, অথবা বিশ্বাস করলেও তা কাউকে বুঝতে দিতে চান না। উনার ভয়, ছেলেকে বললেই ছেলে উনাকে টানতে টানতে ঢাকা শহরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। নগেন বাবু ডাক্তারের কাছে যেতে চান না, অনেক টাকার ধাক্কা। বুড়া মানুষের শতেক রোগ উসিলায় কত রকমের টেস্ট করতে দেয়, ৯০ বছর তো বাঁচলেন, এখন আর লাখ টাকা ব্যয় করে তো বাঁচার কিছু নাই, লাখ টাকায় কি উনি যৌবনকাল ফিরে পাবেন?

দ্বিতীয় কারণ, ইয়ারফোনটা ছেলে নিশ্চয়ই অনেক দাম দিয়ে কিনেছে। দামী জিনিস তো হুট হাট ব্যবহার করা ঠিক না। দামী জিনিস থাকুক, যখন দরকার হবে তখন ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো, নগেন বাবু এখন টিভি সাউন্ড অফ করে রাখেন। সাউন্ড বাড়ালেই ছেলে বুঝে যাবে বাবা ইয়ারফোন ব্যবহার করে না। ছেলেকে নগেন বাবু খুব ভয় পান, যা রাগ। সমস্যা নেই, স্ক্রিনে ছবি দেখা যায়, এটাও ভাল লাগে, টিভির মানুষ দেখে মনে হয় ঘরে উনি একা নন, ওরাও সাথে আছে।

নগেন বাবু লুঙ্গি পাল্টালেন, প্রস্রাবে ভেজা লুঙ্গিটা নিয়ে বাথরুমে রাখলেন। বাম পা’টা এখনও ভারী লাগছে। আরেকবার প্রস্রাব শেষ করে হাত পা ধুয়ে ঘরে ঢুকলেন। আজ আর ঘুম হবে না। চেয়ার টেনে বসেছেন, এক শলা সিগারেট ধরাবেন কিনা ভাবছেন। আজকাল সিগারেটে টান দিয়েও সুখ নেই, দুই টান দিতে না দিতেই কাশি উঠে, এমন কাশি যে বাইরে থেকে মনে হয় ঘরে বুঝি যক্ষ্মা রুগী আছে। সিগারেটেও ভয়, একটা টান দিয়ে কাশি দিবে, কাল সকাল হলেই ছেলের কাছে ধরা পড়ে যাবে। তবুও একটা সিগারেট ধরিয়েই ফেললেন। এত ভয় নিয়ে বাঁচা যায়?

ঘড়িতে বাজে রাত দেড়টা! সকাল হতে আরও পাঁচ ঘন্টা বাকী। ইদানিং রাত এত দীর্ঘ হয় কেন? নাকি বুড়োদের রাত দীর্ঘ হয়? বিয়ের পর রাত হয় সবচেয়ে ছোট, দুই ঘন্টায় রাত কাবাড়! বউকে ঠিকমত আদরও করা হয় না, বাইরে মোরগ ডেকে উঠে। আজকাল বোধ হয় কারো বাড়িতেই মোরগ ডাকে না। আরে দূর! কী যা ভাবনা মাথায় আসে, শহরের বাড়িতে মোরগ ডাকবে কি করে, মোরগ ডাকার আগেই সবাই মোরগ রান্না করে খেয়ে ফেলে।

আবার ঘড়ি দেখলেন নগেন বাবু, দুটো বাজতে দশ মিনিট বাকী! জীবন অনেক শ্লো। ইভা কেমন আছে কে জানে! এক সপ্তাহ হয়ে গেলো ইভা ফোন করেনি। নগেন বাবুর মনে অন্যরকম ভয় বাসা বাঁধে। উনি দীর্ঘ আয়ু পেয়েছেন, উনার ছেলেমেয়ে দুটোও কি উনার মতই দীর্ঘ আয়ু পেয়েছে? ইভার বয়স তো মনে হয় ষাটের কাছাকাছি, মৃদুলের বয়সও পঞ্চাশ ত হবেই। নগেন বাবুর স্ত্রী মারা গেছেন ৬৫ বছর বয়সে, কুড়ি বছরের ব্যবধান ছিল স্বামী-স্ত্রীতে। কুড়ি বছরের ছোট স্ত্রী চলে গেল উনার আগে, ইভা যদি ওর মায়ের আয়ু পেয়ে থাকে! বাপের আগেই কন্যা চলে গেলে কেমন হবে! হায় হায়! এ কেমন ভয় বাসা বাঁধতে চায় মনে। মেয়েটার শরীর বেশী ভালো যাচ্ছে না, কী হবে!

“আচ্ছা, মরণের পরে মানুষ কোথায় যায়? ইভার মা কোথায় গেছে? আমি যদি আজ মরে যাই, কীভাবে মরবো? আমি বুঝবো কি করে যে আমি মরে যাচ্ছি। মায়ের মৃত্যুর সময় ইভা আর মৃদুল সামনে উপস্থিত ছিল। আমার মৃত্যু কি একা ঘরে হবে? আচ্ছা, ভগবান বলে কি কোন অস্তিত্ব আছে? আমি তো সারাজীবন পূজো-আচ্চা করিনি, মৃত্যুর পর আমি কি নরকে যাব? নরক কেমন? স্বর্গই বা কেমন? আমি যদি বেঁচে থাকতেই স্বর্গ-নরকের তফাত না বুঝি, অস্তিত্ব না জানি তাহলে পাপ-পূণ্য করার উপযোগীতা বুঝবো কি করে? আমি তো সারাজীবনে মিথ্যেকে প্রশ্রয় দেইনি, গরীবের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি, লোভ করিনি, কাউকে ঠকাইনি, তবুও কি মরণের পরে আমাকে নরকেই যেতে হবে? নরক কি আমার বর্তমানের চেয়েও ভয়াবহ? এই যে আমি লুঙ্গি ভিজিয়ে ফেললাম, সকালে তো বৌমা বাথরুমে ঢুকেই দূর্গন্ধ টের পাবে! কী ভাববে আমার সম্পর্কে? মৃদুলকে কি কিছু বলে দিবে? আচ্ছা লুঙ্গিটা কি এখন ধুয়ে দেবো? কিন্তু আজ আর বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না। পা চলে না, কুকুরটা যদি দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকে! বলা তো যায় না, যদি কুকুরটাই মৃত্যুদূত হয়ে আসে! ইভা জানবে না, মৃদুল জানবে না কিচ্ছুই আজই একা একা মরে পড়ে থাকবো?

দরজার মধ্যে কিসের আওয়াজ হয়? বেড়ালের নখের আচর মনে হচ্ছে। বেড়াল এলো কোথা থেকে? হ্যাঁ তো, দরজায় আচরাচ্ছে কেউ, কুকুরটা নয়তো? তবে কি, তবে কি আমি দুঃস্বপ্ন দেখিনি? এ কী! দরজায় এত আওয়াজ কেন, মৃদুলের ঘুম ভেঙ্গে যাবে, শোয়া থেকে উঠে আসবে, কুকুরটা আমাকে না পেয়ে মৃদুলকে কামড় দেবে না তো! কুকুরের কামড় খেয়ে মৃদুল মরে যাবে নাকি? আমার আগে আমার ছেলে মরে যাবে? তা কী করে হয়? আমি তো তা হতে দেবো না। ৯০ বছর বেঁচেছি, আর কত? দরজাটা খুলব? কুকুরটাকে তাড়িয়ে দেবো?”

চেয়ার থেকে নামতে গিয়েও নগেন বাবু নামতে পারলেন না, বাম পা ফেলতেই পারছেন না। চেয়ারে বসা অবস্থাতেই নগেন বাবুর মনে নতুন ভয় ঢুকে গেলো, রাতে কি উনার স্ট্রোক করেছিল? তাইতেই পা অবশ হয়ে গেছে? হায় হায়, ভোর হতে এখনও কত দেরী? একা একা মরে যাচ্ছেন তাহলে? এটাই মৃত্যু? তাহলে মৃত্যুকে এতদিন ভয়ে পেয়েছেন কেন? এটা কোন কথা হলো, মেয়েটা কতদূরে, কতদিন ইভা মায়ের মুখটা দেখিনি। মৃদুল তো তবুও আমার মুখটা দেখবে, কিন্তু আজ মরে গেলে ইভা তো বাবার মরা মুখটাও দেখতে পাবে না!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত