হাজব্যান্ড পটানো

হাজব্যান্ড পটানো

“দেখুন আপনার প্রতি আমার কোনো interest নেই। মায়ের জিদের জন্য বিয়েটা করতে হয়েছে। আপনি আমার বাবা
মায়ের খেয়াল রাখলেই চলবে।” বাসররাতে ঢুকেই কথাগুলো বলে বিজয় বারান্দায় চলে গেল। আফরিনা অবাক হয়ে
তাকিয়ে রইল। এটা মোটেও আশা করেনি আফরিনা। রাগে ফুলে উঠেছে আফরিনা। বিজয়কে ধরে ইচ্ছেমত পিটাতে
মন চাচ্ছে আফরিনার। বিয়ে করবি না তো বাবা মাকে বললেই পারতি। আমার জীবনে বুলডোজার চালালি কেন?
.
কিছুদিন পর এক রেষ্টুরেন্টে
~ বলিস কি? তোর সাথে ভাল
করে একবার কথাও বলেনি?(অর্পি)
> কথা বলা তো দূরে থাক
‚ একবার ভাল করে তাকায়নি পর্যন্ত।
অর্পি হাসতে লাগল। তা দেখে আফরিনার গা জ্বলে উঠলো।
গলা টিপে ধরল।
~ স্যরি স্যরি স্যরি (তবুও হাসতেছে)
> হাসি বন্ধ কর।
~ ওকে। (বন্ধ হল)
.
> এখন কি করব? আইডিয়া থাকলে বল।
~ উকিলের সাথে দেখা কর।
> তোর সাহস তো কম না তুই আমার সংসার ভাঙ্গার বুদ্ধি দিচ্ছিস? (গলা টিপে ধরল)
~ আরে ছাড়। ফান করলাম।
> রাগে আমার মাথা নষ্ট আর তুই ফান করছিস?
~ স্যরি বাবা। তোর কিসের আইডিয়া লাগবে?
> ওকে হাতের মুঠোয় আনবো কিভাবে সেই আইডিয়া।
~ হায়রে কপাল সবাই ছেলে পটায় আর তুই হাজব্যান্ড পটাবি?
> দেখ বিয়ে তো ছেলে খেলা নয়। তাছাড়া আমার সাথে আমার বাবা মায়ের মান সম্মানও জড়িয়ে আছে।
~ তা ঠিক। শুন একটাই উপায় আছে।
> বল।
অতঃপর অর্পি কিছু টেকনিক দিল।
.
বিজয় সবার সামনে আফরিনার সাথে স্বামীর মতই আচরণ করে। কিন্তু আড়াল হলেই অচেনা মানুষের মত আচরণ করে।
আফরিনার পুরো পরিবারের সাথে মিলেমিশে চলে। প্রতিদিন সকালে বিজয়ের ঘুম ভাঙ্গার সাথেসাথেই আফরিনা
চা নিয়ে হাজির হয়। চুল গুলো হালকা ভিজা ও ছড়ানো থাকে। না চাইতেও বিজয় কিছুক্ষণের জন্য চোখ ফেরাতেপারে না।

আফরিনা কাশি দিয়ে বিজয়ের সেই দৃষ্টি ভাঙ্গিয়ে দেয়।
.
একদিন আফরিনা ইচ্ছে করেই বিজয়ের শার্টের বোতাম ছিড়ে রেখেছে। বিজয় শার্ট পড়তেছে। আফরিনা আয়নার সামনে বসে সাজতেছে। বিজয়
বারবার সেই দিকে তাকাচ্ছে আর শার্ট পড়ছে। হঠাৎ খেয়াল করল শার্টের একটা বোতাম নেই। বিজয় সুই সুতা খুজতে লাগল।
.
> কিছু লাগবে?
– সুই সুতা।
> কেন?
– (দেখিয়ে দিল)
.
আরফিনা সুই সুতা বের করে শার্ট পড়া অবস্থায়ই বোতাম লাগাতে লাগল।
– শার্টটা খুলে দিলে ভাল হয় না?
> আপনার লেইট হয়ে যাবে।
– একটু সাবধানে। লেগে গেল তো আবার বিপদ।
> চুপচাপ দাড়িয়ে থাকুন। নয়তো লেগে যাবে।
.
বিজয় চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। আফরিনা বোতাম লাগিয়ে দিল। বিজয় আফরিনাকে এই প্রথম এত কাছ থেকে দেখলো।
.
আফরিনা বিজয়ের মা বাবার প্রতি যথেষ্ট দায়িত্ববান। যা দেখে বিজয় খুবই খুশি। মেয়েটা একবারও কোনো অভিযোগ করেনি।
.
কিছুদিন পর বিজয়ের বাবা আফরিনা ও বিজয়কে কক্সবাজারে ঘুরতে পাঠালো। আফরিনা ইচ্ছে করেই বিজয়ের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।
.
বিজয় হোটেলে এসে দুটা রুম নিল। আফরিনা তো রেগেমেগে আগুন। মুডটাই অফ হয়ে গেল। আফরিনা রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। বিকালে বিজয় এলো।
.
> কি চাই? (রাগি ভাব)
– আপনি কি রাগ করেছেন?
> কই নাতো! রাগ কি?
বিজয় বুঝল যে আফরিনা রাগ করেছে।
– ভাবলাম সমুদ্র সৈকত দেখতে যাব।
> যান না। ধরে রেখেছে কে?
– একা যেতে ভাল লাগছে না।
> রাস্তা থেকে কুকুর ধরে সাথে নিয়ে যান।
– বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।
> আপনি বাড়াবাড়ির দেখছেন কি? (রেগে)
.
বিজয় চলে এলো। হোটেলে সিন ক্রিয়েট করা উচিত নয়। বিজয় সমুদ্রের পাড়ে চলে এলো। একি! আফরিনা এখানে?
.
– আপনি এখানে?
> আপনি আসতে পারলে আমি পারব না কেন?
– বাপরে কি ঝগড়াটে মেয়ে।
> কি বললেন?
– কিছু না।
.
চুপচাপ পাশে দাড়িয়ে রইল।
> ছ্যাকা খেয়েছেন কয়টা?
– জ্বি?
> ছ্যাকা কয়টা খেয়েছেন?
– আমি প্রেমই করি নাই।
> নারী বিদ্বেষী নাকি?
– উল্টাপাল্টা কথা বলছেন কেন?
> আপনার ব্যবহার দেখেই বুঝা যায় হয়তো ছ্যাকা খেয়েছেন নয়তো নারী বিদ্বেষী।
– বুঝেছি আপনাকে পাত্তা দেই না তো। তাই এসব বলছেন?
> যা সত্য তাই বললাম। আর শুনেন আপনার মত অনেক ছেলে ভার্সিটি লাইফে আমার পিছু পিছু ঘুরেছে।
.
বিজয় একটা অট্টহাসি দিল। যা দেখে আফরিনার রাগ চরম সীমায় পৌছালো। বিজয়ের পেটে একটা ঘুষি মেরে চলে এলো। বিজয় এমনটা আশা
করেনি। যদিও ব্যাথা পেয়েছে কিন্তু আফরিনাকে বুঝতে দেয়নি। শত হলেও পুরুষ তো।
.
কিছুদিন পর তারা কক্সবাজার থেকে ফিরে এলো।
~ বলিস কি? একটুও পরিবর্তন হয়নি? (অর্পি)
> আরে না।
~ আমার তো মনে হয় বড় ধরণের ছ্যাকা খেয়েছে।
> আমার তা মনে হয় না। কারণ ওর চেহারায় কষ্টের কোনো ছাপ দেখি না। বরং আমাকে কষ্ট দেয়ার আনন্দ দেখি।
.
অর্পি অট্টহাসি দিল। আফরিনা গলা টিপে ধরল।
~ স্যরি স্যরি।
> আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে সেটা কাজে লাগাব।
~ আমার মনে হয় না ও আর পটবে। যে ছেলে সৌন্দর্য দেখে পটে না। সে আর কিসে পটবে?t
> ইমোশনস।
~ মানে?
> পরে বলব। এখন যাই।
~ টিপসটা আমাকেও দিস। কে জানে আমার বিয়ের পরেও কাজে লাগতে পারে।
> কাজ হলে বলব।
.
আফরিনা বিজয়ের প্রতি আরও কেয়ার হল। বিজয়ের কোন জিনিস কোথায় থাকে তা বিজয়ের না জানলেও আফরিনার জানা থাকে। এক
রাতে কান্নার গুনগুন শব্দে বিজয়ের ঘুম ভেংগে গেল। বিজয় বুঝল যে আফরিনা কান্না করতেছে। বিজয়ের মনে একটু খারাপ লাগল।
.
পরেরদিন অফিসে বসে বিজয় আফরিনার কথা ভাবতে লাগল। মেয়েটার প্রতি বেশিই অন্যায় করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভাল করে কথাও বলিনি। তবুও
মেয়েটা নিজের দায়িত্ব ঠিকই পালন করে যাচ্ছে। একটিবারও অভিযোগ করেনি। আমার কি উচিত না মেয়েটির হাত ধরা? ও যেমন ভালবাসে তার
প্রতিদানে অল্প একটু ভালবাসা দেয়া?
.
বিজয়ের মনের মধ্যে অনুশোচনাবোধ কাজ করতে লাগল। নানান জল্পনা কল্পনার পর বিজয় সিদ্ধান্ত নিল আজ থেকে সেও আফরিনার মত
চলবে। আফরিনা কাছে আসলে সেও কাছে যাবে।
.
সেই রাতেও একই কাহিনী হল। আফরিনার গুন গুন কান্নার শব্দে বিজয়ের ঘুম ভেংগে গেল। আজকে বিজয়ের বুকটাও কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। মেয়েটা তার
কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রাতের পর রাত কেদে কেদে পার করছে। না এভাবে একটা মেয়েকে কাদানো কোনো অধিকার আমার নেই। আজ একটা
নতুন সকালের সাথে নতুন জীবন শুরু করব।
.
সকালে,
– আফরিনা?
আফরিনা দৌড়ে এলো। কারণ এই প্রথম বিজয় তাকে ডেকেছে।
> জ্বি জ্বি!
– চা হবে?
> হুম। এক্ষুনি আনছি।
.
আফরিনা চা নিয়ে এলো।
– এক কাপ কেন আমাকে দিবে না?
> এটা আপনার জন্যই।
– তাহলে তুমি?
> আমি তো ……
– যাও কাপ নিয়ে আস। এই এক কাপ চা ভাগ করে খাব।
.
আফরিনা তো এসব সুযোগের অপেক্ষাতেই আছে। দৌড়ে যেয়ে কাপ নিয়ে এলো। তারপর এক সাথে চা খেলে।
.
বিজয় অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। আফরিনা সাজুগুজু করতেছে।
– চুল গুলো খুলে দাও দেখতে  ভাল লাগে। আফরিনা অবাক হয়ে বিজয়ের
দিকে তাকালো।
> সত্যি?
– হুম। খুলে দাও। আফরিনা চুল খুলে দিল।
.
অফিসে যাওয়ার আগে বিজয় আফরিনাকে বলল
– আজ তাড়াতাড়ি আসব। বিকালে ঘুরতে যাব। রেডি হয়ে থেকো।
> জ্বি।
বিজয় হাসিমুখে চলে গেল। আফরিনা সাজতে শুরু করল। কোন শাড়ি পড়বে তা ঠিক করতেই পারছে না। নতুন সকালের
সাথে আফরিনার জীবনে নতুন অধ্যায়ের শুরু হল।
.
ভাল মানুষ গুলো যখন অন্যের উপর অন্যায় করে তখন চোখের পানি তাদের মনের মধ্যে অনুশোচনাবোধ জাগিয়ে তুলে

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত