বিয়ের পরে মিম আর আমার ভালবাসা বেড়েছে। তবে সেই ভালবাসা মাঝে মাঝে বেশি হয়ে যায়। মিমের আবদার টা বেশি না।
টাকা পয়সা চায় না। শুধু আমাকে পাশে চায়। কিন্তু সবসময় তো আর পাশে থাকা যায় না। তবে মিমের পাশে থাকার চেষ্টা করি।
সুন্দরী মেয়েরা একটু অভিমানী হয়। মিমও ঠিক তেমন অভিমানী। বিয়ের আগে একদিন দেখা করতে দেরি হল। তাতেই শুরু হল
মহারানির রাগ। সবদিন দেরি হয় তবে সেদিন বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাতেই রেগে চলে গেল আমার সাথে কোন কথা বলল না।ফোন
দিচ্ছিলাম ফোন ধরছিল না। আমার খুব খারাপ লাগছিল। তাই আমার বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলাম মিমদের বাড়ির সামনে। গিয়ে দোকান থেকে এক
প্যাকেট ব্যানচন সিগারেট কিনলাম। কিনে আমার বন্ধুকে সাথে নিয়ে বসে আছি মিমের বাড়ির সামনে। এমন সময় দেখলাম মিম ওদের
বারান্দার দিকে আসছে। আমি প্যাকেট থেকে সিগারেট বেড় করে ধরালাম। ধরিয়ে শুরু করলাম সুখটান দেয়া। এমন সময় আমার বন্ধু জোড়ে জোড়ে বলল
-দোস্ত তুই কোনদিন সিগারেট এর গন্ধ সহ্য করতে পারিস না।আর তুই সিগারেট খাচ্ছিস।
-আমার ভালবাসার মানুষ আমার সাথে কথা বলছে না।আমি সিগারেট খাবো না কি করবো?
-চল।সিগারেট খাস না।এইরকম সিগারেট খেলে অল্প দিনে মরে যাবি।
-আমি মরে গেলে তাতে কারো কিছু যায় আসে না। তাই বলে একটা সিগারেট
খেতে থাকলাম। খেয়াল করলাম মিম বারান্দায় এসে শুধু কাদছে আর চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছে।আমি তবুও
থামলাম না। আরেকটা ধরিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। এমন সময়ে মিম রেগে বেড়িয়ে এল। এসেই আমার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিল।
আমি বললাম
-কি বেপার সিগারেট ফেলে দিলে কেন?
-তুমি সিগারেট খাচ্ছ কেন?সিগারেট খেলে শরিরের ক্ষতি হয়। জানো না?
-আমার শরিরের ক্ষতি হলে তোমার কি?
-আমার কি মানে? তোমার কিছু হলে আমার কি হবে?
বলেই আমার হাত থেকে প্যাকেট এর গুলো ফেলে দিল। ফেলে দিয়ে শুরু করলো কান্না। আমি বললাম
-কাদছ কেন? কান্না থামাও।
-আগে বল তুমি আর সিগারেট খাবে না।
-তাহলে তুমি আমার উপরে রাগ
করবে না তো?
-একটু রাগ করেছি বলে তুমি এমন করবে?
আমি তখন রেগে ছিলাম তাই অমন করেছি।আর রাগ করবো না।
-আচ্ছা তাহলে আমি সিগারেট খাবো না। এবার একটু হাসো।
-সত্যি সিগারেট খাবে না?
-হ্যা। কান্না থামাও।
-তাহলে আমাকে আই লাভ ইউ
বলে জড়িয়ে ধরো।
-আই লাভ ইউ বেবি।
যতই রাগ করুক আই লাভ ইউ বলে জড়িয়ে ধরলেই সব রাগ শেষ। তাই জড়িয়ে ধরলাম। অবশেষে মহারানির
মুখে হাসি ফুটেছিল। সেইদিন পরকল্পনা করে বন্ধুকে ডেকে সিগারেট এর নাটক করেছিলাম। আজ বুধবার। তাই আজ
অফিসে যাওয়ার আগে মিম বলল
-আজ একটু তারাতারি ফিরবে।
-কেন?
-আজ আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে বেড় হবো।
আমরা শপিং এ যাবো।
-আচ্ছা তারাতারি ফেরার চেষ্টা করবো।
-কত তারাতারি ফিরবে আমার জানা আছে। আমার শতিনকে পেলে তো আমার কথা আর
মনে থাকে না?
-শতিন মানে? তোমার শতিন আসবে কোথা থেকে?
-তোমার অফিস তো আমার বড় শতিন।আমার কাছ থেকে তোমাকে দুরে রাখে।
-আচ্ছা তোমার শতিনের কাছ থামে তোমার কাছে তারাতারি ফিরে আসবো।
-আচ্ছা।
কপালে একটু চুমু খেয়ে চলে গেলাম অফিসে। অফিস থেকে বেড়িয়ে গাড়িয়ে উঠবো এমন সময় পিছন
থেকে কে যেন “সিহাব সিহাব” ডাকছিল।তাই পিছনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখলাম আমার বন্ধু নাইম।
-কিরে নাইম তুই?
-হ্যা। কেমন আছিস?
-আছি ভাল। তুই তো আমার খবর নিস না।
মনে আছে আমার কথা?
-আর বলিস না। অফিস থেকে একমাসের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম।
-কিন্তু তুই আমাকে জানালি না?
-আরে জানাবো কিভাবে?
আমি তো আগে জানতাম না।
-কেমন কাটছে দিন?
-ভালই। তোর কেমন কাটছে?চল আজ একটু গুরে আসি।
-কোথায়?
-আমাদের চিরচেনা সেই কপি শপের আড্ডায়।
-চল। ওখানে গিয়ে সব বলবো। তারপরে শুরু হল দুইজনের গল্প একে অপরের এতদিন এর সব কথা বলতে লাগলাম।
কথা বলতে বলতে রাত হয়ে গেল। মনে পরলো আজ মিমকে নিয়ে ঘুরতে বেড় হওয়ার কথা।নিশ্চয় মিম অনেক রেগে আছে।
বাসায় গিয়ে দেখলাম বউ আমার রেগে আগুন। জিজ্ঞেস করলাম -খেয়েছ তুমি? -আমি খেলেই তোমার কি? না খেলেই
তোমার কি?
-এমন করছো কেন? আমি সরি। আসো খেতে আসো।
-লাগলে তুমি খাও।আমি খাবো না।
-আচ্ছা তাহলে আমিও খাবো না। ঘুমাতে আসো। আমি ঘুমাতে গেলাম।
-আমি তোমার সাথে ঘুমাবো না। আমি আজ সোফায় ঘুমাবো।
-আচ্ছা। ঘুমাও।
আজ আমার ই দোষ।একটু আগে ফিরলেই পারতাম। তাহলে এমন অভিমান করতো না।
আমি জানি অভিমান বেশি সময় থাকবে না। দরজা লাগিয়ে শুয়ে থাকলাম। জানি একটু পরেই
দরজা খোলার জন্য আওয়াজ শুরু হবে। তাই জেগে থাকলাম। কয়েকমিনিট পরেই দরজায়
ধাক্কা দিতে থাকলো আর বলল
-এই দরজা খোলো।
আমি চুপ করে থাকলাম। দেখি কি হয়? দরজা থাক্কাতেই থাকলো। একটু পরেই কান্না শুরু
করলো। তাই দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলতেই বউ আমার বুকের উপরে ঝাপিয়ে পরলো। আর
কাদতে কাদতে বলল
-তুমি দরজা লাগাইছো কেন?
-তুমি বললে তুমি সোফায় ঘুমাবে।তাই দরজা লাগাইছি।
-তাই বলে দরজা লাগিয়ে দিবে?
-তুমি আমার উপরে রাগ করেছ।তাই আমিও রাগ করেছি।
-তুমি জানো না আমি তোমার উপরে বেশি সময় রাগ করে থাকতে পারি না।
-এখন রাগ কমছে?
-হ্যা। এবার খেতে চলো।
-চলো।
খেয়ে দুইজন বিছানায় শুয়ে পরলাম। বউ বুকে মাথা রেখে সুয়ে থাকলো। আমি বললাম
-তুমি সত্যি আজকে সোফায় থাকার পরকল্পনা করেছিলে,?
-আরে নাহ তোমাকে এমনি বললাম। তোমাকে ছাড়া আমি কোনদিন ঘুমিয়েছি?
-তাহলে এত অভিমান কেন?
-আমি তো একটু অভিমানী। তোমার বুকে মাথা না রাখলে আমার ঘুম আসে না।
-এখন থেকে কম খাবে।
-কেন?
-খেয়ে খেয়ে তো ওজন বাড়াচ্ছ।আর আমার বুকে মাথা রাখলে আমার বুক টের পায়।
-কি বললে!!!
-আচ্ছা। থাকো তুমি আমি সোফায় গিয়ে ঘুমাবো। বলে চলে যাচ্ছিল। আমি হাত ধরে বুকে টেনে নিয়ে বললাম।
-তোমার ওজন যতই হোক।তবুও এই বুকে মাথা রেখে ঘুমালে অনেক শান্তি লাগে।
-সত্যি।
-হ্যা। সত্যি আমার অভিমানি মহারানি।
-আমি কি বেশি অভিমানি?
-না।এটুকু অভিমান আমার ভালই লাগে। তুমি সারাজিবন ই অভিমানি থেকো। তারপরে দুইজন ঘুমিয়ে গেলাম।