— দোস্ত তুই কি জীবনেও একটা প্রেম করতে পারবি না? (রাফি)
— আরে ওর কথা বলিস না। ও জীবনেও প্রেম করতে পারবে না। শুধু হ্যান্ডসাম হলেই কি প্রেম করা যায়রে পাগলা? ( আরিয়ান)
— তোদের সবগুলোকে মেরে নদীতে ফেলে দিব হারামীর দল। আরেকবার যদি কানের সামনে প্রেম প্রেম করিস তাহলে কিন্তু একেবারে খুন করে ফেলবো। (আমি)
— আহা উচিত কথা বললেই শুধু মারতে মন চায়? আচ্ছা দোস্ত তোর সমস্য কি বলতো? (রাজিব)
— আমার কোন সমস্যা নেই। প্রেম হলো একটা প্যারা। এই প্যারা নেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। (আমি)
— হুম বুঝলাম তোমার সমস্যা আছে। ( রাফি)
— বাজে কথা বাদ দে। একটু চুপ থাক। তোদের বকবক ভাল লাগেনা।
..
ক্যাম্পাসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এটাকে আড্ডা না বলে ঝগড়া বললেই ভাল হবে। আমরা চার বন্ধু। আমি, রাফি, আরিয়ান আর রাজিব। আমার বন্ধুদের প্রধান কাজ হলো আমাকে খোঁচানো। আর এই খোঁচানোর জন্য তাদের একটাই বিষয় আছে। আর তা হচ্ছে প্রেম। তারা একেকজন চার-পাঁচটা করে প্রেম করে আর আমি প্রেম করিনা।
এর ফলেই তাদের যত মাথা ব্যাথা। একসাথে থাকলেই তারা আমাকে এই বিষয় নিয়ে খোঁচাবে।
..
ঝগড়াটা ভালই চলছিল। হঠাৎ এই ঝগড়ার মাঝে আগমন ঘটলো এক অতিশয় রূপবতী তরুনির। তার নাম আমার জানা নেই। সে আমাদের চারজনের সামনে অগ্নিমূর্তি ধারন করে দাঁড়িয়ে আছে।
— এই যে জুবায়ের সাহেব, নিজেকে কি এখানকার নেতা মনে করেন? (মেয়েটি)
আমার দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বললো সে। কিন্তু আমার নামতে জুবায়ের না। আমার নাম আরমান।
— কি ব্যাপার হা করে তাকিয়ে আছেন কেন? নিজেকে কি আপনি এখানকার দাদা মনে করেন? (মেয়ে)
— জী আমাকে বলছেন? (আমি)
— এখানে আপনি ছাড়া আর কোন ব্যাক্তিকেই আমি এসব কথা বলতে আসিনি। ভালো হয়ে যান। ভাল হতো পয়সা লাগেনা।
— জী আমার অপরাধ?
— উহ ন্যাকামি করেন? আর কোনদিন যদি আমার বান্ধবীকে প্রেমপ্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করেন তাহলে আপনার ঠ্যাঙ্গ ভেঙ্গে দিব।
— সত্যি দেবেন?
— হুম সত্যিই দিবো। যত বড় গুন্ডা হোন তাতে লাভ নেই। আমি কাউকে ভয় করিনা।
..
মেয়েটা চলে গেছে। কিন্তু রেখে গেছে কিছু ঝাঁঝালো কথা। যা আমার হৃদয়কে দোলা দিয়ে গেছে।
আমি নিশ্চিত সে ভুল করে আমাকে এসব কথা বলেছে। এসব কথা সে নিশ্চয়ই আমাদের বখাটে বন্ধু জুবায়েরকে বলতে চেয়েছিল। কিন্তু চিনতে না পেরে আমাকে বলেছে।
..
আহা মেয়েটার সাহসের তারিফ করতেই হয়। নিজের বান্ধবীকে বিরক্তির হাত থেকে বাঁচাতে কিভাবে নিজে এগিয়ে এলো। আহা কি বান্ধবীদরদী মেয়ে!
— আরমান কই হারিয়ে গেলি? (আরিয়ান)
— হারাইনি দোস্ত, তবে হারিয়ে যাবো। (আমি)
— বাহ, কবি কবি ভাব চলে এসেছে মনে হচ্ছে? লক্ষন কিন্তু সুবিধার না। (রাজিব)
— হুম আমারো তাই মনে হয়। (রাফি)
— আসলেই লক্ষন সুবিধার না। আর একটা কথা বললে থাপ্পড় দিয়া তোদের গালের সব দাঁত পাউডার বানিয়ে দিব। চল ক্লাসে যাই। (আমি)
..
দুইদিন পর……..
সারাদিন ঘরে বসে থেকে আর ভাল লাগছে না। তাই একটু ঘোরাঘুরির উদ্দেশ্যে এখন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। উদ্দেশ্য রিকশা নিয়ে পার্কে চলে যাবো। কিন্তু আজ আমার কপাল খারাপ।
আজ প্রতিটি রিকশাওয়ালা নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে জামাই মনে করছে। যাকেই জিজ্ঞেস করি সেই অবজ্ঞা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, নাহ যামু নাহ।
কি আর করা? রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। যদি কোন রিকশাওয়ালার মনে এই অবলা ছেলের জন্য দয়ার উদয় হয়।
..
— এইযে আরমান ভাই কেমন আছেন?
রাস্তার পাশেই একটা গাছের ডালে দুইটা চড়ুই পরস্পরের মধ্য ঝগড়া করছিল। আর আমি মনোযোগ সহকারে সেই ঝগড়া উপভোগ করছিলাম। এমন সময় কেউ একজন আমাকে উপরের কথাগুলো বললো। যে বললো সে একজন অতিরূপবতী নারী। আমার জানামতে আমি তাকে আগে কখনো দেখিনি।
— কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? (মেয়েটি)
— জী আমাকে বলছেন? (আমি)
— আপনার আশেপাশে তো আর কেউ নেই। আপনাকেই বলছি।
— জী কি বলতে চাইছেন বলুন।
— আপনি মনে হয় আমাকে চিনতে পারেননি।
— হুম ঠিকই ধরেছেন। আসলেই আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। আপনি কে?
— আমি সাদিয়া।
— ওওওওও!
— আপনি এখনো আমাকে চিনতে পারেননি।
— কিভাবে বুঝলেন?
— আপনার চোখ দেখে বুঝলাম। আমি সেই মেয়ে যে আপনাকে দুইদিন আগে ক্যাম্পাসে পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলাম।
..
এই কথা শুনে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। সত্যি সত্যিই কি আমার পা ভেঙ্গে দিতে এসেছে নাকি?
— কি ব্যাপার আপনি কি ভাবছেন মনে মনে? (সাদিয়া)
— না মানে কিছুনা। (আমি)
— আসলে আমি সেদিন ভূলে আপনাকে অনেক বকাঝকা করেছি। প্লীজ আমাকে মাফ করে দিন। আমি আসলে জুবায়েরকে এসব বলতে চেয়েছিলাম।
— ওওওওওওও।
— বলুন আমাকে মাফ করেছেন কিনা?
— হুম মাফ করলাম।
— অসংখ্য ধন্যবাদ। আচ্ছা আমি আজ আসি। আমার বান্ধবীরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে ভাল থাকবেন।
— আপনি আমাকে আপনি করে বলছেন কেন? আমি আপনার এক বছরের জুনিয়র। আমাকে তুমি করে বলবেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে যাও।
..
আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রিকশায় উঠে পড়লো সাদিয়া। রিকশাওয়ালাও তড়িৎগতিতে কর্মঠ হয়ে উঠলো।
অথচ এই রিকশাওয়ালা কিছুক্ষন আগেও যামু নাহ বলে হুঙ্কার দিচ্ছিলো। হায়রে রিকশাওয়ালা, আর কতো জ্বালাবি?
..
— আরমান ভাই আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন? (সাদিয়া)
চলে যেতে উদ্ধত রিকশাওয়ালাকে নিরস্ত্র করে দিয়ে আমাকে এই কথাটা জিজ্ঞেস করলো সাদিয়া।
— এইতো একটু সামনেই যাবো। (আমি)
— তাহলে উঠে পড়ুন আমার রিকশায়। ( সাদিয়া)
— না না থাক। আমি অন্য আরেকটা রিকশায় চলে যাবো, তুমি যাও।
— আরে উঠুন না প্লীজ।
— না তুমি যাও।
— তাড়াতড়ি উঠুন বলছি।
..
অবশেষে সাদিয়ার সাথেই রিকশায় উঠতে হলো। আমি যথাসম্ভব নিজেকে সঙ্কুচিত করে রাখলাম। কোন মতেই সাদিয়ার গায়ের সাথে লাগা যাবে না। তাহলে হয়তো সে অন্য কিছু ভাবতে পারে।
— কি ব্যাপার আপনি এমন ভাবে বসেছেন কেন? ঠিক হয়ে বসুন বলছি। (সাদিয়া)
— না না আমি ঠিক ভাবেই বসেছি। (আমি)
— আচ্ছা আপনি কি চোখে কম দেখেন?
— (চমকে উঠে) কই নাতো। চোখে তো ঠিকই দেখি।
— তাহলে চশমা পরে থাকেন কেন সবসময়?
— এমনি ইচ্ছে করে তাই।
— আজকের পর থেকে আর পরবেন না। চশমা পরলে আপনাকে কেমন যেন লাগে। চশমা ছাড়া আপনাকে অনেক কিউট লাগে।
..
অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে একটু লজ্জা করতে লাগলো। সত্যি কি চশমা ছাড়া আমাকে সুন্দর লাগে?
— আচ্ছা ঠিক আছে কাল থেকে আর চশমা পরবো না। (আমি)
— হুম না পরলেই ভাল। (সাদিয়া)
..
কথা বলতে বলতে কখন যে পার্কের কাছাকাছি চলে এসেছি টেরই পাইনি।
— ভাই আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়েন। (আমি)
— আপনি কি এখানেই নামবেন? (সাদিয়া)
— হ্যা।
— আমিও তো এখানেই নামবো।
— ওহ ভাল।
..
অনেক চেষ্টা করেও রিকশা ভাড়া দিতে পারলাম না। সাদিয়াই দিয়ে দিলো।
সাদিয়ার জন্য তার বান্ধবীরা অপেক্ষা করছিলো। সে তার বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে চলে গেল আর আমিও পার্কের অন্য একপাশে চলে গেলাম।
..
বেঞ্চের উপর একা একা বসে আছি। নিজেকে আজ বড় একা একা লাগছে। এর আগে আর কখনোই এমন মনে হয়নি। কিন্তু সাদিয়ার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই এমন মনে হচ্ছে।
মেয়েটার কথায় একপ্রকার জাদু আছে, আর আছে হুকুমের সুর। ঠিক যেন তার কোন অতি আপনজনকে সে হুকুম করছে।
আমি এসব কি ভাবছি মনে মনে? আমি কি তাহলে সাদিয়ার প্রেমে পড়ে গেলাম? না না তা কি করে হতে পারে?
এত অল্প সময়ের পরিচয়ে কি মনে প্রেমের উদয় হতে পারে?
..
বিষন্ন মন নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম। কিছুই ভাল লাগছে না। সাদিয়াকে আবার দেখতে ইচ্ছে করছে। কেন আমার এসব মনে হচ্ছে আজ? তবে কি আমি সত্যি সত্যি সাদিয়াকে ভালবেসে ফেলেছি?
এতদিন বিভিন্ন গল্পে প্রথম পরিচয়ে প্রেমের কথা পড়েছি। কিন্তু আজ মনে হয় আমি নিজেই সেই প্রেমের কবলে পড়লাম।
..
ইউনিতে গিয়েই আগে সাদিয়াকে খুঁজতে লাগলাম। আর পেয়েও গেলাম কিছুক্ষনের মধ্যেই। সে তার বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত।
আমার রাতের ঘুম হরন করে সে এখন বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে?
— সাদিয়া একটু এদিকে আসবে? (আমি)
— আরে আপনি কেমন আছেন? বাববাহ আজ চশমা ছাড়াই এসেছেন দেখছি। (সাদিয়া)
— হুম তোমার কারণেই চশমা ছাড়া এসেছি।
— আমার কারণে চশমা ছাড়া এসেছেন? কিন্তু কেন?
কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। পকেটে একটা স্বর্ণের আংটি সুড়সুড়ি মারছে। যেন বলতে চাইছে, আরমান আর দেরি করিস না। তোর মনের কথাটা বলে দে।
..
হঠাৎ কি হয়ে গেল বুঝলাম না। দ্রুতগতিতে পকেট থেকে আংটি বের করে সাদিয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম। আংটি তার সামনে তুলে ধরে বললাম,
— সাদিয়া আমি জানিনা ভালবাসা মানে কি। তবে আমি এটুকু জানি যে আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমার জন্য আমার মায়ের এই আংটিটা চুরি করে নিয়ে এসেছি। আমার মা এই আংটি তার হবু পুত্রবধুর জন্য আগলে রেখেছিল। আমি মনে করি তুমিই এর যোগ্য দাবিদার।
যদি তুমি এটা গ্রহন না করো তাহলে হয়তো এই আংটি সবসময় আমার মায়ের কাছেই থেকে যাবে। এই আংটি হয়তো আর কারো আঙ্গুলে শোভা পাবে না। অন্তত এই বেচারা আংটির জন্য হলেও তুমি আমাকে গ্রহন করো।
..
সবাই আমাদের দুজনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে সাদিয়া। সে বিস্ময়ভরা নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি নিজেও বাকরুদ্ধ। আমার মনে হঠাৎ এত সাহস কোথা থেকে এলো বুঝতেই পারছিনা।
আমি এখনো সাদিয়ার দিকে অাংটি উচিয়ে ধরে আছি। সাদিয়া আংটির দিকে হাত বাড়াচ্ছে না। হয়তো সে আমাকে ভালবাসে না। হাত নামিয়ে নিতে যাবো এমন সময় সাদিয়া হাত বাড়িয়ে দিল আমার দিকে।
— এভাবে হাটু গেড়ে বসে থাকলে হবে না। আংটি পরিয়ে দাও তাড়াতাড়ি। (সাদিয়া)
একথা শুনে আমি তো খুশিতে আটখানা। অতি ব্যস্ত ভঙ্গিমায় আমি সাদিয়াকে আংটি পরিয়ে দিলাম।
— এই আংটি এতো ছোট কেন? বিয়ের পর আমি আরো মোটা হয়ে গেলে এই আংটি পরবো কেমন করে? (সাদিয়া)
..
পেছন থেকে কয়েকজনের হাততালির শব্দ শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখি আমার তিন হারামী বন্ধু তালি বাজাচ্ছে।
নিজেকে আজ খুবই সুখী মনে হচ্ছে। আর বন্ধুদের জন্য আফসোস হচ্ছে। তারা আর আমাকে প্রেমের কথা বলে খোঁচাতে পারবে না।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক