ওহ শিটটটট

ওহ শিটটটট

ছোটবেলা থেকেই বিয়ে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো। বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই স্বপ্ন কতরাত দোষে পরিণত হয়েছে, হিসাব নেই। কিন্তু বউ তো বউ ই। ওয়াইনের স্বাদ কি আর ক্লেমনে মেটে? বৃষ্টি থেকে শুরু করে জোসনার রাত, আমি কোলবালিশ কোলে নিয়ে ভেবেছি, একদিন আমরাও। তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু বউ আর এলোনা। আব্বা আমার, ‘যৌবনের রস’ বইটা পুড়িয়ে ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন, হারামজাদা ঠিকমত লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পেয়ে দেখা, তারপর আমি নিজেই তোকে বিয়ে দেব। এই ঘটনার ঠিক দশ বছর পরের কথা। ভোর সাড়ে দশটায় আম্মা জোর করে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বললেন, ‘ঝটপট রেডি হয়ে নে। মেয়ে দেখতে যেতে হবে।’ আমি লাজুক হাসলাম, ‘ধুর, কি যে বলো। সেই বয়স কি আর আছে?’

– মানে কি?
– আরে আমি বড় হইছি না? স্কুলের পোলাপানের মত মহিলা কলেজের সামনে মেয়ে দেখার জন্য দাড়ায় থাকলে লোকে কি বলবে? আর তাছাড়া…
– তাছাড়া?
– এখন মেয়ে ফেসবুকেই দেখতে পারি আমি। তুমি তো জানোই আমি সেলিব্রেটি।

ফ্রেন্ডলিস্ট ভরা সাড়ে চার হাজার মেয়ে। প্রতিটা মেয়ে সুন্দরী। ভিকারুননিসা, হলিক্রস আর নর্থসাউথ কোটায় এড করেছি৷ নিউজফিড স্ক্রল করলে মনে হয় থাইল্যান্ডের বিচে বসে আছি। আম্মা ঠাস করে চড় দিলেন। আব্বুকে ডেকে বললেন, তোমার ছেলেকে তুমিই বুঝাও। সেইদিন আমি বলেছিলাম আসো ঘুমায় যাই। তুমিই রাজি হওনি। দোষ তোমার।

আমি বসে আছি মেয়েটার সামনে। আব্বু আম্মু অন্য রুমে। আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে নিরিবিলি কথা বলার জন্য। আমি মনে মনে ভাবতেছি কি বললে আমাকে স্মার্ট ভাববে? শশাঙ্ক রিডেম্পশন মুভিতে মর্গান ফ্রিমানের ক্যারেক্টারের ডেপথ নিয়ে আলোচনা করব নাকি জীবনানন্দ সাহিত্যে উপমার প্রভাব? আমাকে চুপ করে থাকা দেখে মেয়েটা বললো, ‘ভাইয়া, আপনার প্রিয় লেখক কে?’ হোয়াট দ্যা ফুচকা! হবু বরকে কেউ ভাইয়া বলে? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আশ্চর্য, ভাইয়া কেন বলছ?’ মেয়েটা মৃদু হেসে বললো, ‘আম্মু বলেছে অপরিচিত ছেলে কথা বলতে আসলে আগেই ভাইয়া বলে নিবা। নাহলে পরে তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিবে। ভাইয়া বললেই তুমি সেফ!’ আমি হাসলাম, ‘তোমার আম্মু তাহলে গেম অফ থ্রোনস দেখেনাই, এজন্য এরকম বলেছে। তুমি দেখেছ?’

– একদিন বান্ধবীর মোবাইলে দেখেছিলাম, বমি আসছিলো। পরে আর দেখিনি।
– না দেখাই ভালো। আর আমার প্রিয় লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায়। তোমার?
– ইমদাদুল হক মিলন আর রাহাত হোসাইন।
– ওয়াও, ভেরি গুড।
– আপনি উনাদের কোনো বই পড়েছেন?
– একবার বন্ধুর টেবিল থেকে পড়েছিলাম। বমি আসছিলো। পরে আর পড়িনি।

মেয়েটা কিঞ্চিৎ রেগে গিয়ে বললো, ‘আপনি আমার প্রিয় লেখকদের নিয়ে এভাবে বলতে পারলেন? আমি আর কথাই বলব না আপনার সাথে।’

– আচ্ছা স্যরি। আর বলব না।
– ইটস ওকে ভাইয়া।
– আবার ভাইয়া? তুমি কি জানো না যে আমরা এখানে কি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বসে আছি?
– হ্যা, আম্মু বলেছে।
– কি বলেছে?
– বলেছে, আরে ছেলেদের আবার চেহারা কি। তাছাড়া যেসব ছেলেদের চেহারা খারাপ থাকে তারা মনের দিক দিয়ে ভালো হয়৷ একবার দেখা তো কর। দেখতে আসলেই বিয়ে হয়ে যায় না। রাতে খাওয়ার টেবিলে আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিরে, মেয়ে পছন্দ হয়েছে?’ আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আস্তে আস্তে বললাম, ‘আম্মু, আমি কে?’

– মানে?
– মানে আমি কি করি? আমি কে?
– তুই কিছুই করিস না। অকর্মা পুরাই।
– উফ, আমি সোহাইল রহমান। বাংলাদেশের টপ টেন ফেসবুক সেলিব্রেটির মধ্যে একজন। আম্মু চোখ উল্টালেন, ‘টপ টেন?’
– ঐ হইলো আরকি, টপ হান্ড্রেড, আচ্ছা যাও টপ থাউজেন্ড ফেসবুক সেলিব্রেটির মধ্যে অন্যতম একজন। আমার জন্য শত শত মেয়ে পাগল। প্রতিদিন অন্তত একশো মেয়ে আমাকে ফেসবুকে নক দেয়?

– শিওর, একশো মেয়ে?
– উফফফ, আচ্ছা যাও। প্রতিদিন অন্তত তিনজন মেয়ে আমাকে ফেসবুকে নক দেয়। কিন্তু আমি তাদের মেসেজের রিপ্লাই দেইনা কেন জানো? কারণ তারা খুব কমন, এভারেজ। আর দশজন মেয়ের মতই। কিন্তু আমি সোহাইল রহমান, আমার স্পেশালিটি হলো আমি আর সবার চাইতে আলাদা। অন্যরকম। আমি বউ হিসাবে সাধারণ কোনো মেয়েকে তো বিয়ে করে নিতে পারিনা, তাইনা? তার মধ্যে এমন কিছু তো থাকতে হবে যা আর দশটা মেয়ের মধ্যে নাই। তাকে একটু হলেও অন্যদের থেকে আলাদা হতে হবে। আম্মু রাগি গলায় বললেন, ‘তারমানে তুই বলতে চাচ্ছিস মিথিলার মধ্যে কিছুই নেই?’

– আরে সেটা কখন বললাম? ওর মধ্যে তো সবই আছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি। বাট সৃজিত তো নিয়েই গেল৷ আহারে! দেশের সম্পদ ছিলো।
– আজ যাকে দেখতে গেলাম ঐ মেয়ের নাম মিথিলা।
– ও আচ্ছা আচ্ছা, হ্যা কিচ্ছু আলাদা নাই। একদম সব কমন। আমি পারব না এরকম মেয়ের সাথে লাইফ কাটাতে। আমার একটা সম্মান আছে। আমি সোহাইল রহমান। বাংলাদেশের সেরা ফেসবুক সেলিব্রেটি।
– সেরা?
– আই মিন, অন্যতম সেরা।

আম্মু এবার অন্য লাইনে হাটলেন। বললেন, ‘তোর মাসিক আয় কত? আয়ের উৎস কি?’ আমি ঝটপট উত্তর দিলাম, ‘সাড়ে চারশো টাকা পার পোস্ট চুক্তিতে প্রথম কমেন্টে পর্যটক গ্রুপের এড দেই।’

– হাহ, এই ইনকাম নিয়ে আবার স্পেশাল মেয়ে খুজিস। লজ্জাও করে না। মিথিলার ফ্যামিলি রাজি হয়েছে শুধু মাত্র তোর বাপের টাকা আছে দেখে। তোর কোনো যোগ্যতাই নাই ওকে বিয়ে করার।
– তো ঠিক আছে আব্বুর যোগ্যতা আছে, আব্বুর সাথেই বিয়ে দাও।

কয়েক সেকেন্ডের জন্য আব্বুর মুখে খুশি জাতীয় এক্সপ্রেশন ফুটে উঠেই আম্মুর চোখের দিকে তাকিয়ে মিলিয়ে গেল। আম্মু চোখ গরম করে বললো, ‘মিথিলাকেই তোর বিয়ে করতে হবে এটাই ফাইনাল।’ বিয়ের তোড়জোড় চলতেছে, সবার আনন্দের মাঝে আমারই মন খারাপ শুধু। আমি এতো ইউনিক মেয়ের গল্প লিখি আর আমারটাই এভারেজ। আমার কোনো গল্পের নায়িকার মতো কোনো গুণই নাই মিথিলার। জোকও বুঝে না৷ হাসির গল্প বললে না হেসে চুপ করে থাকে৷ বলে, তারপর? সে এরমধ্যে একটা কাজ শুরু করেছে, দিনে তিনবেলা আমারে ফোন দিয়ে বলে, ‘খাইছেন?’ আমি সেদিন রাতে চোখ টিপ দেয়ার ইমো দিয়ে বলছি, ‘বিয়েই তো হইলো না, এখনি কিভাবে খাব?’ সে বুঝেনাই, বলতেছে, ‘এখন খেতে কি সমস্যা?’

– আরে তুমি তো নাই খাওয়ার জন্য।
– তো আমার বাসায় এসে খেয়ে যান।
– সিরিয়াসলি? তোমার আম্মু কিছু বলবে না?
– না কি বলবে, আম্মুও তো খেতে দেবে আপনাকে?
– আসলেই, কিন্তু উনার তো বয়স অনেক।
– তাতে কি? বয়সের সাথে খাওয়ার কি সম্পর্ক?
– উফ, আমি তোমার টা খাব।
– ওকে আসেন, আমি আর আম্মু দুজন মিলেই খেতে দেব।
– থ্রিসাম? মেয়ে আমার কথার ডুয়েল মিনিং বালডাও বুঝেনাই, ‘বলতেছে, সেটা আবার কি?’

– থ্রিসাম বুঝো না?
– নাহ।
– এস্থেটিক বুঝো?
– না তো!
– ইন্ট্রোভার্ট বুঝো? স্যাপিওসেক্সুয়াল বুঝো?
– উহু?
– লোল, লামাও, রোফেল এগুলা বুঝো?
– লোল বুঝি৷ তেতুল খেতে গেলে মুখে যে পানি আসে ওটারে বলে না?

তাইলে বুঝেন, সে হবে সোহাইল রহমানের বউ আর কিছুই বুঝে না দুনিয়ার৷ আমার মান সম্মান সব যাবে লোকে জানলে। কই ভাবছিলাম, আমার বউ হবে সবার থেকে ইউনিক, তা না। এই ভাগ্য নিয়ে আসছিলাম পৃথিবীতে। এখন শুধু একটাই আশা, আমার ভার্জিনিটিটা অন্তত ব্রেক হবে বাসর রাতে৷ ফাইনালি আমি, ‘খেতে’ পাবো। আমার সাতাশ বছর কেটে গেছে, কেউ খেতে দেয়নি।

ছেলেবেলায় পাশের বাসার মৌমিতা বৌদি গালে চুমু খেয়ে বলেছিলো, আরেকটু বড় হোক, তারপর খেতে দেব।
বড় হওয়ার পর দেখি মৌমিতা বৌদিরা চলে গেছে। তার বদলে পাশের বাসায় ভাড়া এসেছে আজাদের মা। উনারে আমি নানী বলি। সেলিব্রিটি আসিফ উর রহমান ভাই বলেছিলেন, পোস্টে এক কে লাইক পেয়ে দেখ, মেয়ের লাইন পড়ে যাবে। আমি বত্রিশ কে পর্যন্ত লাইক উঠাইছি। মেয়েরা বুয়েটের ভাইয়া রেখে আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি।
মুখের মধ্যে চিলক্সের বার্গার পুরে দিয়ে বরুনা বলেছিলো, সুলতান্স ডাইনের কাচ্ছি খাওয়াও, তারপর ভেবে দেখব।
বাপের পকেট থেকে হাজার টাকা চুরি করে আমি বরুনাকে ট্রিট দিয়েছি। বরুনা বাসায় গিয়ে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে।

সাতাশ বছর কেটে গেছে, আমার খাওয়া হয়নি। তবে এবার আমি খাবো। কথা রাখবে মিথিলা। সে যে বউ আমার। খালি ইউনিক না, আমার গল্পের নায়িকাদের মত কাউকে পেলাম না, এটাই সমস্যা। বাসর ঘরে ঢুকলাম মৃদু পায়ে। মিথিলা বসে আছে খাটে। মুখে ঘোমটা। আমি ঘোমটা তুলে দেখি সে যে মানুষ নয়, এমনকি দেবি টাইপ কিছুও না। খালি মেকাপের আস্তরন। যাই হোক, হালকা কথাবার্তার পর আমি মিথিলার হাত ধরে চুমু খেতে গেলাম।মিথিলা ঝটকা দিয়ে সরে গেল। বললো, ‘সোহাইল এসব না প্লিজ, এ যে কঠিন পাপ।

– হোয়াট, মানে কি এসবের? বিয়ের পর সেক্স করা পাপ হলো কবে থেকে?
– পাপ সবসময়ই পাপ। বিয়ের আগে খুন করলে পুলিশ ধরবে, বিয়ের পর করলে ধরবে না নাকি? নাকি বিয়ের আগে মদ খাওয়া হারাম আর বিয়ের পর হালাল? বিয়ের আগে যেটা পাপ, বিয়ের পরও সেটা পাপ।
– শিট, সেক্স না করলে বাচ্চা হবে কিভাবে? তুমি চাওনা আমাদের কিউট একটা বাবু হোক?
– অবশ্যই চাই, কিন্তু তার জন্য সেক্স করার দরকার নেই কোনো?
– মানে কি?

মিথিলা মাথা নীচু করে লাজুক হেসে বললো, ‘মানে হলো আমি একটু আলাদা। আমি বাচ্চা দেই না আর সব মেয়ের মত। আমি ডিম পাড়ি!’

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত