মেঘ রুপন্তি

মেঘ রুপন্তি

আজ বিকেলবেলা নিউ ড্রিম স্কুলের সামনে চলে
এসো। আমি কৃষ্ণচূড়ার নিচে সেই বেঞ্চিতে বসে
অপেক্ষা করবো।
— তোমার সাথে শেষ দেখা হবে আজ। আমার দেওয়া
শাড়িটা পরে এসো কিন্তু!!
— ওহ -হ্যাঁ! আমার গিফট দেওয়া কালো ঘড়িটা হাতে
পরে আসবে কিন্তু!
— আচ্ছা তাই হবে ….
আজ রুপন্তী আর দুর্জয় দুজনেই দু’জনের কথা রাখবে। দু’র্জয়
ছেঁড়া শার্ট আর বুক পকেটে দু’টা গোলাপ সেই সাথে
রুপান্তীর দেওয়া হাত ঘড়িটা হাতে পরে বেড়িয়ে
পরলো।
বিকেলবেলা। মানুষজন ঘুরাফেরা করছে যে যার মত।
রুপন্তী তার বান্ধবীকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। দুর্জয়
ভেবেছিলো দু’বছরের সম্পর্কটা দু’টা ফুল দিয়ে বিদায়
জানাবে। কিন্তু রুপন্তীর বান্ধবিকে দেখে তার মাথায়
দুষ্টুমি চেপে বসলো।
হাটু গেড়ে রুপন্তীর বান্ধবী রিয়ার সামনে গিয়ে বসলো
দুর্জয়। তারপর শুরু হলো …
— তোমাকে দেখামাত্রই আমার সব ভাবনা তোমায় ঘিরে
ধরেছে। ছেঁড়া বুকপকেট ভেবে ভুলে যেওনা এরমাঝে
অমূল্য বা অতি অল্প ভালবাসা রয়েছে।
আমি আমার ছেঁড়া পকেটে একরাশ ভালবাসা গুঁজে নিয়ে
এসেছি, শুধুমাত্র তোমার জন্য। আমি তোমাকে ভালবাসি
রিয়া।
রুপন্তী অবাক চোখে সহ্য করছিলো সবকিছু। শুধুমাত্র
শেষটা কি হয় দেখার জন্য। কথাটা শেষ করতেই দুর্জয়ের
কলারডগা চেপে ধরলো মেয়েটা ….
— তুই কি করলি এটা??
— রেগে যাচ্ছো কেনো?? তুমি চলে গেলে আমিতো একা
হয়ে যাবো তাইনা! তবে তোমার বান্ধবীকে আমার করে
নিতে তোমার বাঁধা দেওয়ার কি আছে?
— তুই রাস্তার টুকাইদের গিয়ে প্রপোজ করবি। আমার
বান্ধবীকে নয়।
— তোমার বান্ধবী যদি রাজি থাকে তাহলে তোমার
সমস্যা কিসে??
রুপন্তী কলার ছেড়ে রিয়াকে বলল — এই রিয়া চল …
এই লুজারটার সাথে রিলেশন করে লাইফটাই শেষ করে
দিলাম।
কথাটা বলেই রুপন্তি চলে যাচ্ছে।
পিছনদিক থেকে দুর্জয় রুপন্তীর হাতটা শক্তভাবে টেনে
ধরলো। খুব চেষ্টা করেও রুপন্তী হাতটা ছাড়িয়ে নিতে
পারছিলনা।
তারপর রেগেমেগে পিছনে ঘুরে তাকালো মেয়েটি।
দুর্জয় কাঁদছে। হাতে একটা চিরকুট আর দুইটা ডেইরী
মিল্ক। রুপন্তীর ডেইরী মিল্ক অনেক প্রিয় ছিলো।
রুপন্তীকে চিরকুট আর ডেইরী মিল্ক দু’টো দিয়ে দুর্জয়
বলল ….
— বাসায় গিয়ে দেখে নিও চিঠিটা।
রুপন্তী এই ছেলেটার কান্না কখনো সহ্য করতে পারেনা।
আজও পারছেনা।
রুপন্তি ভাল করেই জানতো ফুল গুলো তাকে দেওয়ার
জন্যেই এনেছিলো দুর্জয়। কিন্তু ছেঁড়া শার্ট পরে আসায়
সে খুব রেগে গিয়েছিল।
তাছাড়া দুর্জয় রাগ ভাঙানোর পরিবর্তে যখন তার
বান্ধবীকে প্রপোজ করার অভিনয় করলো! তখন তার
রাগটা আরও বেড়ে যায়।
এদিকে চিঠিতে কি লিখা সেটা দেখার জন্য মরিয়া
হয়ে পরে রুপন্তি।
কিছুদূর গিয়ে রুপন্তী চিঠিটা পড়তে শুরু করে …
..
রুপন্তী! আমি জানি তুমি চাওনা ব্রেকাপ হোক
আমাদের।
আমিও চাইনি কখনো। তবে বড় সত্যিটা আর লুকাতে
পারছিনা। আমার হাসি” দুষ্টুমি” গুলোর স্মৃতিরা
তোমাকে ঘুমুতে দেবেনা এও জানি আমি।
আমার অভিমান গুলো তুমি যখন খুব মিস করবে, তখন
একাকী লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদবে তাও আমার জানা
রয়েছে।
আমিও চাইনা আজই আমাদের শেষ বিকেলের শেষ দেখা
হোক এটা। আমি এটাও চাইনা যে, আমার শেষ বিকেলের
কান্না নিয়ে তুমি বিষণ্ণভরে বাসায় ফিরে যাও।
কিন্তু নিয়তির নিয়ম খাতায় কি লিখা আছে আমার
জানা নেই।
আগামীকাল চতুর্থবারের মত আমার পুরো শরিরের ব্লাড
চেঞ্জ করতে হবে।
মাঝেমধ্যে যে দু’দিন তিনদিন তোমার সাথে সবরকম
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকতো!
সেটার উত্তরটাও নিশ্চয় এতক্ষণে আর তোমার বুঝার
বাকি নেই। যখন তুমি খুব কাঁন্না আর অভিমান নিয়ে
জানতে চাইতে কোথায় ছিলাম দু’তিনটে দিন!
তখন কেনো চুপ করে আমিও কাঁদতাম! – এই অজানা
রহস্যটাও আজ তোমার কাছে স্পষ্টত।
যদি কাল আর এই পৃথিবীর আলোবাতাসে বেঁচে না থাকি
তবে ক্ষমা করে দিও।
শেষ বিকেলের কান্না হয়ে ঝরাপাতার একটি গল্প
হিসেবে চালিয়ে দিও আমার স্মৃতি গুলো। আমি চাইনা
তুমি শুধু ভালো থাকো। আমি চাই তুমি সর্বসময় অনেক
বেশি ভালো থাকো।
ইতি —
তোমার শেষ গল্পের অভিমানী “দুর্জয়।
গল্পটা এখানেই শেষ হয়নি। হয়ে যেতেও পারতো। কিন্তু
হাসপাতালের ব্যাডের পাশে বসে, কাঁদতে থাকা
রুপন্তীর চোখ দু’টো কৃষ্ণচূড়ার রঙ ধারণ করেছে।
ধুকধুক বুকের কান্নায় পুরো রাত কেটেছে মেয়েটার।
কিন্তু এখন সুখের কান্নায় চোখ দু’টো ভেজা রুপন্তীর।
পাগলটা বেঁচে আছে।
ওর হাতে হাতটা শক্তভাবে চেপে ধরে রুপন্তী তার
কানের কাছে গিয়ে বলছে …
আজ আমাদের মাঝে আর কোন বাঁধা নেই। নিয়তির
খাতার সব নিয়ম ভেঙে তোমার কাছে চলে এসেছি। আর
ফিরবোনা।
তোমার হয়েই থেকে যেতে এসেছি। এই ছেলে! তোমার
আম্মুর ভয়ে চুপ করে থেকোনা। আমি তোমার বাসায়
গিয়ে তোমার জন্য চিংড়িমাছ রান্না করে এনেছি।
এখনি আমার নিজ হেতে তোমাকে খাইয়ে দিব।
– সব ব্রেকাপের গল্পেই কিন্তু ব্রেকাপ হয়না। সব কষ্টের
গল্পেও কিন্তু শেষদিকে কষ্ট থাকেনা। কিছু শেষ
বিকেলের কান্না সারাজীবনের আনন্দের গল্পে লুকিয়ে
পরতে শেষ বিকেলেই এসে যায়।
হঠাৎ এসে যায়। বেলা অবেলায় এসে যায়। এসে গেলে
আর ফিরে যায়না। ঠিক “মেঘ রুপন্তীর” গল্পের মত।
ওহ হ্যাঁ! মেয়েটির পুরো নাম কিন্তু “মেঘ রুপন্তি”।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত