রোমান্টিক বর

রোমান্টিক বর

অহনাকে পাশ কাটিয়ে খাটের পাশে গিয়ে খাট সাজানো সব ফুল ছিঁড়ে ফেলে দিলাম আর ঘরটা লন্ডভন্ড করছি আর বলছি
–নাহ্,
কোন বাসর হবে না

অহনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আমার কান্ড দেখছে।
এবার আমার দিকে এসে আমাকে পেছন থেকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চোখ বরাবর চোখ রেখে রাগি ভাষায় বলল,
-বিয়ে করার সময় মনে ছিল না?
এখন ঘরটা লন্ডভন্ড করছেন কেন?
-আমি কি বিয়ে করেছি নাকি?
আপনিইতো আমাকে ফাঁদে ফেলেছেন।
আমার মা বাবাকে ভুল ভাল বুঝিয়ে তাদের রাজি করিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন
-বিশ্বাস করুণ আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না(করুণ কন্ঠে)
–চোর কখনো চুরি করে বলেনা যে আমি চুরি করেছি।
আপনিও ঠিক তেমনই
-আচ্ছা আপনি এখন আমাকে কি করতে চাচ্ছেন?
-এখন রাতের বেলায় তো আর বের করে দিতে পারবোনা!
যান খাঁটে গিয়ে শুয়ে পড়েন

অহনা কিছুক্ষণ ছলছল নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে খাঁটের ওপর এক কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়ল

আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা চেয়ারে বসে পড়লাম

আধঘন্টা হয়ে গেছে..
মাঝেমধ্যে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে।
অহনা কাঁদছে আর সম্ভবতঃ ভাবছে কি মনে করে যে এই বদ ছেলেটাকে ভালবাসতে গিয়েছিলাম।
এখন তার মাশুল দিতে হচ্ছে

আমি ১ঘন্টার মতো চেয়ারে বসে থেকে উঠে কান্নাবতী মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অহনা বলে একটা ডাক দিলাম।
কান্নার আওয়াজটা বন্ধ হয়ে গেল

আবার ডাক দিলাম,
-অহনা.
কোন সাড়াশব্দ নেই

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম,
-অহনা তোমার পাশে ৩টা আরশোলা(উত্তেজিত কন্ঠে)

এক লাফ দিয়ে কান্নাবতী খাঁট থেকে নেমে আরশোলা আরশোলা বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল।
চিল্লাতে চিল্লাতে এসে আমার উপর পড়ল

দুজনেই ধপাস করে পড়ে গেলাম।
কান্নাবতীর ছলছলে চোখ আমার চোখের প্রতিদ্বন্দী হিসেবে রানীত্ব করছে।
কিছুক্ষণ চোখে চোখে কথা বলে অহনা নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে গেল।
অহনা আমার উপর থেকে উঠে মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমিও উঠে দাঁড়ালাম

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে পড়লাম।
ফ্লোরে পরে থাকা একগুচ্ছ ফুল মুঠে নিয়ে অহনার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।
এখনো অহনা মাথানিঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্থাত্ আমার দিকে খেয়াল করছে না

বলতে লাগলাম,
-সেদিন তোমাকে তুমিতে নামার অধিকার আমি দেয়নি।
কারণ,
সেদিন তোমার সাথে কোনরকম প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে সেটা অবৈধ হতো।
তবে আজ আমি তোমাকে তুমিতে নামার অধিকারটা দিতে চায়।
কারণ আজ আমাদের সম্পর্কটা বৈধ

আমাকে ভালবেসে আমার পাশে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শুধু তোমাকেই চাই।
আমাকে তোমার কুরআন শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা কি দিবে?

এতকিছু বলার পর অহনা মাথাটা উঁচু করে আমার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাল

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার অন্যদিকে তাকাল।
এর অর্থ তিনি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন এবং আমার উপর অভিমান করেছেন।
তাই তার অভিমান ভাঙাতে হবে

আমি উঠে তার মুখটা আমার দিকে ঘুরাতেই চোখটা পাকিয়ে ফেলল আর বলল,
-এখন এসব কি হচ্ছে?
-প্রেম করা হচ্ছে
-মানে?
তাহলে তখন সব ঘর লন্ড ভন্ড করলেন কেন?
-বাসর হবে না তাই
-মানে?
আপনি সবকিছু খোলাসা করে বলেন তো?
-তুমিতো বিয়ের আগেই আমার সাথে প্রেম করতে চাচ্ছিলে!
আর আমিও কখনো কারোর সাথে সম্পর্কে জড়ায়নি যাতে সব প্রেম আমার স্ত্রীর সাথে করতে পারি।
তাই আগে চুটিয়ে প্রেম করবো তারপর কোন একদিন বাসর করে নিলেই হলো।
এখন আমার বাহুডোরে আসো তো!
লজ্জা পেয়ে অহনা আমার বাহুডোরে চলে আসল

কিছুক্ষণ ঐভাবে থাকার পর আমি অহনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
-মিথ্যাবাদী,চোগলখোর,খারাপ মেয়ে
অহনা আমার বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
-কিইই?
-আল্লাহ এদের থেকে তোমাকে দূরে রাখুক,
“আমিন”

সত্যমিশ্রিত কৌতুক ইসলামে জায়েয আছে।
“দলিল: হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন,একদা সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন,হে আল্লাহর রাসূল!আপনি তো আমাদের সাথে কৌতুক করেন।রাসূল (সা) বলেন,
আমি কৌতুকপূর্ণ কথার মাঝে সত্য ব্যতীত অন্য কোন কথা বলিনা”

ঘটনার আকস্মিকতায় অহনা থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
-ছুম্মা আমিন.
তারপর মুখটা অন্যদিকে ঘুরাল।
-অভিমান করেছ?
-হুমম
-কেনো?
-শুনেছিলাম ভালবাসার রাগ অভিমান না থাকলে ভালবাসা বৃদ্ধি পায় না

অতঃপর অহনাকে দুই হাত দিয়ে পাঁজাকোলা করে তুললাম।
এদিকে অহনা বলেই যাচ্ছে,
-আমাকে ছাড়ুন বলছি,
আমাকে নামিয়ে দিন,
দিন.
ছেড়ে দিতে গেলাম।
অহনা তারাতারি গলা জড়িয়ে ধরল।
-কি ব্যাপার?
ছেড়েই তো দিচ্ছিলাম।
আবার গলা জড়িয়ে ধরলে কেন?
-চুপ
আমি ঐভাবে আর কোন কথা না বলে তাকে নিয়ে ছাদে চলে আসলাম

আজ চাঁদটা বেশি বড় না।
তবুও সমস্যা নেই।
কারণ,
আমার পাশেই তো চাঁদের থেকেও সুন্দর একটা মাটির পরী বসেছে

দুজনে পাশাপাশি বসে আছি।
কারো মুখে কোন কথা নেই

একটুপর বললাম,
-অহনা তুমি কি জানো?
তুমি চাঁদের থেকেও সুন্দর।
-কি যে বলো?
কে বলেছে?
-স্বয়ং আল্লাহ নিজেই বলেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
নিশ্চয় আমি মানুষকে সবথেকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছি(সূরা তীন)

অহনা ইতিমধ্যে আমার কাঁধে মাথা রেখে দিয়েছে।
বলতে লাগল,
-জুবায়ের আমি যে এতোদিন কত গুনাহ করলাম তার হিসাব নেই।
আল্লাহ আমাকে কোনদিন মাফ করবে কি?
-অবশ্যই করবে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
তোমার আল্লাহর রহমত থেকে নৈরাশ্য হয়ো না।
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু(সূরা যুখরুফ)

অহনা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-আলহামদুলি-আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি এজন্য যে তিনি আমাকে এরকম একটা বর দিয়েছে
-শুধু মুখে বললে হবে?
কাজে দেখাতে হবে.
চলো
-কোথায়?
-তাহাজ্জুদ পড়তে
-আচ্ছা চলো

আজ শুক্রবার।
অফিস বন্ধ,
তাই ভাবলাম ফজরের নামায পড়ে ঘুমাবো।
কিন্তু তা আর হলো কোথায়?
এখন বউ বলছে শীতের সকালে হাঁটতে যেতে।
অতঃপর বউয়ের আবদার রক্ষা করার জন্য শীতের সকালে বউকে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম।
কিছুদূর যাওয়ার পর বলতে লাগলাম,
“কনকনে ঠান্ডায় শীতের সকালে।
হাত দুটি ধরে কুয়াশার ভেতরে।
জড়াবো তোমায় ভালবাসার চাঁদরে”
-বাব্বাহ,
আমার বরটা তো হেব্বি রোমান্টিক
-দেখতে হবে না বরটা কার?
-হুম সেটাই তো

এভাবে চলতে থাকবেই

‘সমাপ্ত’

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত