ভালোবাসার_ভালোবাসা

ভালোবাসার_ভালোবাসা

ঘড়িতে দৃষ্টি যেতেই দেখতে পারে রাত প্রায় ১১:৫৫ মিনিট বেজে গেছে। বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে হালকা লাজুক মুখে নিজের রুমে প্রবেশ করলো সাইমন। রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো পুতুল সাঁজে অপরুপ এক সুন্দরী কন্যা তার বেডে বসে আছে। ও হ্যাঁ বলতেই ভুলে গেছি আজ সাইমনের বাসর রাত। মনে একরাশ স্বপ্ন এবং মুখে এক চিমটি হাসি নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো তার পুতুল বউয়ের কাছে। অনেকক্ষন ধরে আমতা আমতা করার পর প্রথম বিয়ের নার্ভাসনেস দূর করে সাইমন যেই তার নববিবাহিত বউ ইশরাতকে স্পর্শ করতে যাবে ঠিক তখনি ইশরাত সাইমনের দিকে তাকিয়ে বলে আমার কিছু বলার আছে। সাইমন ছোট্ট করে একটা হাসি দিয়ে বলে জ্বি বলুন কি বলতে চান?
.
—-আমার বয়ফ্রেন্ড আছে এবং এই বিয়েটা আমার বিনা অনুমতিতেই হছে। আমি কখনোই আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না এবং ভবিৎষতেও কখনো স্বামীর অধিকার দিতে পারবো না।
.
—- কতদিনের সম্পর্ক আপনাদের এবং তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো??
.
—-ওর সাথে আমার পরিচয় স্কুল লাইফেই। তখনো বুঝতাম না ভালোবাসার আসল মানে,শুধু ভাবতাম একটা ছেলে-মেয়ে হাসাহাসি,গল্প করা এবং একে-অন্যের পাশে থাকাই হলো ভালোবাসা। ভালোবাসার আসল মানে বুঝতে শুরু করলাম কলেজ লাইফে উঠে। মনে মনে ওকে অনুভব করতে লাগলাম। যখন ও অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতো,হাসাহাসি করতো তখন আমার খুব রাগ লাগতো। মন চাইতো ওর সবগুলা চুল ছিঁড়ে ফেলি। এইসব রাগ থেকে আস্তে আস্তে আমি বুঝতে পারলাম আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। এর কিছুদিনের মধ্যেই ও আমাকে প্রপোজ করে বসে। আমার সাদা কালো দুনিয়া যেনো তখন থেকেই রঙ্গিন হয়ে গেলো। কলেজ পাশ করে দুজন একি সাথে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। সারাদিন এক সাথে বসে আড্ডা দেয়া,ঘুরাঘুরি করা এবং দিন শেষে রাতে চুটিয়ে ফুসকা খাওয়া। এইভাবেই চলছিলো আমাদের সম্পর্কটা। এই রঙ্গিনময় ভালোবাসার জীবনে হঠাৎ করেই নেমে আসে কালো অন্ধকারের ছায়া। বাবা আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। সমবয়সী হওয়ায় ওরো তখন কিছু করার ছিলো না। বার বার মানা করতে করতে অবশেষে পরিবারের চাপে এবং ভালোবাসার মানুষটি প্রতিষ্ঠিত না হয়ে উঠার কারণে বাধ্য হয় আপনাকে আমার বিয়ে করতে হয়।
.
—- তো আপনি এখন কি চাচ্ছেন,ডিভোর্স!!!
—- হুম,,আমার বয়ফ্রেন্ড একটা ভালো জব পেলেই আমি তার কাছে চলে যাবো। এর মধ্যে আপনি ডিভোর্স পেপার রেডি করুন।
.
কথাটা বলেই ইশরাত হাসা শুরু করে দেয়,সাইমনের মুখেও তখন দেখা দিয়েছে হাসির প্রতিচ্ছবি।
.
ডিভোর্স!!!! দিচ্ছি তোমাকে ডিভোর্স, দাড়াও দেখাচ্ছি মজা বলেই সাইমন ইশরাতকে জড়িয়ে ধরে। ইশরাতও হাসি মুখে সাইমনকে জড়িয়ে ধরে এবং মুখ ভেঙ্গচিয়ে বলে উঠে এই পাঁজি ছেলে কি হচ্ছে শুনি।
.
না,ইশরাতের বিয়ে অন্য কারো সাথে না তার ভালোবাসার মানুষটির সাথেই হয়েছে। সাইমনই হলো তার ভালোবাসার মানুষ,যাকে সে আজ চিরদিনের জন্য আপন করে পেয়েছে। অদ্ভুত রকমের এক পাগলি মেয়ে হচ্ছে ইশরাত। সারাদিন সব অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা তার মাথায় বিরাজ করে। সাইমন এবং ইশরাত ভালো একটা চাকরি পাওয়ায় খুব সহজেই তাদের দুজনার পরিবার তাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়ে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। খুব সহজেই মেনে নেওয়ায় ইশরাতের মনে একটা অদ্ভুত ইচ্ছা জাগে যে বিয়ের রাতে সে সাইমনের সাথে একটু মজা করবে যেনো তার বিয়ে এক অপরিচিত ছেলের সাথে হয়েছে। সাইমনও ভালোবাসার মানুষটির এই দুস্টামি ময় আবদারটা হাসি মুখে মেনে নেয়।
.
—- এতো দেরি করে আসলে কেনো, হ্যাঁ? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি আমি।
—- আমার বউটার দেখি আর তর সইছে না।
—– যাও ফাজিল কোথাকার,এইসব কি বলো আমার লজ্জা করে তো।
—-ওরে আমার লজ্জাবতী বউ এতো লজ্জা করলে চলবে তাও আবার আমার কাছে কথাটা বলেই সাইমন ভালোবাসার এক পবিত্র চিহ্ন এঁকে দিলো ইশরাতের ঠোঁটে। রুমের লাইট বন্ধ হওয়ার সাথেই শুরু হয়ে গেলো তাদের ভালোবাসার নতুন জীবনের ভূমিকাময় বাসর রাত যেখানে থাকবে শুধুই ভালোবাসার মানুষটির অফুরন্ত ভালোবাসা।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত