-আপনি আমার কাছে আসবেন না। আমার কাছে আসলে
আমি আত্বহত্যা করবো।
বাসর রাতে বউয়ের কাছ থেকে এইধরনের কথা কোন
ছেলেরই কাম্য নয়। আফজালের ও ছিল না।কিন্তু সেই
কথা সম্মুখিন আফজাল এখন।
.
আফজাল বলল
-আমি তোমার স্বামি একি বলছো তুমি?
-স্বামি শুধু কাগজ কলমেই। কিন্তু মন থেকে নয়।
-বিয়েতে তুমি কবুল বলো নি?
-বলেছি কিন্তু চাপে পরে।
-কিন্তু কেন?
-আমি রাফিদ নামের একজনের সাথে প্রেম করতাম। এর
মধ্যে রাফিদ স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে চলে গেছে।
কিন্তু আমার স্কলারশিপ পেতে এখনও দুই মাস বাকি।
যেভাবেই হোক আমাকে রাফিদের কাছে যেতেই হবে।
এখন আমি কি করবো?
-তুমি রাফিদের কাছে যাবে। আমি সেই ব্যাবস্থা করবো।
-মানে!!
-তুমি আমার বউ হিসেবে পড়ালেখা করবে। আর আমি
টাকা দিয়ে তোমাকে বিদেশে পাঠাবো।
.
আফজাল রুমের বাইরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। আর
মনে হচ্ছে কেন বিয়ে করলাম? রিয়া তাকে ভালবাসে না।
কিন্তু একে নিয়েই তো সারাজীববের সপ্ন দেখেছিল।
.
পুরুষ মানুষের এক বিয়ে হয়ে গেলে আর বিয়ে হয় না
এমন কোন কথা নেই। তাই রিয়াকে ছাড়লে আরেকটা
বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু মনের সাজানো ঘরে বসাতে
পারবে না। অনেক ধরনের চিন্তাই আফজালের মাথায়
ঘুরপাক খাচ্ছে।
.
আফজাল সকাল বেলা রিয়াকে ডেকে বলল
-ওঠো। মানুষজন এসেছে। তারা যেন কিছুতেই বুঝতে না
পারে আমাদের মাঝে সম্পর্কের ফারাক।
.
আফজাল তার মত বাইরে চলে গেল। আফজাল রিয়ার
সামনে যেতে চাচ্ছে না।এতে রিয়ার প্রতি আফজালের
দুর্বলতা বেড়ে যেতে পারে। আর এই দুর্বলতা
আফজালকে কষ্ট ছাড়া ভালবাসা দেবে না। রিয়ার মত
রিয়াকে থাকতে দেবে আফজাল।
.
বিয়ের সব ঝামেলা মিটিয়ে আফজাল আর রিয়া শহরে
চলে এসেছে। আফজাল আর রিয়ার গ্রামের বাড়ি
পাশাপাশি। এবং তারা দুইজনই ঢাকায় থাকে। রিয়া
পড়ালেখার জন্য। আর আফজাল চাকরির জন্য।
তাই তারা স্বামি স্ত্রি হলেও যে যার মত থাকে।
.
একদিন অফিস থেকে ফিরে রিয়াকে খুশি খুশি দেখে
আফজাল বলল
-কি ব্যাপার? আজ এত খুশি কেন?
-আজকে আমি অনেক খুশি।
-কিন্তু কেন?
-কারন আমি স্কলারশিপ পেয়েছি।
-অভিনন্দন।
-আমার এই সব কৃতিত্ব তোমার।
-বন্ধু হিসেবে মনে কর করেছি এসব।
-অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
.
রিয়া খুশিতে আফজালকে জড়িয়ে ধরলো। একটু পরেই
ছেড়ে দিয়ে বলল
-সরি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
.
বিয়ের পরে এই প্রথম রিয়া তাকে জড়িয়ে ধরলো। এত
কাছে এর আগে কখনও আসে নি।
.
রিয়া আফজালকে ছবি তুলতে নিয়ে এসেছে। কারন
ওখানে বিবাহিত দেওয়া। আর স্বামির সাথে ছবি উঠেই
দিতে হবে।
.
ছবি তোলা শেষে আফজাল অফিসে চলে গেল। আর
রিয়াকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল।
.
অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে রিয়ার মন খারাপ দেখে বলল
-আমার মনেহয় বিদেশে যাওয়া হবে না।
-কেন?
-যাওয়ার খরচ বিনামুল্যে হলেও অন্যান্য অনেক খরচ
আছে। যেগুলো আমি যোগাতে পারবো না।
-টাকার চিন্তা করো না। টাকা আমি দেব। তুমি তোমার
মত যাওয়ার ব্যাবস্থা করো।
-তুমি দেবে!!
-হ্যা। স্বামি হিসেবে আমি দেব।
.
আজ রিয়ার ফ্লাইট। ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে।
আফজালকে রিয়া আজ অফিসে যেতে দেয় নি।কারন
তাকে আজ বিমান বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।
আফজালও তাই রয়ে গেছে।
.
আফজাল আর রিয়া গাড়িতে বিমানবন্দরে যাচ্ছে। রিয়া
বলল
-তোমার কি মন খারাপ?
-নাহ। আজকে আমার মন ভাল। কারন একজনের মনের
আশা পুরন করতে পেরেছি।
-আমি বুঝতে পারছি তোমার অবস্থা। কিন্তু আমি কি
করবো বলো?
-তোমার দোষ নেই।দোষ আমার ভাগ্যের।
কথা না বাড়িয়ে যার যার মত বসে থাকলো।
.
রিয়াকে বিদায় জানিয়ে আফজাল বাইরে চলে যাচ্ছে।
রিয়াকে বিদায় জানিয়ে আফজালের মনটা আরো বিষন্ন
হয়ে গেল। রিয়ার কাছ থেকে স্বামির মর্যাদা না পেলেও
ভাল একজন সঙ্গি পেয়েছিল। যেই সঙ্গিকে আফজাল
আজ হারালো।
.
বিমানবন্দরের বাইরে এসে একজন ভিক্ষুক ভিক্ষা
চাওয়ায় মানিব্যাগ বের করলো। মানিব্যাগ বের করে
ফকিরকে টাকা দিয়ে মানিব্যাগে আরেকটা জিনিস
দেখতে পেল। আফজালের বিয়ের ছবি। আফজালের
পাশে রিয়া মাথা নিচু করে লাজুক হয়ে বসে আছে। ছবিটা
বের করে আফজাল ফেলে দিল।
.
আফজালের ছবিটা প্রিয় হলেও ফেলে দিল। কারন
প্রিয় মানুষটাই যখন নেই তখন প্রিয় ছবি দিয়ে কি
হবে।
-ছবিটা ফেলে দিলেও মন থেকে ছবিটার মানুষকে ফেলতে
পারবে?
.
কথাটি শুনে আফজাল ঘুরে তাকাল। তাকিয়ে বলল
-রিয়া তুমি!!
-হ্যা আমি।
-ফিরে এলে কেন? কিছু ফেলে রেখে গিয়েছ কি?
-সবচেয়ে প্রয়োজনিয় জিনিস ফেলে গেছি।
-কি?
-তুমি। সবশেষে বুঝতে পারলাম তুমি আমার জরুরি। যেই
জরুরি জিনিসকে ছেড়ে গেলে সুখটাই হারিয়ে যাবে। তুমি
আমার জন্য এতকিছু করলে কিন্তু সেই তোমাকে ছেড়ে
গেলে আমি বিবেকের কাছে সারাজীবন আসামি হয়ে
থাকবো। যেটা আমি কোনভাবেই চাই না।
-কিন্তু সেই ছেলেটা।
-যদি আমাকে ভালবাসতো তাহলে এতদিনে আমার খবর
নিত। কিন্তু তা করেনি। কিন্তু তুমি আমার পাশে
থেকেছ। আর তোমাকে ছেড়ে আমি সুখি হলেও নিজেকে
ক্ষমা করতে পারবো না।
-কিন্তু…
-কিসের কিন্তু তোমার কোন আপত্তি থাকলে চলে যেতে
পারি। ফ্লাইটের সময় এখনও আছে কিন্তু।
-ফ্লাইট তো হবেই তবে বিমানে না রিক্সায়। সারা শহরে
তোমার সাথে আমি থাকবো। এতদিনের জমানো অধিকার
আজ আদায় করবো। যেটা ভালবসায় ছিল। যাবে আমার
সাথে?
-সঙ্গির আপত্তি না হলে আমার আপত্তি কি?
.
আফজাল আর রিয়া রিক্সায় বসে আছে। অনেক
জায়গায় ঘুরছে আর জিবনকে নতুন রুপে সাজিয়ে
নিচ্ছে। যেটা এতদিন সাজাতে পারে নি। জিবনটাই আজ
নতুন সাজ ধারন করেছে। আর এটা সুখের সাজ।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক