রোমান্স

রোমান্স

ছোটবেলায় পাশের ফ্লাটের সুন্দরী আন্টি একবার আমাকে নিয়ে তার প্রেমিকের সাথে দেখা করতে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছিল। কারণ তার বিশ্বাস ছোট বাচ্চা সাথে নিয়ে বাইরে গেলে আব্বু আম্মু সন্দেহ করবে না। আমি সেই সুন্দরী আন্টির কোলে বসে আছি একটা ছোট্ট গাছের আড়ালে। হটাৎ এক্টা আঙ্কেল এসে বসলো আন্টির পাশে। একটু পর আন্টি আর আঙ্কেল একে অপরকে হামি দিতে লাগলো। আব্বু আম্মু বাসায় না থাকলে আমাদের ড্রাইভার বিল্লু আঙ্কেল কেও দেখেছি আমাদের কাজের মেয়ে রহিমাকে এভাবে হামি দিতে।

একবার হিল্লু আঙ্কেল কে বলেছিলাম ” আঙ্কেল আঙ্কেল আপনি রহিমা আন্টিকে হামি দেন কেন? আঙ্কেল আমাকে উত্তর দিয়েছিল রহিমা কাজ করতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। তাই হামি দিয়ে ব্যথা সারিয়ে দিচ্ছি। বাসায় ড্রাইভার আঙ্কেল হামি দেয়। আর এখনে সুন্দরী আন্টিকে হামি দিচ্ছে অন্য একটা আঙ্কেল । দুনিয়া কতো ভালো। সবাই সবাইকে হামি দিয়ে ব্যথা সারিয়ে দেয়। ছোটবেলায় এটাই ছিল আমার কাছে আশ্চর্যের। খোদার কাছে শুকরিয়া করেছিলাম এমন একটা দুনিয়ায় পাঠানোর জন্য।

আঙ্কেল সুন্দরী আন্টিকে হামি দিচ্ছে আমি এই সুযোগে একা একা আশেপাশে হাঁটছি। এমন সময় দেখি ইয়া লম্বা চুলওয়ালা আঙ্কেল ঝোপের আড়ালে আরেকজন আন্টিকে হামি দিচ্ছে। আমিও এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে। এগিয়ে গিয়ে বললাম ” আঙ্কেল আঙ্কেল আমিও আন্টিকে হামি দিয়ে উনার ব্যথা সারিয়ে দিতে চাই।আমার কথা শুনে আন্টি দৌড়ে পালিয়ে গেলো। আর সেই লম্বা চুল ওয়ালা জটাধারী আঙ্কেল আমাকে বললেন ” তুই আমার রোমান্সে বাঁধা দিলি! এতো বড় সাহস তোর! যা আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি তোর কপালে রোমান্স জুটবে না”।

তখন রোমান্স জিনিসটা কি সেটা বুঝিনাই। বুঝলাম আরেকটু বয়স হলে যখন ক্লাস ফোরে পিংকি কে দেখলাম। পিংকি আব্বার ছিল জুতার ব্যবসা। তাই ওর গায়ে থেকে প্রায় নতুন জুতার গন্ধ আসতো। কিন্তু সেই গন্ধকে ইগনোর করে আমি পিংকির প্রেমে পড়ে গেলাম। মনের কথা খুলে বললাম পিংকিকে। আর আমার মনের কথা সে খুলে বললো প্রিন্সিপাল স্যারে কে। ফলাফল স্যারের মাইর। স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়া।

তারকিছুদিন পরে আমার জীবনে এলো নাদিয়া। যদিও তখন নাদিয়া ক্লাস এইটে পড়ে আর আমি পড়ি সেভেনে। কয়েকদিন চুপিচুপি ওর পিছুপিছু বাসায় গেলাম। আমি ওর পিছুপিছু যাই আর নাদিয়া সেটা নোটিশ করে চুপিচুপি হাসে। একদিন ওর পিছুপিছু বাসায় যাচ্ছি। ঠিক তখনই ইয়া লম্বা একটা টুপি পরা লোক সামনে এসে হাজির। আমার গলা ধরে মাটি থেকে ৩ ফুট উঁচু করে দিলেন ছেড়ে। ধপাস করে মাটিতে পরে গেলাম। তবে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে পা আগে মাটিতে না পড়ে পশ্চাৎদেশ আগে পড়ায় সেখানে প্রচন্ড ব্যথা পেলাম। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম নাদিয়া আফগানদের পাঠান বংশের মেয়ে। তার বাবার নাম শের পাঠান। বাসায় এসে বলেছিলাম পা পিছলে রাস্তায় পরে গিয়ে পশ্চাৎদেশে ব্যথা পেয়েছি। ৭ দিন ব্যথা ছিল। সেই ব্যথায় নাদিয়াকে ভুলে গেছি।

সবাই বলতো এসএসসি প্রেমের বয়স নয়। কলেজে উঠে প্রেম করবি। তাই আমিও কলেজে উঠে ফারজানার প্রেমে পড়েছি। ইয়া লম্বা মেয়ে। তবে একটু স্বাস্থ্য আছে। তবে সেটা ব্যাপার না। মেয়ের মধ্যে একটা ওয়েস্টার্ন ভাব আছে। বাংলাদেশে জন্ম না নিয়ে আমেরিকায় জন্ম নিলে নির্ঘাত এতদিন হলিউডে চ্যান্স পেয়ে তিন চারটা অস্কার পেয়ে যেতো। সেই ফারজানা কে নিয়ে ফেসবুক, ইনিস্ট্রা, হোয়াটসঅ্যাপে, আর গুগলে ঘাটাঘাটি করে বুঝলাম মেয়ে ১০০% সিঙ্গেল। কিন্তু ওকে প্রস্তাব দেওয়ার পর পুরান ঢাকার একটা ছেলে পিস্তল এবং উত্তরার একটা ছেলে রামদা নিয়ে এসে যখন হুমকি দিয়ে গেলো তখন থেকে ১০০০% শিওর হলাম সব সুন্দরী মেয়ের দুই থেকে তিনটা হিডেন বয়ফ্রেন্ড থাকে। এদের সোস্যাল সাইটে খুঁজে না পেলেও বাস্তবে এরা খুব এক্টিভ।

এরপর উচ্চতর পড়াশুনার জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলাম। লস অ্যাঞ্জেলেস একটা নামকরা এলাকায় থাকি। আশেপাশে খালি সুন্দরী মেয়ে। খেয়াল করে দেখলাম আমার বাসার পাশে খুব সুন্দরী একটা মেয়ে থাকে। ইয়া লম্বা। শাদা ধবধবে গায়ের রং। সোনালী বর্ণের চুল। কয়েকদিন চোখাচোখি হয়েছে৷ মেয়ের নাম এমিলি। এমিলি সকাল ৬ টায় কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হয়। আর বিকাল ৫ টায় বারান্দায় এসে কফি খায়। কয়েকদিন ওর পিছনে ঘুরঘুর করে বুঝলাম কাজ হবে। মনে মনে বেশ গর্ববোধ হতে লাগলো আমার বংশের আমিই মনে হয় প্রথম পুরুষ যে বিদেশি বিয়ে করতে চলেছে। কিন্তু আমার ভুল ভেঙ্গে গেলো কদিন পর যখন ৭০ বছরের এক দাদা এসে বললো ” আপনি কি এমিলির পিছনে ঘুরঘুর করছেন”?

মনে মনে ভাবলাম মনে হয় এমিলি ওর দাদাকে পাঠিয়েছে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য। আমি বললাম ” হ্যাঁ দাদা। এমিলিকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু আমার কথা শুনে দাদা খুশি হওয়ার বদলে রেগে গিয়ে বললেন ” তোমার সাহস তো কম নয় ছোকরা। তুমি আমার সামনে বলছ আমার স্ত্রীকে তোমার ভালো লাগে। দাঁড়াও আমি এখনি তোমার নামে পুলিশে রিপোর্ট করছি”। আলহামদুলিল্লাহ, আমেরিকান জেলার ভাত খাওয়ার আগেই আমি সেখান থেকে পালিয়েছি। ঢাকায় এসে আব্বা আম্মাকে বলেছি আমেরিকা একটা জঘন্য দেশ। সেখানকার কালচার ভালো না। সেখানকার মেয়েরা পর্দা ছাড়া চলাফেরা করে। সেখানে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।

আব্বা আম্মা আমার কথা শুনে খুশি হয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। মনে মনে ভাবলাম, যাক অবশেষে রোমান্সের স্বাদ পেতে যাচ্ছি। চারদিকে খোঁজাখুঁজি করে সেই আন্টির মেয়েকে পাওয়া গেলো যে ছোটবেলায় আমাকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যেত হামি দিয়ে ব্যথা উপশম করার জন্য। তার একমাত্র মেয়ে নাতাশার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এছাড়া আন্টি ছোটবেলা থেকেই আমাকে পছন্দ করতো তাই বিয়েতে কোনো সমস্যা হলো না।

বাসর রাতে আমি আর নাতাশা পাশাপাশি বসে আছি। নাতাশা ইয়া বড় একটা ঘোমটা দিয়ে রেখেছে। আমি আস্তে করে ওর মাথার ঘোমটা খুলে দিতেই ও বললো ” দেখুন ছোটবেলা থেকে আপনাকে আমি নিজের ভাইয়ের মতো ভাবী। এছাড়া আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আমার পেটে ওর বাচ্চা।কিন্তু আম্মুর ভয়ে আপনাকে কিছু বলতে পারিনি। আপ্নি প্লিজ কিছু মনে করবেন না। হাতাশার কথা শুনে মাথাঘুরে পরে গিয়ে সরাসরি কোমায় চলে গিয়েছি। কিছুদিন হলো রিকভার করেছি কিন্তু এখনো ভাণ ধরে আছি কোমার। কারণ ডাক্তার বলেছে আমার রিকভার করার সম্ভাবনা নেই। আর নাতাশা যদি জানে আমি রিকভার করেছি তাহলে সে নিজেই আমাকে মেরে ফেলবে। কারণ তার ছেলে এখন আমার একমাত্র সন্তান। সেই আমার সমস্ত সম্পত্তি দেখাশোনা করছে। আমি মুখ খুললেই সব জানাজানি হয়ে যাবে আর নাতাশা আমাকে সম্পত্তির জন্য মেরে ফেলবে।

মানুষ নাকি মরার আগে আজরাইল কে দেখতে পায়। আমিও দেখছি। কিন্তু আজরাইল আমার জান কবজ করছে না।আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু কাছে আসছে না। ও হ্যাঁ আপনাদের একটা কথা বলা হয়নি। জ্ঞান ফেরার পর থেকে দেখছি হাসপাতালে যে মেয়েরা আমার সেবাযত্ন করছে মেয়েটা খুব সুন্দর। কদিন থেকেই ভাবছি মেয়েটাকে মনের কথা খুলে বলবো। কারণ আমি খেয়াল করেছি। যখন আমার রুমে কেউ থাকে না তখন মেয়েটা লাউডস্পিকার দিয়ে লাভগুরু শোনে।

সেখানেই বারবার ঘোষণা করা হয় প্রেমের কোনো বয়স হয় না। তাই আজ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মেয়েটাকে মনের কথা বলে দিবো। ঘরে আমরা তিনজন ছাড়া কেউ নেই। আমি, সুন্দরী নার্সটা আর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আজরাইল। আস্তে আস্তে মুখের উপর থেকে অক্সিজেন মাস্কটা সরিয়ে নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললাম আমি আপনাকে ভালবাসি। নার্স আমাকে এভাবে কথা বলতে দেখে ভূত ভূত করে চিল্লাচিল্লি শুরু করে পাশে রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আমার মাথা বরাবর দিলেন ছেড়ে। সাথে সাথে আজরাইল আমার দিকে এগিয়ে এলো। জান কবজ করার আগে সুন্দরী নার্সকে বলতে শুনলাম ” তোর মতো হাজার হাজার ভূত কে শায়েস্তা করেছে এই শের পাঠানের নাতনী”।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত