অল্প কিছুদিন আগে সুমাইয়া ও মারুফের বিয়ে হয়েছে। যদিও বিয়েতে সুমাইয়ার মত ছিল না তবুও বাবার সিদ্ধান্তের কারণে বিয়ে করতে হয়েছে। সুমাইয়ার পরিবার অত্যন্ত ধনী পক্ষান্তরে মারুফের পরিবার মধ্যবিত্ত। বাবার এমন সিদ্ধান্তে বেশ অবাক হয়েছে কারণ সবার বাবা় চায় তার মেয়ের বিয়ে বড় পরিবারে হোক। কিন্তু তার বাবা তার বিয়ে ছোট পরিবারে দিলেন।
.
এই বিয়ের পেছনে একটি কারণ রয়েছে। আর সেটা হল মারুফ অত্যন্ত সৎ। এইতো মাস খানেক আগের কথা। পঞ্চাশ লাখ টাকা ভুলে মারুফের একাউন্টে চলে গিয়েছিল। পরে চাওয়া মাত্রই মারুফ যাচাইবাছাই করে টাকাগুলো ফেরত দিয়েছিল। শুধু এটুকুই নয়, বিয়ের প্রস্তাবের সময় সুমাইয়ার বাবা মারুফের বাবাকে বলেছিল যে বিয়ের পর মারুফকে একটি দোকান এবং বড় একটি ফ্ল্যাট কিনে দিবে। কিন্তু মারুফ তা নিতে রাজি হয়নি। সে বলেছে, আমার যা আছে আমি তাতেই সন্তুষ্ট এবং বিয়ের পরও আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে থাকব। আমার স্ত্রীর একমাত্র দায়িত্ব হবে আমার বাবা মায়ের প্রতি যথেষ্ট পরিমাণে খেয়াল রাখা। এসব কথা শুনে সুমাইয়ার বাবা বেশ খুশি হন কারণ বর্তমানে এমন ছেলে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
.
বিয়ের পর থেকেই মারুফ বুঝেছে যে সুমাইয়া তাকে মেনে নিতে পারেনি। তবে সুমাইয়া এই ব্যাপারটা শুধুমাত্র মারুফের সামনে প্রকাশ করে। সবার সামনে মারুফের সাথে স্ত্রী সুলভ আচরণ করে। মারুফেরও তো একটা মন আছে। তারও ইচ্ছে করে ভালবাসতে, ভালবাসা পেতে। তাই সে সুমাইয়ার মন জয় করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ ভালবাসা জোর করে পাওয়া যায় না। যেটা জোর করে পাওয়া যায় সেটা ভালবাসা নয়।
.
মারুফ অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে আর সুমাইয়ার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। সুমাইয়া ঘর গুছাচ্ছে আর মারুফের ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। তখন মারুফ বলল,
– একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
> বলুন।
– তুমি কি একজনই নাকি দুজন?
> এটা কেমন প্রশ্ন?
– না মানে তোমার ব্যবহার তো দুরকম। সবার সামনে এক রকম আর একা হলে অন্যরকম।
> আপনার দেরি হচ্ছে।
.
সুমাইয়া এড়িয়ে গেল। কারণ সবকিছুর উত্তর দেয়া যায় না। মারুফ প্রতিদিন আসার সময় সুমাইয়ার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে। কখনো ফুল, কখনো বা কাঁচের চুড়ি। সুমাইয়াও বুঝে যে মারুফ তার মন জয়ের চেষ্টায় আছে কিন্তু সুমাইয়ার মন মানতে নারাজ।
> এসব করে কোনো লাভ নেই।
– আমি তো লাভের আশায় কিছু করি না।
> তাহলে এসব কিসের জন্য?
– এগুলো তোমারই প্রাপ্য।
.
সুমাইয়া এড়িয়ে যেতে চাইল কিন্তু মারুফ আজ ধরে ফেলল। অনেক হয়েছে এড়িয়ে চলা আর নয়। এভাবে কি থাকা যায়? মারুফ সুমাইয়ার পথ আগলে দাঁড়ালো। তার এমন আচরণে সুমাইয়া অবাক হল। কারণ এর আগে কখনো এমন করেনি। সুমাইয়া অবাক দৃষ্টিতে মারুফের দিকে তাকালো। মারুফও তার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
.
> কি হল পথ আটকালেন কেন?
– তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?
সুমাইয়া কিছুটা রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। এতেই মারুফ বুঝে নিল যে নাই।
– কাউকে ভালবাসেন?
> হঠাৎ এসব প্রশ্নের মানে কি?
– তাহলে আমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? আমি তো জোর করে বিয়ে করিনি। তোমার বাবাই প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল।
> আমার কাজ আছে।
.
সুমাইয়া চলে গেল। এবার আর মারুফ আটকালো না। মারুফ ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে শুয়ে পড়ল আর সুমাইয়াকে নিয়ে ভাবতে লাগল। এই কয়েকদিনে সে এটা ভালই বুঝল যে সুমাইয়া খুব রাগি মেয়ে তবে মনটা একটা বাচ্চার মত নিষ্পাপ। রাগটা একমাত্র মারুফের সামনেই প্রকাশ করে। মারুফ সুমাইয়াকে খুব ভালবেসে ফেলেছে। তার জীবনে সুমাইয়াই প্রথম মেয়ে যাকে দেখে মনটা নেড়ে উঠেছে। কিন্তু সুমাইয়ার এমন আচরণে তার মনটা কিছুটা ভেংগে পড়েছে।
.
সুমাইয়া সব কাজকর্ম সেরে বেডরুমে এলো। তখনই মারুফের একটা কথা শুনে সে নিশ্চুপ হয়ে গেল।
– আচ্ছা আমি গরীব তাই বলে কি তুমি মেনে নিতে পারছ না?
সুমাইয়ার চোখ দেখেই মারুফ বুঝল যে এটাই সত্য। কারণ এর আগের প্রশ্নগুলো শুনে সুমাইয়ার চেহারায় রাগ দেখা গিয়েছিল কিন্তু এবার তার চোখ লুকোচুরি করছে। মারুফ উঠে দাঁড়ালো। সুমাইয়ার পাশে এসে বলল,
– আমি জানি আমি গরীব। কিন্তু আমার মাঝেও মন আছে যেখানে ভালবাসা আছে। প্রথম রাতেই তোমাকে দেখে মনের মধ্যে জায়গা দিয়েছিলাম। অবশ্যই স্ত্রী হিসেবে এটা তোমার প্রাপ্য। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার পাইনি তাতে আমি কষ্ট পাইনি। তবুও আমি চাই তুমি সুখী হও।
> আপনার কথা শেষ হলে আমি কি যেতে পারি?
.
মারুফ অবাক হয়ে গেল। কত সুন্দর করে আবেগী কথা বলল তবুও মেয়েটার মন একটুও নাড়া দিল না? এত পাষাণ মেয়ে হয় নাকি? মেয়েরা নাকি মায়াবী তবে সুমাইয়া কেন ব্যতিক্রম? সুমাইয়া শুয়ে পড়লো। মারুফও পাশে যেয়ে শুয়ে পড়লো। বিয়ের পর থেকেই সুমাইয়া মারুফের জন্য নিচে বিছানা করে দেয়। মারুফ সেখানেই ঘুমায়। আজ মারুফ অনেক কিছুই ব্যতিক্রম করছে।
> আপনার বিছানা নিচে করাই আছে।
মারুফ কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে রইলো।
> আপনি চাইলে জোর করতে পারেন। কিন্তু ভালবাসা কখনোই পাবেন না।
.
মারুফ উঠে দাঁড়ালো।
– এটা না বললেই পারতে। যত্তসব।
মারুফ গজগজ করতে করতে নিচে শুয়ে পড়লো। এভাবেই যাচ্ছে তাদের জীবন। মারুফ প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যায় সুমাইয়ার মনের মধ্যে জায়গা করতে কিন্তু সুমাইয়া কোনো পাত্তাই দেয় না।
.
মারুফের বাবা মা এক আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে গিয়েছে। তাই রান্নাবান্না ও ঘর দুয়ার সব গুছাতে গুছাতে অনেকটাই টায়ার্ড সুমাইয়া। রাতে মারুফ এসে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো। সুমাইয়ার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। সে মারুফকে ডিনার দিল।
– তুমি খেয়েছ?
সুমাইয়া পাত্তা না দিয়ে নিজ কাজ করতে লাগল।
– দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজ কাজে কাজে দিন গেছে তোমার। আসো আমি খাইয়ে দেই।
> চুপচাপ খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়। আমার মেজাজ এমনিতেই গরম আছে আর গরম কর না।
.
যদিও রাগের মাথায় তবুও এই প্রথম সুমাইয়া মারুফকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে। মারুফ কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তারপর মুখ চেপে মুচকি মুচকি হাসি দিল। যা দেখে সুমাইয়ার রাগ আরও বেড়ে গেল।
> কি সমস্যা? হাসছো কেন? আমি কি জোক মেরেছি?
– তোমার মুখে তুমি শব্দটা ভালই লাগে। অহেতুক আপনি করে বল কেন?
.
সুমাইয়া থতমত খেয়ে গেল। রাগের মাথায় কি বলছে তা সে নিজেও জানে না। চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগল। মারুফ উচ্চস্বরে বলল, “তুমি না খেলে কিন্তু আমি খাব না।” একটু পর সুমাইয়া এসে টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করলো। এই খাওয়ার মধ্যে এক তৃপ্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে। মারুফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর খেয়েদেয়ে উঠে পড়লো। সুমাইয়া সবকিছু গুছিয়ে রুমে এসেই শুয়ে পড়লো। মারুফ আস্তে করে উঠে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ সুমাইয়াকে খুব মায়াবী লাগছে। এলোমেলো চুল, মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম, চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। সে এক অপরূপ দৃশ্য। সেই দৃশ্য উপভোগ করে যাচ্ছে মারুফ।
.
সকালে জবে যাওয়ার সময় মারুফ বলল,
– একটা অনুরোধ করব?
সুমাইয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
– ভয় নেই। তোমার মত বিরোধী কোনো অনুরোধ করব না।
সুমাইয়া মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা দিল।
– বিয়ে উপলক্ষে কিছু বন্ধুবান্ধব ট্রিট চাচ্ছে। বাবা মা তো এখন নেই। যদি ট্রিটটা ঘরে দিতাম তাহলে খরচ কিছুটা কম হত।
সুমাইয়া চুপ করে রইলো।
– ঠিক আছে। আমি বুঝে নিয়েছি।
.
মারুফ বের হতে লাগল তখন সুমাইয়া বলল,
> কতজন আসবে? আর কি কি রান্না করতে হবে?
মারুফ যেন এটাই আশা করে বসে ছিল। তাই সাথেসাথেই বলল,
– বেশি না দশ-পনের জনের মত হবে। মুরগির মাংস, ডিম আর ডাল হলেই চলবে। আর একটু শরবত।
সুয়াইয়া কিছুটা রাগ নিয়ে বলল‚ “ঠিক আছে ঠিক আছে। রাতে আসতে বলিয়েন।”
.
মারুফ হাসিমাখা মুখ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। একটু পরে সুমাইয়া কাঁচাবাজার করতে বের হল। কারণ ঘরে তেমন কিছু নাই। ঘরের সামনেই ভ্যানগাড়ি করে কাঁচাবাজারে বিক্রি করতে আসে। সুমাইয়া আজই প্রথম ঘর থেকে বাইরে বের হল। এলাকায় মারুফকে সবাই খুব ভাল জানে। প্রথম কারণ মারুফ সত্ তারওপর এলাকার ছেলে। সুমাইয়াকে দেখে আশেপাশের অনেক মহিলাই এগিয়ে এসে কথাবার্তা বলতে লাগল। তুমি অনেক ভাগ্যবতী মারুফের মত স্বামী পেয়েছ, আমার মেয়েটা আরেকটু বড় হলে মারুফের সাথে বিয়ে দিতাম ব্লা ব্লা আরও অনেক কথা।
.
কাঁচাবাজার করে সুমাইয়া ঘরে এসে রান্নাবান্না শুরু করল এবং মারুফকে নিয়ে ভাবতে লাগল। এলাকার সবাই বেশ ভালই জানে তাকে। তাই তো এত প্রসংশা। সুমাইয়া রান্নাবান্না করে মারুফ আসার কিছুক্ষণ আগে সুন্দর করে সবকিছু পরিবেশন করে রাখলো। কিছুক্ষণ পর মারুফ তার বন্ধুদের নিয়ে এলো। কিছুক্ষণ আড্ডাবাজি করে সবাই ডিনার করতে বসলো। খাওয়ার সময় সবাই রান্নার প্রসংশা করতে লাগল। সুমাইয়া রান্নাঘরে এসে কাজ করতে লাগল। তখন কিছু কথাবার্তা শুনলো।
~ বলেছিলাম না সততার পুরষ্কার আল্লাহ একদিন দিবেই। দেখ তোর সততার পুরষ্কার হিসেবে আল্লাহ তোকে এমন একটা স্ত্রী দিয়েছে।
– তা ঠিক বলেছিস। আমার মত ছেলের সাথে ওর মত মেয়েকে মানায় না। আমার যথেষ্ট খেয়াল রাখে। আল্লাহই মিলিয়ে দিয়েছে।
.
কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে সবাই মারুফ ও সুমাইয়াকে থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
– থ্যাংকস।
> ফরমালিটির প্রয়োজন নেই।
– না মানে অনেক কষ্ট করেছ।
> ঘুমাতে যান। আমার ঘুম পাচ্ছে।
সুমাইয়া চলে গেল।
.
পরেরদিন মারুফের বাবা মা চলে এলো। তার কিছুদিন পর সুমাইয়ার বাবা মা সুমাইয়াকে দেখতে এলো। তবে সুমাইয়া তাদেরকে কিছু বুঝতে দেয়নি। তাদের সামনে সবকিছু ঠিকমতো করেছে। এতে তারা বেশ খুশিই হল।
.
– তুমি ভাল অভিনয় করতে পার।
> পরিস্থিতি অভিনয় করতে বাধ্য করে।
– তবে আমি চাই না তুমি অভিনয় করতে থাক।
> মানে?
– আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে স্বাধীন করে দিব।
সুমাইয়া মনে মনে ভাবতে লাগল মারুফ ডিভোর্সের কথা বলছে নাতো? সুমাইয়ার গলা কেন যেন শুকিয়ে গেল।
– আমি জানি আমি তোমার যোগ্য নই। তোমার বাবা বিয়েটা দিয়েছিল আমার সততা দেখে। কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় সততার মূল্য খুবই কম। যাইহোক আমি উকিলের সাথে আলাপ করে সবকিছু রেডি করে নিয়ে আসব।
.
দুজনেই শুয়ে পড়ল কিন্তু দুজনেরই ঘুম হচ্ছে না। মারুফের ঘুম হচ্ছে না কারণ আজ সে এমন কথা বলেছে যা সে কখনোই বলতে চায়নি। আর অন্যদিকে এক অজানা কারণে সুমাইয়ারও ঘুম আসছে না। সুমাইয়া এটা ঠিকই বুঝল যে সে ডিভোর্স চায় না। আবার মারুফকে যে ভালবেসে ফেলেছে তাও নয়। তবে কেন খারাপ লাগছে? তবে কি ধীরে ধীরে মারুফের ভালবাসায় পা দিচ্ছি? এসব ভাবতে ভাবতে সুমাইয়া ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে উঠে মারুফ যথারীতি অফিসে চলে গেল। আজ দুজনেরই মুখের হাসি বিলীন ছিল। তা দুজনেই লক্ষ্য করেছে। এভাবে কেটে গেল দুদিন। এই দুদিনে মারুফ সুমাইয়ার মুখে একটুও হাসি দেখেনি।
.
এক রাতে মারুফ অফিস থেকে ফিরে রুমে এসে টেবিলের উপর কিছু কাগজপত্র রাখল। সুমাইয়া কাগজপত্রের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ব্যাপারটা মারুফের চোখে পড়ল। মনে মনে হেসে মারুফ ফ্রেশ হতে চলে গেল। এসে দেখল কাগজপত্র নেই। সেগুলো ছিল অফিসের কাগজপত্র। মারুফ সুমাইয়াকে বলল,
– এখানের কাগজ গুলো কই?
সুমাইয়া কিছু না বলে চলে যেতে লাগল। মারুফ পথ আগলে ধরলো।
– ওগুলো অফিসের কাগজপত্র।
সুমাইয়া চোখ টিপ টিপ করে মারুফের দিকে তাকাল। মারুফ মুচকি মুচকি হাসছে।
.
– ভালবাস এটা বললেই তো পার।
> কিসের ভালবাসা? আমি ভেবেছি কাগজ গুলো অকেজো তাই বাইরে ফেলে দিয়েছি।
– হায় হায় করছ কি! কই ফেলছ?
সুমাইয়া দেখিয়ে দিল। মারুফ দৌড়ে যেয়ে নিয়ে এল। এরপর থেকেই মারুফ সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। সুমাইয়া কিছু বলে না।
– মুখ দিয়ে একবার বললেই তো জীবন সুখের হয়ে উঠবে।
> অহেতুক ভুল বুঝছেন।
– আচ্ছা তুমি যখন লজ্জা পাচ্ছ আমিই বলছি ভালবাসি। তুমি কি বাসবে?
> উফফফ বিরক্তিকর।
সুমাইয়া উঠে বারান্দায় চলে গেল।
.
মারুফ মনের আনন্দে দিন কাটাতে লাগল। কারণ সে বুঝতে পেরেছে যে সুমাইয়ার মনে ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে। এখন শুধু প্রকাশ করা বাকি। আপনি থেকে সুমাইয়া তুমিতে নেমেছে। রাতে ডিনার করে সুমাইয়া বারান্দায় বসে আছে। কিছুক্ষণ পর মারুফও এলো।
– ঘুমাবে না?
> একটু পর।
– আকাশটা খুব সুন্দর তাই না?
> আকাশ সবসময়ই সুন্দর হয়। তবে সেটা আমাদের মনের উপর নির্ভর করে। মন ভাল থাকলে আকাশ বাতাস সবকিছুই ভাল লাগে।
– তুমি খুব সুন্দর করে কথা বল। বারবার প্রেমে পড়ি।
.
সুমাইয়া কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ নীরবতার পর সুমাইয়া বলল,
> আজকাল ফুলের খুব দাম তাই না?
– হয়তো। কিন্তু হঠাৎ এটা জিজ্ঞেস করার কারণ?
> নাহ এমনি।
.
পরেরদিন অফিস থেকে আসার সময় মারুফ একগুচ্ছ ফুল নিয়ে এলো। তা দেখে সুমাইয়া বেশ খুশি হল। কারণ গতরাতে সুমাইয়া এই ইঙ্গিতই দিয়েছিল। রাতে ডিনার শেষে সুমাইয়া রুমে ঢুকে ফুল গুচ্ছ খোঁপায় বাঁধলো। তা দেখে মারুফও খুশি হল। সকালে মারুফ অফিসে যাওয়ার সুমাইয়া বলল,
> আসার সময় একটা লান্স বক্স কিনে নিয়ে আসবে।
– কেন? তুমি কোথাও যাবে?
> যা বলছি তা করবে। এত কথা কিসের?
– জ্বি হুকুম মহারানী।
> ঢং করতে হবে না, যাও।
.
মারুফ চলে গেল। আসার সময় লান্স বক্স নিয়ে এলো। পরেরদিন সকালে সুমাইয়া লান্স বক্সে লান্স দিয়ে বলল,
> এই নাও লান্স। বাইরের খাবার একদম বন্ধ।
মারুফ হাসিমুখে লান্স বক্স নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। এভাবেই ধীরে ধীরে তাদের জীবন সুখে দিকে অগ্রসর হতে লাগল। যা মুখে বলা যায় না তা ইশারায় বুঝাতে হয়। আর বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক