বিয়ে পরবর্তী আনন্দ

বিয়ে পরবর্তী আনন্দ

বিয়ের দিন বর সেজে কণের বাড়ি থেকে কন্যাকে নিয়ে আসলেন। এখন ডিজিটাল যুগ। এ্যানালগ যুগে এইযুগের মত বিয়ের সিস্টেম বলে কিছু ছিলো না। বৌ আসতো বরের বাসায়, যেমনআমার দাদা বিয়ে করে নিয়ে আসলেন আমার দাদীকে, পরের দিন’ই দাদা এবং দাদী দুজন মিলেই ধান মাড়াইকরেছে। সেই দিন এখন নেই। কিন্তু তাই বলে বিয়ের গ্রুপসিস্টেম টা কিন্তু বাতিল হয়ে যায়নি।

আগেও তিন বারকবুল বলে বিয়ে হয়েছে, এমন না যে এখন ৬ বার বলতে হয়।অনেকের কাছেই শোনা যায় এইতো বিয়ের আনন্দ থাকেমাত্র ৩ মাস। তারপরেই বুঝতে পারবে জীবন কি? বিয়েকরা কতটা প্যারাদায়ক। বিবাহিত এইসব পুরুষ এবংমহিলাদের কথা শুনে আমদের ইয়াং জেনারেশন বিয়ের নাম শুনলে কেটে পড়ে, তারা মনে করে বিয়ে করে কি স্বাধীনতা হারাবো নাকি? ভার্সিটি পড়ুয়া, বিসিএসক্যাডার, ডাক্তার এদের কাছেই আমরা জিজ্ঞাসা করি, ভাই বিয়ের পর জীবনযাপন কেমন চলছে? বেশিরভাগ’ইউত্তর থাকে, দূর ভালো না। জীবনে বিয়ে করো নাবুঝলে? আমাদের সমাজে চার ক্যাটাগরির পুরুষ পাওয়া যায়, যথাক্রমে–

ক) যারা স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আগেঅনেক আদর ভালোবাসা দেয়, কিন্তু পুরুষের সিমেন(বীর্য) পাসিং হওয়ার পর মনে করে দূর এগুলা না করলেই কি নয়? খামোকা ঝামেলা

খ) কিছু পূরুষ হৈস্থমৈথুন অভ্যস্ত। তারা পর্ণমুভি দেখে আগে থেকেই মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন ব্যায় করে আনন্দ ভোগ করেছে। যেমন পায়ু পথে সহবাস( এ্যানাল সেক্স) ,মুখ দিয়ে সেক্স (ওরাল সেক্স) তারা যখন বিয়ে করে সেই পর্ণ মুভির মতই স্ত্রীকে ব্যবহার করতে চায়। বিকৃত এই কাজে স্ত্রী যখন বাধা প্রদান করে তখন তার সহবাস টা তৃপ্ত হয় না। তখন অন্যত্র গা ভাসায়, উদাহরণ– প্রস্টিটিউট। তাদের কাছে বিয়ের পর যেনো পাহাড় সমান একটা ভেজালের কাজ। অপবিত্র জিনিস দেখে পবিত্র স্ত্রীর কাছে এ ধরনের আবদার করাটা বোকামিই নয়, বরং নির্লজ্জতা।

গ) কিছু পূরুষ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার আগে দোয়া পড়ে নেয়, তাদের সিমেন পাসিং হওয়ার পর, তারা আলহামদুলিল্লাহ বলে। এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করে এই বলে , হে আল্লাহ বিশাল একটা নিয়ামত ভোগ করার সুযোগ দান করেছেন এই পবিত্র স্ত্রীকে দিয়ে।

ঘ) এই ক্যাটাগরির পুরুষরা সহবাস করতে হবে তাই করে, বিয়ে সামাজিক রিতী তাই করে, নিজে চাকরি, ব্যবসা করে উপার্জন করে বউকে ভাত কাপড় দিতে হবে তাই করে। বাচ্চা কাচ্চা হবে মানুষ করতে হবে তাই করে। কিন্তু আলাদা চিন্তা চেতনা তাদের মধ্যে খুবিই কম। এরা বেশিরভাগ মোটা টাইপের হয়, বুদ্ধিমান ও হয়। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বিয়ে মানে মনে করে… ! ছেলেদের ক্ষেত্রেঃ

ক) একটা সুন্দরী বউ হবে। সুন্দর বলতে তারা ফর্সাকেই বুঝে নেয় । তবে সব ছেলেরা কিন্তু এক নয়।
খ) বউটাকে নিয়ে বাইকের পিছনে বসিয়ে সারাদিন ঘুরবো। মেয়েদের ক্ষেত্রেঃ

ক) ছেলেটা অনেক হ্যান্ডসাম হবে। যাতে রাস্তা দিয়ে হাটলে অনেকেই বাহবা দেয়।
খ) রাতে ডিনার করবো বাইরে কোন রেষ্টুরেন্টে।
গ) অনেক অনেক শপিং করতে বের হবো দুজন মিলে।

এইসব চিন্তাগুলো বিয়ের আগে মস্তিষ্কে আসে। কিন্তু বিয়ের পর এগুলা কচুরিপানা হয়ে যায়। বিয়ের পর ছেলেটা বুঝতে পারে বিয়ে মানে বাইকে বসিয়ে সুন্দরী বউ আছে এটা দেখানো নয়। বিয়ে মানে স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে ভালোবাসা খুজে নেয়া। বিয়ের পর এইসব ছেলেরা বুঝতে পারে ফর্সা মানেই সুন্দরী নয়, আমি বাইরে থেকে আসলাম আমার জন্য এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো এটাই সুন্দরতম দৃশ্য।

মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় লক্ষ্য করা যায়, তারা মনে করে বিয়ে মানেই হ্যান্ডসাম ছেলে নয়, বিয়ে হলো সুন্দর একটা বুক। যে বুকে সারাটা জীবন মাথা রেখে থাকা যায় । বিয়ের পরে রাতের ডিনার মানেই আনন্দ নয়, মাঝে মাঝে বাজার থেকে বিফ ক্রয় করে এনে দুজন মিলে রান্না করে সেলিব্রেট করাটাই আনন্দ এবংসুখের। মাঝে মাঝে দেখা যায় রান্না ঘরে দুজনের মিষ্টি ঝগরাও হয়, স্ত্রী বলে মাংসের পিচ আর ছোট করো না, স্বামী বলে দূর অনেক পিচ করবো যাতে করে অনেকদিন ধরে খাওয়া যায়। মেয়েটা বিয়ের পরেই শ্বশুর বাড়ি এসেই এ কাজ, ও কাজ, বাড়ির উঠোন ঝাড়ু দেয়া, শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্য রান্না করার কাজে লেগে যায়।

বিয়ের পরে যেখানে আনন্দ  করার কথা সেখানে তার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, মনে হয় এই মেয়েটাকে নিয়ে আসা হয়েছে কাজের জন্য, শহরের অবস্তা পুরোটা উল্টো। সেখানে সময় দিতে না পারার জন্য স্বামী স্ত্রী মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে তারা চায় আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতে। দেখা যায় ছেলেটা কাজের জন্য রাত করে ফিরলে স্ত্রীর সাইক্লোন শুরু হয়ে যায়। কেনোনা বিশ্বাস ঠুনকো হয়ে যায়। তো এইসব ক্যাটাগরির ছেলে মেয়েদের কাছে গিয়ে যদি জানতে চান, ভাই বিয়ে পরবর্তী জীবন কেমন? তখন তারা নিশ্চই বলবে জীবনে বিয়ে করিস না। বিয়ে মানেই জীবন শেষ। তখন ইয়াং ছেলেটার মনের অবস্তা কি হবে? আপনি কি বিয়ে করেছেন? না করি নাই। তাহলে বিয়ের আগে এরকম সুন্দর সুন্দর কথা সবাই বলতে পারে। বিয়েকরুন। স্ত্রীর জন্য কসমেটিক্স, অফিসের ব্যস্ততা যখন ঘিরে ধরবে তখন আর এতো সুন্দর কথা বের হবে না।

বিয়ের আগে সবাই এমন কথা বলতে পারে, বাট বিয়ের পরে সবাই বুঝতে পারে বিয়ে কি জিনিস। উপরোক্র একটা পয়েন্ট কিন্তু ধ্রুব সত্য। কিন্তু আমি এমন মেয়েকে বিয়ে কেনো করবো যার প্রতিমাসে কসমেটিক্স ক্রয় করতে আমার হাই হুতাশ করতে হবে? আমি এমন ফর্সা স্ত্রীকে চাই না যার প্রতিদিন রুপ চর্চায় হাজার টাকা ব্যায় করতে হবে। আমি এমন মেয়েকে বিয়ে করবো না যে প্রতি সপ্তাহে বিউটি পার্লারে যাবে। আমি এমন স্ত্রীকে চাই না যে ৬০০ টাকা দিয়ে এক কাপ কফি খাবে কফি শপে গিয়ে, আমি এমন মেয়েকে বিয়ে করবো ২০০ টাকা দিয়ে পুরো একটা নেসক্যাপ নিয়ে আসবো, যা দিয়ে হাজার কাপ কফি গভীর রাতে স্ত্রীর সাথে পান করতে পারবো। আমি এমন স্ত্রীকে বিয়ে করবো না যে, সে প্রতিনিয়ত চাইবে বাইরে ডিনার করতে, বরং আমি একটা চিকেন নিয়ে এসে দুজন মিলে রান্না করে খাবো।

আচ্ছা বিয়ে পরবর্তী আনন্দ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে? বিয়ের পরে কিভাবে আনন্দে থাকবো? হ্যাঁ তাই। বিয়ে করার পর অন্তত দুবছর সময় ঠিক করে নিন। এই দুবছর কোন ভারী কাজ নয়, এই দু বছর কোন এক্সট্রা ভাবনা নয়, এক্সট্রা ভাবনার মধ্যে এই যেমন.. কি করে সংসার চলবে, আমার মা বাবাকে খেয়াল রাখবে! এতো টাকা হলে ঐ কাজটা হবে, অমুকের স্ত্রী এইটা করছে তুমিও করো এইটা, এইগুলা ভাবনা পরিহার করুন। নিয়মিত নামায আদায়ের তাগিদ দিন। দুই বছর অনেক সময়। যদি আপনারা পরিপক্ব হউন, বাবা এবং মা হওয়ার দায়িত্ব নিতে পারবেন বলে মনে করেন তাহলে ১ বছরের মধ্যেই নিয়ে নিন।

আর যদি মনে করেন বাবা হওয়ার পর কিভাবে কি করবো, কোন কিছু বুঝে উঠতে না পারেন তাহলে দুবছর স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে। এই দুই বছর হবে জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মূহুর্ত। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে জুম্মার নামাযের আগে দুজন মিলে রান্না করুন, অবশ্যই স্পেষাল খাবার হতে হবে। প্রতি ৪ মাস পর পর শপিং করার একটা প্ল্যানিং মাথায় রেখে দিবেন। প্রতি সপ্তাহে বিকেলে কোথাও ঘুরতে গিয়ে ফুসকা খাওয়া যেতে পারে । একটা মেয়ে সংসারে কাজ করতে করতে একঘেয়েমিয়তা এ্যাটাক করে তাই প্রতি ৬ মাস পর পর দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যায়। বিয়ের পরে এক কথায় কোন চাপ নেয়া যাবে না। সংসারের কাজ গুলো দুজন মিলে মিশে করলে আপনার স্ত্রীর মনে আলাদা করে জায়গা করে নিতে পারবেন।

মেয়েটিও যেনো নতুন পরিবারে এসে অস্বস্থিবোধ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই বলবে এতো হিসাব নিকাশ করে কখনো সংসার করা যায়? যারা এই কথা বলে, তারাই কিন্তু হায়ারম্যাথ, ম্যাথ, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি পড়ে এসেছে, শুধু যে সাইন্সের ছেলে মেয়েরা বিয়ে করে তা নয়, কমার্সের হিসাব বিজ্ঞান ও তাদের মাথায় কিলবিল করে, মানবিক শাখার ছেলে মেয়েরা অমুক সাল মস্তিষ্কে গেঁথে রাখে, একটা কাগজের সার্টিফিকেট এর জন্য যদি এতো কিছু মনে রাখা যায়, তাহলে বিয়ের পর সংসার টাকে সুখি করার জন্য এই ছোট্ট হিসাবগুলি কেনো কষ্টকর হবে?

এবার চলে যায় সেই ক্যাটাগরির ছেলেদের কাছে যারা সহবাস করার পর আলহামদুলিল্লাহ বলে, আল্লাহর দেয়া বড় একটা নিয়ামত ভোগ করলো সে। তারা কিন্তু আমাদের  এই সমাজেই বসবাস করছে। কিন্তু বিয়ের আগে কিছু মেয়েরা তাদের দেখতেই পারে না। গেঁয়ো, হুজুর, আনকালচার বলে অপমান ও করে। এইসব ছেলেরা নাকি রোমান্টিকতা বোঝে না!

এরাই সেইসব ছেলে যারা নতুন এই ডিজিটাল যুগের যুবক, যারা পবিত্র স্ত্রীকে নিয়ে গভীর রাতে কফি পান করে তাহাজ্জুদে বসে পড়ে, তারা স্ত্রীকে নিয়ে মুভিও দেখে (ইসলামিক মুভি) তারা সং ও শুনে (ইসলামিক সং) সেই সং অনেকটাই বেশি মধুর। সেইসব যুবকরাই রাতে ক্যাম্প ফায়ার জ্বালিয়ে পবিত্র স্ত্রীকে নিয়ে চিকেন খায় পুড়িয়ে। তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন, ভাই বিয়ের পরের জীবন কেমন কাটছে? উত্তর– আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ অনেক সুখে রেখেছেন।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত