সবে মাত্র দু’মাস হলো কাব্যর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
– বিয়ের পর প্রথমবারের মতো আজকেই কাব্যর (বরের) সাথে সারাদিন ঘুরাঘুরি করে ঈদের দিনটা কাটালাম।
– ঘুরতে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে মেজাজটা একদম বিগড়ে গেছিলো,যখন কিনা বর আমার হাতে একটা হলুদ রংয়ের শাড়ী এনে দিয়ে বলল – এটা পড়ে রেডি হয়ে নাও! এখনি ঘুরতে বের হবো।
– ছিঃ ছিঃ হলুদ রঙয়ের শাড়ী? হলুদ রঙ মানেই ত্য আমার কাছে হাগু কালার! (মনে মনে ভাবছিলাম) এমন সময় হঠাৎ করে বর(কাব্য) আমার পিঠে হাত রাখতেই চমকে উঠলাম।
– কাব্য বলতেছে কি ব্যাপার প্রিয়া- কি ভাবতেছ? এই হলুদ শাড়ীটা কি তোমার পছন্দ হয় নি! ভেতরে খুলে দেখতে পারো। আনকমন ডিজাইন। একদম সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস একটা শাড়ী। অনেক খুঁজে খুঁজে কাল রাতে তোমার জন্য এটা মার্কেট থেকে কিনে এনেছি। তুমি তো জানোই “হলুদ” আমার প্রিয় রং। তাই আমি তোমাকে আমার প্রিয় রং দিয়ে সাজাতে চাই। কথা গুলো শুনতে শুনতে বিরক্তবোধ করছিলাম,রাগ হচ্ছিলো প্রচুর আর ভাবছিলাম হলুদ রংটাও কি কারো প্রিয় রং হতে পারে? ছে ছে ছে। তবে মুখে বরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম বাহঃ তোমার পছন্দের রংটা তো অনেক সুন্দর আর শাড়িটাও খুব সুন্দর আমার পছন্দ হয়েছে।
– কথাটা শুনা মাত্রই বরতো আমার মহা খুশি। খুশিতে সে নিজেই আমাকে শাড়ী পড়িয়ে সাজিয়ে দিতে চাইলো, আমিও না করলাম না।
– খুব সুন্দর পরিপাটি করে শাড়ী পড়িয়ে দেওয়ার পর শাড়ীর কালারের সাথে ম্যাচিং করে একটা হলুদ টিপ আলতো করে কপালের মাঝখানটায় বসিয়ে দিল। তারপর ঠোঁটে হলুদ কালার লিপস্টিক,চুলে হলুদ কালার খোঁপা।
– সাজানো শেষ করেই বর আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে জিজ্ঞেস করলাম – কি গো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
– সে বললো, জানো প্রিয়া তোমাকে দেখতে একদম “হলুদ অপ্সরীর” মত লাগছে! হলুদ অপ্সরী! কথাটা শুনে কেমন নিজেকে হাগু অপ্সরী মনে হচ্ছে। কারণ, আমার কাছে হলুদ কিছু মানেই “হাগু” ইচ্ছে হলো না শরীরে এই এতএত “হাগু” নিয়ে পার্কে ঘুরতে যাই। পার্কে পরিচিত কতজনের সাথে দেখা হতে পারে,,,আর আমার পরিচিত সবাই জানে হলুদ রং মানেই আমার কাছে হাগু কালার। আর আমিই কিনা আজ হলুদ শাড়ি,হলুদ টিপ,হলুদ খোপা ইত্যাদি দিয়ে সেজেছি! কিন্তু অবশেষে যেতেই হলো।
– যাওয়ার পর পার্কের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দুজনে মিলে বসলাম।
– কিছুক্ষণ বসে গল্প করার পর কাব্য(বর) বললো – তুমি বসো। আমি তোমার পছন্দের আইসক্রিমটা কিনে আনি।
– একটু পরেই কাব্য আসলো হাতে আইসক্রিম নিয়ে। দুজনে আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটতেছি। পার্কের মাঝে হঠাৎ সিথীর (বেষ্টফ্রেন্ড) সাথে দেখা সাথে ওর বর। আচমকা হাত টেনে ধরে হো হো হো করে হাসছে।
– আর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলছে কিরে – আজ হঠাৎ “হাগু” কালার শাড়ি পড়েছিস। ব্যাপার কি?
– কথাটা শুনে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায় যায় ভাব। সিথীর হাত ধরে টেনে একটু দূরে সরে গিয়ে বললাম — আর বলিস না তোর দুলাভাইয়ের হলুদ রং প্রিয়। আর আজকে সেই আমাকে এভাবে সাজিয়েছে।
– বাহঃ তোর বরটা তো খুব রোমান্টিক রে। আর এই সাজে কিন্তু তোকে দারুণ লাগছে প্রিয়া বলেই ,মাথায় একটা ঠক্কর দিয়ে সিথী চলে গেল। সিথীর কথায় মনে হচ্ছে আমি খুব ভাগ্যবতী নারী। তা না হলে কি এমন রোমান্টিক একটা বর আমি পেয়েছি? কয়জন মেয়ের ভাগ্যে এমন একটা বর জোটে? যে বর কিনা নিজ হাতে তার বউকে মনের মত সাজায়! ভাবতেই মনটা খুশিতে আটখানা!
– বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মনটা যে পরিমাণ খারাপ ছিল তার থেকে দ্বিগুণ পরিমাণ ভালো মন নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম। বাড়ি এসেই বর কে বললাম – ওগো আমার রোমান্টিক বর গৌ! তোমায় নিয়ে আমি এখন একটা স্ট্যাটাস লিখে ফেবুতে আপ দিবো। বর বলছে বেশ তো। তার আগে আমি খাটের উপর বসি আর তুমি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে স্ট্যাটাস লিখো।
– পুরো স্ট্যাটাসটা লিখলাম বরের কোলে মাথা রেখে আরামে শুয়ে শুয়ে। আর হ্যাঁ আপও দিচ্ছি বরের কোলে মাথা রেখেই। “সে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে”! আহ্! বরটা আমার কত্ত রোমান্টিক