-ওই চলো।
-কোথায়?
-ঘুরতে।
-আজ না।
-তাহলে কবে?
-কাল।
-এখন যে আমি এতো কষ্ট করে রেডি হলাম!
-মাত্র ডিউটি ছেড়ে আসলাম,একটু রেস্ট নিতে পারবোনা!
-তুমি যে বললা আজ ঘুরতে নিয়ে যাবা।
-কে জানতো আজকেও ডিউটি ফেলবে।
-প্লিজ তাও চলো,অল্প ঘুরে আসি।
-একটা কথা বললে কি তোমার মাথায় ঢুকেনা!বাইরে সারাদিন কাজ শেষে বাসায় আসি একটু বিশ্রাম নিতে,সেখানেও তোমার প্যারা।
-হুম সেটাই,এখন তো আমি তোমার কাছে প্যারা হয়ে গেছি।
-ধ্যাত,কানের কাছে আর ঘ্যান ঘ্যান না করে চুপ থাকো তো।
-না থাক,চুপ থেকে আর কি হবে।আমি তোমায় মুক্তি দিয়ে আজকেই বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি।
-যেখানে ইচ্ছা যাও।
(কথাটা শুনে বিথী ব্যাগ বেড় করে কাপড় গোছাতে শুরু করলো।
রাগে গজগজ করে আমিও কিছু বললাম না।
এমনিতেই সিক্রেট একটা মিশন নিয়ে চাপ বহন করতে হচ্ছে,তার ওপরে বিথীর আজাইরা প্যারা।
মেয়েটা হয়তো জানেনা কখন কোন কথাটা বলতে হয়।
ব্যাগ গোছানো শেষে…)
-ওই টাকা দেউ।
-কিসের টাকা?
-ভাঁড়ার।
-কতো টাকা?
-পাঁচ হাজার।
-এত্ত টাকা দিয়ে কি করবা?
-সবার জন্য মিষ্টি নিতে হবে।
-মিষ্টিতো নিবা,দোকান তো আর নিবা না।
-বেশী কথা বলবানা,টাকা দেউ।
-যাবা ঠিক আছে,কিন্তু রাতে আমার কথা মনে পরলে?
-আজব,তোমার কথা কেনো মনে পরবে।
-এইযে,আমার মতন আদর করে জড়িয়ে ধরবে কে!
-তুমি টাকা দিবা কি না!
-যদি বলি “না”।
-ওকে,আমি নিজেই নিয়ে নিতে জানি।
বলেই বিথী ড্রয়ার খুলে গুনে গুনে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে চলে গেলো।
চাপা অভিমান আর রাগে আমিও আটকালাম না।
তারপর সুপার একটা ঘুম দিয়ে মাঝ রাতে উঠলাম।
তখনি বিথীর কথা মনে পরলো,”মেয়েটা ভালোভাবে পৌছাতে পেরেছে তো!”
আর কিছু না ভেবে বিথীকে কল দিলাম….
-হ্যালো।
-এতো রাতে কল দিছেন কেনো?
-এত্ত তাড়াতাড়ি আপনি হয়ে গেলাম!
-সেটা আপনার দোষে।
-ভালো,পৌছাইছো কখন?
-রাত ৮টায়।
-ওহ্,বাসার সবাই কেমন আছে?
-ভালো।
-ওকে,রাখি এখন।
-ওই শোনো।
-হুম।
-খেয়েছো?
-নাহ্,তুমি?
-হুম।এখন খেয়ে নিলে মনেহয় কেউ একজন খুশি হতো।
-খাবার সব নষ্ট হয়ে গেছে।
-ওপস,ফ্রিজে দেখো দই আর রস মালাই রাখা আছে।
-আচ্ছা।
-আর হ্যা,সকালে হোটেল থেকে খেয়ে নিবা।
-আচ্ছা।
*
মেয়েটা জিবনে আসার পর এই প্রথম ওকে ছাড়া থাকছি।
অনুভূতি বেদনাদায়ক হলেও,ভুলটা হয়তো নিজেরি।
একাকীত্ব যখন বিথীর ভাবনায় ছটফট করছি,তখন মনে পরলো সিগারেটের কথা।
জোৎসনার আলোয় মাখানো রাস্তায় বেড় হয়ে দোকানের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম।
শুনশান চারিপাশ,গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে শুধু কালো ওই আকাশের সাদা চাঁদটা।
চাঁদের উকি যেন অন্ধকার এই রাতটাকে মুছে দিয়ে আলোর আবরণে মুড়ে দিয়েছে।
সামনে কিছুদূর হলুদ বৈদ্যুতিক আলোর দেখা পেলাম।
বুঝতে বাকি রইলোনা সেটা একটা দোকান।
তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে দোকানের সামনে হাজির হলাম।
বুড়ো এক চাচা তখন দোকানের ভেতরে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।
নিরবতা ভেঙে একবার ডাক দিতে চাচা চোখ মেললো।
তারপর তাঁর কাছ থেকে এক প্যাকেট ব্যন্সন নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
.
বিছানায় বসে যখন একের পর এক সিগারেট জ্বালিয়ে চলেছি তখন বিথীর কাছে করা ওয়াদার কথা মনে পরলো।
বাসরঘরে যখন বলেছিলাম আজ তুমি আমার কাছে যা চাবা তাই দিবো,তখন মেয়েটা আমারকাছে আমার “ব্যাড হ্যবিটের” কথা জিজ্ঞাসা করেছিলো।
আমি চোখ বুজে সিগারেটের কথা বলতেই বিথী তখন ওয়াদা করায় আর কখনো যেনো সিগারেট ছুঁয়েও না দেখে।
ওর কথা রেখে এতো বছর সিগারেট থেকে দূরে থেকেছি,তবে আজ আবারো ধরতে বাধ্য হলাম।
*
সূর্যের আলো বাহিরে পুরোটা মেলে ধরতেই শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটলাম।
চাকরীটা বাঁচাতে থানায় একটা কল দিয়ে দুইদিনের ছুটিও নিয়ে নিলাম।
পৌছাতে পৌছাতে প্রায় বিকেল,সূর্য তখন তার তাপ কমিয়ে দিয়ে অন্য কোথাও পারি জমাতে ব্যস্ত।
ক্লান্ত আর নির্ঘুম শরীরটা নিয়ে শ্বশুরবাড়ি প্রবেশ করতেই সবাই পুরাই অবাক।
ভালো নেই জেনেও শাশুড়ি-মা প্রশ্ন করলো,”কেমন আছো বাবা?”
মিথ্যা একটা উত্তর দিয়ে দিলাম,”ভালো আছি।”
তারপর শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ একসাথে সেরে নিলাম।
আজব বিষয় এর মাঝে বিথী একবারো সামনে এলোনা।
খাওয়াদাওয়া শেষে শ্বশুরমশাই জিজ্ঞাসা করে বসলো,”আরিফ,বিথীর সাথে কি ঝগড়া হয়েছে?”
এবার আর মিথ্যা না বলে সোজা উত্তর দিলাম,”জ্বি বাবা।”
তখন শ্বশুরমশাই মুচকি হেসে বললো,”ও দেখো এখন ছাদে আছে।”
.
শুনে মহা খুশিতে ছাদে চলে গেলাম।
বিথী তখন ছাদের কবুতরদের খাবার দিচ্ছে।
আমি টিপটিপ পায়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমি জেনেও,বিথী জিজ্ঞাসা করলো,”কে?”
আমি ঘারের কাছে মুখটা নিয়ে বললাম,”আরিফ।”
কোমর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে,”এখানে এসেছো কেনো?”
-তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো।
-খুব তো দেখেছো,আর দেখতে হবেনা।
-তোমায় যুগ যুগ দেখলেও,সে দেখা ফুরাবেনা।
-তোমায় না বলেছি,আমায় নিতে আসবানা।
-হুম,নিতে কে এসেছে!আমিতো থাকতে এসেছি।
-হাহ্,তোমার তো মহান ডিউটির কাজ।যাও গিয়ে ডিউটি করো।
-তুমি বললে,রিজাইন করে দিই!
-যতোই পাম মারেন সাহেব,আমি আর যাচ্ছিনা।
-এদিকে আসো।
-কি?[কাছে এসে]
-আরে কানে কানে।
-হুম,বলো।[কানটা মুখের কাছে এনে]
ম্যাডামের মুখটা ধরে তখন ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম।
এক মিনিট পর….
-মানে কি!
-কাল সারাদিন এইটা থেকে বঞ্চিত ছিলাম।তাই আজ আদায় করে নিলাম।
-আমায় কষ্ট দিয়ে কি মজা পাও![কান্না করে দিয়ে]
-সরি সোনা,এখন থেকে আর কষ্ট দিবোনা।[জড়িয়ে ধরে]
-না দিবা,আমি জানি।
-দিবোনা,প্রমিস।
-আচ্ছা,কিন্তু আমার কিছু শর্ত রাখতে হবে।
-সব শর্ত রাখবো।
-প্রতিদিন যেকোনো এক সময় আমায় সাথে নিয়ে রাস্তা দিয়ে ঘুরতে হবে।
-আচ্ছা।
-সপ্তাহে একদিন ছুটি নিয়ে আমায় কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।
-হুম,তারপর!
-আমায় আর কখনো রাগ করতে পারবানা।
-হাহাহা,আচ্ছা।
-আর আমায়…..
-অনেক অনেক ভালোবাসতে হবে,তাইতো।
-হুম।
.
অতঃপর অভিমানীর অভিমান ভাঙিয়ে সেদিন শ্বশুরবাড়ি থেকে গেলাম।
পরেরদিন বাড়ির ফিরে,দ্বিতীয় মহা বিপদের সম্মুখীন হলাম।
সিগারেটের ফিলটার গুলো ঘরজুড়ে ছুড়িয়ে আছে।
বিথী আমার দিকে রাগী একটা লুক দিয়ে,”তবেরে….।”
আমি উপায় না পেয়ে বিথীকে জড়িয়ে ধরে খাটে লাফিয়ে পরলাম।
তারপর অভিমানীকে আদর করে বুঝিয়ে কোনোভাবে সংসারটা বাঁচাতে সক্ষম হলাম।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক