রুমডেট

রুমডেট

আমার আর শ্রাবণীর বিয়েটা ঠিক হয় পারিবারিক ভাবে। কিন্তু শ্রাবণী আমার কাছে সময় চেয়েছে দুইমাস। দুইমাস পর ও আমায় বিয়ে করবে। আর এই দুইমাস ও আমার সাথে প্রেম করবে। যাতে সে বুড়ো হলে নাতী নাতনিদের বলতে পারে, আমাদের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ ছিলো। তাছাড়া আরো একটা কারণ আছে। ওর সবচেয়ে ভালো বান্ধবী মীমের একটা ছেলের সাথে রিলেশন ছিলো।

মীম তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো সব শ্রাবণীকে বলতো আর শ্রাবণী সেই কথা গুলো অবাক হয়ে শুনতো আর আফসোস করতো। কারণ এইসব কথা শুনে ওর না কি প্রেম করতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু ওর বাবার ভয়ে কখনো প্রেম করতে সাহস পায় নি। আমি যেহেতু শ্রাবণীকে প্রথম দেখেই পছন্দ করে ফেলেছিলাম তাই আমি ওর অদ্ভুত আবদারটা মেনে নিলাম। তাছাড়া আমিও লাইফে কখনো প্রেম করি নি। নিজের ক্যারিয়ারের দিকে এতটাই ফোকাস দিয়েছিলাম যে প্রেম করাই সময় পাই নি। মনে মনে ভাবলাম, এমনটা হলে আমারও প্রেমের অভিজ্ঞতা হবে সকাল সকাল শ্রাবণীর ফোন। আমি ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে শ্রাবণী বললো,

– কি হলো, রাতে ফোন রিসিভ করলে না যে? আমি কতবার ফোন দিয়েছি। আমি অস্পষ্ট স্বরে শ্রাবণীকে বললাম,
— আমি রাত থেকে খুব অসুস্থ। তাই ফোন রিসিভ করতে পারি নি.. আমার কথা শুনে শ্রাবণী ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলো,

-কি বলো! আমি এখনি তোমাদের বাসায় আসছি। দেখবে আমি সেবা করে তোমায় একদম সুস্থ করে দিবো। মীমকে সব সময় দেখতাম ওর বয়ফ্রেন্ড অসুস্থ হলে ও ফলমূল নিয়ে ওর বয়ফ্রেন্ডকে দেখতে যেতো। বয়ফ্রেন্ডের সেবা করতো। আচ্ছা তোমার পছন্দের ফল গুলো কি কি? আমি তখন শ্রাবণীকে বললাম,

— আরে কোন ফলমূল আনতে হবে না। যদি পারো একটা টয়লেট টিস্যু পেপার নিয়ে এসো.. শ্রাবণী অবাক হয়ে বললো,
– টিস্যু পেপার কেন? আমি তখন বললাম,

— আর বলো না, রাত থেকে আমার পাতলা পায়খানা। এতটাই খারাপ অবস্থা যে মাঝে মাঝে কাপড়ের মধ্যেও হয়ে যাচ্ছে। আর বারবার বাথরুমে যেতে যেতে টিস্যু শেষ হয়ে গেছে। তুমি যেহেতু সেবা করতে চাও তাহলে আপাতত আমার কাপড় গুলো ধুঁয়ে দিও কারণ আমাদের কাজের মেয়ে শেফালি বলে দিয়েছে এইসব কাপড় না কি সে জীবনেও ধুঁতে পারবে না আমার কথা শুনে শ্রাবণী চুপ হয়ে রইলো। তারপর কিসের একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম এরপর থেকে শ্রাবণীর ফোন বন্ধ কয়েকদিন পর দুপুরের দিকে হঠাৎ শ্রাবণী বললো ওর সাথে দেখা করতে। গরমে ঘামে ভিজে একাকার হয়ে ওর কাছে গিয়ে বললাম,

— এত জরুরি তলব, কিছু হয়েছে কি? এই কথা বলে আমি পকেটে থাকা আমার রুমালটা খুঁজতে লাগলাম। শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে ওর ওড়নাটা আমার হাতে দিলো। আমি ওর ওড়না দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে করতে বললাম,

— কি হলো, বলছো না কেন? নিমিষে হাসিমাখা মুখটা মলিন করে অগ্নিময় দৃষ্টিতে শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

– তুমি আমার ওড়না দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে কেন? আমি অবাক হয়ে বললাম,

— তুমিই না ওড়নাটা দিলে। আসলে গরমে আমার এলার্জি আছে। একটু গরম লাগলেই আমার নাক দিয়ে পানি পরে শ্রাবণী রাগে দাঁতের সাথে দাঁত চেপে বললো,

– আমি ওড়নাটা দিয়েছিলাম তোমার মুখের ঘাম মুছার জন্য। মীমকে দেখতাম ওর বয়ফ্রেন্ড ঘেমে গেলে ও ওর ওড়নাটা দিতো আর ওর বয়ফ্রেন্ড কি সুন্দর করে মুখের ঘাম মুছতো আর তুমি এটা কি করলে? ছিঃ ছিঃ ছিঃ আসলে তুমি না একটা এক নাম্বারের খবিশ রাত ১২ বেজে ৪০ মিনিট। বাহিরে হালকা বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা বাতাস বইছে। এমন সময় শ্রাবণী ফোন দিয়ে বললো,

– পিয়াস, দেখেছো আজকের আবহাওয়াটা কত সুন্দর। জানো, আমার রুমের জানালা খোলা ছিলো। খোলা জানালা দিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কণা আমার শরীরে পরার পর থেকেই আমি কেমন যেন মাতালের মত হয়ে গেছি। খুব ইচ্ছে করছে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। তুমি কি একটু আমার কাছে আসবে? শ্রাবণীর কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। তারপর ফোনটা কেটে দিলাম কলিংবেল বাজাতেই শ্রাবণীর বাবা (আমার হবু শ্বশুর) দরজা খুললো। পাশে দেখি শ্রাবণী আর শ্রাবণীর মা(হবু শ্বাশুড়ি) দাঁড়িয়ে আছে। এত রাতে কলিংবেলের শব্দ হয়েছে দেখেই হয়তো সবাই উঠে এসেছে। শ্রাবণীর বাবা আমায় দেখে অবাক হয়ে বললো,

– বাবা, তুমি এত রাতে? বাসার সবাই ঠিক আছে তো? আমি শ্রাবণীর বাবাকে সালাম করে বললাম,

— আংকেল, বাসার সবাই ভালো আছে। আসলে শ্রাবণী আমায় আসতে বলেছে। শ্রাবণীর না কি খুব ইচ্ছে করছে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। তাই আমি এত রাতে এসেছি। আমার কথা শুনে হবু শ্বশুর শ্বাশুড়ি দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছে আর শ্রাবণী জিভে কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে আমি আর শ্রাবণী ড্রয়িং রুমে বসে আছি। রাগে শ্রাবণীর পুরো মুখ গোলাপি রঙের হয়ে গেছে। রাগলে মেয়েদের সুন্দর লাগে এতদিন শুধু উপন্যাসে পড়েছি আজ নিজ চোখে দেখলাম। আমি ভয়ে ভয়ে শ্রাবণীকে বললাম,

— তুমি এইভাবে রেগে আছো কেন? তুমিই তো বললে তোমার কাছে আসতে শ্রাবণী নিজের গালে নিজে একটা থাপ্পড় মেরে বললো,

– এটাই তো আমি ভুল করেছি। তোর মত একটা বলদকে রোমান্টিক কথা বলতে গিয়েছিলাম। মীমকে দেখেছি মাঝ রাতে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কত রোমান্টিক দুষ্ট মিষ্টি কথা বলতে। ভেবেছিলাম আমিও বলবো কিন্তু কে জানে তুই যে আস্ত একটা রাম ছাগল হবু বউ হবু স্বামীকে তুই তুকারী করছে আর বলদ রামছাগল বলে গালি দিচ্ছে বিষয়টা সত্যিই লজ্জাজনক তাই কোন রকমে শ্রাবণীর সামনে থেকে পালিয়ে গেলাম…

কয়েকদিন ধরে শ্রাবণী আমায় খুব চাপ দিচ্ছে রুমডেট করার জন্য। ওর বান্ধবী মীম না কি কয়েকদিন পরপর ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুমডেট করতো। তাই সেও রুমডেট করবে। মীম না কি শ্রাবণীকে বলেছে রুমডেট না করলে প্রেমের বাঁধন মজবুত হয় না। তাই শ্রাবণী আমাকে বলেছে রুম ঠিক করতে। আমি অনেক কষ্টে একটা হোটেলে রুম ভাড়া নিলাম। কিন্তু আমরা রুমের ভিতরে ঢুকার ৫ মিনিট পরেই পুলিশ এসে আমাদের ধরে নিয়ে গেলো এই মুহুর্তে আমরা জেলখানায় বসে আছি।শ্রাবণী কান্না করতে করতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। সে শুধু বারবার ওসি সাহেবকে বলছে,

-আমাদের কেন ধরে এনেছেন?আমরা তো খারাপ কিছু করি নি। আমরা তো শুধু রুম ডেট করতে এসেছিলাম।
ওসি সাহেব কোন উত্তর দিচ্ছেন না। শুধু মাঝে মাঝে আমাদের চোখে বিরক্তর চোখে তাকাচ্ছে। আমার আর শ্রাবণীর বাবা মা এসেছে আমাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে। ওসি সাহেব আমাদের বাবা মাকে বললেন,

~আপনাদের মত শিক্ষিত আর ভালো পরিবারের সন্তানরা যদি এমন অনৈতিক কাজ করে সেটা তো মেনে নেওয়া যায় না। এমন কথা শুনে শ্রাবণী চিৎকার করে ওসি সাহেবকে বললো,

– মুখ সামলে কথা বলবেন। পুলিশ হয়েছেন দেখে যা তা বলবেন না কি? অনৈতিক কাজ মানে কি? আমরা তো শুধু রুম ডেট করতে এসেছিলাম এই ঘটনার পরেরদিনেই বাবা মা আমাদের বিয়ে দিয়ে দেন। বাসরঘরে ঢুকে দেখি শ্রাবণী জানালার গ্রীল ধরে বাহিরের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে। আমার পায়ের শব্দ শুনে শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

-আচ্ছা পিয়াস, রুমডেট কি এমন অনৈতিক কাজ যে পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে গেলো? মীম তো বলেছিলো, রুমডেট মানে হলো রুমের ভিতরে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড দুইজন দুইজনের চোখের দিকে তাকিয়ে সময় পার করা।
আমি শ্রাবণীর কথা শুনে মুচকি হেসে উত্তর দিলাম,

— কি জানি, তোমার বান্ধবী ভালো জানে। আমি তো আর তোমার বান্ধবীর মত প্রেম করি নি…

শ্রাবণী আবারও আনমনে ভাবতে লাগলো রুমডেট মানে কি। আর আমি অবাক হয়ে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে রইলাম কারণ জানালা দিয়ে চাঁদের আলো শ্রাবণীর মুখে পড়াতে শ্রাবণীকে খুব অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগছিলো…

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত