-মেয়ে দেখতে সুন্দর। ভাল লাগবে আপনার।
-হুম। তারপর ইলমা ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল…
-এইটা মেয়ের পিক।
আমি ওর ফোনে পিক টা দেখে আবার আগের মতোই “হুম” বললাম। এবার ও আমার হাত থেকে আমার ফোনটা কেড়ে নিয়ে একটা নাম্বার লিখে “জানু” নাম দিয়ে সেভ করে বলল…
-আপনার ফোনটা ধরেন। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে “জানু” নামের নাম্বারটা ওকে দেখিয়ে বললাম….
-এটা কার নাম্বার?
-মারিয়ার।
-কোন মারিয়া?
-আপনার জন্য যে মেয়েকে ঠিক করেছি সে মেয়েটার নাম মারিয়া।
-তাহলে “জানু” দিয়ে নাম সেভ করলে কেন?
-প্রেমিকাকে আদর করে জানু বলে ডাকতে হয় জানেন না?
-না তো।
-বেশি ঢং করবেন না।
-কখন করলাম?
-সব সময়ই।
-ওহ। আচ্ছা।
এবার মেয়েটার মুখে একটা বিরক্তির ছাপ। মনে হচ্ছে বড্ড বেশি ক্লান্ত হয়ে গেছে। আসলে ঘটনাটা শুরু হয় কাল। ইলমা আমার কাজিন। মানে খালাতো বোন। আমাদের বাসায় আসে প্রায়ই। আর বাসায় এসে আমাকে আড়চোখে দেখে। মাঝে মাঝে হালকা পাতলা কথা বলে। কিন্তু একটু দূরে গেলে লুকোচুরি খেলা শুরু করে দেয়। আমি অবশ্য ব্যাপারটা খেয়াল করেছি। কিন্তু এরকম করার কারন খুঁজে পেলাম না।
ইলমা ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ওকে ছোট বেলা থেকেই আমি অনেক আদর,স্নেহ করি। ছোট বেলায় ইলমা আমার কাছে থাকতে অনেক পছন্দ করতো। এখন তো ও বড় হয়ে গেছে। তাই আগের মতো আচরণ শোভা পায় না। কিন্তু ইলমাকে তুই করে বললে রাগ করে তাই আমি তুমি করেই বলতাম।
.
আমার পরিচয় টা দেই এবার।অনার্স কমপ্লিট করেছি। কিন্তু কোনো চাকরী করার ইচ্ছা এখন আপাতত নাই। তাই বাসায় বসে বসে বাবার টাকা দিয়ে এমবি কিনে কিনে রাজ্য তৈরী করছি। মানে ক্লাশ অফ ক্লান খেলি। খুব বেশি খেলি না। নেশা হতে দেইনি। আর ফেসবুকে মাঝে মাঝে টুকটাক লেখালেখি করি। ঐদিন ইলমা আমাদের বাসায় আসে। আমি বসে বসে ফেসবুকে গল্প পড়ছিলাম। এমন সময় ইলমা এসে আমার সামনেই সোফায় বসে।আমি বললাম…
-ইলমা কেমন আছো?
-জ্বী ভাইয়া ভালো। আপনি?
-ভাল ইলমা কি যেন বলতে চাচ্ছে ওর মুখটা দেখেই বুঝতে পারছি। তাই আমি জিজ্ঞাসা করলাম “ইলমা কিছু বলবে?”
-ভাইয়া আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে তাই না?
-না তো। কেন?
-না এমনি। একটু মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে। আমি তাই ডাকলাম।
-শুনো।
-জ্বী বলুন।
-একটা কাজ করে দিবে আমার?
-অবশ্যই বলুন। আমি দুষ্টুমি করে বললাম…
-কালকের মধ্যেই আমার জন্য একটা গার্লফ্রেন্ড ঠিক করে দিতে পারবে?
-আসলে ও কথাটা শেষ করার আগেই বললাম…
-ঠিক করে দিবা কথা দিছো।
ও মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দিয়ে চলে গেলো। আজ সকালে ঘুমাচ্ছিলাম। এমন সময় ইলমা ফোন দিয়ে পার্কে দেখা করতে বলেছে।
-ভাই বাদাম লাগবে?
বাদামওয়ালার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম। ইলমা এখনও মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে আছে। বাদাম কিনে বসে আছি। কিন্তু ও খাচ্ছেও না। কোনকিছু বলছে ও না। তাই আমিইই নীরবতা ভেঙ্গে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর বললাম…
-আমি যাই?
কথাটা বলায় এমন ভাবে তাকালো যেন আমি ওর থেকে কিছু একটা কেড়ে নিয়েছি। চোখ গুলো ছলছল করছে। ঠিক যেন এখনই কেঁদে ফেলবে। অপেক্ষা শুধু চোখের দুটি জোড়া পাপড়ির মিলন। তাহলেই চোখের কোণা দিয়ে মেয়েটার দুঃখ গুলো গড়িয়ে পরবে তার ফর্সা গাল বেয়ে।
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনার তো ভাল লাগছে না এখানে। চলে যান। কথাটা কেমন যেন অপরাধবোধ জাগালো মনের মধ্যে। তাই আবার বসে পরলাম।
-ইলমা??
আমার ডাকে সাড়া দিলো না। তাই আর বিরক্ত না করে পকেট থেকে টিস্যুর প্যাকেট টা বের করে এক পিস টিস্যু ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। কিন্তু ও নিলো না। মনে হয় কমদামী তাই। এবার ও উঠে চলে যাচ্ছে। কেঁদেছে মেয়েটা। আমি ডাকলাম। একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। আমি কাছে গিয়ে বললাম…
-চোখ মুছবার জন্য এই কমদামী টিস্যুটাই ভাল।
এবার ও আমার দিকে খুব কঠোর দৃষ্টিতে তাকালো। ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম হাত দুটো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। মনে হয় আমাকে একটা ঘুষি দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা কাজ করছে ওর মধ্যে। অতঃপর আমার হাত থেকে টিস্যুটা নিয়ে নাক পরিষ্কার করে আবার আমার হাতেই ধরিয়ে দিলো। ও এরকম একটা কাজ করবে ভাবতেই পারিনি। নিশ্চই কোনো মুভি দেখে এ বাজে কাজ টা শিখেছে। আমি সাথে সাথে টিস্যুটা ফেলে দিলাম। বাসায় আসার পর আমি মারিয়া নামের মেয়েটার নাম্বার ডিলেট করে দিয়েছি। কিন্তু ইলমার কান্না করার রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। তাহলে কি ইলমা আমাকে… না না। কি ভাবছি এসব আমি। রাতে শুয়ে আছি। হঠাত মনে হলো ইলমা আমার জন্য এত কষ্ট করে একটা প্রেমিকা ঠিক করলো। প্রেম না করলেও মেয়েটা তো কষ্ট করেছে। ওকে একবার ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন। দুই বার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো।
-হ্যালো ইলমা।
-হুম বলুন।
-তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
-কেন?
-আমার জন্য এত কষ্ট করে একটা প্রেমিকা ঠিক করে দিলা তাই।
-আর কিছু বলবেন?
-নাহ।
-ভাল। আর কোনদিন আমাকে ফোন দিবেন না। মারিয়ার সাথে জমিয়ে কথা বলবেন। বাই। টুট টুট টুট ফোন টা কেটে দিলো। ও হয়ত ভাবছে মারিয়ার সাথে আমার প্রেমকাহিনী শুরু হয়ে গেছে। আম্মু কি যেন জরুরী কথা বলবে তাই ঘুম থেকে সকাল সকাল টেনে তুলল…
-সাজিদ…
-হুম।
-তোর কাছে ইলমা কে কেমন লাগে। আমি একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম…
-ভালই তো। খুব মিশুক।
-আরে আমি ঐ টা জানতে চাইনি।
-কোনটা?
-মেয়ে হিসেবে কেমন?
-ভাল মেয়ে। লেখাপড়া ও তো ঠিকমতো করে। তুমি তো জানই।
-ধুর!! আমি বলছি যে ওর সাথে তোর বিয়ে হলে কেমন হবে? কথাটা শুনে একটু লজ্জিত হলাম। তাই মাথাটা নিচু করে বললাম…
-ওর তো লেখাপড়া শেষ হয়নি।
-তার মানে তোর ভাল লাগে। বিয়ে ফাইনাল। বাঁচালি তুই আমাকে।
আমি কিছু বললাম না। আম্মু চলে গেলো। ইলমা দেখতে শুনতে ভালই।হঠাত করে দেখেই প্রেমে পরার মতো। আম্মু বলছে ইলমা দের বাসায় যেতে। তাই এখন আসলাম। খালামণির সাথে বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে।
-বাবা সাজিদ তোর উপর আমার ভরসা আছে। আর তোর মা আমাকে অনেক আগেই এটা বলেছিলো। আমি আপার কাছেই আমার মেয়েকে পাঠাবো।
-খালামণি আপনারা যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে।ইলমা কোথায়?
-ওর রুমেই। বস। আমি ডেকে দিচ্ছি।
খালামণি চলে যাওয়ার পর আমি একবার দেয়ালে ইলমার ছবিটার দিকে তাকালাম। দুদিন যাবত ইলমার জন্য আমার কেমন যেন একটা অনুভুতি আসে। ওর হাসিতে, কথা গুলো তে সব কিছুতে প্রেমে পরতে ইচ্ছা করে।
-এ কি আপনি এখানে??
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম ইলমা। কিন্তু ও এত অবাক হচ্ছে কেন? আর তাছাড়া আমি তো প্রথমবারের মতো ওদের বাসায় আসিনি। তাই বললাম…
-হুম আমি। কোন সমস্যা?
-হুমম। অনেক সমস্যা। আপনি কেন এখানে আসবেন?
-এমনি বেড়াতে আসলাম।
-এখনি বাসা থেকে বের হয়ে যান বলছি।
কথাটা খুব ধমকের স্বরে বলল ইলমা। বলেই চোখ মুছতে মুছতে ওর রুমে চলে গেলো। আমি বুঝতে পারছিনা ও কেন এরকম ব্যবহার করলো। খালামণিও ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। ওনি আমাকে বলল যে বাবা তুই বস। আমি দেখছি ও কেন এমন করলো।
-কিরে তুই এরকম ব্যবহার করলি কেন সাজিদের সাথে?(খালামণি)
-যা করেছি বেশ করেছি।(ইলমা)
-ও তোর বড় ভাই। যা মাফ চেয়ে আস।
ইলমা কোন উত্তর দিলো না খালামণির কথায়। খাটের উপর বসে কোলে ওর টেডিবিয়ার টাকে জড়িয়ে ধরে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে আছে। আমি দরজার পাশে লুকিয়ে ওদের দেখছি। তারপর খালামণি বিরক্ত হয়ে আবার বলল…
-যা মাফ চাইতে।
-না যাবো না। ওনি কেন এসেছে এখানে?
-ওর সাথে তোর বিয়ে ঠিক। কথাটা শুনে মণি হা করে তাকিয়ে আছে ওর আম্মুর দিকে।
-তোর এতে আপত্তি আছে? (খালামণি)
-না না আম্মু। আমার কোন আপত্তি নেই। আমি তো এটাই চাই। এবার খালামণি অবাক হয়ে গেলো ওর কান্ড দেখে। আমিও লজ্জাবোধ করলাম। কারন ও মেয়ে হয়ে লজ্জা পেলো না অথচ আমি লজ্জায় কথা বলতে পারছিলাম না। মেয়ের লজ্জাশরমের অভাব দেখে খালামণি বলল…
– তোর কি লজ্জাশরম নেই? এভাবে বলে কেউ?
-ধ্যাত। তুমি বাদ দাও। এখন কি করবো বলো। ওনাকে কিভাবে অপমান করলাম। এখন যদি বিয়ে করতে না চায়?? আমার কি হবে???
-এবার আমি কিছু জানি না। তুই দেখ কি করতে পারিস।
খালামণি দরজার দিকে আসছে দেখে আমি দৌড়ে আমার জায়গাতে গিয়ে বসে পরলাম। একটু পর ইলমা আসলো। একটা লাল রঙের শাড়ি পরে। খুব তাড়াতাড়ি করে সেজেছে বুঝা যাচ্ছে।
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
আমি ওর দিক থেকে চোখ নামিয়ে মুখে একটু অভিমানের ভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ফেললাম। কিন্তু কোন কথা বললাম না। তারপর ও একটু রেগে বলল…
-ভাব ধরবেন না একদম।
-আমি আবার ভাব ধরলাম কই?
-সব সময়ই। চলেন।
-কোথায়?
-ঘুরবো।
-ওহ।
-দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন।
-খালামণিকে বলে যাই।
-লাগবে না। আসুন তো। ও আমার হাত টা ধরে টেনে বের করে নিয়ে গেলো।
-বাবা কান্না করে না। তোমার আম্মু এখনি এসে পরবে। ইলমা তাড়াতাড়ি আসো। আমার মেয়েটা কাঁদছে।
-আসতেছি তো। একটু দাঁড়াও।
-আচ্ছা আসো।
তিন বছর হয়েছে আমাদের বিয়ে হয়েছে। একটা মিষ্টি মেয়েও আছে। নাম দিশা। দোয়া করবেন সবাই।