অনেক সময় লাগলো ঘুম আসতে। কিছুতেই ঘুম আসেনা, তাকে যে ফোন করবো তারও উপায় নেই।
পাশে মা!
ঠিক আছে, চ্যাটিং তো করতেই পারি কিন্তু বেটা অনলাইনে নেই! মোবাইলে টাকা ঢুকানো হয়না খুব একটা, এম বি নিই সবসময়। টাকা অবশ্য কিছু থাকবে, তবে খুব অল্প।
থাক, জানে যে আমি দূরে আছি, অস্থির হবো।
তা তো ভালোই জানার কথা। আমি যে একটু (একটু!) জামাই পাগলি, তা কি তার অজানা?
ডাটা অন রাখলে কি হয়?
কিপটে কোথাকার!
এপাশ ওপাশ করতে করতে অনেক রাতে ঘুম এলো, ঘুমের ঘোরে হাত পা দিয়ে যেই তাকে প্যাঁচিয়ে ধরলাম..
কিন্তু সে এতো বড়সড় কেনো? কোথায় আমি!
কাকে জড়িয়ে ধরলাম!
ধড়ফড় করে উঠেই বেডসুইচ চেপে লাইট জ্বালিয়ে দিলাম।
মা পাশ ফিরে বিরক্ত গলায় বলেন,
কিরে কি হলো, লাইট দিলি কেনো?চোখে আলো লাগে।
আমি মাকে দেখে স্বস্তি’র নি:শ্বাস ফেলি, আবারও তাকে মিস করতে লাগলাম।
মাকে কি আর বলবো, জানালাম,
বাথরুম যাবো।
ডিম লাইট জ্বালিয়ে রাখিসনি কেনো?
ভুলে গেছি।
অগত্যা বাথরুম গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলাম। ঘুম কি আর ছাই আসবে।
বিয়ে হয়েছে মাত্র পাঁচ মাস। এই কয়মাসে তাকে আমার এতো অভ্যাস হয়ে গেছে, কি বলবো!
ওখানে সে আমার জন্য প্রাইভেট শিক্ষক রেখেছে। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষকের অজুহাতে বাপের বাড়িও আসা হয়নি খুব একটা।
আসলে আমিই যেতে চাইতাম না।
ওকে ছাড়া আমার সারাদিন কাটলেও, রাতে ঘুম আসেনা।
মাত্র আজসহ তিনবার এলাম।
প্রথম দুইবারে তিনরাত থেকেছি। সারারাত জেগে দরজা বন্ধ করে, ওর সাথে কথা বলেছি। নতুন বিয়ে, বর ছাড়া কিছুই ভালো লাগতো না তখন, এখনো নয় অবশ্য।
তখন বাবা দেশে ছিলেন, তাই মা আমার পাশে থাকার আবদার করেননি।
আজ আবদার করলেন মেয়ের সাথে থাকার। তাই বর বেটা’র জন্য অস্থির হয়ে আছি।
রাত সাড়ে চারটা, নিশ্চয় ঘুমে বিভোর সে।
সারাদিন পরিশ্রম করে, মরার মতো ঘুমায়। আমার হাত পা তুলে দিই তার গায়ে, সে খবরও জানেনা মনে হয়।
দিবো নাকি একটি মেসেজ?
আমি তার যন্ত্রণায় একফোঁটা ঘুমাতে পারছিনা আর সে মজা করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, ভালো লাগে?
আজ তো কাজও ছিলোনা, বন্ধের দিন। কি হতো আমাদের বাসায় থেকে গেলে?
পুরুষ মানুষের এতো লজ্জা কিসের?
শ্বশুরবাড়ি নাকি জামাই থাকেনা! এটা কোনো কথা?
পরীক্ষা তো আমার পরশু থেকে শুরু। কি ক্ষতি ছিলো একটা রাত থাকলে?
বিকেলে চা নাস্তা করেই, আমাকে রেখে চলে গেলো।
এতো করে বললেন মা, খেয়ে যেও।
না, তার মাথার উপর হাজার কাজ। খাবেনা, যেতেই হবে।
কি কাজ আজ ছুটির দিনে?
বড্ড রাগ হচ্ছে তার উপর, অভিমানও। একটা মেসেজ দাও, কিংবা একটা ফোন… কিছুই না! আমার রাত কাটে কিভাবে?
দিয়ে দিলাম একটা মেসেজ,
তুমি বড়ই হৃদয়হীন!
সাথেসাথে জবাব,
তাই কি?
হ্যাঁ, খুউব। এতোক্ষণ না ঘুমিয়ে কি করো?
ঘুমের চেষ্টা, ঘুমালে মেসেজের জবাব দিতো কে? ডাটা অন করো দেখি।
হুম, তবে, দেখতে পাবেনা, কথা বলতেও না। এইভাবে মেসেজ দিতে হবে। মা পাশে।
ওকে।
এতো রাত অবধি পড়ছিলে তুমি!
না, একটু ঘুমিয়েছি, তুমি ভেবে মাকে জড়িয়ে ধরে, ভয় পেয়ে জেগে গেছি।
হাহাহা
হাসো কেনো? মজা লাগছে? এদিকে তুমি ছাড়া আমার ঘুম আসছেনা।
হাসছি, কারণ, তোমার হাত পায়ের অভাবে আমিও ঘুমাতে পারছিনা।
মানে!
মানে, কাঁকড়াটা যেভাবে আঁকড়ে ধরতো আমাকে, অভ্যাস হয়ে গেছে। আজ কাঁকড়া আকঁড়ে ধরেনি, ঘুমও আসছেনা।
আমি কাঁকড়া!
না, তুমি আমার লক্ষি বউ।
হুম।
তা ঘুম আসছেনা, ফোন, মেসেজ কিছুই দিলেনা কেনো?
তুমি রাত জেগে পড়বে, আমি কেনো ডিস্টার্ব করবো? তাইতো মোবাইল ডাটা অফ রেখেছি।
হুম, যা পড়ার তাতো পড়েছি। তারপর কি ঘুম আর আসে?
কেনো আসেনা?
মানুষটা যে নেই, কাঁকড়া কাকে আঁকড়ে ধরে ঘুমুবে?
কেনো, মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমো আজ।
গিয়েছিলাম তো। কে না কে ভেবে ভয়ে ঘুম ভেঙে গেছে। মা আর তুমি কি এক?
হুম। আমারও তো একই দশা। কেনো যে বিয়ে করলাম!
কেনো, আফসোস হচ্ছে?
না, বউকে বাপের বাড়ি যেতে হয়, আর আমার আর একা ঘুম আসেনা।
সেটাই। তুমিই তো পাঠিয়ে দিলে জোর করে, কে আসতে চেয়েছিলো?
হুম, এখানে থাকলে তো একটু হলেও ঘরের কাজ করতে হতো। পড়ালেখায় ডিস্টার্ব হতো। বলো, হতো না?
হ্যাঁ, তাতো একটু হবেই।
সেজন্যই তো। তা, পাঁচটা বাজে কিন্তু, একটু পর সকাল হবে।
হুম, আর নয়টা বাজে তোমাকে কাজে যেতে হবে।
হুম।
রেখে দিতে বলছো?
না, তোমাকে রেস্ট নিতে বলছি। এবার লক্ষি মেয়ের মতো শুয়ে পড়ো। সকালে একটু দেরি করে উঠে, খেয়ে আবার পড়তে বসো, ওকে?আমিও চেষ্টা করি ঘুমুতে পারি কিনা।
ঠিক আছে?
হুম, মিস ইউ।
মিস ইউ টু।
লাভ ইউ।
হুম জান, লাভ ইউ টু।
রেখে দিতে বলছো? আরেকটু কথা বলি, প্লিজ?
ওকে, আরেকটু বলো।
সকাল হয়, মোরগ ডেকে তা জানিয়ে দেয়। মা ঘুম থেকে জেগে নামাজে আদায় করতে যান।
তাদের চ্যাটিং কিছুতেই শেষ হয়না। কতোবার বিদায় নেয়, আবার প্রথম থেকে শুরু হয় ভালোবাসা বাসি।
০২.১১.১৭