-আচ্ছা এই দু”টো শাড়ি আমাকে প্যাক করে দিন।
-জ্বী আচ্ছা স্যার।
-আচ্ছা আরেকটা কাজ করুন নীল যে শাড়িটা দেখেছিলাম প্রথমে ওটাও দিন প্যাক করে। বিল হবে তিনটা শাড়ির।
-এই যে আমাকে নীল শাড়িটা দিন। এই শাড়িটা আমি নিবো।
কথাটা শুনে ঘুরে তাকালাম। ঘুরেই ধাক্কার মতো খেলাম। ঢাকার বিলাসবহুল কোন শপিং সেন্টারে কোন মেয়ে খোলা চুলে, কানে বেলি ফুল গুঁজে, টিয়া পাতা রঙ্গের শাড়ি পরে আসবে। বিষয়টা একটু অবাক হওয়ার মতো।
-সরি ম্যাম শাড়িটা সেল হয়ে গেছে।
সেলসম্যানের তড়িৎ জবাব।
আমি হাতের ইশারায় ওকে চুপ করতে বললাম।
-এক্সকিউজ মি আপু, আজ তো আপনার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন। অনেক শুভকামনা থাকলো।
এবার মেয়েটার অবাক হওয়ার পালা। মেয়েদের অবাক হওয়া বিষয়টা দারুণ। প্রথমে ভ্রু একটু উপরে উঠে কুঁচকে যায়। এরপর চোখে বিস্ময় খেলা করে। তা ঝরে পড়ে কথার শ্রাবণ হয়ে।
-আ..আপনি কি করে জানলেন?
মেয়েটির কন্ঠে নিখাদ বিস্ময়।
-আমি অনেক কিছু টের পাই। কিভাবে টের পাই বা বুঝতে পারি ঐ প্রসঙ্গ থাকুক। এনিওয়ে, আপনার চয়েজ করা নীল শাড়িটা আমি আপনাকে উপহার হিসেবে দিচ্ছি।
-অপরিচিত কারো থেকে উপহার কেন নিবো?
-আমরা সবাই একে অপরের অপরিচিত ছিলাম। একটা কারণ শাব্দিক পরিচিতি এনেছে। শাব্দিক বলছি কারণ পুরোটা পরিচয় কখনোই সম্ভব না। ধরুন, আমার আর আপনার মাঝখানে এই পরিচয়ের কারণ এই শাড়ি। আপনার উপহারটা কাউন্টারে থাকবে। চাইলে নিতে পারেন। আসি ভালো থাকবেন।
আমি কথা না বাড়িয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালাম।
পেছন থেকে মেয়েটা ডাক দিলো
-শুনুন না! এই যে!
আমি মুচকি হেসে বললাম;
-“বলুন”
-আমাকে উপহার দিয়ে কৃতজ্ঞ করে রাখলেন। অথচ নাম ধাম কিছুই বললেন না। পরে আপনাকে পাবো কোথায়?
-আমাকে পাওয়াটা খুব কি জরুরী? আচ্ছা একটা কথা বলি। আপনার সাথে আমার আবার দেখা হবে। এখন আপনি বলবেন কি করে শিওর হলাম তাই তো?
-জ্বী!
-বললাম না আমার অনেক কিছু মনে হয়। আর আমি আয়োজন করে দেখা করার চাইতে হঠাৎই দেখা পছন্দ করি। একই আকাশের নিচে হঠাৎ করে দেখা হওয়ার আবেগটা শুদ্ধ থাকে।
মেয়েটাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বেরিয়ে গেলাম। অব্যক্ত অনুরণ থাকুক কিছু কথার।
এ ঘটনার ছয়মাস পার হয়ে গেলো। মেয়েটার সাথে আমার আর দেখা হয়নি। আমার তাতে ভাবান্তর নেই। আমার বিশ্বাস খুব শক্ত। দেখা হবেই। ভাগ্য আজকে আমাকে সেই সুযোগটা দিলো। মিরপুর ষ্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাচ্ছি। পেছন থেকে ডাক শুনলাম।
-এই যে হ্যালো দাঁড়ান…এই যে।
ঘুরে তাকিয়ে দেখি সেই শাড়িওয়ালী। কাকতালীয় ভাবে আমার তাকে দেওয়া সেই নীল শাড়িটা আজ সে পরে আছে।
-এই যে মিষ্টার আমায় চিনেছেন?
-আমি সাধারণত নীল শাড়ি কাউকে উপহার হিসেবে দেই না। তবে কাউকে দেওয়ার অর্থ সে আমার কাছে স্পেশাল।
-ঐ দিন কার জন্য কিনছিলেন তবে?
আমি হাসতে হাসতে বললাম;
-স্পেশাল আরেকজনের জন্য। পরে, ভাবলাম তার থেকে আপনিই স্পেশাল।
-সে কোথায়?
-আছে কোথাও। আপনার মতো তার সাথেও হতে পারে একদিন দেখা হবে।
-তখন কি আপনি তাকে শাড়ি দিবেন? নীল শাড়ি?
-বলতে পারছি না।
-আমি চাই তার সাথে আপনার আর না দেখা হোক। আমি খুব কেড়ে নিতে পারি। তার থেকেও আপনাকে কেড়ে নিবো। ছোটবেলায় আমি খুব দস্যি ছিলাম তো।
আমি হেসে দিলাম।
-আপনি কি সবসময়ে শাড়ি পরে থাকেন?
-হুমম!!সব সময়। শাড়ি আমার খুব পছন্দ।
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম এক দৃষ্টিতে। জীবনের জোয়ারে ভেসে একটা ফুল যেনো। এই মেয়েটা থেকে দূরে যাওয়া যাবে না। এই মেয়েটার হাত যতনে ধরে রাখা দরকার। যত যাই হোক, এই মেয়ের কত শত পাগলামিকে আমায় প্রশ্রয় দিতে হবে। এই মেয়েকে ব্যথা দেওয়া যাবে না। এই মেয়ের সব বাড়াবাড়িকে আপন করে আগলে রাখতে হবে।
-চলুন রাস্তার ওপারে যাই।
মেয়েটা কথা না বাড়িয়ে ওর আঁচলটা আমার হাতে বেঁধে দিলো। ওপারে অনেকগুলি শাড়ির দোকান আছে। এই মেয়ের শাড়ি পরা অভ্যাস। আমার অভ্যাস ওর শাড়ির মায়াতে থেকে যাওয়া। না হয় হলো বেহিসেবী অভ্যাস। এই মেয়ে তোকে ছাড়া প্রেম ভালো লাগে না।