স্কুল লাইফ এর ভালোবাসা

স্কুল লাইফ এর ভালোবাসা

কিরে দোস্ত তোর শ্বশুর আব্বায় নাকি আজকেও তোরে ক্লাস থেকে বের করে দিছে…. কাহিনী কি…..!!!?

আরে ধুর আর বলিস না… লাস্ট ক্লাস টেস্টে রানা’র নাম রানা কেটে কানা করে দিছিলাম। বেটা কত্ত বড় মফিজ আজকে ক্লাসে এসে কানা’রে খুঁজে। পোলাপাইন তো সব হাসতে হাসতে শহীদ প্রায়। একটা বেক্কেল ও তো বুঝবে কানা নামে কোন মানুষ হয় না।

হাহাহাহা… বাঁদরামি ছাড়স নাই আজও না…! আচ্ছা থাক তুই। লাঞ্চ এর টাইম হয়ে গেছে, যাইগা। এসে জমিয়ে একটা আড্ডা দিব গিটার রেডি রাখ। আর তোর সেই বিখ্যাত দুলাভাই সঙ শুনবো।

বিদায় সূচক ভঙ্গিতে সুনিল কে হাত নেড়ে হাদু মামা’র দোকানেই বসে রইলাম। ভার্সিটিটা একেক জন এর কাছে একেক রকম, আমার কাছে শ্বশুর বাড়ি মতন। শালক শালিকার কমতি নেই এক ফোটা।

অমিত স্যার এর এক মাত্র মেয়ে হেনা সর্বজনীন মতে আমার আনফিসিয়াল বউ। এই ঘটনা রটনা করেছেন সুন্দরী নিজেই। ভার্সিটির প্রথম দিন কনসার্টে আধনিক বাংলা গান করে ছিলাম [যেটা এখন দুলাভাই সঙ নামে পরিচিত]

তারপর থেকে শুরু করে আজ অবধি জ্বালিয়ে পুরিয়ে খাচ্ছে। ফল স্বরূপ বড় ভাইরা এখন জামাই বাবু ডাকে, ছোট ভাইরা দুলাভাই, আর হারাজাদা ফ্রেন্ড গুলা সবার সামনে সরাসরি হেনা আপু।

সম্পূর্ণ রূপে বিরোধী দল এর মত মানিজ্জত নিয়ে টানাটানি। আর স্বয়ং কন্যার মফিজ মার্কা বাপ জিজ্ঞেস করে ‘তোমাকে সবাই দুলাভাই কেন ডাকে’। হাব্লুর মত মাথার পেচেনে হাত রেখে কিছু না জানার ভান করা ছাড়া কিছুই করার নেই। তবে তার মেয়ের এই কীর্তি কলাপ সম্পর্কে তাকে অবগত করতে পারলে শান্তি পেতাম।

প্রকৃতি মানুষ কে পরিপূর্ণ শত ভাগ দিয়ে সৃষ্টি করে না। এক দিকে ভালো লাগার মেটারিয়াল বেশি দিলে অন্য দিকে করে কঠিন জালিয়াতি। অসম্ভব রকম সুন্দরী মেয়েদের দিকে তাকালে ব্যাপারটা বেশ ভাল প্রত্যক্ষ করা যায়। যদি বাইরে থেকে ব্যাপারটা আন্দাজ করা বেশ মুশকিল। আমার ধারনা এদের সুন্দর দিক থেকে অসুন্দর দিকের সংখ্যাই বেশি হয়। সেটা ছোট খাটোও হতে পারে আবার বড় রকমেরও হতে পারে। তবে ছোট খাটো হলে সেটা সংখ্যায় বেশি হবে। তার মধ্যে অন্যতম একটা হল নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে ভাবার মানসিকতা। যার কারণে ছেলেদের উপেক্ষা এরা সহ্য করতে পারে না। যেমন হেনা পারে নি। উপেক্ষা এখন জেদে পরিনত হয়েছে। আর এর কারনেই হয়তো আজও পিচু লেগে আছে। সস্তা প্রেম আবেগ শূন্য হয় -একথা হইত এ মেয়ের জানা নেই।

আমার সবচে ভালো ফ্রেন্ড গুলার মধ্যে আম্মু একজন। সব কিছুই শেয়ার করি তার সাথে। হঠাৎ একদিন আম্মুর সাথে ঝগড়া করে স্বাভাবিক ভাবেই চড়া মেজাজে ভার্সিটি এসে হাজির হলাম । দূর থেকে চোখে পড়লো সেই পুরনো ঝামেলা। হেনা হাতে কিছু ফুল নিয়ে দারিয়ে আছে। কোন কারণে হয়তো ভয়ঙ্কর রকম সুন্দর লাগছিল ওকে। ঠোটের কোনায় পরিচিত ভঙ্গিতে হাসিটা দেখে বুঝতে কষ্ট হল না অপেক্ষাটা আমার জন্য। কোন রকম পাত্তা না দিয়ে পাশ কেটে চলে যেতে যেতে পেছন থেকে ডাক দিল ও। হাসি হাসি মুখে বলল-

ভাইয়া একটা কথা শুনেন না……!!
মোটামুটি বিরক্তির ভঙ্গিতে উত্তর দিলাম-

হুম কি বলবা তারাতারি বল। সময় নেই।
ও কিছুটা মুছকি হেসে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। হাসিটা অনেকটা অনিচ্ছাকৃত ছিল সম্ভত আমার বিরক্তি ভাবটাকে না বোঝার ভান করে আড়ালের বের্থ চেষ্টা হবে হয়ত। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত কেয়ার বিরক্তির কারণ হয়। এটা হয়তো তেমন ই ছিল।

-ভাইয়া এই ফুল গুলা আপনার জন্য।

অহেতু রাগটাকে আর থামাতে পারলাম না। বেশ বেরক্তির ভঙ্গিতে সবটা ঝারলাম ওর উপর।

-এই মেয়ে তোমার আর খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই। তোমার জন্য মুখ দেখাতে পারি না সবার সামনে। আমাকে হাসির পাত্র বানিয়েও মন ভরে নাই তোমার!!!? এখন আবার ফুল নিয়ে হাজির হইচ। আর কোন দিন যদি আমার পিছু নিচ তো সোজা তোমার আব্বুর কাছে নিয়ে হাজির করবো। যাও এখন এখান থেকে…!!!!!

ফুল গুলা ওর হাতে দিয়ে হুর হুর করে সিঁড়িতে উঠে গেলাম। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী দুর্বল এর উপর রাগ ঝারার কাজটা শেষ, এখন সস্থি অনুভব করার কথা। কিন্তু উল্টো হল। দশ মিনিট এর বেশি ক্লাসে কাটাতে পারলাম না। অপরাধ বোধটা তীব্রতর হচ্ছে সময়ের বেবধানে। বার বার ওর টলমল করা মায়া মায়া চোখ দুটো মনে পরতেচে। রূপসী মেয়েদের কে কান্না করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে অসম্ভব রকম সুন্দর দেখায়। পুরুষ হয়ে জন্মানুর দরুন সেই সুন্দর্য হয়তো আমাকে গ্রাস করছে।

আজ ভ্যালেন্টাইন ডে’র দিন ওর সাথে এমন না করলেও পারতাম। সাথে সাথে ফোনে ট্রাই করে দেখি নাম্বারটা সুইচ অফ। অনেক খোজা খুজি করে ওর বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারলাম ‘কাও কে কিছু না বলে কি কারণে যেন কাদতে কাদতে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেছে’। ওর বান্ধবীর বক্তব্য ছিল এটা।

তিন চার দিন কেটে গেল ওর কোন খোজ পেলাম না। অস্বস্তিতে কাটল দিন গুলা। এমন হয়নি আগে কখনো, প্রতি রাতে ও আমাকে ‘লাভ ইউ’ লিখে একটা ম্যাসেজ করতো। এই প্রথম ও আমাকে ম্যাসেজ করলো না আজ চার দিন। ফোনের প্রতি আমার অস্বাভাবিক আচরণ আম্মুর চোখ এরাল না। রিং বাজার সাথে সাথে আমি কেমন যেন তাড়াহুড়ো করে উঠি। আর প্রতিবার হতাশ মুখ করি। কারো সাথেই শেয়ার করতে পারি না এই ব্যাপারটা আম্মুর সাথেও না। মানুষ এর অতিরিক্ত অপরাদবধ মানুষ কে জ্ঞান শুন্য করে দেয়।

প্রায় পনেরো দিন পরে হঠাৎ করেই দেখা মিলল ওর। কোন দিন ভাবিনী ওকে দেখে মাত্র এতটা আনন্দিত হব আমি। বিনা কারনে বোকার মত মুচকি হাসতে হাসতে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। ভেবে ছিলাম আজোও ওই কথা বলবে প্রথম। ব্যাপারটা তেমন হল না। এই প্রথম ও আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে সোজা হেটে গেল সামনে দিয়ে। যেন দেখেও দেখেনি। সাথে ওর অনেক গুলা বান্ধবী থাকায় কথা বলার সাহস হয়ে উঠেনি। অসহায়ত্ব মানুষকে ভিরু করে দেয়। নিজেকে নিজেই চিনতে কষ্ট হচ্ছে। ওকে বেশ হাসি খুশি দেখলাম। আর আশ্চর্য হলেও সত্যি, এটাই আমাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।

কষ্ট আর অসহায়ত্ব অনেকটা চক্রবৃদ্ধি আকারে বাড়তে থাকে। ওর সামনে গিয়ে সরি বলার মনসিকতা টাও হারিয়ে ফেলছি। বুঝতে কষ্ট হল না অজান্তেই ভালবাসা নামের সর্বনাশী অনলে দেহ পুরিয়ে বসে আছি। অতি মূল্যবান জিনিষ এর কদর মানুষ সেটা হারানোর পর বোঝে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হল। হেনা’র শেষ আখির জল, ওর পাগল এর মত অবুঝ ভালবাসা, ছেলেমানসী, সব কিছু আমাকে অচল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এবং তাই হল। আমারি বেস্ট ফ্রেন্ড রানা’র সাথে এখন মাখামাখি সম্পর্ক ওর। রানা ওকে অনেক আগে থেকেই ভীষণ পসন্দ করতো। চোখের সামনে এসব সহ্য করাটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো।

নারী বিরোধী বক্তব্য এখন আমার সুদূর অতীত।
অসহায় এর মত হুট করেই একদিন বলে বসলাম ওকে ভালবাসার কথা। সুযোগটা ও হাত ছাড়া করলো না। কোন উত্তর না দিয়েই হাত ধরে ক্যাফেটেরিয়ার ভেতর সবার সামনে নিয়ে দাড় করাল আমাকে। বলল আবার বলার জন্য। কিছুটা বিব্রত হয়ে পরলাম।

-কি ব্যাপার বলছেন না কেন?

বুঝতে পারছিলাম আর কোন রাস্তা খোলা নেই। প্রাপ্য হেয় টুকু মুখ বুঝে সহ্য করতে হবে। নিচু সূরে ওর কথা উত্তর দিলাম।

-আই লাভ ইউ হেনা।

প্রত্যাশিত ভাবেই ও যত দূর সম্ভব আমাকে অপমান করল। কথা শেষে ছলছল আখি করে এক নিঃশ্বাসে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। চোখ তুলে তাকানুর সাহস হচ্চিল না আমার। ভীষণ অস্পষ্ট ছিল চোখের ভাষা গুলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই ও হুট হুট করে হেট চলে গেল। জীবনে কোন দিন নিজেকে এতটা অসহায় মনে হয়নি। বুক ফেটে কান্না করতে পারলে হয়ত চেপে যাওয়া নিঃশ্বাস টুকু ফেলতে পারতাম। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। অপরাধীর মত কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে এলাম।

মানুষ যখন নিঃস্ব তখন প্রকৃতি তার সবচে কাছের বন্ধু। সন্ধ্যা হতে চলল। একা একাই নদী আর ঢেউ এর খেলা দেখছি আর নীরবতার সাথে কথা বলছি এমন কেন হয়। হেনা যখন আমাকে চায়, আমি চাই না। আর আমি যখন চাই তখন ও চায় না। ভালবাসা নিয়মটাই হয়ত এমন, অনেকটা আলোছায়ার লুকোচুরি খেলার মত। একটা ছাড়া অন্যটা অর্থহীন। অথচ একটার উপস্থিতে অন্যটা বিপরীত মুখি। স্বাভাবিক ভাবেই কষ্ট হচ্ছে ভীষণ, দম বন্ধ হওয়ার কষ্ট। হেনা এখন রানা’কে ভালবাসে। আমি হয়তো ওর ভালবাসার যোগ্য ছিলাম না। ভালবাসায় অযোগ্য মানুষ এর স্থান নেই।

হঠাৎ ফোন এর শব্দে স্থব্দতা ভাঙল। তাকিয়ে দেখি রানা। রিচিভ না করে পাশে রেখে দিলাম। কিছুটা বিরতিতে আবার ফোন। চোখ ঘুরিয়ে দেখি এবার আর রানা না, হেনা। অজ্ঞাত কোন কারণে অবাক না হলাম না। একবার অপমান করে হয়ত মন ভরে নি। দ্বিতীয় বার কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে রাখলাম। ক্ষণিকেই পেছন থেকে পরিচিত একটা কণ্ঠ।

এখানে কি করেন আপনি? আপনাকে খুজতে খুজতে পুরো নদী একবার হাটা হয়ে গেল আমার। কি ব্যাপার কথা বলছেন না কেন?? আমার ফোন কেন কাটছেন আগে বলেন?? চুপ করে আছেন কেন??
খুব বেশি বিস্মিত হলে মানুষ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। শুধু ‘ইয়ে মানে’ করে। আমি ও তাই করলাম।

কি ব্যাপার ইয়ে মানে করছেন কেন…!!!
মানে.. তুমি এই সন্ধ্যা বেলা এখানে….!?

আপনার মত একটা গুদ্দুর প্রেমে হাবুডুবু খেলে সন্ধ্যা কেন মাঝ রাতেও এখানে আসাটা অসাভিক কিছু হবে না। আপনি জানেন আপনি কত্ত বড় একটা গুদ্দু! তানু কে ফোন করে কি বলছেন আপনি.. রানা ভাই কে ভালবাসি আমি…!!?
কীভাবে ভাবলেন এইটা…? উনার কথামতই তো আপনাকে জেলাস করার জন্য এত্ত অভিনয় করলাম আর আপনি কিচ্ছু বুঝলেন না। দুপুরে আপনাকে বকা দিতে দিতে আমি নিজেই কেদে দিলাম আপনি তবুও বুঝলেন না। এত গুদ্দু কেন আপনি?

ওর কথার কিছুই ঢুকল না আমার মাথায়। হাব্লুর মত হা করে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। কথা বলার ভাষা গুলা আমাকে অসহায় করে সব যেন কোথায় পালিয়ে গেছে।

এখনো হা করে আছে……! কিছু বলবেন নাকি চলে যাবো….?
অনুভব করছি কেউ একজন মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছু বললেই গুলি করে দিবে। বুকের ভেতর সর্বচ্চ শব্দে ড্রাম বাজতেচে। ভালবাসি বলতে গিয়ে বলে ফেললাম ‘বিয়ে করবো’। সাথে সাথে গুদ্দু বলে ভেজা ভেজা চোখে পৃথিবীর সবচে সুন্দর হাসিটা হাসল ও। লাল শাড়ি গায়ে খোলা চুলের কাজল আখিতে ছলছল খুশির জলে হাড়িয়ে গেলাম আমি। ভালবাসা নামের মায়াবী রঙে আকা লাল পরীটাকে বুকে জড়িয়ে অচিন সুখের সমদ্রে অনন্ত কাল এর জন্য ডুব দিলাম। আর জাগব না কোনদিন। ছোট একটা ঘর বানাবো ডুবে যাওয়া সমুদ্র তলে। সেখানে থাকবো শুধু আমি আর আমার এই টুকটুকে ছোট্ট লাল পরী।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত