হ্যালো কি করো বাবু?
–চটি পরে টয়লেটে যাই!
–এই ছি!
–ছি..র কি হলো?
–তুই এত্তো খারাপ।
–আশ্চর্য! খারাপের কি আছে,আমি চটি(জুতা পরে টয়লেটে যাচ্ছি।ক্যান তুই কি খালি পায়ে টয়লেটে যাস?
–ওওও,, এই কথা।আমি ভাবলাম অন্য কিছু।
–হুম তুমি তো তাই ভাববা।চিন্তা ভাবনা একটু পাল্টাও,,যাইহোক man is mortal.
মানুষ মাত্রই ভুল করে।
–উফফ! অসহ্য..ভাই তোর দোহাই লাগে,,সক্কাল সক্কাল তোর এই হারপিক মার্কা ইংলিশ শুনায় আমার মাথাটা খারাপ করিস না।
–হইছে,, হইছে এতো ঢং করতে হবে না।কি জন্য কল দিছিস সেটা বলে আমায় উদ্ধার কর।
–একটু ক্যাম্পাসে আয়,খুব ফুসকা খাইতে ইচ্ছে করছে।
–আপু শুনো,আমায় পাগলা কুত্তায় কামড়ায় নাই।আমি যাইতে পারবো না।আর তুই যেই পরিমাণ ফুসকা খাস,দিনে একটা হাঁসও সেই পরিমান শামুক খায় না।আমায় মাফ কর।
–ছি..এই ফকিরের বাচ্ছা,তুই আয়।টাকা আমি দিবো,,এখন কি আর তোর সমস্যা আছে??
–না..না! টাকা তুমি দিলে আমার ক্যাম্পাসে কেনো,নোয়াখালী যাইতেও সমস্যা নাই।
এতোক্ষন কথা হচ্ছিলো অবাক আর কথার মধ্যেত। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ ক্যাম্পাসে অবাক আর কথা যেনো বিনা টিকিটে Action মুভির দৃশ্য! সারা দিন ঠুকনা-ঠুকনি লেগেই থাকে।কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা আবার কেউ কাউকে ছাড়া চলতেও পারে না।তবে কথা খুব রাগি আর ভয়ানক টাইপের মেয়ে,,একটু নয়-ছয় হলেই চলে কথার বিশ্ব বিখ্যাত টেস্টি আর স্বাস্থ্যস্মমত কিল,ঘুসি,চিমটি আর কামড়।তাইতো অবাকের শরীরে কথার দেওয়া বেশ কিছু স্মৃতি চিন্হসমূহের দৃশ্য মেলে।তবে ভীষন রাগি হইলেও সামনে ফুসকা ধরলে হঠাৎ বৃষ্টির মতোই গলে যায় এই এলিয়েনটি।
অবাক আকিকা ছারাই বেশ কিছু নামও দিয়েছে কথার,,এই ধরুন ফুসকা খোর,FM, বাবু,জামবাগ!তবে ভালো সময়গুলোতে বাবু বলেই ডাকে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কথা ক্যাম্পাসে এসে বসে আছে।প্রায় আদা ঘন্টা পরে বাংলার আকাশে আগমন ঘটলো নবাবের।
–কি রে এতো দেরি হলো কেনো?(কথা)
–আর বলিস না,পেটের মধ্যে ভারাত পাকিস্তানের ম্যাচ শুরু হইছে,,চার আর ছয় এর কোপে টয়লেটে থেকে আসতেই মন চাচ্ছিলো না।(অবাক)
–ভাই একটু দূরে বস,আমি ওযু করে আসছি।
–হুট
–হ্যাট
–হুস
–আচ্ছা বাদ দে।তোর দাঁড়ি কই?সেপ করে তো তোকে কাল্লাকাটা, কাল্লাকাটা লাগছে।
–হুম,,আর তোমারে তো জান্নাতের পরীর মতো লাগছে।মনে হচ্ছে এই মূর্হুতে জান্নাত থেকে পালিয়ে এসেছে ফুসকা খাবার জন্য।
–হুম আমি পরীই।তুই জানিস কত্তো ছেলে আমাকে লাভ লেটার লেখে?সেই লাভ লেটার গুলো আমার বুলর্ডুজার দিয়ে সরাতে হয়।
–হইছে,তোর আর হকারি করতে হবেনা।চাপাবাজ!
–কিহ…আমি হকার?আর থাকবোই না।থাক তুই আমি চললাম।
–যাবি? তো যা না।আমায় বলছিস কেনো?দূর হ চোখের সামনে থেকে।
–কথা চলে গেলো,,একটু দূরে গিয়ে ভাবছে শালা ফকিরের বাচ্চা আমায় ডাকে না ক্যান??
–অবাক জানে ও আবার ঠিকি ফিরে আসবে।এ বাঁধন ছেঁড়া অসম্ভব।
কথা দেখতে সত্যি পরীর মতো।গায়ের রঙ তুলতুলে ফর্সা। ওজন ৩৫-৩৭ এর কাছাকাছি। চুল গুলো ঢের কালো আর লম্বা।হাসলে সত্যি পরীর মতো লাগে।অবাকের খুব ভালো লাগে পাগলীটাকে ।হয়তো কথার ও অবাককে ভালো লাগে।
দুই-তিন মিনিট কথা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আবার ফিরে আসলো!
–কি রে চলে এলি যে?(অবাক)
–দেখলাম তুই ইতিমের মতো একা একা বসে আছিস।(কথা)
–আমি জানি তুই যাবি না।তুই আবার আমার কাছে ফিরে আসবি?
–কি করে?(উৎসুক কন্ঠে)
–আরে এইডা তো সহজ হিসাব,,বিপদ এতো তাড়াতাড়ি যায় না।
–কি কইলি রে হারামি??(ভীষণ রেগে)
অবাক জানে কথার এখন খুব রাগ হচ্ছে।বিশ্ব যুদ্ধ 2 লেগে যেতে পারে।এই অদ্ভুত প্রানীটার জামবাগের মতো অসাধারণ কিছু গুন ক্ষমতা আছে।যে কোনো সময়ে আক্রমণ করতে পারে।তাই এই ভয়ানক জীব টা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ভালো।
–না কিছু না।দাঁড়া তোর জন্য শামুকের অর্ড়ার দেই…ওহ সরি ফুসকার অর্ড়ার দেই।
প্রতিদিনের মতো আজও কথার বাড়ি অব্দি দিয়ে আসবে অবাক।প্রচন্ড রোদ।শরীর দর দর করে ঘামছে।কথার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।চিবুক বয়ে ঘাম ঝরছে।কথাকে যেনো আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
–একটা কথা বলবো অবাক?(কথা)
–হুম বল(আগ্রহী কন্ঠে)
দু জন দু জনের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সময় চলে যাই।কিন্তু বলা হয় না।
ফোন বেঁজে চলেছে,,কয়েকবার রিং হবার পর!
–এই হারামি মরছু না কি?(কথা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
–এই কথা কি হইছে রে?কাঁদছিস কেনো?(অবাক)
–আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করছে।
–Congratulation..ভাইয়া কি করে রে?
–তুই এইটা বলতে পারলি অবাক?
–তো কি বলতাম?
–তোর আর কিছু বলার নেই?
–আর কি বলার থাকবে?
–সত্যি?
–হুম
ফোন কেটে গেলো।
অবাক নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।বুকের বাম পাশ টা কেমন যেনো নড়ে চড়ে উঠলো।হয়তো চোখও ঝাপসা হয়ে আসছে।
আজ অবাক আগেই এসছে.. location চাটমোহর বওশা ব্রিজ।২০ মিনিট পরে কথা আসলো।
কথা কে আজ সত্যি পরীর মতো লাগছে।
নীল শাড়ি,,লাল চুড়ি!
কানে দুল,,খোপায় বেলী ফুল!
তিলক মিষ্টি ঠোঁট যুগলে,,সেই মৃদু হাসির বৃষ্টি!
এ যেনো সহস্র সৃষ্টির মাঝে এক অপরুপ সৃষ্টি!
কিছুটা সময় নিরবে কেটে যায়।
নিরবতা কাটিয়ে কথা বলে কথা।
–এই অবাক??
–অবাক বাস্তবে ফিরে আসে,,এয়ে মানে দাঁড়া আমি ফুসকা নিয়ে আসি?
–তুই খাওয়াবি?
–হুম..সারা জীবন এভাবে ফুসকা খাওয়াতে চাই!
–দুজন দুজনের চোখে তাকিয়ে থাকে।কথা একটু লজ্জা পায়।কথা লজ্জা পেলে টোল পরা গাল দুটি রক্তবর্ণ হয়ে যায়।কিন্তু খুশির ছাপ চোখে মুখে বিদ্যমান।
আজ যেনো কিছু হতে চলেছে।
কিন্তু এই রোমান্টিক সময়ে ১৪ নম্বর বিপদ সংকেতের আগমন।কথা অবাককে তাজা লাল গোলাপ আনতে বলেছিলো।এখন তাহলে বুঝতেই পারছেন।
অনেক চেষ্টা করেও মন ভালো করতে পারছে না কথার।যেই মেয়ে ফুসকা পেলে খুশিতে ফারাক্কা বাঁধ খুইলা দেয় সেই মেয়ে আজ দু- দু প্লেট ফুসকা সামনে নিয়া অভিমানের কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বসে আছে। এই কথা বিশ্বাস করা আর 7up খেয়ে মাতাল হওয়া দুটোই সমান।
হঠাৎ নবাবের মাথায় কিছু আগমন ঘটিলো,এহা একটি বিশুদ্ধ বুদ্ধি,কাজ হইলে এহাতেই হইবে।
বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে লাগলো অবাক।
ঝাল,ঝালে মরে গেলাম গো,কেউ আমারে মাইরালারে,,সরি কেউ আমারে বাঁচা রে।
কথা দৌড়ালো পানি আনতে।
অবাক এখন ভাবছ, কথা কে বোকা বানানো কতো সহজ।আমি তো ফুসকা খাই নাই।ঝাল লাগবে কই থেকে।
এই অবুজ মেয়ে টা রে খুব ভালবাসি।আজই মনের কথা বলে দিবো।নিরবে কিছু সময় চলে যায়,কল্পনার রাজ্যে ব্যস্ত এখন নবাব।
হঠাৎ করে ধুম করে একটা শব্দ।শব্দটা কিসের তা বোধগম্য হলো না। তবে কথার চিৎকারের কন্ঠ স্পষ্ট।
পিছে ফিরে তাকালো অবাক,ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে একটা বাইক চলে গেলো।অবাকের কিছু বুঝতে বাকি নেই।
কথার নিথর শরীর হাত ইশারায় ডাকছে।
অবাক দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলো।মাথা থেকে তীব্র গতিতে রক্ত ঝরছে।মুখ আর কান দিয়ে রক্ত গরিয়ে পরছে।অবাক কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না।
কথা ঠোঁট নারায়,মনে হয় কিছু বলতে চায়।মুখটা তুলে ধরতেই অবাক শুনতে পায়…তোরে খুব ভালবাসি..অনেক ভালবাসি রে অবাক…একবার আমায় বুকে নিবি অবাক??
এবার অবাক আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।
বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না করতে লাগলো,,,,আমিও তোরে অনেক ভালবাসি রে পাগলী,,অনেক ভালোবাসি..এই কথা আমাকে ছেরে যাস না রে..বাবু প্লিজ কথা বল,,এর মধ্যে কথা পরম আদরে অবাকের বুকে ঘুমিয়ে পরেছে।
কিন্তু চলতে থাকে অবাকের হাজারো আর্তনাদ!
এই পাগলি কথা বল..এই ফুসকা খোর আর কতো ঘুমাবি,,উঠ এবার,,এই উঠ না রে,,আমাকে কাঁদাতে তোর খুব ভাল লাগছে?
সন্ধ্যার গোধূলি দিনকে গ্রাস করছে,,নীড়ে ফিরছে পরিবার পরিজন। কথাও নীড়ে ফিরলো শুধু অবাককে রেখে।