অচেনা অতিথি

অচেনা অতিথি

অফিস শেষে তাড়াতাড়ি রওনা দিল অলিন। মনেমনে ভাবছে নীলিমার কিছু হয়ে যায় নি তোহ? মেয়েটা কখন কি করে ফেলে
নিজেই বুজতে পারে না। পথিমধ্যে আবার মনে হলো,
যাওয়ার সময় বিরিয়ানী নিলে ভালো হয়।

>বাসায় পৌছেঁ কলিংবেল চাপ দিতেই সাথে সাথে দরজা খুলে গেলো। বিষয়টা নিয়ে অবাক হওয়ার আগেই
নীলিমা অঝোরে কাদঁতে লাগলো।

~কি হয়েছে নীলিমা কাদঁছো কেনো? (অলিন)
~তোমার কথা খুব মনে পড়ছিলো।
~সে কি হাতে কি হয়েছে তোমার?
~পেয়াজ কাটতে গিয়ে একটু কেটে গিয়েছে।
~কি! একটু কেটেছে! কত বড় ক্ষত হয়ে গিয়েছে আর তুমি বলছো একটু কেটেছে। নীলিমা তুমি এরকম কেনো? যা
পারোনা তা করো কেনো?
~জানো আমার না খুব কষ্ট হয়। আমি তোমাকে অন্য সবার স্ত্রীদের মতো তোমায় রান্না করে খাওয়াতে পারি না। তোমার খেতে খুব কষ্ট হয় তাই না?
>নীলিমা শোনো! তোমায় আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি আমাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে না। শুধু
নিজের প্রতি একটু কেয়ার নিলেই আমি খুশি হবো।
>অলিন আমি না তোমায় রান্না করে খাওয়াতে পারি না ঠিকই কিন্তু তোমায় না আমি প্রচন্ড ভালবাসি।
>আচ্ছা ঠিক আছে বাবু চলো এইবার।
>প্যাকেট থেকে বিরিয়ানী আলাদা প্লেটে ভরে দুইজনে খাচ্ছে। দুইজন বললে ভূল হবে একজনই খাচ্ছে।
অলিন নীলিমাকে দুইবার খাইয়ে নিজে একবার মুখে দিচ্ছে।
মেয়েটা কি অসাধারন ভঙ্গিতে খেতে পারে।
অলিনের অপলক ভাবে চাহনি দেখে নীলিমা লজ্জার পরিবর্তে কেদেঁ উঠলো। সেটা নিজেকে নিয়ে।
ছেলেটা কত কষ্ট করে তার জন্য আর প্রতিদানে সে কিছুই দিতে পারলো না।

কয়েকমাস পর…….
ইদানিং অলিন লক্ষ্য করছে তার নীলিমা আগের মতো নেই। কেমন যেনো বেপরোয়া হয়ে গেছে। ঠিক মত কথা
বলছে না। আগে যেরকম অলিনকে জড়িয়ে ধরে কথা কথা বলতো এখন পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে।
কিছুদিন পর অলিন জানতে পারলো সে অফিসে চলে যাওয়ার পর নীলিমা কোথাও বের হয়ে যায় এবং একেবারে
বিকেলে ফিরে আসে।
একদিন দুপুরে কোন এক কাজে বাসায় ফিরে দেখে দরজা বাআরে থেকে লক করা। তখন অলিন অনুধাবন
করলো নীলিমা আর আগের নীলিমা নেই। হয়ে গেছে একটা স্বার্থপর। নীলিমাকে ফোন করলো-
>হ্যালো নীলিমা?
-হুম।
>তুমি কোথায়?
>এইতো বাসায়। তুমি আসবে কখন?
-হুম আমি বাসায় আছি।
>কিহ!
-হুম। তোমার কার্যকলাপ এতক্ষন নিজের মেধা দিয়ে অনুধাবন করে জ্ঞানের প্রতিভাকে প্রজ্বলিত করছি।
আধ-ঘন্টা পর,
>অলিন তুমি এই সময়ে? (নীলিমা)
>কেনো তুমি বুঝি তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটাচ্ছিলে?
>কিসব বলছো তুমি?
>হুম ঠিকই বলছি। ছিঃ তুমি না বলতে আমায় খুব ভালবাসতে। এই তোমার ভালবাসার নমুনা। আমি বাসা থেকে বের হলে তুমি তোমায় নবীণ বয়ফ্রেন্ডের সাথে কাটাও তাই না?
ঠিক তখনি অলিনের গালে একটা চড় মারলো নীলিমা।
>এই তুমি আমায় বিশ্বাস করো? (নীলিমা)
>আরে তোকে আর কি বিশ্বাস করবো। তোকে চেনা হয়ে গেছে আমার।
এই বলে অলিন চলে আসছিলো ততক্ষনে পেছন থেকে ডাক!
>ভাত খেয়ে যাও?
>আরে তোর ভাত তুই খা। এই ভাত আমার গলায় ঢুকবে না।
>প্লিজ খেয়ে নাও।
>আরে যা তো তুই। (প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিয়ে)

হনহন করে এই অন্ধকার রাতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো সে। রেল লাইনের ধারে পা ঝুলিয়ে বসে আছে
অলিন- আর ভাবতে লাগলো- কাকে সে এতোদিন ভালবেসেছিলো যে কিনা এতো স্বার্থপর হতে পারে?
>নীলিমা অঝোরে কাদঁছে। অলিনের ধাক্কায় দেওয়ালে মাথা লেগে ফেটে গিয়েছে। কিন্তু সেইদিকে তার কোনো আক্ষেপ নেই। শুধুই ভাবছে, আজ অলিন তাকে এইভাবে ভূল বুঝতে পারলো? সে তো কোনো ভূল করে নি। তবে কেনো আজ অলিন এরকম
করলো?
কিছুতেই নিজেকে সান্তনা দিতে পারছে না।

>আজ রাতটা যেনো কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। প্রতিদিন নীলিমা আলতো করে অলিনের বুকে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে
থাকতো আর আজ? সব শেষ হয়ে গিয়েছে। ভেঙ্গে গিয়েছে তার আশা।
ভাবছে আর অঝোরে কাদঁছে অলিন। ততক্ষনে ফোন
বেজে উঠলো-
-হ্যালো (অলিন)
– হ্যালো অলিন?
-হুম বল।
-আমি নিহা বলছি রে। কেমন আছিস?
-হুম এতদিন খারাপ ছিলাম আজ খুব ভাল আছি।
-তাই নাকি। নীলিমা তাহলে তোকে সারপ্রাইজ করেছে তাইতো?
-হুম রে আমি এইজন্য সারাজীবন সারপ্রাইজড হয়ে থাকবো।
-হুম। আমি জানতাম মেয়েটা পারবে। তোর জন্য প্রতিদিন কত কষ্টই না করলো। সেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে তোর জন্য রান্না করতো।
জানিস এরকম মেয়ে না হাজারে দুএকটা পাওয়াও সম্ভব নাহ।
-এই মানে কি?
-আরে নীলিমা প্রতিদিন আমাদের বাসায় এসে আম্মুর কাছ থেকে রান্না শিখতো। এবং শেষে তোর জন্য রান্না করে নিয়ে যেতো আর তুই ভাবতিস কাজের ভূয়া রান্না করেছে। জানিস মেয়েটা না তোকে খুব ভালবাসে। আর শোন একটা গুড নিউজ আছে, তুই শিঘ্রই বাবা হবি রে।
-কিহ!!!! আচ্ছা ফোন রাখ তোহ।
-ওকে বাই।

নিহার সাথে কথা বলার পর ভাবতে লাগলো, একি করলো সে?
সামান্য একটা কারনে নীলিমাকে সে ভূল বুঝতে পারলো? নীলিমা তো কোনো দোষ করে নি? নিজের
ভূল বুঝতে পেরে রেল স্টেশনেই বসে কাদঁতে লাগলো।
রাত তিনটে, অলিন ঘরে ঢুকতেই-
>তুমি এত রাতে কোথায় ছিলে? জানো না তোমায় ছাড়া আভার কষ্ট হয় থাকতে? ভাত টা পর্যন্ত খেলে না? সারাদিন তোমায় ছাড়া থাকি কোথায় রাতে তোমার বুকটায় একটু আশ্রয় নিবো তা না বরং তুমি চলে গেলে।
>নীলিমার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে অলিন।
মেয়েটার কপালে এখনো রক্তের কণা শক্ত হয়ে জমাট বেধেঁ আছে।
নীলিমা আর কিছু বলার আগেই বসে পড়লো অলিন আর কাদঁতে কাদঁতে বললো-
-নীলিমা তুমি আমায় প্লিজ ক্ষমা করো। আমি আর এতো বড় ভূল কখনো করবো না। আমার তখন মাথা ঠিক
ছিলো না। প্লিজ ক্ষমা করো আমায়? (অলিন)
-আরে পাগলা উঠো উঠো। সকাল ধরে কিছু খাও নি।
এখন আসো তোহ।
-টেবিলে বসিয়ে অলিনকে নীলিমা খাইয়ে দিচ্ছে।
আর অলিন কাদঁছে। কয়েকমাস আগে সে নীলিমাকে খাইয়ে দিতো আর আজ!
সত্যিই নীলিমাই সেরা স্ত্রী।
>আজ অলিনের বুকে নয়, নীলিমা কোলে ঘুমুচ্ছে অলিন আর নীলিমা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ভাবছে
সত্যিই বাচ্চা ছেলে একটা।

পরদিন সকালে, অফিসে যাওয়ার সময়-
>অলিন? (নীলিমা)
>হুম।
>আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরবে?
>আচ্ছা। মহারাণী তাড়াতাড়ি ফিরবো।
>অলিন?
>কিছু বলবে?
>না মানে?
>কি হয়েছে বলো?
>আসার সময় কিছু আনবে?
>কি লাগবে বলো।
>অফিস থেকে আসার সময় কিছু আচার আনবে?
(লজ্জাস্বরে)
–মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো অলিন আর ভাবতে লাগলো এতক্ষন এটা শোনার অপেক্ষায় রইলো।
>আচ্ছা আনবো। (ছোট্টস্বরে বললো অলিন)
>অফিস শেষে অলিন ভাবতে লাগলো কোন আচার টা ভালো হবে?

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত