ঘর জামাই

ঘর জামাই

আমি-এই বিড়ি দে।
কথাটা শুনে সুমন আমার দিকে চেয়ে আছে।
আমি- কি হলো বে, দে বিড়ি।
সুমন- তুই তো এসব খাস না।
।।
আমি চোখ মেরে বললাম, দে না।
সুনম একটা বিড়ি দিলো,
আমি- ম্যাচ কই?
সুমন- আমার কাছে নাই।
আমি- কি থাকে? এখন ম্যাচ পাবো কোথায়?
সুমন- দেখি কারো কাছে।
।।
একজন- বাবা! ম্যাচ লাগবে? এই নাও
আমি- না থাক! আমি এসব সস্তা ম্যাচ ব্যাবহার করি না।
মানুষটি- তুমি কোন ব্রান্ডের ম্যাচ ব্যাবহার করো আমাকে বলে দিয়ো সামনে বার থেকে সেটায় দিবো।
।।
সুমন- মানুষটা কে রে? চিনিস নাকি?
আমি- হ্যাঁ , আমার আব্বুর বন্ধু।
সুমন- যাহ্‌ শালা! এখন কি হবে? তোর বাবাকে যদি বলে দেয়, উনি ভাব্বে তুই কতো খারাপ, একে তো সিগারেট খাচ্ছিস তাও বড়দের সম্মান দিস না।
আমি- আমি ও তো সেটায় চায়।
সুমন- মানে?

।।
আমি- ইনি হচ্ছে আমার হবু শ্বশুর?
সুমন- কি?
আমি- হ্যাঁ। আর বলিস না, উনি নাকি কন্টেক্টারি করে, এখন ছোট মেয়ের জন্য আমার বাবাকে বলেছে

সাথে বলেছে আয়ান আমার সাথে থাকবে, মাসে বেতন ও দিবে কিন্তু ওনার মেয়েকে বিয়ে করে ঘরজামাই থাকতে হবে, কেমন লাগে বলতো?
সুমন- তো করে নে না। ওর বাপের অনেক টাকা তো।
আমি- আমার টাকার ওপর লোভ নাই, কিন্তু আমি একমাত্র ছেলে, আমি চলে গেলে বাবা মায়ের কি হবে?
।।
দুপুরে খেতে বসেছি।
আব্বু- তোমার ছেলেকে আজ থেকে বেশি টাকা দিও হাত খরচের জন্য।
আম্মু- কেন? ও যা ইনকাম করে, অতে ওর চলে যায় আমি কেন টাকা দিবো?
আব্বু- আজ–কাল আমাদের ছেলে নাকি বিদেশি ব্রান্ডের সিগারেট আর ম্যাচ খাওয়া ধরেছে, তাই টাকা বেশি লাগতে পারে।
আম্মু- কি বলো এসব, আমার ছেলে তোমার মতো খারাপ না। আমার ভালো ছেলে।
আব্বু- কিরে তুই চুপ কেন? বল, কিছু? আমি কি ভুল বললাম।
।।
আমি- আমি বিয়ে করবো না বলে এসব করেছি।
আব্বু- তো সালাম(মেয়ের বাবা) কি পাগল এটা বুঝে না? সে জানে না বুঝি তুই কি রকম ছেলে? না জেনেই সে তোকে জামাই বানাবে?
আমি- জামাই না, ঘর জামাই।
আব্বু- অতো কিছু বুঝি না, আজ বিকেলে মেয়ে দেখতে যাবো। মনে কর আজকেই বিয়ে ঠিক।
।।
আব্বুর ওপর আর বেশি কিছু বলতে পারলাম না।
মন খারাপ করে ঘর থেকে বের হলাম।
ঘর জামাই কেমন জানি লাগছে, আমি চলে গেলে বাবা-মাকে কে দেখবে? আর আমার বাড়ী,

যে বাড়ী আমি ছোট থেকে নিজের মতো করে বানিয়েছি, নিজের মতো করে সব কিছু সাজিয়েছি, ওসব কি হবে?
।।
আজ নিজেকে একটা মেয়ের যায়গায় রাখলাম, ওরাও তো এভাবে নিজের ঘর বাড়ী ছেড়ে অজানা এক পরিবেশে যায়, কতটুকু এর মূল্য পাই?
।।
বিকেলে একটা অটো-রিক্সাতে করে ও বাড়ী গেলাম। বছর ৪ আগেও এসেছিলাম এই মেয়ের বড় বোনের বিয়ের দাওয়াতে।

তখন ভাবিনি যে এইভাবে দ্বিতীয় বার আসতে হবে।
।।
খুব ভালো ভাবেই আমাদের আপ্যায়ন করা হলো।
তারপর মেয়েটার সাথে আমার কথা!
আমাদের একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো, এটা মেয়েটার ঘর। ওহ হ্যাঁ মেয়েটার নাম ইরা, বেশ অদ্ভুত নাম।
।।
ইরা- দেখেন আগে আমি কিছু কথা বলি, আমি বাবার ব্যাবসার কিছু দায়িত্ব নিতে পারবো না,

আমার উকিল হবার ইচ্ছা তাই সেটায় চেষ্টা করছি, এই রুম আমার যা কিছু আছে আমার পছন্দের, তাই কিছু বদলানো যাবে না,

আর হ্যাঁ রান্না আমি একটুও পারি না আর শিখার ইচ্ছাও নাই, তাই রান্নার ভার ও আপনার। এখন আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে করেন।
।।
আমি- এক গ্লাস পানি হবে?
ইরা- আজ প্রথম তাই দিলাম, বিয়ের পর আপনি আমাকে কোন হুকুম করতে পারবেন না।
আমি- আচ্ছা আপানার বড় বোন তো বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ীতে আছে তাহলে আপনি কেন ঘর জামাই নিয়ে থাকতে চান।
ইরা- আমি তো বিয়ে করতেই চাই না। ছেলে মানুষ মানেই বিরক্তি, আমি আমার ইচ্ছা মতো কিছু করতে পারবো না।
আমি- বুঝেছি।
।।
ইরা- আর একটা কথা! আমি চলে গেলে আমার বাবা মাকে কে দেখবে?
আমি- বিষয় টা তো আমার দিকেও একি, আমি আপনাকে বিয়ে করে এখানে থাকলে আমার বাবা-মাকে কে দেখবে?
ইরা- কেন? বাবা তো আপনাকে বেতন দিবে, আপনি পাঠিয়ে দিবেন।
আমি- টাকায় কি সব?
ইরা- আপনি এখানে কি দেখে বিয়ে করতে এসেছেন?
আমি- আমি আসিনি, আমাকে পরিস্থিতি নিয়ে এসেছে। তবে আমি এই বিয়ে করতে পারবো না আমাকে মাফ করবেন।
।।
ইরা- কেন?
আমি- আমি এমন একটা বউ চাই, যে আমাকে ভালবাসবে, আমাকে একটু রেধে খাওয়াবে,

আমি এটা বলছি না যে সে শুধু আমার পিছনেই সারা দিন কষ্ট করবে, কিন্তু আপনি যেটা বলছেন,

ওটা কে আর যায় বলুক একটা স্বামী- স্ত্রীর ভালোবাসার সংসার বলে না। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না আমাকে মাফ করবেন।
।।
ইরা- ঐ দিকে বারান্দা, ঐ দিকে কই যাচ্ছেন?
আমি- নীচ দিয়ে তো পালানো যাবে না, তাই এই দিক দিয়ে লাফ দিবো।
ইরা- পা ভেঙ্গে যাবে।
আমি- যাবে যাক, তাও প্রাণ তো বাঁচবে।
।।
তারপর এক লাফ দিয়ে আমি পালিয়ে আসি।
বাবার ভয়ে বাড়ী যায় না। রাত প্রায় ৯ টা ভাবলাম এখন যায় হোক বাড়ী যায়।
।।
বাড়ী গিয়ে দেখি, আমাদের বাড়ী খুব সুন্দর লাইটের ব্যাবস্থা।
আমি বাড়ী যাওয়াতেই একজন বলল, বর চলে এসেছে।
আমি- আম্মু শোন একটা কথা।
আম্মু- একটু পর শুনছি তুই রেডি হয়ে চলে আয়।
।।
আমি মন খারাপ করে ঘরে গেলাম। ঘরে গিয়ে দেখি, ইরা বসে টিভি দেখছে।
ইরা- কি ব্যাপার? এতো দেরি কেন?
আমি- তুমি? মানে আপনি এখানে?
ইরা- তো শ্বশুর বাড়ী আসা মানা নাকি?
আমি- ঐ আমি না বললাম বিয়ে করবো না, কিসের শ্বশুর বাড়ী?
ইরা- বললেই হলো নাকি? করবো না। আমার গায়ে হলুদ হয়ে গেছে।
আমি- এটা আবার কখন হলো
ইরা- একটু আগেই, আপানার ভাবিরা এসে দিয়ে দিলো।
আমি- আমি ঘর জামাই হবো না।
।।
ইরা- হতে হবে না। আমি আপনাদের বাড়ীর বউ হবো। তাহলে তো খুশী?
আমি- মানে?
ইরা-ওটা আপনাকে পরীক্ষা করছিলাম, আমি বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না কারণ এক তো আমি আগে উকিল হবো,

দ্বিতীয় আমার বাবা-মাকে দেখাশুনা, এজন্য আব্বু বলল, প্রয়োজনে ঘর জামাই রাখবে কিন্তু বিয়ে করতে হবে,

কিন্তু আমি চাই না যে আমার স্বামী ঘর জামাই হয়ে থাক, সে নিজের বাড়ীতে থাকবে, আমি থাকবো তার বাড়ীতে,

আমি বাবার পরিচয়ে না স্বামীর পরিচয়ে থাকতে চাই। আপনি যদি ওখানে আমার সব শর্ত মেনে নিতেন তবে আমি বিয়ে করতাম না।
তবে হ্যাঁ! আমি কিন্তু পড়বো, আর আমাকে বাবা-মায়ের বাড়ী যেতে বারণ করবেন না।
এখন যান রেডি হয়ে আসেন।
।।
আমি- আচ্ছা।
ইরা-কি হয়েছে, এভাবে হাঁটছেন কেন?
আমি- না, ঐ যে লাফ দিয়েছিলাম না, পায়ে লেগেছে।
ইরা- আচ্ছা আগে বিয়ে হয়ে যাক, আমি আপনার পা মালিশ করে দিচ্ছি, এখন আপনার পায়ে হাত দিতে কেউ দেখলে খারাপ ভাব্বে।
।।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে।
ইরা- আপনার রুম টা কিন্তু অনেক সুন্দর, শুধু একটু আগোছালো, আচ্ছা শুনলাম, ছাদের ওপর নাকি ফুল বাগান আছে?

আমারা রাতে চুপ করে ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখবো? কি নিয়ে যাবেন তো?
আমি- হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো।
ইরা- আপনার আব্বু আর আর আমার আব্বু কাজী ডাকতে গেছে, এখুনি চলে আসবে। আচ্ছা যান। রেডি হয়ে আসেন।
।।
অতপর একটা সুন্দর চাঁদনী রাতে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।

…………………………………………………… সমাপ্ত ……………………………………………….

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত