শীতল বাতাস বইছে, চারিদিকে শীতের আনাগোনা,,তার সাথে অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে।
এই সময় আকাশটাকে ঠিক যেন নীড় হারা উত্তল সাগরের মতন মনে হয়।
মাঝে মাঝে ভেসে থাকা মেঘ গুলোর জন্য আকাশটাও অপরুপ সাজে সেজেছে,,
আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় নীল সাগরের বুকে পাল তুলে ভাসমান নৌকা গুলো দিক হারানোর প্রচেষ্টাতে মত্ত।
উদাসমনে এসব কিছু ভাবছিলাম এমন সময় আমার উদাসিনতার ঘোর ভাঙ্গিয়ে ফোন টা বেঁজে উঠলো।
ফোনের স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম নীলা ফোন দিছে।
:-হুম বলো।
:-কি করছিলে?
:-বসে ছিলাম…তুমি?
:-হুম আমিও, যেই জন্য ফোন দিছি”কালকে ভোঁর ৫ টায় নদীর পাড়ে আসতে পারবে একটু।
:-পাগল হয়ছো নাকি? এতো ভোরে তাও আবার নদীর পাড়ে কি দরকার তোমার।
:-দেখা করতে বলছি দেখা করবা, ওত কিছু বুঝিনা আমি অপেক্ষা করবো।বলে ফোন টা রেখে দিলো।
কি মেয়েরে বাবা এসব পাগলামির কোনো মানে হয়,,,পরদিন….ক্যাথা মুড়িয়ে দিয়ে আরামে ঘুম দিচ্ছি,,
এমন সময় ঘুমের বারোটা বাজিয়ে ফোনটা চিৎকার দিয়ে উঠলো কানের গোড়াতে।মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো,এত স্বাধের ঘুমটা কে নষ্ট করলো।
এই মোবাইল টার অত্যাচারে একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না।বিরক্ত নিয়ে ফোনের দিকে তাকালাম,দেখি নীলার ফোন।
ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করলাম।
:-হ্যালো……
:-তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো?
:-হুমমম।
:-হুম মানে গতকাল তোমাকে কি বলেছিলাম আমি।
:-কি বলেছিলে,,ওহ্ হ্যা বলেছিলে দেখা করার কথা।
:-তো এখনো ঘুমাচ্ছো কেন?
:-এতো ভোরে কেও দেখা করে,,একটু সকাল হোক হুমম তারপর না হয় দেখা করবো।
:-মানে কি….? আমি এসে দাড়িয়ে আছি আর তুমি বলছো পরে দেখা করবে, আচ্ছা তুমি ঘুমাও আমি অপেক্ষা করছি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো,,,উফপপ এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেলো না,এভাবে কেও পাগলামি করে।
না গেলে সত্যি সত্যি দাঁড়িয়ে থাকবে না যাওয়া অবধি।।তাই স্বাধের ঘুমটা নষ্ট করে একটা গরম জামা পরে হাঁটা শুরু করলাম।
হাল্কা হাল্কা কুয়াশাও পড়তে শুরু করে দিছে,আর সকালে তো ভালোইশীত পড়ছে।।
এতো ভোরে ঘুম থেকে উঠলে হয়তো শীতের আগমন টা এভাবে বুঝতে পারতাম না।নদীর পাড়ে যেতেই দেখি একজন চাদর মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বুঝলাম পাগলিটাই হবে, ,তাই চলে গেলাম।
নদীর পাড়ে তো আরো ঠান্ডা, এই ঠান্ডার ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে কি করে কে জানে আমার তো শীতে শরিরটা জমে যাওয়ার উপক্রম।
কাঁপাকাঁপা শরির আর জমে যাওয়া কন্ঠ নিয়ে নীলাকে ডাক দিলাম,
:-হুম বলো
:-তুমি এসেছো, বলেই নীলা আমার দিকে ঘুরে তাকালো।শীতের চাদর মুড়ি দিয়ে নীলাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।
:-হুম দেখেছো কি শীত পড়া শুরু করেছে থরথর করে কাপছি আমি,তুমিও তো কাঁপছো তো এতো ভোরে দেখা করার কারনটা কি তাও আবার নদীর পাড়ে।
:-কোনো কারন নাই, আসলে আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো শীতের আগমনটা তোমার হাত ধরে আসুক আমাদের ভিতরে,,
শীতের শুরুতেই তুমি আর আমি দু’জনে শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের উপর হাটবো।।
নদীর বুকে অথৈই জল দেখবো খুব ভোরে তোমার বুকে মাথা রেখে।।
নীলার কথা শুনে আর কিছু বললাম না,,শুধু নীলার হাতটা শক্ত করে ধরে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি।
মাঝে মাঝে পাগলিটার কিছু কিছু পাগলামির জন্য ইচ্ছে করে আরো বেশি করে পাগলিটাকে ভালোবাসি।
ভোরের শীতল হাওয়াতে নীলার উষ্ণ চুল গুলো আমার মুখে আচঁড়ে পড়ছে।
কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর নীলা হঠাৎ বলে উঠলো চলো এখন হাটবো দু’জনে।।
দু’জন মিলে সবুজের বুকে হাটা শুরু করলাম গাছ থেকে ফোটা ফোটা কুয়াশার বিন্দু পড়ছে পিঁচ ঢালা রাস্তার বুকে।
আমরা দু’জনে হাঁটছি মনে হচ্ছে একরাশ সবুজ প্রান্তরে একজোড়া লাভ বার্ডস তাদের ভালোবাসার স্বপ্ন ছোঁয়ার আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে।
শীতের এই ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজে এক কাপ চা খাওয়াটা বেশ মন্দ নই,,তাই নীলাকে নিয়ে পাশে থাকা টং দোকান থেকে লাল চা খেতে ঢুকলাম।
এখন গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্য মামাও উঁকি দিচ্ছে, সোনালী রোদের আলোতে চাদর এর মুড়ায়িতো আমার পাগলিটাকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিলো তখন।
চা খাওয়া শেষ করে আবার দু’জনে হাটা আরম্ভ করলাম।
:-নীল তুমি কি কষ্ট পেয়েছো এতো ভোরে তোমাকে ঘুম থেকে তুলে আনার জন্য।
:-পাগলি একটা কষ্ট কেন পাবো, বরং আজকে আমি অনেক খুশি যে তোমার সামান্য পাগলামির জন্য এতো সুন্দর একটা মুহুর্ত উপভোগ করার সৌভাগ্য হলো আমার।
:-আসলে আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো ভালোবাসার মানুষটার সাথে এভাবে একটা সুন্দর ভোর দেখবো।
নীলার কথা শুনে আর কিছু বললাম না,,শুধু নীলাকে বুকে টেনে নিলাম,,,আর আলতো করে তার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বললাম…..
“”অনেক ভালোবাসি তোমাকে””
:-আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।বলেই আবার আমার বুকে মাথা রাখলো।
সকালের মিষ্টি রোদের আলোতে আর ছোট ছোট পাখির গুন্জ্ঞনে মুখরিত হতে থাকলো চারপাশ টা।