– আমি আপনাকে চুমু খেতে চাই। ইটস আর্জেন্ট।
– স্যরি কি বললে বুঝিনি।
– আই ওয়ান্ট কিস ইউ হার্ড অন ইওর লিপ্স!!!
– আর ইউ ক্রেইজি রুহান!!!
– আই এম ড্যাম সিরিয়াস! আমি জাস্ট আপনাকে দুই মিনিট সময় দিলাম। ফোনটা রাখবেন। এরপর ভাববেন। ঠিক দুই মিনিটের মাথায় আপনার সিদ্ধান্ত জানার জন্যে ফোন করব। উত্তরটা হ্যা হলে ভয়ংকর খুশি হব। হয়ত আপনার কাছে আরো একবার ঋণী হয়ে যাব। কিন্তু না হলেও কোন সমস্যা নেই। আপনার ঐ কথাটা মনে করে চুপ হয়ে যাব।
– কোন কথাটা?
– ঐ যে। সব ইচ্ছে পূরণ হতে হয়না, কিছু কিছু ইচ্ছে মরে গিয়ে বেহেশতে চলে যেতে হয়।
– রুহান।
– বলে ফেলেন।
– তুমি কি মজা করছ আমার সাথে?
– আপনি রাজী থাকলে ঠিক দু-তিন দিন পর আমাদের দেখা হবে। আমি ভার্সিটি যাওয়ার নাম করে বাসা থেকে বের হব। খুব ভোরে। সূর্য্য ওঠার সাথে সাথে। নদীর পাড়ে।
– রুহান। আর ইউ সিরিয়াস?
– এরপর আর কোনদিন কিছুই চাইব না আপনার কাছে।
– রুহান।
– জ্বি!
– আমি দুইটা মিনিট ভেবে উত্তরটা দিই?
– শিওর! শিওর! হোয়াই নট!
দুই মিনিট সাত পাঁচ কি ভাবলাম জানিনা। হ্যা বলব নাকি না। যেখানে মেয়েরা প্রেম করার পরেও বিয়ের আগে অনেক শর্ত সাপেক্ষেও বাম গালে পর্যন্ত একটা চুমু খেতে দেয়না, দিলেও কতরকম টালবাহানা করে। সেখানে এত বড় একটা অফার না করে দেয়া খুব অন্যায় এবং বোকামি হবে। সম্ভবত দুই মিনিটের মাথায় রুহান আবার কল দিল। ফোনটা রিসিভ করলাম।
– রুহান!
– জ্বি বলেন!
– আমি চিন্তা করলাম একটা বিষয়।
– আপনি পারবেন না তাইতো? ইটস ওকে কোন সমস্যা নেই।
– রুহান! আমি রাজী।
– আর ইউ শিওর?
– ইয়েস আই এম।
– ওহ মাই গড! ইউ আর এন ওভার অল নাইস পার্সন আই হ্যাভ এভার সিন ইন মাই হোল লাইফ। আমার এক্ষুণি ইচ্ছে করছে দৌড়ে…..
– টাইম এবং প্লেইসটা টেক্সট করে দিও৷
রুহানকে আর কোন উত্তর দেয়ার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। একটা মেয়ে আমাকে চুমু খেতে চায়, ব্যাপারটা খুব বড় কিছু না ভেবে মিডিয়াম কিছু ভেবে মন দিলাম নিজের কাজে। আমি খুব ভালভাবে জানি ফোনের ওপাড়ের রুহান নামের মেয়েটা আমার প্রতি চরম মুগ্ধ এবং কৃতজ্ঞ। এর কারণ ওর খুব খারাপ সময়ে আমি তাকে সংগ দিয়েছি। অনেক হাসিয়েছি লেইম লেইম জোক্স বলে। মেয়েরা মুগ্ধ হয়ে গেলে ছেলেদের প্রেমের প্রস্তাব দেয়, সেটা সম্ভব না হলে কোন রেস্টুরেন্টে ডেকে ভরপেট খাওয়ায় আর আসার সময় বডি স্প্রে, শার্ট কিংবা মানিব্যাগ জাতীয় কিছু একটা গিফট ধরিয়ে দিয়ে “থ্যাংক্স ” বলে দেয়। কিন্তু রুহান তার ব্যতিক্রম আচরণ করেছে। এ ব্যাপারটা আমার এক্সপেক্টেশান লেভেলকে একটা ধাক্কা দিয়েছে! কেন যেন এই অদ্ভুত ধাচের মেয়েটাকে খুব কাছ থেকে দেখে আবিষ্কার করার নেশা আমায় চেপে ধরেছে। মিনিট পাঁচেক পর নিউজ ফিড স্ক্রল করতে করতে হুট করে রুহান নামের মেয়েটার প্রোফাইল সামনে এসে গেল। আমি আনমনে এই দ্বিতীয়বার রুহানের প্রোফাইলে ঢুকে গেলাম। প্রথমবার ঢুকেছিলাম ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার সময়। ফেসবুকেই মূলত রুহানের সাথে আমার পরিচয়।
এক এক করে রুহানের সবকটা ছবি জুম ইন করে দেখলাম অজান্তেই। হুট করে আমার মনে কৌতূহল খেলে গেল। আচ্ছা, এতদিন মেয়েটা ফ্রেন্ডলিস্টে থাকার পর আজ হঠাত করেই আমি ওর ছবিগুলো দেখছি কেন বারবার? মেয়েটার ঠোট পাতলা নাকি মোটা এসব আবিষ্কার করার জন্যে? আচ্ছা, এক ধরণের মাদকতা আমাকে কি ঝাপটে ধরেছে? কিন্তু কেন? আমি পুরুষ বলে? নাকি রুহান একটা সুন্দরী মেয়ে বলে? রুহান কি আসলেই সুন্দরী? ফেসবুকের ছবিগুলো দেখেতো তাই মনে হয়। ফেসবুকে তো সব মেয়েকেই সুন্দরী মনে হয়। আচ্ছা, সুন্দর এর ই বা আসল সংজ্ঞা কি? আউল ফাউল চিন্তা মাথায় এসে জমে গেলেই আমি গলা ছেড়ে জোরেসোরে ভুলচুক গান ধরি। গান গেয়ে চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলে দিই। এবারো তাই করলাম।
এর পরের দুই দিন রুহান আমাকে একবারের জন্যেও কল করেনি। যে মেয়েটা ইতিমধ্যে আমার প্রতি মুগ্ধ আমার ধারণা তার ই আমাকে বারবার যেচে কল দেয়া উচিত। কল করে বলা উচিত ওমেদ সাহেব আমার মন খুব খারাপ, প্লিজ আপনি আমাকে হাসিয়ে দিন৷ খুব সম্ভবত এই দুদিনে মেয়েটার বাসায় কারোর সাথে কোন ঝগড়া বিবাদ হয়নি৷ তাই মন ও খারাপ হয়নি। মেয়েটা তাই যেচে কল করেনি সুতরাং আমিও আর আগ বাড়িয়ে কল করিনি। এটাকে কি বলে? মেইল ইগো? ইগোর ও আবার জেন্ডার আছে? না থাকলেও আমি মনে করি থাকা উচিত। কারণ কলেজ জীবনে একটা সিরিয়াস প্রেম করে আমার স্পষ্ট ধারণা হয়ে গেছে মেয়েদের ইগো অতিরিক্ত মাত্রায় বেশি হয়। স্কেলে মাপলে একশোতে নিরানব্বই দেখালেও অবাক হবনা। আর ছেলেদেরটা কত আসবে? আমার ইগো খুব বড়জোর একশোতে বিশ তিরিশ। মনে মনে নিয়াত করলাম রুহান নামক মেয়েটার সাথে দেখা করে এসে ইগো মাপার একটি স্কেল মাপার যন্ত্র আবিষ্কার করার কাজে নেমে পড়ব। স্কেলটার নাম রাখব “ইগোস্কেল।” সেদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙল ফোন কলে৷ ঘুম জড়ানো নিভু নিভু চোখে আনমনে কলটা রিসিভ করলাম। ফোনের ওপাশ থেকে অস্থির একটা মেয়েলী গলা বলল-
– হ্যালো আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?
– হ্যালো কে?
– কে মানে? আজব তো! আমি রুহান আরকি৷
– হ্যা তুমি রুহান। বল রুহান আমি তোমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি, রুহান?
– প্লিজ হেয়ালি করবেন না সকাল সকাল। জাস্ট বিশ মিনিট সময় দিলাম। উঠে ফ্রেশ হয়ে জলদি ঘর ছেড়ে বের হন। আমি নিউ মার্কেট দাঁড়িয়ে আছি। বুঝতে পারছিনা কিভাবে নদীর পাড়ে আসব? আমি আসলে কখনো যাইনিতো। আমি কি একটা রিক্সা নেব? নাকি হেটেই চলে আসতে পারব? প্লিজ জলদি বলুন। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছে।
– তুমি এত শিওর কিভাবে হচ্ছ যে আমি এত আরামের ঘুম হারাম করে ঘর ছেড়ে বের হব?
– মানে কি, ওমেদ সাহেব? আপনি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলেন। ভুলে গেলেন? আমি ভার্সিটির নাম করে ঘর ছেড়ে বের হয়েছি৷ আমার হাতে সময় খুব বেশি নেই। প্লিজ বি সিরিয়াস! কাম অন হারি। আই এম ওয়েটিং ফর ইউ।
গুটুর করে কানের উপর কলটা কেটে দিলাম। ঘুমটা ভেঙে গেল। সাথে ভেঙে গেল সুন্দর স্বপ্নটাও। স্বপ্নে দেখছিলাম অদৃশ্য চেহারার ফিনিফিনে লাইট পিংক কালারের পাতলা ঠোটের একটা মেয়েকে দিনে দুপুরে ওপেন গ্রাউন্ডে ফ্রেঞ্চ কিস করছিলাম। মেয়েটা জোরে জোরে বলছিল ” কাম অন, কিস মি হার্ড আগেইন এন্ড আগেইন!আমার একেকসময় মনে হয়, মানুষকে সৃষ্টিকর্তা শারীরিক কোন আকাঙখা না দিয়ে কেবল কিস করার ইচ্ছা দিতেন তাহলে বেশ হত! পরে আবার ভাবি,খালি কিস করে কি আর মানুষ জন্ম দিয়ে দেয়া যায়!
হুউশ! কিস এর কথা মনে পড়তেই রুহান এবং তার কিস এর অফারের কথা মনে পড়ে গেল। গত দুইদিন কোন কল না পেয়ে আমার ধারণা হয়ে গেছিল রুহান নামের মেয়েটা আসলেই আমার সাথে মজা করেছে। অথচ একটু আগের ফোন কলটা সেই ধারণাকে ভুল করে দিল। মনে হচ্ছে মেয়েটা তো ড্যাম সিরিয়াস! দ্যট মিন্স শি ইজ দেয়ার ফর কিসিং মি! অহ মাই গড। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার জীবনের এমন একটা সকাল শুরু হচ্ছে যে সকালে একটা মেয়ে কল করে ডাকছে তাকে কিস করতে যাওয়ার জন্যে। বিষয়টা কেমন? ফানি নাকি সিলি নাকি মিসচেরিয়াস? আই ডোন্ট নো। ইচ্ছে করছিল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই “hi frans amaka akti mea kiss khabar jonna daktasa, tomra amar jonna doa koro”।
আমি কি এক্ষুণি বিছানা ছেড়ে উঠে গায়ে একটা পাঞ্জাবি মাড়িয়ে দৌড়ে ছুটে যাব মেয়েটার কাছে কিস খাওয়ার জন্যে? আচ্ছা, রুহানের সাথে দেখা হলে আমি কি বলব? গিয়েই সোজা বলব ” আমার ঠোট রেডি, তুমি কিস কর”৷ এভাবে কি বলা ঠিক হবে? ধ্যাত আমি কেন যেচে বলব। ইচ্ছেটা রুহানের। রুহান নিজেই এসে আমাকে জাপটে ধরে চুমু খাবে, খাওয়া উচিত। যদি সেটাই করে তখন আমি কি করব? মজা নেব চোখ বন্ধ করে, টাইটানিক এর জ্যাক এর মতন! নাকি দৌড়ে ছুটে পালাব লজ্জায়!
দৃশ্যটা কেমন হবে? একটা মেয়ে আমার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে আর পেছন থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে “দাঁড়ান বলছি, কথা দিচ্ছি খুব জোরে করব না। আস্তে আস্তে করব। প্রথম প্রথম একটু ব্যাথা লাগবে। এরপর আরাম লাগবে। দাঁড়ান প্লিজ। দাঁড়ান। আমাকে কিস করে যান। নাহলে আমি গুলি করতে বাধ্য হব।” কথাগুলো চিন্তা করতে করতে আনমনে ঘুমু ঘুমু চোখে ফোনের ডাটা অন করে ফেসবুকে লগ ইন করতেই নিউজ পোর্টালের একটা নিউজ এ চোখ আটকে গেল আমার৷
ব্রেকিং নিউজঃ গতকাল বেলা ৪ ঘটিকায় কলাবাগান এলাকায় ফেসবুকে পরিচিত এক মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে গণধোলাই খেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক যুবক। ছেলেটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।” খবরটা পড়ে আমি আনমনে আমার ডান হাতের অনামিকার নখটা ক্যানাইন দাঁতের তলে নিয়ে খুট্টাতে লাগলাম। বুকের মধ্যে কেমন একটা ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগল। খুব পানির তৃষ্ণা পেল। কান্নাও পাচ্ছে মনে হচ্ছে৷ টের পেলাম আমার গোটা শরীর এই ঠান্ডা ওয়েদারেও ঘামাচ্ছে।