-আমি দেখতে খারাপ?
– অবশ্যই না।
-তাহলে আমায় ভালবাসিস না কেনো?
– তুই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু,আর এই বন্ধুত্ব ভালবাসার চেয়েও গহীন।
-কতবার বলবি এক কথা!
– যতবার তুই বলবি ভালবাসার কথা।
– আচ্ছা বাদ দে,আর বলবো না।শুধু একটা কথা রাখবি…প্লিজ।
– চেষ্টা করবো।
– আমায় ভালবাসতে হবে,জাস্ট তোকে একটু ভালবাসতে দিবি?
– মনে হয় আজকের মতন ওঠা উচিৎ!
– এটা আমার উত্তর না।
– বাংলায় একটা অনুবাদ শুনেছিস?
– কি!
– তেলে পানিতে কখনো মিল খায়না।
– মানে?
– তোর সাথে আমার কখনওই যায়না।
– সেটা পরের বিষয়।বুকে হাত রেখে বলতো তুই আমায় ভালবাসিস না।
– তোর আর আমার মাঝে কি ভালবাসা সব?
– জানিনা,তুই আগে বুকে হাত রেখে বল।
<কিছুক্ষণ ভেবে..>
– যদি সেটাই করতে হয়,
তবে শোন।হ্যা আমি তোকে ভালবাসি,নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসি।কিন্তু কি লাভ সেটা প্রকাশ করে! কিছুদিন পর তুই তোর আব্বুকে আমাদের রিলেশনের কথা জানাবি,তোর আব্বু আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে “না” করে দিবে।তার কিছুদিন পর তোর বিয়ে ঠিক করে ফেলবে,কোনো উপায় না পেয়ে তুইও বিয়ের ফিরিতে বসে যাবি।আর আমি!চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো চেয়ে চেয়ে শুধু দেখবো।
– তুই এখনো আমায় চিনলি না।
– মানে!
– কিছুনা,কাল ইন্টার্ভিউ আছে না?
– হুম।
– ভালোভাবে ইন্টার্ভিউ দিস।
– প্রথম ইন্টার্ভিউ,জানিনা কতটা ভালো হবে!
– টেনশন করিস না,চল উঠা যাক।
– হুম চল।
অতঃপর উঠে,নিধির বাড়ির উদ্দেশ্যে ওর পাশে হাঁটতে লাগলাম।দশ মিনিট হাঁটার পর বাড়ির সামনে এসে পৌছালাম। তখন হঠাৎ নিধি জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো “খুব ভালবাসি তোকে,তবুও বোঝাতে ব্যর্থ।শেষ ইচ্ছেটাও রয়ে গেলো অপূর্ণ।স্বপ্নগুলো চাপা পড়ে রইলো পুড়নো ডাইরির পাতায়।তাইতো হারিয়ে ফেলেছি মানেটা বেঁচে থাকার। জানিনা কোথায় অন্তিম!আবার হয়তো এটাই শেষ।” নিধির এমন অদ্ভুত কথা শুনে কিছু বলতে যাবো তখনি নিধি দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। আমিও আর না দাঁড়িয়ে বাসায় চলে আসলাম।
রাতে ঘুমাতে গিয়ে মনের মাঝে এক অস্থির ভাব অনুভব করলাম।কোনো হাওয়াই যেনো এই অস্থীরতা শীতল করতে যথেষ্ট নয়। তবুও কোনো উপায় না পেয়ে এদিকওদিক ঘুরতে ঘুরতে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙলো ঘড়িতে সেট করা নয়টার এলার্মে। ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে লাইফের প্রথম ইন্টার্ভিউ দিতে বেড়িয়ে পরলাম। সময় মতন অফিসে পৌছে সফল ভাবে ইন্টার্ভিউ দিতে সক্ষম হলাম। আশ্চর্য ভাবে চল্লিশ হাজার টাকা স্যালারির চাকরিটা পেয়ে গেছি। খুশি ধরে রাখতে না পেরে এক এক করে সবাইকে কল দিয়ে জানাতে লাগলাম।সবশেষ পালা এলো নিধির। দুঃখজনক ভাবে বালিকার ফোন অফ।ওপাশ থেকে ভেসে আসা “নাম্বারটিতে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব নয়” বাক্যটা খুশি মুখটা নিমেষে মলিন করে দিতে যথেষ্ট ছিলো। তার ঠিক কিছুক্ষণ পর unknown নাম্বার থেকে কল…
– হ্যালো।
– তুমি রফি?
– জ্বি।
– তুমি কি একবার MG হাসপাতালে আসতে পারবা।
– কেনো?
– নিধি সুইসাইড কড়ার চেষ্টা করেছে।
কথাটা শোনা মাত্র রক্তাক্ত চোখ বেয়ে ঝরনা নেমে এলো।আর কিছু না ভেবে সোজা MG হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। একঘণ্টা নিধির পাশে বসে অপেক্ষার পর বালিকা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো।তারপর কিছুক্ষণ এদিকওদিক তাকিয়ে উঁহু..উঁহু করে কান্না করে দিলো। বালিকার কান্না দেখে সবাই শান্তনা দিতে ব্যস্ত হয় পড়লো। সবার শান্তনা পেয়ে বালিকা কান্না থামিয়ে বললো “এবার তোমরা সবাই একটু বাইরে যাও।” কেউ দ্বিতীয় প্রশ্ন না করে এক এক করে বেড় হয়ে যেতে লাগলো।সবশেষ আমিও বেড় হতে গেলাম,তখনি নিধি হাত টেনে ধরলো “তুই কোথায় যাস!তোকেই তো লাগবে।”
– এমনটা করলি কেন?
– তাহলে ভালবাসিস না কেনো।
– এগুলা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না।
– জানি।
– বিয়ে করবি আমায়?[কিছুক্ষণ ভেবে]
– শর্ত আছে?[মিষ্টি হেসে]
– কি শর্ত!
– আমায় তুমি করে বলতে হবে আর এখন..এই মুহূর্তে রোমান্টিক ভাবে প্রপোজ করতে হবে।
– ওকে,দুই মিনিট সময় দাও।
– দিলাম।
<দুই মিনিট পর…>
ফুলদানিতে থাকা কাগজের ফুল নিয়ে নিধির সামনে তুলে ধরে মনের এক কণে পড়ে থাকা কথাটা বলে ফেললাম “অনিশ্চিত জিবনে তোমায় জড়িয়ে নিশ্চিন্তে ভালবেসে সাত কন্যা দুই পুত্রের ছোট্ট একটা রাজমহল গড়ে তুলতে চাই,”I LOVE YOU.” নিধি রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো “ফাজিল..I LOVE YOU TOO.
সমাপ্ত