আমার বোকা বউ

আমার বোকা বউ

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রিহানের আম্মুকে বিয়ে করছিলাম। সেই ঋণের কিস্তি এখনো দিচ্ছি। রিহানের আম্মু বিষয়টা জানেনা, তাকে জানানো দরকার ।
– রিহানের আম্মু শুনছো ?
– বলো।
– কিস্তি তো দুইটা বাকী পড়ছে।
– কিসের কিস্তি?
– আমাদের বিয়ের।
– মানে ?
– তোমাকে বিয়ে করার সময় ব্যাংক থেকে থ্রি লাকস্ লোন নিছিলাম! কিস্তি মিস হয়ে গেছে দুইটা। তাই যেকোন সময় ওরা তোমাকে নিয়ে যেতে পারে!
– কারা নিয়ে যেতে পারে। কী বলছো এসব হাবিজাবি ?
– হুম, ব্যাংকের নতুন নিয়ম হইছে। পরপর তিনমাস কিস্তি না দিলে ব্যাংকের লোকেরা বউ নিয়ে যাবে !
– মানে কী ! ফাইজলামি করো আমার সাথে ?
– ফাইজলামি না, অনেকের বউকেই নিয়ে গেছে। আমার বন্ধু ফাহিমকে তো চিনো ?
– চিনি তো !
– ফাহিমের বউ এখন কোথায় ?
– ফাহিমের বউ কোথায় আমি কেমনে বলবো ?
– ফাহিমও ঋন নিয়ে বিয়ে করছিলো। কিস্তি মিস করায় ব্যাংক ওর বউকে নিয়ে গেছে। বউ আনতে ফাহিম টাকার জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে। আমার কাছে আসছিল পরে আমি বলছি, আমার নিজেরই দুই মাসের কিস্তি বাকী পড়ছে।
– কী সব আজগুবি কথা বলছো ?
– আজগুবি না, সামনের মাসেই টের পাইবা ?
– মানে! মানে কী ! তাহলে কিস্তি পরিশোধ করছো না কেন ?

বউয়ের কন্ঠে উৎকন্ঠা! চেহারায় ভয়ের ছাপ ! আয়রন লেডি মোমের মতো গলে গেছে। ভয় পেলে মেয়ে মানুষের সৌন্দর্য বাড়ে। রিহানের আম্মুকেও অনেক সুন্দর লাগছে।বিন্দু বিন্দু ঘামে তাঁর নাক মুখ ভিজে গেছে। ইচ্ছে করছে বুকে টেনে অভয় দিই। কিন্তু না……!! একটু শিক্ষা তাকে দিতেই হবে! ঘরে বসে বসে অনলাইনে শপিং করে আমাকে ভিক্ষুকের পর্যায়ে নামিয়ে ফেলছে। ঘরের কাজে মন নাই সারাদিন থাকে শপিং নিয়া। আজব এক মহিলা।

– শুনো বিয়া আমিও করছি, তুমিও করছো। এতোদিন আমি কিস্তি দিছি এখন থেকে তুমি কিস্তি দিবা বুঝছো?
– আমি কেমনে কিস্তি দিবো!
– তাহলে কে দিবে?
– ঋণ করছো তুমি। কিস্তিও তুমিই দিবা!
– কিন্তু আমি যে ব্যাংকে তোমাকে মর্টগেজ রাখছি!
– মর্টগেজ কী?
– মর্টগেজ মানে বন্ধক। তোমাকে বন্ধক রেখে টাকা তুলছি। তোমার সই আছে পেপারে।
– অনি তুমি আমাকে বোকা পেয়ে এসব করছো! ভ্যা…….!
– কান্না থামাও প্লিজ। কেঁদে লাভ নাই! তোমার উচিৎ ছিল পেপার দেখে সই করা!
– তোমাকে আমি বিশ্বাস করতাম! ভালবাসতাম!
– ওহ্ তাই নাকি ?
– তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করছিলাম আর তুমি আমাকে ব্যাংকের কাছে বেঁচে দিছো, ভ্যা……ভ্যা…. ?
– আহা কান্নার কিছু নাই, এখন থেকে আমার কথা মতো চলবা তাহলেই হলো। আমি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করবো। কেউ তোমাকে নিয়ে যাবেনা!
– আমি তো তোমার কথা মতোই চলি। কোন কাজটা তোমাকে ছাড়া করছি ?
– করছো না মানে বহু করছো। যাহোক আজকে থেকে অনলাইনে আর হাবিজাবি কিনবা না, ওকে ?
– ওকে ।
– আর কোনদিন তিতা করলা ভাজি করবা না!
– ওকে।

– তিনতলার মুটকি ভাবীর কোন পরামর্শ কানে তুলবা না!
– আচ্ছা ওকে।
(মুটকি ভাবীই আমাকে তিতা করলা খাওয়ানোর কুবুদ্ধিটা দিছিল)
– পান থেকে চুন খসলেই নিজের মাকে জানাইবা না।
– ওকে
( এই কথা সে মোটেও মানবে না একটু পরেই মায়ের কাছে ফোন দিয়ে বলবে, মা অনি আমাকে ব্যাংকে বিক্রি করে দিছে!…… ভ্যা….. ভ্যা…..!)
– তিফার আম্মুর কাছ থেকে ভালো ভালো রান্নার রেসিপি শিখবা!
– ওকে।
– এখন থেকে কাপড় চোপড় আর লন্ড্রিতে যাবে না তুমি নিজেই ধুয়ে আইরন করবা!
– ওকে।
– রাতের বেলা কারণে অকারণে আমাকে বাইরে বের করে দরজা বন্ধ করতে পারবা না, ওকে!
– ওকে।
– কোন প্রকার ধানাইপানাই চলবেনা। করলেই কিস্তি অফ, মনে থাকবে?
– ওকে…!
– কথায় কথায় ভ্যা ভ্যা করে কান্না করা যাবেনা।
– আচ্ছা ওকে।
– এখন চোখ মুছো। যাও বরফকুচি দিয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে আনো।

বাধ্য বউয়ের মতো রিহানের আম্মু কিচেনের দিকে যাচ্ছে।
শরবত নিয়ে আসলেই হাত পা টিপে দিতে বলবো, শরীরটা মেজমেজ করছে।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত