লতার সাথে আমার সম্পর্কটা দেখতে দেখতে দুই বছর হয়ে গেছে। দুজন দুজনকে পাগলের মত ভালোবাসি। একদিন কথা না বললে মনেহয় যেন আমার দেহের প্রানটা যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। তাই সবসময় লতার সাথে কথা বললাম। বেশ আনন্দে দিন কাটতেছিলো আমাদের। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার সাথে ফোনে কথা বলার সময় লতার মা দেখে ফেলে তারপর লতার ফোন কেরে নিয়ে ওকে মারতে শুরু করে।পরের দিন লতা তার বাবার ফোন দিয়ে বলে আমার ফোন কেরে নিছে আর কথা হবে না। এটা শুনেই আমি থমকে যাই, মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো দেখতে দেখতে ১২ দিন চলে গেলো প্রত্যেকটা দিন কেদেছি ঠিক মত খাইনি।
হঠাৎ লতার বান্ধুবীর ফোন রিসিভ করতেই বললো লতা চিঠি দিছে এসে নিয়ে যা। আমি তারাতারি ওর কাছে গিয়ে চিঠিটা নিলাম। বাড়ি এসে খুলে দেখলাম চিঠিতে লেখা ছিলো,,
প্রিয় আসিফ,
বাবা বলতেছি তোর জন্য আমি পাগল গয়ে গেছি। আর মা চলতেছে মানুষ একবার শিক্ষা পেলে আর ওই দিতে যায় না। মা ধরে মারতেছে খারাপ কথা বলতেছে তবু তোকে ঘৃনা করতেছি না। বাবা বলতেছে ওই ছেলে জল পোড়া তেল পোড়া একে ছিটিয়ে এর মাথা নষ্ট করে দিয়েছে।পড়া তো পরে না শুধু বসে বসে ধান্দা দেখে, পরিক্ষা দিলে পাশটা করতে পারবে না।
তারপর বলছে ওই ছেলেটার মাঝে কি এমন দেখেছে। আবার বলতেছে আপুর বিয়ের কিছুদিন পর আমার বিয়ে দিবে। আর যেখানে বিয়ে হবে সেখানে সবার কথা শুনতে হবে, আর যে আমাকে বিয়ে করবে সে আমায় নাকি মারতে মারতে শেষ করবে। যদি আমার প্রেমের কথা তার কানা যায় তার মা ও আমাকে ছেড়ে দিবে না।
আমার জন্য বাবার বন্ধুরা তাকে আর কথা বলে না।আমি নাকি বাবাকে মেরে ফেলছি, শুধু কোন মতে বেঁচে আছে।মা বলতেছে তারা আমাকে অনেক বিশ্বাস করতো, কিন্তু এখন আর করে না,আমি হারিয়ে ফেলছি সেই বিশ্বাস। আমাকে তারা আর ভালোও বাসে না আসিফ আমি বুঝতে পারি। বাবা বলতেছে শেষ পর্যন্ত আমি আমার জাতিটাকেও দিতে পারি। এগুলো শোনার পর আর রাখতে ইচ্ছে করতেছে না নিজেকে। আমি জানি আমরা একে অপরকে অনেক লাভ করি, হয়ত আমাদের জীবনে মরনকেই বেঁচে নিতে হবে।
ইতি তোর মিষ্টি বউ
———-লতা
চিঠিটা পড়তে পড়তে আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিলো । হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিলাম। যাকে এতটা ভালোবাসি সে এত কষ্টে আছে জেনে আমার বুকের ভিতরটা যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে। আমি বিছানায় শুয়ে অঝড়ে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। আর তখন লতাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করতেছিলো। আর ভয় হচ্ছিলো আমি আমার লতাকে হারিয়ে ফেলব না তো। সে যে আমায় অনেক ভালোবাসে। সেদিনের রাতটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
পরের দিন সকাল বেলে লতার বান্ধুবীর কাছে ফোন নিয়ে গেলাম, তাকে ফোনটা দিয়ে লতাকে দিয়ে আসতে বললাম এবং আমি বাড়ি চলে এলাম। বার বার শুধু ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, আর ভাবতেছিলাম
ওর বান্ধুবী কি এখনো ওর বাড়িতে যায়নি। কেন লতা আমায় মেচেছ দিচ্ছে না। এরকম করতে করতে বিকেল হয়ে গেলো হঠাৎ মেচেছ আসলো আসিফ, আমি সাথে রিপেলে দিলাম কেমন আছো তুমি? তখন লতা দিলো আমি ভালো নেই বাবা মা আমার সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করতেছে, তুমি কেমন আছো, আমি দিলাম, তোকে ছাঁড়া আমি বাঁচতে পারব না। তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারতেছি না আমি তোকে বিয়ে করব।তখন লতা দিলো আমিও তোকে ছাঁড়া বাঁচব না বিয়ে করে সারাজীবন তোর কাছে থাকব।
তারপরে লতার সাথে অনেক কথা হলো বেশ খুশি হয়েছিলাম দুজনে, কারণ প্রায় ১৩ দিন পর আমার আর লতার যোগাযোগ হয়। এই ১৩টা দিন দুজনে অনেক কষ্টে কাটিয়েছি। তবে আমার চেয়ে লতাকে বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিলো কারণ তার বাবামায়ের অত্যাচার সহ্য করার মত না। ঠিক তখনি আমি বুঝেছিলাম একটা মেয়ে অন্য জাতি হয়েও আমায় এতটা ভালো বাসে। আমার জন্য অনেক মার ধোর ও খেয়েছে, তাকে কিভাবে আমি ছেড়ে থাকতে পারি, তাকে যে আমার হৃদয়ের মাজখানে স্থান দেওয়া উচিৎ।
পরের দিন আবার দুজনে প্রান খুলে কথা বলেছি দুজনে হেসেছি সত্যি এতটা খুশি হয়েছিলাম যে আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না। এভাবেই ধিরে ধিরে সময় পেরোতে লাগলো আর আমার আর লতার সম্পর্কটা গাঢ় হতে লাগলো। লতা এস এস এস পরিক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করলো। এবং কলেজে ভর্তি হলো। প্রতিটা দিন ঘুম থেকে উঠেই লতার মেচেছ এবং ফোন পাই। প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহূর্ত তাকে সময় দেই আর দিবোই না কেন লতা যে আমায় পাগলের মত ভালোবাসে।
দুজনে মিলে ঠিক করেছি ইন্টার পাশ করেই পালিয়ে বিয়ে করব। দুর অজনা এক শহরে যাব যেখানে আসিফ আর লতাকে কেউ খুজে পাবে না। সুখের সংসার করব, আমাদের বেবি হবে আরো কত কি। এখন প্রায় প্রতিটা দিনন বিয়ের পরে কি করব কেমন বাড়িতে থাকব এগুলা বলতে বলতেই দিন পার হয়ে যায়।
সমাপ্ত…..