আজ বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি,এখন ভোর
৩:৫০ মিনিট বাজে। তারাহুরা ভাবে রেডি হচ্ছি। আপনারা আবার ভাববেননা যে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছি, আসলে আমার চাকরিটা বদলি করে ঢাকা নিয়ে গেছি, এখন ঢাকার পথে পাড়ি দেওয়ার পালা। কারন সকালে ৮টায় অফিসে গিয়ে এটেন্ট করতে হবে।
বাসা থেকে চলে যাওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে
নীলার সাথে রাগ দেখিয়ে, আচ্ছা আপনারা বলেন তো, আমি কি ওকে স্পর্শ করতে পারিনা, পারবনা কেন ওতো আমার একমাত্র স্ত্রী। না হয় আমি জোর করে ওর ঠোটে একটা চুৃমো খেয়েছিলাম, এর জন্য কি আমাকে থাপ্পর মারতে হবে। আমার কি কোন অধিকার নেই ওকে চুমো খাওয়ার। আসলে আমার রাগ এমনিতেই বেশী। তাই মনের উপর জেদ ধরেই চাকরিটা ঢাকা বদলি করে নিয়েছি। আমার সব ঘুছানো শেষ।
-মা,মা, এখানে আসোতো(আমি)
-কি হইছে(মা)
-বাবা কই?(আমি)
-এইতো এখানে(বাবা)
আমি উনাদের পায়ে সালাম করে বের হবো এমন সময় মা বলে উঠলেন –
– বউমাকে সাথে নিয়ে গেলে কি হয়???(মা)
– না ওর যেয়ে লাভ নেই, তাছারা তোমাদের এখানে কে দেখাশুনা করবে ও চলে গেলে।(আমি)
– তুই ওকে নিয়ে যা তোর ওতো মানুষ লাগবে নাকি একটা, তোর রান্না -বান্না…….(বাবা)
বাবাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম-
– বললামতো বাবা আমার কষ্ট হবে না, আমি এখন যাই তা না হলে ট্রেন মিছ করব।
-আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করছ(মা)
আমি নীলার দিকে একবার তাকিয়ে চলে আসলাম। সে আমার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে, সে বুঝতে পারছে কেন আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। ট্রেনে বসে আছি,ট্রেন আপন গতিতে চলতেছে। আর মনে করতেছি পিছনে ফেলে আসার দিনগুলোর কথা………..
আমি আকাশ ,পড়ালেখা শেষ করে করে ঘুরছি, অর্থাৎ চাকরির জন্য। বাবা-মা বারবার বলেছে আমাদের নিজের অফিসে জয়েন্ট করতে, কিন্তু আমি ইচ্ছে করে জয়েন করতেছিনা। আচ্ছা আপনারা বলেন নিজের অফিসে যদি জয়েন করা লাগে তাহলে এতদূর
কেন শুধু শুধু কষ্ট করে লেখাপরা করে আসছি ।নিজের অফিসে জয়েন করলে আমার যোগত্যাটা তো আর প্রোব করতে পারলাম না তাইনা, তাই আমি আমাদের অফিসে জয়েন না করে চাকরির জন্য ঘুরাঘুরি করছি।
বেশীদিন লাগেনাই চাকরিটা পেতে,মেনেজার পদ, ভালোই বেতন দেয়। চাকরিতো পেলাম কিন্তু ইতিমধ্যে বাবা-মা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে, আচ্ছা কে চায় নিজের স্বাধীনতাটা হারাতে, তাই আমার থেকে মনে হয় ব্যেচালার লাইপ সবচেয়ে বেস্ট। কিন্তু মা-বাবা আমার পিছনে এমন ভাবে লেগেছে যে বিয়ে আমাকে করিয়ে ছারবেই,
উনাদের কথা-
– আমাদের কি নাতি-নাতনিদের দেখা সখ নেই।(মা)
– আমরা কি আমাদের নাতি-নাতনিদের সাথে দুষ্টমি করতে পারবনা, তাদের আদর করার অধিকারটাও কি তুই ছিনিয়ে নিবি,
নাকি আমাদের মরার পর বিয়ে করবি(বাবা)
– বাবা……(আমি)
-তোর বাবা তো ঠিকই বলেছে,(মা)
-আচ্চা যাও তোমাদের যা মন চায় তা কর (, আমাকে এমন ভাবে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে তাই বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেলাম)
-আচ্ছা তাহলে তারাতারি রেডি হয়ে নে(বাবা)
-কেন?( অবাক হয়ে)
-কেন আবার বিয়ে করতে যাবি(মা)
-কি!!!!(আকাশ থেকে পড়লাম)
-হুম তারাতারি রেডি হয়ে নে আজ সন্ধ্যায় বউমাকে ঘরে তোলে আনব।(বাবা)
-তার মানে আগের থেকে সব ঠিক করে রাখছ(আমি)
-হুম এখন কথা না বলে তারাতারি রেডি হয়ে নে (মা)
-কিন্তু অনুষ্ঠান ছাড়াই,,,,,,,( আমি)
-পরে অনুষ্ঠান করা যাবে,এখন রেডি হয়ে আস(মা)
-আচ্ছা
বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম কিন্তু আমার কপাল এতই খারাপ যে এখনো বউয়ের মুখটা পর্যন্ত দেখলাম না। তবে এইটুকু জানি মেয়েটা নাকি আমার মায়ের বান্দবীর মেয়ে,নাম,নীলা। ছোটবেলায় দেখছিলাম মনে হয়। মেয়েটা আমার থেকে ৩বছরের ছোট হবে সম্ভবত।
যাই হোক রাত ঘনিয়ে আসছে, আমি এখন বাসর ঘরে ঢুকছি, বুকটা দুক দুক করে কাপছে। তবুও ছোটবেলা থেকে কত স্বপ্ন ছিল এই বাসর নিয়ে, ছোটবেলা ভাবতাম কবে যে বিয়া করুম,কবে যে বাসর করমু। কিন্তু যখন সময়ের আবর্তনে বড় হতে থাকলাম তখন বুঝলাম আসলে বিয়ে করাটা হলো বন্দি খাচার মতো।
পাখিকে যখন খাচার ভিতর আটকে রাখা হয় তখন সে তার নিজের স্বাধিনতাটা হারিয়ে ফেলে, ঠিক তেমন একটা ছেলে বিয়ে করলে তার স্বাধীনতাটা হারিয়ে ফেলে,
আস্তে আস্তে খাটের কাছে যেতে বলে উঠল–
-আপনি আমার কাছে আসবেনা (নীলা)
-কেন?(অবাক হয়ে বললাম)
-আসলে আপনি হয়ত আমাকে দেখেননাই অথবা দেখলেও খেয়াল করেননাই, আমি আপনাকে সবসময় আমার বড় ভাইয়ের মতো করে দেখে আসছি, তাই আমি আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবনা,(নীলা)
বলে কি এইমেয়ে,,,,,
– আচ্ছা ঠিকআছে,কিন্তু এখন তো স্বামি হিসেবে মেনে নিতে পারো,
– আমি মানতে পারবোনা, আমাকে স্পর্শ করতে পারবেননা, কখনো স্বামীর অধিকার দেখাতে আসবেন না।
আমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো, আমি ধীরে ধীরে এগুতে লাগলাম।
-প্লিজ কাছে আসবেননা (কাদো কাদো কন্ঠে)
নীলাকে এই অবস্হায় দেখে আমার বড় ভালোই লাগছে, তার চেহারাটা আগের থেকে আরও বেশী ফুটে উঠেছে।কে শুনে কার কথা আমি এগিয়ে যাচ্ছি নীলার দিকে.
মিমি যা বলেছে ঠিকই বলেছে, সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছি মিমিকে বিয়ে করব এখনি, আবার মন বার বার বলে আমি কোন ভুল কাজ করছি নাতো। আবার মন বলে আমি কোন ভুল কাজ করছিনা, কারন নীলাতো আমাকে মেনে নেয়নি, আমাকে স্বামীর অধিকার দেয়নি, তাহলে কেন শুধু শুধু তার জন্য আমি অপেক্ষা করব।
– কিরে কিছু বলবিনা, আমাকে বিয়ে করবি, দেখবি আমরা অনেক সুখি হবো, কোনদিন তোকে কষ্ট দেবনা, তোকে অনেক ভালোবাসব।
আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম, মিমির হাত ধরে বললাম –
-চল(আমি)
-কোথায়?(মিমি)
-আরে গেলে দেখতে পাবি।
-বললে কি হয় বলনা।
-তুই না আমাকে বিয়ে করতে চাস।
-হুমম করতে চাই, কিন্তু তুইতো কি বললিনা।
-আমার কিছু বলার নাই,তোকে এখন কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করব।
-সত্যি।
-হুম সত্যি।
মিমি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
-কিরে কাদছিস কেন?
-এটা সুখের কান্না তুই বুঝবিনা।
-বুঝা লাগবেনা এখন চল।
আমি আর মিমি কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি। বিয়ে করার পর মিমি তার বাবাকে জানায়, মিমির বাবা আমাদের মেনে নিয়েছেন। রাতে বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছি, পাশে মিমি আমার কাধে মাথা রেখে গা টা এলিয়ে দাড়ীয়ে
আছে।
-আচ্ছা মিমি একটা কথা বলি(আমি)
-একটা না তুমি হাজারটা বলো আমি শুনতে রাজি আছি,(আমরা এখন থেকে অর্থাৎ বিয়ে হওয়ার পর থেকে তুমি করেই বলি)
-আচ্ছা নীলা যদি আমার থেকে কোনদিন স্বামীর অধিকারের জন্য আসে তখন কি করব।
-ও কখনো তুমার কাছে আসবেনা যদি আসে তাহলে দেরি করে পেলেছে, কারন কখনো কোন মেয়ে চাইবেনা তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে, সো আমিও আমার স্বামীর ভাগ আমি কাউকে নিতে দেবনা(কথাটা বলে মিমি আমার গালে আলতো ভাবে চুমো খেলো)
-রাত অনেক হয়ে গেছে,চলো রুমে যাই(মিমি)
-আচ্ছা চলো(আমি)
-কিন্তু আমি যাবনা।
-এইনা বললে যাবে।
-আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
-অহ এই ব্যাপার, ঠিকআছে।
আমি মিমিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম,
-আচ্ছা তুমি এতো ভারী কেন(দুষ্টমি করে)
-কি আমি ভারি(কথাটা বলে আমার বুকে আলতো ভাবে কিল-ঘুসি মারল)ঐছে আমাকে নামিয়ে দেও তুমার কোলে নেওয়া লাগবেনা(অভিমান করে বলল কথাটা)
-আহারে আমার বাবুনিটা দেখি রাগ করছে,
উমমমা।এইবার রাগ ভাঙ্গছে।(গালে একটা পাপ্পি দিলাম)
-যাও তুমি অনেক দুষ্টু।
-এই শুননা।
-হুম বলনা।
-তুমিনা বলছিলা আমাকে খেতে দিবা।
-কি খেতে আবার বললাম।
-ঐ যে তোমার ঐ নরম ঠোট দুইটি।
-আহারে আমার জামাইর আর সইছেনা দেখছি, যাও লাইটটা নিভিয়ে আস।
ঐ আপনারা এখন একটু থামেন,আর পড়া লাগবোনা, ভদ্র ছেলে-মেয়েদের মতো এখান থেকে এখন যান,। এখানে আমাদের স্বামী -স্ত্রী ছাড়া কেও থাকতে পারবেনা,ওকে সাটার অফ।
সকালে আযানের সুমধুর আওয়াজ কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। মিমি চুপটি মেরে আমার বুকের উপর শুয়ে আছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে, বাচ্চা বাচ্চা লাগছে, ওর চুলগুলো বাতাসে মুখের উপর পড়ছে। আমি চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে মোলায়েম ভাবে তার কপালে একটা চুমো দিলাম। চুমো দেওয়াতে মিমি সজাগ হয়ে গেছে,
.
-এই অফিসে যাবেনা(আমি)
.
-১সপ্তাহ কোন অফিস নাই,শুধু থাকবে আমাদের ভালোবাসা(আমাকে আরও জরীয়ে ধরে কথাটা বলল।)
.
বিকেলে ঘুরতে যাওয়া, মিমিকে কালো একটা শাড়ী পড়িয়ে দিলাম নিজ হাতে, কারন সে শাড়ী পরতে পারেনা, আস্তে আস্তে শিখে যাবে পরে একদিন। আমার কালো রং পছন্দেরর তাই মিমি কালো শাড়ী পরবে বায়না দরল, তাই পরিয়ে দিলাম। আর মিমি আমাকে নীল পান্জাবি পরিয়ে দিল। বিকেলে দুজনে হাত ধরে হাটছি আর বিভিন্ন কথা বলছি। রাতে একে অপরকে নিজ হাতে খাইয়ে দিললাম। রাতে মিমি আমার গায়ের উপর উঠে আমার বুকে মাথা রেখে বলল-
-আমাদের বিয়ের কত্থাটা কি কাউকে জানিয়েছো,(মিমি)
.
-না।
.
-জানাবেনা?
.
-যখন সময় আসবে তখন জানাবো। আসো তুমাকে এখন একটু আদর করি।
.
-আরে আমার জামাই আদর করবে, তাকে অাবার পারমিশন নিতে হবে নাকি।
.
এইভাবে চলল আরো দুইমাস, আমার আর মিমির সংসারটা বেশ জমে উঠেছে।
.
-মিমি সামনেতো ঈদ,বাড়িতে যাওয়া লাগবে।(আমি)
.
-হুম জাবে(মিমি)
.
-কিন্তু তুমি(আমি)
.
-আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা,আমি বাবার কাছে চলে যাব, আর তাছাড়া বাবার সাথেও অনেক দিন দেখা হয়না, ওখানে যেয়ে কিছুদিন বেড়ানো ও যাবে।
.
-আচ্ছা।
.
আজ বাড়িতে যাচ্ছি,,,,,
কালকে ঈদ,রাত ৯:৪৫ মিনিট বাজে। বাসার কলিংবেল বাজাচ্ছি,এখনো কেও খুলছেনা। আসলে আমি কাউকে এখনো জানায়নি যে বাসায় আসব। কিছুক্ষন পর মা দরজা খুলল, আমাকে দেখতো অবাক। কারন না বলে এসেছি তার উপর অনেক মাস পর এসেছি বাড়িতে।
.
-কেমন আছিস বাবা(মা)
.
-ভালো, তুমি কেমন আছ?(আমি)
.
-এতদিন তোকে না দেখে ভালো ছিলামনা, এখন ভালো হয়ে গেছি(মা)
.
-কে এসেছে (ভিতর থেকে বাবা বলল)
.
-দেখো কে এসেছে,(মা)
.
-আরে বাবা, কখন আসলি এখনো বাইরে ভিতরে আয় কেমন আছিস?
.
-হুম ভালো।
.
-এই নাও এগুলো তোমাদের জন্য।
.
-কি আছে এইগুলোর ভিতর (বাবা)
.
-জামা-কাপড়।
.
-আর বউমার জন্য(মা)
.
– এখানে আছে তুমি দিয়ে দিও,আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি?
.
কথাটা বলে আমার রুমের দিকে রওনা দিতে দেখলাম নীলা দরজার পর্দার আড়ালে দাড়ানো, মুখে খুশির ছাপ,জানিনা কি জন্য
নীলার মুখে খুশির ছাপ, জানি না কি জন্য। আমি গোসল করতে ঢুকলাম,আহারে, তোয়ালেটা তো আনতে মনে নাই।
.
-মা,,,,,,মা,,,,,আমার তোয়ালেটা দিয়ে যাওতো (আমি বাথরুম থেকে জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম)
.
কিছুক্ষন পর দরজা টোকা মারার আওয়াজ।
মনে হয় মা তোয়ালেটা আনছে, দরজা খুলে মাথা বার করে দেখি নীলা হাতে তোয়ালেটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
.
-এই নিন আপনার তোয়ালেটা (নীলা হাত বাড়িয়ে তোয়ালেটা দিল)
.
আমি অবাক হয়ে তোয়ালেটা হাতে নিলাম। কারন নীলা সবার সামনে ভালো ভাবে চললেও একা কখনো ভালো ভাবে চলতো না। আজকে তাকে অন্য রকম লাগছে। যাইহোক গোসল সেড়ে ভাত খেতে আসলাম।
.
– মা আজকে রান্নাটা কেমন যেন লাগছে। (আমি)
.
-কেন ভালো হয়নি।(মা)
.
-না,অনেক ভালো হয়েছে(আমি)
.
-নীলা রান্না করছে(মা)
.
মার কথাটা শুনে আমি নীলার দিকে তাকালাম, তার মুখে আবার সেই খুশির বন্যা, মনে হয়ে আমার থেকে এই কথাটা আশা করেছিল।
.
-তুই আর কতদিন আছিস বাড়িতে (বাবা)
.
– এইতো কালকের পরেরদিন চলে যাব। (আমি)
.
– মাত্র তিনদিনের জন্য আসলি এত মাস পর।(মা)
.
-অফিস থেকে তো আর এতদিন ছুটি দেয়না, বুঝইতো।
.
-আচ্ছা,যাইহোক এইবার যাওয়ার সময় নীলাকে সাথে করে নিয়ে যাবি।(বাবা)
.
আমি বাবার কথা শুনে বললাম-
-ও গেলে তোমাদেরকে দেখবে কে?
.
-মেয়েটা সারাদিন বাসায় একা একা বসে থাকে, কোথাও ঘুরতে যেতে পারেনা, তুইও ওখানে গিয়ে ওর সাথে ভালো মতো কথা বলিস না। মেয়েটা সবসময় মনমরা হয়ে থাকে, তাই আমি বলছি তুই ওকে এইবার যাওয়ার সময় সাথে করে নিয়ে যাবি।(মা)
.
আমি আর কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে ওখান থেকে চলে আসলাম। বারান্দায় গিয়ে মিমির সাথে ফোনে কথা বলে, রুমে আসলাম। নীলা খাট ঠিক করছে। আমি একটা বালিশ আর আরেকটা কাথাঁ নিয়ে সোফায় আসার জন্য প্রস্তুত হলাম, তখন নীলা বলে উঠল-
.
-আপনি বিছানায় শুয়েন,সোফায় শুতে হবে না।(নীলা)
.
-না সমস্যা নাই, আমি সোফায় শুতে পারব।
-আরে আপনার সোফায় শুয়া লাগবেনা একেত জার্নি করে আসছেন। তার উপর আপনি অনেকদিন পর বাসায় আসলেন,তাই আপনি খাট এ শুবেন।(নীলা)
.
-কিন্তু তুমি..(আমি)
-আমি খাটের একপাশে ঘুমাব আর আপনি আরেক পাশে,আমার কোন সমস্যা হবেনা।(নীলা)
.
আমি আর কোন কথা না বলে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। নীলার আচরন আজ অন্য রককম লাগছে কেনো। মাঝ রাতে কেমন যেন ঠান্ডা পরতেছে, এখনো ঘুমে আমি, পুরোপুরি সজাগ হয়নি। কিছুক্ষন পর নরম কিছুর স্পর্শ পেলাম আমার শরীলে,সাথে ঠান্ডাটাও কমে আসছে, আমিও আরো জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলাম।
.
সকালে মুয়াজ্জিনেরর কন্ঠে ভেসে আসা সুমধুর আযানের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল আমার। বুকের উপর ভারী কিছু পরে আছে, বুকের উপর বললে ভুল হবে, আমার শরীরের উপর কারো শরীর যেন এলিয়ে দিয়ে রাখছে। ঘুমটা পুরাপুরি কাটার পর দেখি নীলার শরীরের প্রায় অংশ আমার উপর, আমার বুকে মাথা দিয়ে,শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। কি মায়াবি লাগছে তাকে,একদম বাচ্চাদের মতো করে চুপটি করে আমাকে আকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আমি আস্তে করে তাকে নামিয়ে দিলাম, যাতে করে সজাগ না পায়। তারপর নামাজ পরতে চলে গেলাম। নামাজ পরে বাসায় না এসে একটু হাটলাম, আজকে সকালের আবহাওয়াটা সত্যি অন্যদিনের থেকে বেশ আলাদা লাগছে, মনে হয় ঈদের দিন বলে।
.
৩০দিন রোযা রাখার পর, আজ মুসলিমদের উৎসবের দিন। বাসায় গিয়ে গোসল করে, আমি আর আব্বু ঈদের নামাজ পড়তে আসলাম। নামাজ পরে বন্দুদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসায় গিয়ে দেখি আম্মুর আর নীলার রান্না শেষ। আমি খেতে বসলাম।
.
-নীলাকে নিয়ে একটু বাহিরের থেকে ঘুরে আসিস তো।(মা)
.
-আচ্ছা ঠিক আছে।(আমি)
.
জানিনা মাকে কেনো জানি না বলতে পারলামনা। খাওয়া দাওয়া করে রুমে শুয়ে আছি। কিছুক্ষন পর নীলা বাথরুম থেকে গোসল করে বের হয়ে আসল। কালো একটা শাড়ী পরেছে মেয়েটা,অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে। কাপরটা হালকা ভিজে নীলার পাতলা কোমরকে আকড়ে ধরছে অর্থাৎ লেপটে আছে। এইটা আরও ওর রূপের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তুলেছে। নীলা হালকা ভাবে সাজছে,কারন এটাই প্রথমবার, আমি আর নীলা বাড়ির বাহিরে একসাথে বের হই নাই। নীলা গলায় লকেট পড়ার বৃথা চেষ্টা করছে, কারন লকেট পড়তে পারছেনা।তাই দেখে আমি বললাম –
.
-হ্যাল্প করা লাগবে নাকি (আমি)
.
-আসলে আমি পড়তে পারতেছিনা আপনি একটু পড়িয়ে দিলে ভালই হয়(কিছুক্ষন ভেবে বলল)
.
আমি ওকে লকেট পড়িয়ে দিচ্ছি আর বলতে
লাগলাম –
-তোমাকে কিছু বলার ছিল।(আমি)
.
-বলেন..
.
-কি করে যে বলি,
.
-সোজাসোজি বলে পেলেন।
.
-না মানি তুমিতো আমাকে মেনে নিতে পারনি তাইনা, আরও বলেছো যে আমি যেন তোমার উপর স্বামীর অধিকার না দেখাই, তাই আমি ঐ দিনের জন্য সরি।
.
আমার দিকে তাকিয়ে কেমন ভাবে যেন বলল-
-আমি আগের কথা সব ভুলে গেছি।
.
-কিন্তু….
.
-কিন্তু কি?
.
-তুমি যেহেতু আমাকে মানতে পারনি, তাই আমি বলছি তুমি চাইলে আমাকে ডিবোর্স দিয়ে দিতে পার।
.
নীলা আমার কথাটা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল।
.
– আর আরেকটা কথা আমি একজনকে ভালোবাসি, আর আমি তাকেই বিয়ে করেছি।(আমার কথাটা বলতে কেমন জানি গলাটা কেঁপে উঠল)
.আমার কথা শুনে নীলার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিল, চোখে মুখে কেমন যেন কান্নার আভা ফুটে উঠেছে।
.
-কি বলছেন আপনি এইটা,আরেকটা বিয়ে করছেন মানে?(কান্নাময় কন্ঠে বলল)
.
-হুম তুমি ঠিকই শুনেছো, আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ছিলাম,কিন্তু বুঝলেনা তুমি আমায়,বুঝলেনা আমার ভালোবাসাটা।
.
-তখন হয়তো আপনাকে আমি বুঝতে পারিনি, কিন্তু আপনি যেইদিন চলে গেছেন, তখন থেকে প্রত্যেকটা মুহূর্ত আপনাকে মনে পড়ছে,আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করি, আমার ঐদিনের ব্যবহারের জন্য আমি সরি। প্লিজ এমনটা বলবেননা, (কাঁদতে কাঁদতে)
.
-এখন বলে লাভ কি, আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছি, আমরা এখন অনেক সুখে আছি, তাই প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে দাও(আমি)
.
-ঐদিন একটা চুমো খেয়েছেন বলে আমি আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করছি, আজ আমি আমার শরীর টা আপনার কাছে মেলে ধরলাম(টান দিয়ে শাড়ীর আচলটা ফেলে দিয়ে) আপনি যাই ইচ্ছা তাই করেন আমি কিছু বলবনা, তবুও আপনি ঐ কথাটা বলবেন না প্লিজ(আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাঁদতে কাঁদতে বলল)
আমি কি বলব এখন, দুটানায় পড়ে গেছি.
– আমি না হয় তখন একটা ভুল করে ফেলেছি, তাই বলে আপনি আমার সাথে এই রকম করলেন।(কাঁদতে কাঁদতে বলল)
.
-দেখ নীলা এখন আমায় ছাড়, এখন কেঁদে কোন লাভ নাই,এটা তোমার আগেই বুঝার দরকার ছিল(আমি)
.
নীলা কিছু না বলে এখনো আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, আমার শার্টের বুকের পাশটা প্রায় ওর চোখের লোনা জলে ভিজে গেছে।
.
-আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবনা,আমার সাথে এমনটা করবেন না, আমি যদি আপনাকে না পাই, সত্যি আমি মরে যাব।(ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল)
.
-ছাড়োতো নীলা তোমার এই নেকামি গুলো আমার আর ভালো লাগেনা, তখনতো বুঝলেনা এখন কি জন্য বুঝতে আসছো।
বিয়ের তিনমাস পর্যন্ততো তুমার মনে ছিলনা আমার জন্য একটুও জায়গায় তবে এখন কেন। তুমার এই নেকামি গুলো বন্ধ কর, আমার অসহ্য লাগছে। ভাবছিলাম বাসায় আরো একদিন থাকব,কিন্তু আর থাকা হলো না বিকেলের দিকে রওনা দিব।(কথাটা একটু জোরে বলে, নীলাকে আমার বুক থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম, ধাক্কা সামলাতে না পেরে খাটের উপর গিয়ে পরল।)
.
-সত্যি বলছি আপনি যদি না থাকেন আমার জীবনে, তাহলে আমিও আর আমার জীবন রাখবনা। খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে,নিজের জীবনের চাইতে ও বেশী। (কান্না আরও বাড়িয়ে দিল)
.
-রাখ তুমার নেকামি(ধমক দিয়ে রুম থেকে চলে আসলাম)
.
বাহিরে আসতেই মা বলল-
-কিরে এতো চেঁচামেচি করতেছস কেন?কিছু হইছে নাকি?
.
-কই নাতো কিছু হয়নাই,মা একটু বাহিরে যাচ্ছি(কথাটা বলে ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম)
.
নদীর পাড়ে বসে আছি। নিজের থেকে খুব বেশী কান্না আসছে,নীলার সাথে বেশী বাজে
রিয়েক্ট করে ফেলছি। কি করব এখন আর কিছু করার নাই আমার, আমিও নীলাকে ভালোবাসি। কিন্তু মিমিকে এর থেকেও বেশী, মিমি আর বড় জোর পাঁচ মাস এই পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে, নিজের হাতের ঘরে উঠা সংসার রয়েছে আর মাত্র পাঁচ মাস। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাবে আর মাত্র পাঁচ মাস, তারপর আমাকে ছেড়ে চলে যাবে অন্ধকার জীবনে।
.
যখন নীলার সাথে রাগ করে চলে আসব ঢাকায়, তখন যেই অফিসে জয়েন করব সেই অফিসের মালিক হলো মিমির বাবা অর্থাৎ আংকেল। চাকরি বদলি করার সময় ওনার সাথে কথা হলো,অনেকদিন পর দেখলাম তাকে,আংকেল আমার আর মিমির সম্পর্কটা জানতেন যে আমরা কলেজ লাইফের বেস্ট ফ্রেন্ড। যখন আমি চলে যাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর মিমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের মাঝে দূরুত্ব বাড়তে থাকে। আমি চলে আসার পর মিমি কখনো নিজের থেকে বেশী ফোন দিতনা, তাই রাগ করে আমি সিমটা বদলিয়ে ফেলি। মিমি আমাকে বেস্ট ফেন্ড থেকে বেশী কিছু মনে হয় ভাবতনা, কিন্তু আমি ওকে বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে বেশী কিছু ভাবতাম,মানে মিমিকে আমি ভালোবাসতাম।
.
কখনো বলতে পারতামনা যে আমি তোকে খুব ভালোবাসি, ভয় হতো যদি মিমি রাজি না হয় তাহলে আমাদের এতদিনের বন্দুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। যাইহোক,,,,,,,,,,
.
আংকেলকে মিমির কথা জিজ্ঞাসা করতেই,আংকেল কান্না শুরু করে দেয়। কান্নার কারন জিজ্ঞাসা করলে আংকেল বলে–
.
-বাবা আমার মেয়েটা এই পৃথিবীতে আর অল্পদিনের জন্য রয়েছে, বড়জোর সাতমাস।
.
কথাটা শুনে কেমন জানি বুকের বাম পাশটা চিন চিন করে ব্যাথায় অনুভব করলাম।
.
-আংকেল কি হয়েছে মিমির ।(উত্তরের আসায় আংকেলের মুখের পানে তাকিয়ে আছি)
.
-মিমির ব্রেইন-টিওমার (কথাটা বলে আরও জোরে কান্না করতে লাগল)
.
ওনাকে কি সান্তনা দেব, আমি নিজেকেই কনট্রোল করতে পারছি না, আমার পায়ের তলা থেকে কে যেন মাটি নিয়ে যাচ্ছে।
.
-আংকেল মিমি জানে এইসব।
.
-না ও জানেনা।বাবা তুমি গেলে ওকে একটু সময় দিও, মেয়েটা যাতে না বুঝতে পারে এই সব।
.
-আচ্ছা ঠিক আছে।
।
তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে নীলা যেহেতু আমাকে মেনে নিতে পারেনি, তাহলে আমি মিমিকে বিয়ে করব। মিমি এখনো বিয়ে করেনাই, ওর বাবা ওকে যখন বিয়ের কথা বলত তখন উত্তরে সে বলত বাবা এখনো একজনের অপেক্ষায় আছি। আমি জানতাম কার অপেক্ষায় আছে মিমি । সেটা হলাম আমি, কারন আমাকে ছাড়া মিমি আর কোন ছেলের সাথেই কথা বলতনা।
.
তাই আমি আমার প্লান মতো ওকে বিয়ে করি দুরে থেকে বেশী সুখি রাখতে পারবনা, তাই নিজের চোখের সামনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ওকে বিয়ে করেছি। ওর অনিশ্চিত জীবনটাকে একটু সুখ দেওয়ার জন্য হলে ও ওর পাশে থাকার দরকার আমার। আপনাদের এত কিছু বলতে বলতে কখন যে বিকেল ঘনিয়ে আসল তা খেয়াল করিনি। আমি মিমিকে এতো বেশী ভালোবেসে ফেলেছি যে নীলাকে ভালোবাসার জায়গাটা দিতে পারবনা ইচ্ছা থাকলেও। তাই নীলাকে আজকে এতো কথা শুনাইছি যে, সে যাতে নিজের থেকে আমাকে ডিবোর্স দিয়ে দেয়। মিমি চলে যাওয়ার পর ওর ভালোবাসার স্মৃতি টুকু নিয়ে বেছে থাকতে চাই।
.
পকেটের ভিতর মোবাইল কাপাকাপি শুরু করল। কেউ মনে হয় ফোন দিছে তাই কাপাকাপি শুরু হয়ে ছিল।ফোনটা বের করে দেখি মা ফোন করছে….
.
-হ্যালো মা বলো।
.
ফোনের ঐ পাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে।
.
-মা কোন কিছু হইছে, কান্না করতেছ কেনো?
.
-বাবা তুই তারাতারি হাসপাতালে চলে আয়(মা)
.
-কেনো মা,বাবার কিছু হয়নিতো (আমি)
.
-না….
.
এর পর মা যা বলল তা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলামনা, নীলা এমনটা কেন করলো??
নীলা মেয়েটার এমন করার কোন দরকার ছিল। তারাতরি হাসপাতালে চলে আসলাম। এসে শুনি, ডাক্তার মা-বাবাকে বলতেছে-
.
-দেখেন ওনার প্রচুর ব্লাড গেছে,এখন যদি রক্ত ওনার শরীরে প্রবেশ করাতে না পারি তাহলে ওনাকে বাচানো সম্ভব হবেনা একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া, ওনার A+ রক্ত লাগবে, আমাদের এখানে এই গ্রুপের রক্ত শেষ সো যা করার তারাতারী করেন(ডাক্তার)
.
ডাক্তার কথাটা বলে চলে যেতে লাগল, এমন সময় আমি বলে উঠলাম —
.
-আমি রক্ত দেব, আমার রক্ত A+।
.
-ঠিক আছে তাহলে তারাতারি আসুন। (ডাক্তার)
.
নীলার পাশের বেডে শুয়ে রক্ত দিচ্ছি, মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। নীলা কি আসলে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে, যদি ভালোই না বাসতো তাহলে কেন এমন একটা কাজ করতে গেল। নীলা তার ডান হাতের শিরা কেটে পেলছে। আমি যখন বাসা থেকে বেড় হয়ে আসলাম, তার কিছুক্ষন পর মা গিয়ে ডাকতে গিয়ে দেখে নীলার হাত থেকে রক্ত পড়ছে,আর সে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে।
.
আমার শরীল থেকে দুই ব্যাগ রক্ত নেওয়া হইছে, শরীলটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমি এখনো শুয়ে আছি,চোখ বন্ধ করে। প্রায় ৪০ মিনিট পর চোখ খুললাম। নীলার দিকে তাকালাম, মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে কান্না করতেছে।
.
-এই তুমি কি পাগল হয়ে গেছ,হাত কাটলা কেন(আমি)
.
-হ্যা হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছি,আমি আপনার জন্য পাগল হয়ে গেছি।(নীলা)
.
-আজ যদি আমি না থাকতাম তাহলে তোমাকে রক্ত দিয়ে কে বাচাতো? (আমি)
.
-কেন বাঁচালেন আমায়,আমিতো আপনাকে বলিনি যে আমাকে বাঁচান, আমার বেঁচে থেকে লাভ কি যদি আপনাকে কাছে না পাই (কান্না করতে করতে বলল)
.
কেবিনে আমি আর নীলা ছাড়া কেও নেই তাই কথাগুলো একটু জোড়ে জোড়ে বলছি।
.
-তুমি তো আমাকে মেনে নেওনি,তাহলে এত ভালোবাসা কোথা থেকে আসল(আমি)
.
-প্রথমে মেনে নেইনি ঠিকই, কিন্তু আস্তে আস্তে আপনাকে বুঝতে শিখছি, ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছি। এতটাই ভালোবাসি যে আপনাকে ছাড়া কোন কিছু কল্পনা করতে পারিনা।(নীলা)
.
-তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাস(আমি)
.
-হুম, যদি ভালোই না ভাসতাম তাহলে আজ এইখানে থাকা লাগতো না।(নীলা)
.
-তাহলে আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুন।
.
তারপর আমার আর নিলার সব কাহিনীটা সম্পুর্ন খুলে বললাম। দেখলাম নীলার চোখে জল,,
.
-তাই তোমাকে আমি ডিবোর্স দিতে চেয়ে ছিলাম, আমি চাইনা কেও আমার সম্পর্কে নতুন ভাবে জড়িয়ে যাক,আমি মিমির স্মৃতিটুকু নিয়ে বেচে থাকতে চাই।(আমি)
.
নীলা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল-
-আমি আপনাদের মাঝে আসব না ততদিন,যতদিন মিমি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকে, তবুও আপনি ডিবোর্সের কথা বলবেন না প্লিজ।(নীলা)
.
আমি আর কোন কথা বললামনা, হঠাৎ করে আমার মোবাইলটা বেজে উঠল, মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি মিমির বাবা ফোন দিয়েছে।
ফোনটা রিসিভ করলাম-
.
-বাবা তুমি কোথায়?(আমি বলার আগে উনি বলে উঠলেন)
.
-কেনো আমিতো বাড়িতে(আমি)
.
-তুমি তারাতারি করে চলে আস,মিমিকে হাসপাতালে ভর্তি করাইছি, মিমি হঠাৎ করে জ্ঞান হারায়, বাবা তুমি যেখানে থাকো না কেন তারাতারি আস(কান্নাময় কন্ঠ নিয়ে কথাগুলো বলল)
.
-আমি আসতেছি।
.
আমি শোয়া থেকে উঠলাম, আমাকে উঠতে দেখে নীলা বলল-
.
-কোথাও কি জাবেন?(নীলা)
.
-মিমি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে,ওর পাশে থাকাটা আমার জরুরি।
.
-আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব যেন ওনার কিছু না হয়,আর এই দিক দিয়ে আমি বাবা মাকে সামলে নেব আপনি যান(নীলা)
.
শরীরটা প্রচন্ড দুর্বল লাগছে,তবুও আমার যেতে হবে। দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা পর ঢাকা আসলাম, যেই জায়গায় আসতে লাগে তিন ঘন্টা, সেই জায়গায় পাঁচ ঘন্টা লাগছে। বিপদের সময় রাস্তাটা কেন জানি ফুরায়না।
অনেক জ্যাম ছিল। সোজা হাসপাতালে চলে আসলাম, ডাক্তারের সাথে মিমির বাবা কথা বলছে।
.
-দেখুন ওর কন্ডিশন আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে,ওকে যতটা সম্ভব হাসি খুশিতে রাখার চেষ্টা করবেন,আর বড়জোড়, চার থেকে সাড়ে চার মাস আছে এই পৃথিবীতে।
.
বাবা আমাকে ধরে কান্না শুরু করে দিল। আমি নিজেকেই নিজে শান্তনা দিতে পারছিনা, আর বাবাকে কি শান্তনা দেব। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি মিমি দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে, আমি বাবাকে ছাড়িয়ে মিমির কাছে গেলাম।
.
-তোমরা দুজন এতোদিন আমার কাছে এই কথাটা কেনো লুকালে বল, বল কেনো লুকালে(জোড়ে জোড়ে বলল)
.
-মিমি শান্ত হও তুমি(আমি)
.
মিমিকে ছুতে গেলে আমার হাতটা ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দেয়। তবু জোর করে জড়িয়ে ধরলাম, জড়িয়ে ধরাতে হাউ মাউ করে কেদে দিল। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল-
.
-আমি বাঁচতে চাই,আমি তোমার জন্য বাঁচতে চাই, আমাদের সুন্দর সংসারটা গড়ে তুলতে চাই, আমি চাইনা মরতে, আমি মরে গেলে কে তোমাকে এই ভাবে ভালোবাসবে, প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিওনা,,আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধর। তোমার বুকের সাথে মিশে ফেল আমাকে। আমাকে ছেড়োনা(চিৎকার করে কাদতে কাদতে বলল)
মিমিকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে খাবারের টেবিলে বসে আছি,
.
-আমার একটা কথা রাখবা(মিমি)
.
-কি কথা(আমি)
.
-আমিতো আর বেশীদিন বাঁচবনা তাইনা…..
.
মিমিকে আর বলতে না দিয়ে আমি বলতে লাগলাম-
.
-মিমি তুমি আবার এই কথাটা বলতেছ।(আমি)
.
-আমার পুরো কথাটা আগে শুনো প্লিজ,,,,,,
.
-আচ্ছা বলো।
.
-আমি যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন আমাকে তোমার নিজের হাতে আদর করে খাইয়ে দেবে।
.
-আচ্ছা, এই জন্যতো বলি কেন ভাত খাচ্ছনা এতক্ষন।
.
আমি মিমিকে লোকমা দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছি। মিমির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ম,মেয়েটা কাদছে। কাদুক যতক্ষন পারে। কিছুক্ষন পর,,,,,,
.
-কালকে থেকে আর অফিসে যাওয়া লাগবেনা।(মিমি)
.
-কেন?
.
-সারাদিন আমার পাশে পাশে থাকবা, তোমাকে মন ভরে দেখব।
.
-আমি অফিসে না গেলে,তোমাকে খাওয়াবো কি, উনারাতো আর আমাকে এমনি এমনি টাকা দেবে না।(আমি)
.
-তুমি হয়তো ভুলে গেছো কোম্পানির মালিক তুমি।(মিমি)
.
-আমি আবার কবে মালিক হলাম।
.
-কেনো তুমি জানোনা,যেইদিন তুমি আমাকে বিয়ে করছ সেইদিন থেকে, কারন আমি যাকে বিয়ে করব তাকে ইচ্ছে করলে আমার সম্পত্তি লিখে দিতে পারব,কারন আমার আব্বু আমার নামে লিখে দিছে, সো তুমি আমার লক্ষী একটা জামাই তাই কোম্পানিটার, আমি তুমাকে না জানিয়ে তুমার নামে লিখে দিয়েছি।
.
-বুঝলাম।
.
– চলনা ছাদে যাই,দেখ আকাশে আজকে কত বড় চাদ উঠছে। তোমার কোলে মাথা রেখে চাদঁ দেখতে দেখতে আজ ঘুমাবো।
.
-আচ্ছা চলো।
.
-কিন্তু আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
.
মিমিকে কোলে তুলে নিলাম,
-তুৃমি এতো ভার কেনো?(দুষ্টমি করে)
.
– এখন তো আমাকে ভার লাগবেই, আমাকে একটুও ভালোবাসনা, আমাকে নেওয়া লাগবে না নামিয়ে দেও (অভিমান করে)
.
মিমি কোল থেকে নেমে গেল,
-আমি একটু দুষ্টুমি করছি,তুমি এটাও বুঝনা, আচ্ছা বাবা সরি এইযে কান ধরছি।
.
-কানে দোরলে হবেনা।
.
-তাহলে কি করতে হবে তুমিই বলো।
.
-আমাকে কোলে নিয়ে, আমাকে চুমো দেওয়া অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে।
.
-যাহা আজ্ঞা মহারাণী।
.
মিমিকে কোলে নিয়ে কপালে চুমো দেওয়া অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছিলাম,এমন সময় আবার বলে উঠল-
.
-কপালে নয়,আমার ঠোটে দিতে হবে।
.
-কিহহহহ?
.
-হুম,তা নাহলে এখনিই নেমে যাচ্ছি বলে দিলাম।
.
-না থাক আর নামা লাগবেনা, দিচ্ছি উমমমমমমমা…….
.
ছাদে বসে আছি আমি, আর মিমি আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। মিমির চুল গুলোকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। আর বিভিন্ন গল্প করছি।
তারপর,,,,,,,,
আমার সাথে ঘটে যাওয়া নীলার কাহিনী গুলো বললাম…….
.
-দেখছো আল্লাহ নিজেই তুমার ভাগ্যে নীলাকে পাওয়ার আশা লিখে রাখছে, আমার আর তোমার ভালোবাসাটা আমার এই কপালে লেখা নাই, কিন্তু চিন্তা করো না, একদিন না একদিন আল্লাহর কাছে তোমাকে নিশ্চয় চেয়ে নেবো, ইনশাল্লাহ,,,,
.
আরও কিছুক্ষন গল্প করলাম।মিমি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গছে, আর রুমে গেলামনা,
এখানেই শুয়ে রইলাম। সকালে সূর্যের আলো মুখে পরায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো, এই মূহুর্তে মিমিকে অসম্ভব ভালো লাগছে, ওকে কোলে তুলে নিলাম, রুমে নিয়ে আসলাম,আমাকে এখনো জরিয়ে ধরে আছে।
.
-মিমি তুমি শুয়ে থাক আমাকে ছাড় আমি নাস্তা নিয়ে আসি(আমি)
.
-হমমম, ছাড়বোনা আমার সাথে শুয়ে থাকো,তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো(ঘুম কন্ঠে বলল)
.
-না ছাড়ো।
.
-হুমমমম আসোনা,( টান দিয়ে খাটে ফেলে দিল)
.
পাগলিটা জোরে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে লাগলো, আমিও জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম। এই ভাবে গুনি শুটি ভালোবাসায় কেটে গেলো প্রায় ৩ মাস। মিমি বায়না ধরল আমাদের বাড়িতে যাবে। বায়না যেহেতু ধরেছে সেহেতু নিয়ে যেতেই হবে। মেয়েটা এক কথার মানুষ। নীলার সাথে কথা বললাম। সে বলছে ও নাকি বাবা মাকে মেনেজ করবে, আমরা যাতে কালকে রওনা দেই।
.
আমি আর মিমি রওনা দিলাম, এখন রাত তিনটা,,ট্রেন চলছে তার আপন গতিতে, বাইরে আকাশের শত তারা ঝিকমিক করে জ্বলছে। আকাশের চাঁদটা আজকে বেশী বড় নয়। মিমি আমার কাধে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। সকাল ছয়টা বাড়িতে এসে হাজির হলাম।
.
কলিংবেল বাজাতেই..
কলিংবেল বাজতেই নীলা দরজাটা খুলে দিল,
মনে হয় আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল।
.
-আপনি মিমি আপু তাইনা(মিমিকে উদ্দেশ্য করে বলল)
.
-হুম,তুমি নীলা(মিমি)
.
দুজনে দুজনকে জরিয়ে ধরল,মনে হয় কত দিনের চেনা। তারপর বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম। বাবা-মা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিল, ভাবছিলাম আমাকে অন্তত দুইটা হলেও থাপ্পর মারবে,কিন্তু আমাকে কিছু বললনা। মিমি বাবা-মাকে সালাম করলো। বাবা মাও তাকে বুকে টেনে নিলো।
.
রাতে খাবার খেতে বসলাম। আজ মিমি নিজের হাতে নিজে খাচ্ছে, কারন সবার সামনে তো আর খাওয়াই দিতে পারবনা। মিমি তুমি একটু বাবা-মার সাথে কথা বলো আমি একটু আসছি। রুমে গিয়ে দেখি নীলা খাট ঝাড়ছে।
.
-নীলা তোমাকে অনেক ধন্যবাদ(আমি)
.
-কি জন্য(আমার দিকে ফিরে বলল)
.
-ঐ যে মা বাবাকে বুঝানোর জন্য।
.
-না,না আপনি কি যে বলেননা, এটা আমার কর্তব্য।
.
-আর একটা হেল্প করতে পারবে।
.
-গেস্ট রুমটা একটু পরিষ্কার করে দিবে।।
.
-কেনো?
.
-না,মিমির থাকার জন্য।
.
-গেস্ট রুম কি দরকার, আপনার আর মিমি আপুর জন্য এই রুমটা ঘুছালাম।
.
-কিন্তু তুমি,,,,
.
-আমি না হয় গেস্ট রুমে থাকবো।
.
-না,,তা হয়না তুমি আর মিমি এক রুমে থাকো আমি অন্য রুমে থেকে গেলাম।
.
-না আপনি আপু থাইকেন।
.
আমি আর কিছু বললামনা, নীলা যাওয়ার আগে আবার বলা শুরু করল-
.
-আপনার বুকে মাথা রাখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে
একটু রাখি(কথাটা বলে আমার উত্তরের আশায় না থেকে আমার বুকে মাথা রাখলো।)
.
জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না শুরু করল। আমি আর ওর কান্নাটা থামালামনা। প্রত্যেক মেয়ে নিজের প্রান থাকতে নিজের স্বামীর অধিকার কাওকে দেবেনা। নীলা নিজের হাতে তার স্বামীকে আরেকজনের সাথে তুলে দিতে চায়না, তাই হয়তোবা কাদছে।
.
-আমি কি আসতে পারি ভিতরে(মিমি)
.
মিমির আওয়াজ শুনে,নীলা আমাকে ছেড়ে দিল।
.
-আরে আপু আপনার ঘর আপনি আসবেন তার আবার পারমিশন লাগবে নাকি।
.
-চলো আজকে আমরা একসাথে গল্প করবো (মিমি)
.
-আইডিয়াটা মন্দ না(আমি)
.
-না আপনারা করেন আমি গেলাম(নীলা)
.
-আরে আরে কই যাও,দাড়াও বলছি।(মিমি)
.
-আপু আমার এখানে থেকে লাভ কি(নীলা)
.
-লাভ কি মানি,আমি এতোদিন পরে৷ আসলাম আর তুমি চলে জাবা৷
.
তারপর৷ সবাই গল্প করে৷ যখন ঘুমানোর সময় হলো তখন নীলা বললো –
.
– আপনারা ঘুমান আমি৷ যাই
.
– কোথাও যাওয়া লাগবেনা তুমি আমাদের সাথে ঘুমাব।(মিমি)
.
– এর চেয়ে চল ছাদে যাই। সেখানে গিয়ে সারা রাত গল্প করবো।( আমি)
.
– আচ্ছা চল।(মিমি)
.
আমার তিনজন ছাদে গেলাম। মিমি আর নীলা দুই পাশে বসলো আর মাঝখানে আমি। দুইজনে গল্প করছে আর আমি বসে বসে শুনছি। ওদের কথা শুনতে শুনতে আমিই ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি। মিমি আর নীলা দুইজন আমার দুই পাশে ঘুমিয়ে আছে। কি এমন বিপদে পরলাম, তবে এই মূহুর্ত খুব ইনজয় করছি।
.
.
সকালের সূর্যের হালকা কিরন তাদের উপর পরাতে অনেক মায়াবী লাগছে মিমি ও নীলাকে । আমার মতো ভাগ্যমান খুব কমেই আছে মনে হয়। একসাথে দুই বউ বুকে শুয়ে আছে।
.
আমার মাথায় একটা দুষ্টমি চেপে বসল…..। মিমির ঠোটে একটা ইয়ে দিলাম, মেয়েটা একটু কেপে আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকল। নীলাকেও ঠিক সেইম একই কাজ করলাম,অর্থাৎ নীলাকেও ঠোটে একটা চুমো দিলাম কিন্তু মেয়েটা আমার ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেছে, তাকিয়ে দেখে আমি উর ঠোটের উপর আমার ঠোট দিয়ে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিচ্ছি।
.
.
আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-
-সরি, কাল রাতে মনে হয় ঘুুমিয়ে পরছিলাম আপনার বুকের উপর, আমি আপনাদের জন্য নাস্তা করে আনতেছি(নীলা)
.
-না,না,সরি বলা লাগবেনা আমার বুকে শোয়ার অধিকার মিমির যেমন আছে তেমনি তোমার আছে(কথাটা বলতে দেখি নীলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচে দিয়ে দৌড় দিল,হয়ত আমার ইয়ে দেওয়াটার জন্য)
.
.
দুই মাস পর,,,,,,,,,,,
হাসপাতালে বসে আছি, মিমির অবস্থা খুব খারাপ, আমার পাশে বসে নীলা আমাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
.
-আপনার এই ভাবে ভেঙ্গে গেলে হবে না,আপনি নিজেকে একটু শক্ত করুন(নীলা)
.
আমি নীলাকে জড়িয়ে ধরে নিরবে কান্না করছি। ৩ঘন্টা হয়ে গেলো এখনো অপারেশন শেষ হচ্ছেনা। আমার আর নীলার পাশে বসে আছে,বাবা,মা,মিমির বাবা। অপারেশন থিয়েটারের লাল বাতিটা বন্ধ হয়ে গেলো……..।
.
.
৫ বছর পর
-মামনি,,,মামনি,,,, (জোরে চিৎকার দিয়ে মুমু ডাকতেছে)
.
-কি হয়েছে অাম্মু (নীলা)
.
-তোমরা এখনো রেডি হওনা কেনো(মুমু)
.
-এইতো আম্মু আমরা সবাই রেডি হয়েছি (নীলা)
.
-বাবা কোথায় মামনি।(মুমু)
.
-তোমার বাবা গাড়ী বের করছেন। এই তোমার গাড়ী বের করা হলো। (নীলা)
.
-হুম হয়ছে সবাই আসো(আমি)
.
.
গাড়ি চালাচ্ছি, গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। পিছনে মুমুর আর সামনে আমার পাশে নীলা।
বাইরের প্রাকৃতিক বাতাস মনটা ভালো করে দিচ্ছে, আজকের আবহাওয়া অনেক সুন্দর।
গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি, বাবা-মা আমাদের তিনজনের জন্য অপেক্ষা করছে,রঅপেক্ষা করছে তার নাতিনের জন্য, অপেক্ষা করছে তার ছেলের বউমার জন্য।
.
আজ মিমি পাশে নেই। সেইদিন অনেক লড়াই করেছিল মূত্যর সাথে কিন্তু সেই দিন হেরে যায়। আমাকে ফেলে চলে যায় না ফেরার দেশে। কিছু স্বপ্ন পূরন করতে পারি নি। কি করে করবো সময়যে খুবই অল্প ছিল। এই অল্প সময়ের মাঝে স্মাতিূ রেখে গিয়েছে সারা জীবনের। মিমি কে আমি এক মুহুর্তর জন্যও ভুলতে পারি নি। কারন ও ছিল আমার প্রথম ভালোবাসা। আর প্রথম ভালোবাসা কেউ ভুলতে পারে না।
.
.
নীলা কেউ আমি ভালোবাসি। মানুষ যেমন বার বার প্রেমে পরে ভালোবাসে। আমিও তেমন করেছি। কিন্তু প্রথম ভালোবাসার মানুষের স্মতৃি মনে থেকে যায় সব সময়। মনে এক কোনে সে সব সময় বাসকরে। এজন্য হয়তবা স্মতৃি কে মানুষ বেহায়া বলে। কারন এটা বার বার হারানো মানুষকে মনে করিয়ে দেয়। জীবন নামক গল্প তো শেষ হলো মুত্য,, তবু তো গল্পের শেষ করতে হবে। যাতে এক নতুন গল্প শুরু হতে পারে।
…………………….সমাপ্ত……………….