বফের কাছ থেকে যখন শুনলাম সে মুখে ফেসিয়াল করে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম । কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । যেখানে আমি মেয়ে হয়ে কোনোদিন ফেসিয়াল নামক বস্তুটি করা হয়নি সেখানে আমার বফ ফেসিয়াল করে বিষয়টা আমার কাছে একটু বেশিই বিস্ময়কর ।
একদিন হঠাৎ করে কি মনে করে যেন ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম , তুমি কি ফেসওয়াশ ইউজ করো গো ?
সে আমাকে ব্রান্ডের তিন চারটা ফেসওয়াশের নাম বলে তারপর বললো যে বাকিগুলো নাকি মনে নেই । শুনে ওকে প্রশ্ন করলাম এতগুলা কেন ব্যবহার করো ! কি লাভ হয় করে ?
_চেহারায় ধূলোবালি আর ময়লা জমার কারণে ব্যবহার করতে হয় । এগুলোও এখন ভালো লাগছে না আরো ভালো দেখে কিনতে হবে ।
আমি হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে ওকে বললাম ওহ তাহলে ফেসিয়াল করলেই তো পারো !
_হ্যাঁ ফেসিয়াল করি তো । এখন কয়েকদিন যাবৎ করা হয়না ।
শুনে আমার বিস্ময়ের কোনো সীমা রইলো না । আসলে প্রেমে আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই । ছেলেরা কি কি রূপচর্চা করে সে সম্পর্কে আমি অবগত নই । আর মেয়ে হিসেবে আমি ওতো মর্ডান নই আবার আনস্মার্ট ও না । বাঙালি মেয়েরা যেরকম রূপবতী হয় ঠিক ওরকমই । তো যাই হোক খানিকক্ষণ চুপ থেকে ওকে জিজ্ঞেস করলাম আর কি কি রূপচর্চা করো ?
_মাঝে মধ্যে মুখে চন্দন আর এলোভেরা মাখি এই যৎসামান্য ই রূপচর্চা করি আর কি ।
আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম , আরে আমি মেয়ে হয়েও যা করি না তুমি তার তিনগুন করো এটাকে অবশ্যই যৎসামান্য বলা যায় না ।
ওর রূপচর্চায় এত আগ্রহ দেখে দিনে দিনে সত্যিই আমি বেশ অবাক হয়ে যাচ্ছি । মাঝে মধ্যে ভাবি বিধাতা ওকে মনে হয় ভুল করে ছেলে বানিয়ে দিয়েছেন আর আমাকে মেয়ে । আমি ওর সরলতা দেখে প্রেমে পড়েছিলাম । ওকে দেখতে খুব স্মার্ট মনে হলেও কার্যকলাপে ও সম্পূর্ণ বিপরীত । কারণ ওর মত ভীতু ছেলে আমি দুইটা দেখিনি । এত স্মার্ট একটা ছেলে যে এত্ত ভীতু সেটা আমি ওর সাথে দ্বিতীয় বার দেখা করার পর বুঝেছিলাম ।
যেদিন নারায়ণগঞ্জ দেখা করলাম , দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কি নিয়ে যেন আলাপ করছিলাম । কথা বলার একপর্যায়ে পাশে তাকিয়ে দেখি ও নেই । আমি এদিক ওদিক তাকিয়েও খুঁজে পেলাম না । হঠাৎ বুঝতে পারলাম পেছনে কে যেন আমার শাড়ির আঁচল ধরে টানছে । তাকিয়ে দেখি ও আমার শাড়ির আঁচল ধরে দাড়িতে আছে । জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ও বললো যে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে নাকি ও ভয় পেয়ে গেছে । ” আজব কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনেও কেউ এতটা ভয় পেতে পারে ! আর আমার শাড়ির আঁচল ধরে আছো কেন?”
ও ভীত গলায় উত্তর দিলো , কুকুর ও খুব বেশি ভয় পায় যদি ওকে তাড়া করে তাই ভয় পেয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে । ওর কথা শুনে আর ভয়ার্ত চোখ দেখে আমি আবার হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেলাম । প্রথম প্রথম হাসি পেলেও এখন খুব বিরক্ত হয়ে গেছি । ওর যে শুধু কুকুর ভীতি তা কিন্তু না । সবকিছুই ও ভীষণ রকমের ভয় পায় । আরো কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি ।
সেদিন একটা হরর স্টোরি লিখে ওকে পাঠালাম । বললাম যে পড়ে বলো কেমন হয়েছে !
ও আমতা আমতা করে বললো আসলে জান্নাত বাসায় এখন কারেন্ট নেই আবার রাস্তায় কুকুর ডাকছে । এটা কি এখনি পড়তে হবে ?
আমি সোজা সাপটা উত্তর দিলাম হ্যাঁ এক্ষুনি পড়তে হবে ।
ও আমাকে ভয়ার্ত গলায় উত্তর দিলো , না আসলে এত রাতে এসব পড়া ঠিক না জান্নাত ! হার্ট দুর্বল হয়ে হার্ট স্টক ও হয়ে যেতে পারে ।
_শাওন তুমি পড়বা কিনা বলো ?
_পড়বো কিন্তু দিনের বেলা !
আমি রাগে গজগজ করতে করতে বললাম , তাকিয়ে দেখো তোমার জানালার পর্দার ভিতরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে !
_ও ভীত হয়ে চিৎকার দিয়ে বললো , ‘ না জান্নাত এসব বলো না প্লিজ ‘ ওখানে কেউ নেই ।
_শাওন তুমি কি জানো তোমার দক্ষিণের বারান্দায় কে দাঁড়িয়ে আছে ? সাবধান ওখানে যেও না কিন্তু !!
এবার ও কাঁদো কাঁদো হয়ে আমাকে অনুরোধ করে বললো না না প্লিজ আর বলো না ।
_ছেলে মানুষ এত ভীতুর ডিম হয় তোমাকে দেখে জানলাম !
_কে বলেছে আমি ভীতু ? আমি ভীতু না আমি জাষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করি এই আর কি।
এগুলো সামান্য কিছু উদাহরণ মাত্র । আরো যে কত কাহিনী আছে বলে শেষ করা যাবে না ।
বাদরটাকে আজ বিকেলে ফোন দিয়ে বললাম , আমাদের সম্পর্কের কথা ওর বাবাকে জানাতে অন্যথায় ব্রেক আপ করে দিবো । এত ভীতু হইলে প্রেম করছিলা কেন ! তখন এসব মনে ছিল না ? ইচ্ছা মত ঝেড়ে ফোন রেখে দিলাম ।
আর ওর দুঃসম্পর্কের এক ভাগিনাকে ফোন দিয়ে বললাম , শাওন ওর বাবার কাছে যখন আমার কথা বলবে তুমি চুপি চুপি ভিডিও করে আমাকে পাঠাবা ।
এখন আমি নিশ্চিন্ত মনে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছি । রাত বারোটায় শাওনের ভাগিনা আমাকে ভিডিও পাঠালো । আমি অতি উৎসাহের সহিত ভিডিও ওপেন করলাম । শাওন আর ওর বাবাকে রুমের মধ্যে দেখা যাচ্ছে । ছেলেটা সম্ভবত বারান্দায় দিয়ে ভিডিও করেছে । বারান্দা রুমের কাছাকাছি হওয়াতে কথাও শুনা যাচ্ছিলো । নাহ ছেলেটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে!
শাওনের বাবা মুখ গম্ভীর করে চেয়ারে বসে আছেন আর ও পাশে দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলছে, “বাবা আমি কিছু বলতে চাই তোমাকে “। উনি না তাকিয়ে উত্তর দিলো বলো কি বলবে? ও কিছু না বলে আশেপাশে তাকাচ্ছে মনে হয় পালানোর জায়গা খুঁজছে । কত্ত বড় বদমাইশ ! ওর উত্তর না পেয়ে উনি আবার বললেন ,” কি বলবে বলছো না কেন?”
এবার গাধাটা মুখ খুললো , ” আসলে বাবা আমি আমি আমি….. আমি একজনকে পছন্দ করি !
এইটুকু বলার পর রুমের মধ্যে পিন পতন নীরবতা । কি যেন মিস করলাম মনে হচ্ছে । ভিডিওটা আরেকটু পিছিয়ে দিলাম । যা দেখলাম আমার চোখ কপালে উঠে গেল , ওই কথাটা বলার সময় শাওন মানে আমার বফের প্যান্ট ভিজে গেছে !! হয়তো বেচারা অতিরিক্ত ভয় পেয়ে থাক আর কিছু নাই বা বলি ?