বৃষ্টি এলেই মেঘপরিটা একধরনের ঘোরলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আঙুল ছোঁয়া বৃষ্টিজলের সবটুকু একটা শিশিতে ভরে রাখার অভিলাষ ওর। আমি ওর পাগলামিতে বাধা দিই না। বৃষ্টিমুখর দুপুরে একদিন লাইব্রেরিতে বসে আছি দুজন।
কাচের জানালা খুলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টিতে স্নান করে নেয় ওর সব কটি আঙুল। আমি ওর বৃষ্টিকাতরতা দেখি আর হাসি। সামান্য কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ওকে িক শিশু-সারল্য এনে দেয়!
ঝুমবৃষ্টিতে পাশে না থাকলে আমাকে নাকি ওর খুব করে মনে পড়ে। বৃষ্টি নামলেই আমাকে সজাগ থাকতে হয়, কখন যেন বেজে ওঠে মেঘপরিটার কলে আমার মুঠোফোন! কারণ, বৃষ্টির জল পতনের অনুরণন ওকে মাতাল করে তোলে। ওর তখন খুব করে ইচ্ছে জাগে—আমাকে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে, বৃষ্টিময় মুহূর্তে হাতে হাত রেখে গল্প করতে কিংবা আশৈশব করে আসা খুনসুটিতে মেতে উঠতে।
বৃষ্টিময় দিনের ওর পাগলামিগুলোর সব কটা ক্ষণ ওর সঙ্গে থাকতে পারি না। ব্যস্ততা ভীষণ হওয়ায় কিংবা সুযোগের অভাবে বৃষ্টি হলেই আমাদের আর এক হওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না।
সেদিন হঠাৎ করেই মেঘপরির ফোন। ‘চলো, আজ বৃষ্টি মাথায় করে ক্যাম্পাসজুড়ে হাঁটি…’ আমি ওর প্রস্তাব উড়িয়ে দিই, ‘দূর, মাথা খারাপ!’ বৃষ্টি এলে আসলেই ওর মাথাটা খারাপ হয়ে যায়, তবে আজকের খারাপিটা মাত্রাতিরিক্ত।
ওর আদুরে ডাকগুলো অমোঘ, আমি ওকে ফেরাতে পারি না। সর্দিজ্বরে গায়ের উত্তাপ সঙ্গে করেই এসে দাঁড়াই ওর হলের সামনে। আমার হল থেকে ওর হল হাঁটা দূরত্বে পাঁচ মিনিটের পথ। আমাকে ছাতাসমেত দেখেই ওর মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায়, ‘এই তোমার ভিজবার নমুনা…!’ আমি অক্ষমতা প্রকাশ করলে ও আরও অনিবার হয়ে ওঠে। কেমন উদ্দাম আনন্দ আর রোমান্স নিয়ে মেঘপরিটা নেমে পড়ে ক্যাম্পাসের মাঠে!
আমি মাথার ওপর ছাতা ধরে অবাক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। ঝুমবৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের পথ প্রায় জনশূন্য হলেও রিকশাওয়ালাদের আনাগোনায় মুখর। তাদের আগ্রহী চোখও মেঘপরির দিকে। কেমন যেন এক প্রজাপতির মতো দুই বাহু ডানার মতো প্রসারিত করে হেলেদুলে নাচছে! আমি বিস্ময়ে অভিভূত।
আমি তখনো ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে। কী মনে করে হঠাৎ আমার দিকে ছুটে আসে মেঘপরি, আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে ছাতাটা নিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে দেয়। বৃষ্টিময় বাতাস ছাতাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, আর আমাকে ওড়ায় মেঘপরি। আমিও প্রজাপতির মতো উড়তে থাকি; বৃষ্টির ছাটে, মেঘময় হাওয়ায়…।