মাস খানেক ধরে প্রচুর পরিমাণে বিয়ের দাওয়াত আসছে৷ যার অধিকাংশ আমার বন্ধু-বান্ধবের৷ বিয়ের খাওয়ার প্রতি প্রচন্ড লোভ থাকলেও আপাতত আমার যাওয়া হচ্ছে না৷ বন্ধু-বান্ধবের বিয়েতে গেলে নিজেকে অসহায় মনে হয়৷ তারা বিয়ে করলেও আমার কোনো গতি হচ্ছে না৷
সেদিন খালাত ভাই আসলো বিয়ের দাওয়াত দিতে৷ আব্বার হাতে চিঠি দিয়ে চলে গেল৷
আমি সামনে যাইনি তার৷
বয়সে আমার ছোট হবে৷
সামনে গেলে হয়তো বলতো,
ভাইয়া বিয়েতে আসবেন কিন্তু৷
খালাতো ভাই যাওয়ার পর আব্বা আমাকে ডেকে বললেন,
-ধর৷ চিঠিখানা পড়িয়ে শুনা৷
-পারবো না৷
-পারবোনা মানে?
আব্বার হুংকার শুনে আমার মনে পরলো, আমি আব্বাকে প্রচন্ড রকমের ভয় পাই৷
বিয়ের টেনশনে সেটা ভুলে গিয়েছিলাম৷
আব্বার আদেশ অনুযায়ী চিঠিখানা পড়িয়ে শুনালাম৷
তারপর আব্বাকে বললাম,
-আব্বা শোভন(খালাতো ভাই) কি বলেছে জানো?
-কি বলেছে?
-ভাইয়া ভাবীকে নিয়ে অবশ্যই বিয়েতে যাবেন৷ আমিতো লজ্জায় পরে গেছিলাম তার সামনে৷
-তারপর?
-তারপর আবার পেছন ফিরে এসে বলল, ও আপনিতো বিয়ে করেন নি! কত বড় বেয়াদব দেখছেন আব্বা?
-হ্যা৷ তো এখন কি করবো?
-হয় ওর বিয়েতে আমি বৌ নিয়ে যাবো৷ নয়তো বিয়েতে যাবো না৷”
আব্বার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, উনি পত্রিকা পড়ায় মনোযোগ দিয়েছেন৷
কথাটা শুনেও না শোনার ভান ধরে আছেন৷
অপমান লাগলো খুব৷
সন্ধ্যা বেলা আম্মা ডাকাডাকি শুরু করেছে৷
আম্মার পায়ে ব্যাথা৷ পা টিপতে হবে৷
পা টিপতে টিপতে আম্মাকে বললাম,
-আসলে আম্মা আপনার একটা মেয়ে দরকার৷
-এই বয়সে মেয়ে আসবে কোথায় থেকে হারামজাদা!
-আমাকে একটা বিয়ে করিয়ে দিলেই পারেন৷
-পা টেপা লাগবেনা৷ সর সামনে থেকে৷”
আম্মার কথায় আরেক দফা অপমান লাগলো৷ চুপচাপ সরে আসলাম৷
রাতের বেলা আব্বা ডাক দিল৷
সামনে যেতেই বলল,
-ইনসুলিনটা পুশ করতো৷
-পারবো না!
-কি বললি?
-পারবোনা৷
-কেন?
-আসলে আব্বা আমি আজকাল চোখে কম দেখতেছি৷ সম্ভবত আমার চোখে বিয়ে রোগ হয়েছে৷
-কাছে আয়৷ ইনসুলিনটা চোখে ঢুকিয়ে দিলেই রোগ সেরে যাবে৷
পরেরদিন আম্মা বললো,
-বাজার লিষ্ট লেখ৷
-পারবোনা৷
-কেন?
-বিয়ে রোগ হয়েছে৷ লিখতে বসলেই হাত কাঁপে৷
আম্মা কিছু বলেনি৷ রাগী চোখে তাকিয়ে প্রস্থান ঘটালো৷
দুপুর বেলা আব্বা বললো,
-ধোলায় দোকান থেকে আমার পান্জাবিটা নিয়ে আয়৷
-পারবোনা!
-কেন?
-বিয়ে রোগ হয়েছে৷ বাইরে বেরুলেই মাথা চক্কর দিচ্ছে৷
নাপিতের দোকানে চুল কাটছিলাম৷ টাকা দিতে গিয়েও দিলাম না৷
আব্বার উপর রাগ উঠলো৷
প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নাপিতের পলারে বললাম,
-আমার বিয়ে রোগ হইছে৷ টাকা দেয়া যাবে না৷ আব্বার কাছ থেকে নিবি৷
টং দোকানে এক বসাতে ৫কাপ চা খেয়ে মামাকে বললাম,
-বিয়ে রোগ হইছে মামা৷ আব্বার কাছ থেকে নিয়েন৷
ডাইনিং থেকে বিরিয়ানীর সুগন্ধ আসছে৷ সুগন্ধের টানে আমি টুপ করে চেয়ারে বসে পরলাম৷
আম্মা এসে বলল,
-বসলি কেন?
-বিরিয়ানী খাবো৷
-তোকে দেয়া যাবে না৷
-কেন?
-বিয়ে রোগ হলে বিরিয়ানী খাওয়া যায় না৷
আব্বারে বললাম,
-টাকা লাগবে৷
-কিসের জন্য?
-শার্ট-প্যান্ট কিনবো৷
-দেয়া যাবে না!
-কেন?
-বিয়ে রোগ হলে এসব পরা যায়না৷ লুঙ্গী আর সেন্টু গেন্জি পইরা হাঁটবি!
চুল,দাড়ি কাঁটতে গেছিলাম৷ নাপিতের পোলাঢা মুখ গোমরা করে বলল,
-ভাই চুলতো কাটন যায়বোনা!
-ক্যান?
-চাচা কইলো আপনের নাকি বিয়া রোগ হয়ছে৷ চুল কাটা নিষেধ!
টং দোকানে চা খাইতে বসছিলাম৷
মামা বলল,
-চায়ের কাপ নাকি আপনের হাতে দেয়া যাবেনা৷
জিজ্ঞেস করতেই বলল”বিয়ে রোগ আপনার”৷
টং দোকানের সামনের বিল্ডিংয়ের তিন তলার বারান্দায় দাঁড়ানো মেয়েটার সাথে আমার চোখাচোখি হতো৷
দেখলেই মুচকি হাসি দিতাম৷
সেও দিতো৷ হাসি দেখলেই মনে হয় পরাণ পাখি ফুডুৎ৷
মেয়েটার সাথে আজ বিকেলেও দেখা৷
দাঁত বের করে হাসি দিতেই টুপ করে ভিতরে চলে গেল৷
প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝলাম৷
আসলে এইটাও বিয়ে রোগের ইফেক্ট৷
হতাশ মন নিয়ে ঘুরে ঢুকতেই মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো৷
সোফায় বসা মেয়েটাকে আমি চিনি৷
আম্মার বান্ধবীর মেয়ে৷ আজকে খুব সুন্দর লাগছে৷
সাথে বিয়ের শাড়ি পরে এসেছে৷
আমাকে দেখামাত্রই আব্বা বলল,
-তোর জন্যই অপেক্ষা করছি৷ তারাতারি আয়!
আমি আব্বার দিকে তাকিয়ে “শুভ বুদ্ধির উদয় হলো”টাইপ হাসি দিয়ে সাজতে গেলাম৷
আব্বার আমলের সাদা পান্জাবী পরে আসতেই আব্বা বলল,
-ক্ষ্যাতের মতো এইটা কি পরলি তুই? যা ঝাকানাকা পান্জাবীটা পরে আয়৷”
আমি খুশি পেটে চেপে রেখে ঝাকানাকা পান্জাবীটা পরে আসলাম৷
লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে সোফায় বসতেই আব্বা বলল,
-যা তোর খালাতো বোনটাকে ওর প্রেমিকের কাছে দিয়ে আয়৷ বেচারি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে৷ যা তারাতারি যা৷”
আব্বার দিকে কটমট করে তাকালাম৷
আব্বা আমার হাতে ১শ টাকা ১টা নোট গুঁজে দিয়ে বলল,
এটা বিয়ে রোগের অসুধ৷ ভালোমতো প্রেমিকের হাতে তুলে দিয়ে আসবি বুঝলি৷ ভুলেও নিজে বিয়ে করার ফন্দি আটবিনা৷ ঘরে জায়গা দিবো না৷
যা তারাতারি যা৷”
মেয়েটাকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছি বেদনাহত মন নিয়ে৷
আমার বুকে মৃদ্যু ব্যাথা হচ্ছে৷
নিজের ভেতর বাপ্পারাজ টাইপ ফিলিংস আসছে৷
কেন জানি মনে হচ্ছে,
আমার বিয়ে করা মৌসুমিকে অমিত হাসানের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছি৷
আব্বা বলেছিল রিক্সা নিতে৷ আমি নিবো না৷ ১শ টাকা বাঁচাতে হবে৷
অন্তত বিরিয়ানী খেয়ে হলেও বিয়ে রোগ সারাতে হবে৷