একজন ক্রাশের গল্প

একজন ক্রাশের গল্প

ভার্সিটির এক বড় ভাই ছিল৷ যার নাম বলতেই পাগল ছিল আমার ৩বান্ধবী৷
মেয়েরা নিজ থেকে প্রেম নিবেদন করে না৷ সেই সূত্র মেনে তারাও হজম করে ছিল সবকিছু৷
শেষমেষ প্রেমের ডাকপিয়ন নির্ধারণ করা হলো আমাকে৷
সুযোগ পেয়ে আমিও দাম কসিয়ে বসলাম ভালোভাবে৷

প্রথম দিন আমাকে পাঠানো হলো বড় ভাইয়ের কাছে৷ একটু কথাবার্তা বলেই ফিরে আসলাম৷
আমার তিন বান্ধবী ছিল উদগ্রীব৷
তাদের হবু প্রেমিক কি বলল না বলল তা নিয়ে তারা উত্তেজিত৷
আমি টুপ করে বলে বসলাম,

-ভাই বলেছে তোদের মধ্যে যার বয়স কম তার সাথে প্রেমের ব্যাপারে উনি ভেবে দেখবেন৷”

কথাশুনে রিমি বলল,
-অবশ্যই আমার বয়স কম৷”
তা শুনে লুবনা বলল,
আমি ক্লাস টু থেকে স্কুলে ভর্তি হইছি বুঝলি৷ তাই তোদের সাথে পড়তেছি৷ নয়তো জুনিয়র থাকতাম বুঝলি জুনিয়র৷”
এবার আমি নিধির দিকে তাকালাম৷ চুপচাপ দু’জনের কথা শুনছে৷ আর নাক ফোলাচ্ছে৷

আমি ৩জনকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
আচ্ছা তোরা একে একে তিনজনের বয়স বল আমাকে৷”

নিধি বলল,
প্রথমে লুবনা বল৷

লুবনা বলল,
প্রথমে রিমি বল৷

দু’জনের কথা শুনে রিমি বলল,
তোরা দু’জনই আগে বল৷ তারপর আমি৷ তোরা চুন্নি৷”

মোটামুটি চুল ছিঁড়াছিঁড়ি আবহাওয়া তৈরী হয়েছে এই মূহূর্তে৷ পাবলিক প্লেস না হলে, মারামারি লাগিয়েই দিতাম তিনটার মধ্যে৷
পাবলিক প্লেসে ঝগড়া লাগানো যাবে না৷ শেষে আমি বেজে যাবো৷
তিনজনের মারামারি দেখে পাবলিক ভাববে,
আমি একমাত্র প্রেমিক৷ আর আমাকে নিয়েই তাদের মারামারি৷”

দ্রুততার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ফেললাম৷ সমাধান দিলাম, তিনজনই আমাকে বয়স বলবে তাদের৷ কিন্তু কানে কানে৷”

শেষমেষ সেটাই হলো৷ এবার সিদ্ধান্ত দেয়ার পালা৷ তিনজনই চেয়ে আছে আমার দিকে৷”
আমি গলায় কাঁদো কাঁদো ভাব এনে বললাম,
দেখ তোরা তিনজনই আমার বান্ধবী৷ কারো কান্না আমি মেনে নিতে পারবোনা৷
তোরা বরং বাসায় যা৷ যার বয়স কম৷ তার সাথে আমি যোগাযোগ করবো৷”

বাসায় গিয়েই নিধিকে ফোন দিলাম৷
-বান্ধবী?
-হ্যা দোস্ত বল৷
-আমার না বিরিয়ানী খেতে ইচ্ছে করছে৷
-আরে শালা আগে বলবিনা৷ আমি এক্ষুণিই বানাচ্ছি বিরিয়ানী৷ তুই তারাতারি বাসায় চলে আয়৷”
নিধির হাতের বিরিয়ানী দারুণ৷ এই নিয়ে উনার ভাবের শেষ নেই৷ বিরিয়ানী বানাতে বললে সেটা আরো বেড়ে যায়৷ হাতে পায়ে ধরে বিরিয়ানী বানাতে হয় উনাকে দিষযে৷

এবার নিন্জা টেকনিক করে একবারেই পটিয়ে ফেললাম৷”

নিধির বাসা থেকে পেট পুরে বিরিয়ানী খেয়ে ঢেঁকুর তুলছি৷ আজকের বিরিয়ানীটা একটু বেশিই ভালো ছিল৷ খাওয়া শেষে তার ফেভারিট ফ্লেভারের আইসক্রিমটাও খাওয়ালো একটু৷
আহা কত যত্ন করেছে মেয়েটা৷”

বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মনে পরলো সামনে সেমিষ্টার ফাইনাল৷ এসাইনমেন্টের কিছুই করা হয়নি এখনো৷
ফোন দিলাম রিমি কে৷

-বান্ধবী?
-হ্যা গো বলো৷
-হ্যা গো মানে?
-আদর করে ডাকলাম আরকি৷
-একটা উপকার করবি বান্ধবী?
-করবি মানে? আরে তুই বল শুধু৷ এখনই করে দিচ্ছি৷
-ইয়ে মানে এসাইনমেন্টের কথা বলছিলাম৷
-নো টেনশন বন্ধু৷ রাতের মধ্যেই করে দিচ্ছি!”
অন্যসময় হলে এই এসাইনমেন্ট লিখার জন্যই উনার পেটে কয়েক প্লেট ফুচকা চালান দেয়া লাগতো৷ তাও উনার কত ভাব৷

আবারও নিন্জা টেকনিক খাটালাম৷”

সকালে বাসা থেকে বেরোচ্ছিলাম৷ বুয়াকে দেখলাম ফ্লোর মুছতে৷ যেটা দিয়ে ফ্লোর মুছা হচ্ছে শার্টটা আমার৷
গত সপ্তাহে কিনেছিলাম আব্বার টাকায়৷
ক্যান্টিনে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম শার্টটা পরে৷

সাথে লুবনা ছিল৷ কি একটা নিয়ে ক্ষ্যাপাচ্ছিলাম৷ অমনি আমার শার্টের উপর পুরো সস এর বোতলটা ঢেলে দিয়েছিল৷

যেখানে আমার রাগ দেখানো ঊচিত ছিল৷ উল্টো এই মেয়ে রাগ দেখিয়ে হনহন করে প্রস্থান করেছিল৷
নিকট অতীতের তাজা স্মৃতি মনে পরতেই রক্ত আমার টগবগ করে উঠলো৷
লুবনা কে ফোন দিয়ে বললাম,

-বান্ধবী?
-হ্যা বল৷
-তুইতো আমার শার্টটা নষ্ট করে দিলি৷ এখন তোর ক্রাশের সাথে কথা বলতে যাবো কিভাবে?”
আমার কথা শেষ না হতেই লুবনা সম্ভবত লাফিয়ে উঠেছে৷”
উত্তেজিত গলায় বলল,
-তাইলে আমিই পাচ্ছি?
-আগে শার্ট কিনে দে৷ তবেই না পাবি৷
-তুই বাসায় থাক৷ বেরোনো লাগবেনা৷ আমিই কিনে নিয়ে আসছি!”

আমি প্যান্ট খুলে লুঙ্গিটা পরলাম৷ ফ্যানের নিচে হাত-পা ছেড়ে শুতেই আমি মোটামুটি আকাশে উড়া শুরু করে দিয়েছি৷

ঘন্টাখানেকের মধ্যেই লুবনা হাজির৷ হাতের মধ্যে দু’দুইটা শার্ট৷
আমার মনটা খুশিতে টুপ করে লাফিয়ে উঠলো৷
শার্ট পরেই বেরিয়ে পরলাম৷”

টানা ৭দিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছিলাম ৩বান্ধবীকে৷
এখন আমি রুম বন্দি হয়ে বসে আছি৷ রুমের বাইরে কোমড়ে ওড়না বেঁধেঁ ৩বান্ধবী প্রস্তুত৷
আমি বেরোলেই ঝাঢ়ু ভেঙে ফেলবে আমার উপর৷
আম্মাকে ফোন দিয়েছিলাম৷ কাজ হয়নি৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে৷

আজ ফলাফলের পালা ছিল৷ একে একে তিন বান্ধবী বাসায় এসেছিল৷ চেহারার অবস্থা দেখেই বুঝেছিলাম অবস্থা খারাপ হবে আমার৷

তাই আগে থেকেই রুমবন্ধি ছিলাম আমি৷
রুমে ঢোকার সময় রিমি আটকে ফেলেছিল একবার৷ সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-ব্যাপার কি? রুমে ঢুকিস ক্যান?”
গলায় আবেগ মাখিয়ে বলেছিলাম,
দেখ বান্ধবী৷ তোরা তিনজন আমার কলিজার বান্ধবী৷ তোদের কান্না আমি সইবো কিভাবে?”
আর এতেই মেয়েটা গলে গেল৷

রুমে ঢুকে চুপচাপ বসেছিলাম কিছুক্ষণ৷ ঐদিকে তিনজন ফলাফলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দরজা ভাঙার উপক্রম হচ্ছিলো৷

আমি মিনমিন করে রুমের ভেতর থেকে বললাম,
-শোন বান্ধবীগণ৷ বড় ভাই আমাকে প্রথম দিনেই বলেছিল উনার প্রেমিকা আছে৷ তোদের অন্যরাস্তা দেখতে বলেছে৷ আমি তোদের কান্না সইতে পারবোনা৷ তাই তোদের সত্যিটা বলিনি? এবার বল দোষ কি আমার?”

জবাবে কিছুক্ষণ থমথমে নিরবতা ছিল৷ এরপর আবার শুরু হলো দরজা ধাক্কানো৷ আমি চুপ মেরে বসে আছি৷ বাহির থেকে একের পর এক হুমকি আসছে৷
রিমি বলছে,

আমার হাতের নখ লম্বা আছে৷ তুই বের হ শালা৷ চিলে ফেলবো আজকে৷”

নিধি বলছে,
আমার চুল লম্বা আছে৷ চুল দিয়ে ফাঁসি দিবো তোরে৷”

লুবনা মেয়েটা সহজ সরল৷ তবে একটু বেশি খায় খায় করে৷ এই সহজ-সরল মেয়েটা অন্য দু’জনের চেয়ে এক কাঠি উপরে আজকে৷ তার এককথা,

লবণ-মরিচ রেডি আছে৷ গজ গজ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে আমাকে৷”

দরজার উপর অত্যাচার ক্রমশ বেড়ে চলেছে৷ আমি বুদ্ধি বের করলাম৷ সুন্দর করে চিরকুটে লিখলাম “বড় ভাই বলেছে তার ছোট ভাই আছে একটা৷ কানাডা থাকে৷ সামনের মাসে আসবে৷ তোদের মধ্যে যার বয়স বেশি৷ তার সাথে বিয়ে ঠিক করবেন বলেছে৷”

চিরকুট দেয়ার পর একটু শান্ত হলো পরিবেশ৷ খানিক বাদে আবার চেঁচাঁমেচি শুরু হলো৷
এবার আমাকে নিয়ে নয়৷

চুলোচুলি লেগেছে কার বয়স বেশি এই নিয়ে৷ ঝগড়া তুমুল রূপ নিচ্ছে৷ আর আমি হিমু ব্র্যান্ডের লুঙ্গির রূপা ব্রান্ডের সেন্টু গেন্ঞ্জী পরে ফ্যানের বাতাস খাচ্ছি৷
আহ!জীবন সুন্দর৷

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত