কষ্ট অতঃপর ভালোবাসা

কষ্ট অতঃপর ভালোবাসা

মেয়েটি ক্লাসে ডুকেই দেখে সেই ছেলেটি বসে আছে তার টেবিলে, অবাক হলো তাকে দেখে, কারন ছেলেটি আর কোনদিন কলেজে আসেনি এত সকাল, আজ কেন আসলো, ছেলেটিকে প্রায় দুবছর ধরে ভালবেসে আসছে মেয়েটি, কিন্তু ছেলেটি তাকে পাত্তাই দেয়না, কতবার কতরকম ভাবে বুঝিয়েছে তার ভালোবাসার কথা, কিন্তু ছেলেটি বুঝার চেষ্টাই করেনা, এইত সেদিন, মেয়েটি একটা সুযোগ পেয়েছিলো ছেলেটিকে সরাসরি তার ভালোবাসার কথাটা বলবার।

সেদিন ছিল মেগলা দিন, হালকা বৃষ্টি হয়েছিলো, অনেক সুন্দর একটা দিন ছিলো, যে দিনের কথা সে ভুলতে পারেনা আজও, সেদিন ক্লাস করে ছেলেটি বের হয়ে গেলো, ছেলেটি বের হওয়ার পর মেয়েটিও বের হয়ে গেলো, মেয়েটি বের হয়ে দেখে ছেলেটি ক্যান্টিনে গেছে, ওখানে ছেলেটির আরো বন্ধু বান্ধব ছিলো, ওরা ওখানে গল্প করছিলো, তাদের দেখে মনে হচ্ছিলো তারা কত জনমের আপন, তাদের মাঝে হাসি তামাসা, আড্ডা, হাত তালি দেয়া, এইসব চলছিলো, কিন্তু হঠাৎ একটা মেয়ে আসলো, এসেই ঐ ছেলেটির সাথে হাত মিলালো, কিন্তু বাকিদের সাথে হাত মিলালো না, মেয়েটি আসার পর বাকিরা সবাই একজন একজন করে উঠে চলে গেলো, আর মেয়েটি একটি চেয়ার টেনে ছেলেটির সামনে বসলো, ছেলেটির সাথে কথা বলতে।

তারপর তারা কথার মধ্যে মনযোগী হয়ে পরলো, কি কথা বলছে এই মেয়েটি বুঝতে পারছেনা, তারা কথার মাঝে মাঝে হাসছেও, ঐ মেয়েটির সাথে ছেলেটিকে হাসতে দেখে এই মেয়েটি রাগে ফুলছে, তার শরীরের লুম খাড়া হয়ে যাচ্ছে রাগে, কি করবে সে ভেবে পাচ্ছেনা, তার ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য মেয়ে এসে গল্প করবে হাসবে এইসব সে কিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা, তার ইচ্ছে করছে মেয়েটিকে এখনই তার চুল ধরে মাঠের মাঝখানে টেনে এনে গাছের সাথে বেধে লাটি দিয়ে ধুম ধারাক্কা বাড়ি দিতে, কিন্তু তারপরেও তার রাগ থামবেনা, তারপর এভাবে কত সময় মারার পর তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাবে পানির মধ্যে, পানিতে নিয়ে মেয়েটির চুল ধরে পানির নিচে নিবে আর উঠাবে, নিচে নিবে আর উঠাবে, এরপরে তার মুখ সিলাই করে দিবে যাতে তার ভালোবাসার মানুয়ের সাথে আর জীবনেও কথা বলতে না পারে, তারপর এসব করে ছেড়ে দিবে… . এগুলো তার মন চাচ্ছে করতে, দাতে দাত রেখে সহ্য করে ছুটে চললো ক্যান্টিনে, যেখানে ছেলেটি আর ঐ মেয়েটি বসে আছে। তারপর ওখানে গিয়ে…

— ঠাস…………….. (ছেলেটিকে যে মেয়েটি ভালোবাসে সে মেয়েটি ঐ মেয়েটিকে খুব জুরে চড় মেরেছে)
— নিশ্চুপ,গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে, আর পাশে সবাই দেখছে তাদের।
— এই মেয়ে তুই এখানে কি করছিস? আমি যাকে ভালোবাসি তার সাথে তুই হেসে হেসে কথা বলিস তর লজ্জা করেনা? তকে তো ইচ্ছে করছে মেরেই ফেলবো (এই বলে মেয়েটিকে মারতে শুরু করে দিয়েছে এই মেয়েটি, পরে ঐ ছেলেটি মেয়েটিকে ধরে আটকালো, তারপর এই মেয়েটি চলে আসলো) . তারপর মেয়েটি বাসায় এসেই দরজা বন্ধ করে কাদতে লাগলো, সে কত করে বুঝালো ছেলেটিকে কিন্তু ছেলেটি বুঝেই না, কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা, কিছুক্ষণ কাদার পর মেয়েটি ঘুমিয়ে পরলো। খাওয়ার সময় যখন হলো তখন তার মা এসে ডাকতে লাগলেন।

— এই উঠ তাড়াতাড়ি ভাত খাবি, উঠছিস না কেন? (মা)
— উম হুম,
— কিরে তর চোখে কি হয়েছে এত ফুলা ফুলা লাগছে কেন? ( মেয়েটির মা তার চোখ দেখে বুঝে ফেললেন তার মেয়ের কিছু একটা হয়েছে, মা মেয়ের মধ্যে খুব ভাব, তারা মা মেয়ে খুব ফ্রি মাইন্ডের, তাদের মধ্যে যা কিছু হয় তারা তাদের মাঝে সব কিছু শেয়ার করে বিনা সংকুচে)
— কিছু না মা (মেয়েটি)
— তর কিছু একটা হয়েছে, তুই এত কান্না করছিলি কেন?
— কি করবো মা, নিজের ভালোবাসার মানুষকে তো বুঝাতে পারছিনা।
— খুলে বল আমায়….।
— ………………… সব বলে দিলো মেয়েটি তার মায়ের কাছে।
— শুন এক কাজ কর….
— কি কাজ মা?
— এখন থেকে কলেজে গেলে তুই তাকে এড়িয়ে চলবি, এভাবে কয়েকদিন এড়িয়ে চলবে তাকে, দেখবি তর শুন্যতার কারনে তর ভালোবাসার মানুষ তর কাছে হেটে হেটে নয় দৌড়ে দৌড়ে আসবে।
— ঠিক আছে মা।
তারপর থেকে মেয়েটি ছেলেটিকে এড়িয়ে চলতে শুরুকরলো, কয়েকদিন এড়িয়ে চলার পর মেয়েটি দেখলো ছেলেটির মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি, তারপর আরো সাপ্তাখানিক পর মেয়েটি খুব সকাল সকাল কলেজে গেলো, কলেজে গিয়ে দেখে ঐ ছেলেটি বসে আছে তার সিটে, ছেলেটিকে দেখে মেয়েটি খুব অবাক হলো, কারন এই ছেলেটি আর কোনদিন এত সকাল কলেজে আসেনি, আর এসে বই হাতে নিয়ে পড়তে দেখেনি, তাই অবাক হলো। . তারপর আস্তে আস্তে তার সিটে গিয়ে বসলো মেয়েটি, তারপর মেয়েটি হঠাৎ দেখলো তাদের ক্লাসের দরজা জানালা আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে গেছে, এটা দেখে অবাক হওয়া থেকে সে খুব ভয় পেয়ে গেলো, দরজা জানালা বন্ধ হওয়াতে রুমটা অন্ধকার হয়ে গেছে, মেয়েটি দৌড়ে আসলো ছেলেটির কাছে, এসে ছেলেটির পাশে বসলো, মেয়েটি খুব ভয় পাচ্ছে, তারপর হঠাৎ চারিদিকে মোমবাতি জলে উঠলো, মোমবাতির কারনে রুমের সব কিছু দেখা যাচ্ছে, মেয়েটি খেয়াল করলো তার সামনে কিছু একটা রাখা আছে, তার সামনের জিনিসটার দিকে তাকাতেই সে দেখলো তার সামনে জন্মদিনের ক্যাক রাখা আছে, ক্যাকের দিকে তাকাতেই আশ পাশ থেকে আওয়াজ আসলো… হ্যাপি বার্থডে টু ইউ-হ্যাপি বার্থডে টু ইউ

মেয়েটি দেখলো তার সকল বন্ধু বান্ধবিরা এখানে উপস্থিত, তারপর তার ভালোবাসার মানুষ বলতে শুরুকরলো….
— হ্যাপি মেনি মেনি রিটার্নস অব দ্যা ডে মাহফুজা।
আমি জানি এবং বুঝি তুমি আমাকে ভালোবাসো, তুমি অনেকবার বলার চেষ্টা করেছো, কিন্তু আমাকে সরাসরি বলোনি, তোমার মুখ থেকে সরাসরি ভালোবাসার কথাটা শুনার জন্য আমি ঐ দিন ঐ ড্রামা করেছিলাম…।
— ড্রামা….? (মেয়েটি)
— হ্যা ড্রামা, ঐ দিন যে মেয়েটিকে তুমি চড় মেরেছিলে সে মেয়ে বাড়া করা ছিলো, আমি যদি ঐ দিন ঐ ড্রামা না করতাম তাহলে তোমার মুখ থেকে আমি সরাসরি ভালোবাসার কথা শুনতে পারতাম না, তারপর যথন তুমি আমাকে এড়িয়ে চলতে লাগলে তখন আমি তোমাকে আরো প্রচন্ডভাবে ভালোবাসতে লাগলাম, আমি কোনদিন কলেজে আসতাম না, আমার কোন ইচ্ছেই নেই কলেজে আসার, কিন্তু কলেজে আসতাম শুধু মাত্র তোমাকে একনজর দেখার জন্য, তোমাকে না দেখতে পেয়ে আমি থাকতে পারতাম না, তাই ছুটে আসতাম কলেজে, তারপর তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা জানাবার জন্য আমি একটা সুযোগ খুজছিলাম, তোমার বান্ধবিকে বলে আজকের এই সুযোগটা বের করলাম, জানো..! তুমি যখন আমাকে এড়িয়ে চলা শুরুকরলে তখন আমি খুব কষ্ট পেতাম আর বুঝতাম আমি যখন তোমায় পাত্তা দেয়নি তখন তোমার কি পরিমান কষ্ট হয়েছে, আর এত কষ্ট পেয়েও নিরবে থেকেছিলাম একটা সুযোগের জন্য, এই তুমি কি আমার জীবনের সঙ্গি হবে…! খুব ভালোবাসি যে তোমায়….।
— তারপর মেয়েটি চোখের পানি মুছে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটিকে
অভিনয়েঃ ছেলেটির নাম আবিদ আর মেয়েটির নাম মাহফুজা

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত