দুজন দুজনের

দুজন দুজনের

বাসর রাতে মোহনা কে স্পর্শ করে আমার ভিতরটা আতংকে শুকিয়ে গেল। এত্ত ঠান্ডা মানুষের শরীর হয়? জানিনা আমি। কিন্তু মোহনা আমাকে টেনে নিল। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। সকালে উঠে দেখি মোহনা আমার পাশে নেই। মেয়েটা বড়ই অদ্ভুত। দেখি রান্না করছে। ওর রান্না গুলোউ অদ্ভুত। খেতে কেমন একটা অদ্ভুত টেস্ট। উফ ভাল লাগছে না। আমি বেশি একটা খেতে পারলাম না। শরীরটাও আজ আর ভাল লাগছে না । কি যে হল। আমি আবার শুলাম। ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম। মোহনা আমার ঘাড়ে মুখ দিয়ে আমার রক্ত চুষে নিচ্ছে। আর আমি কাতরাচ্ছি মোহনা ছাড়ছেনা। ধাক্কিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম সরাতে পারছিনা। মোহনার শরীরে ওজন যেনো কয়েক টন। ও আমার শরীর থেকে উঠল। ওর দাত রক্তে লেপ্টে আছে। এই দৃশ্য দেখে আমি চিৎকার করে উঠলাম। ওহ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম? আমার সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে। অইঘর থেকে মোহনা ছুটে এল।

-কী হল তোমার? এভাবে চেচাচ্ছ কেন?
স্বপ্ন দেখে চেঁচাচ্ছি এটা কীভাবে বলব? সেই বয়স কি এখনো আমার আছে?
-কিছুনা।

মোহনার দিকে তাকালাম। কালো রঙের একটা শারি পরেছে। কালো রঙটা অকে একটু বেশি ই মানায়। মোহনা অতিরিক্ত বেশি সুন্দরী। ও এত্ত সুন্দর যে যেকোনো ছেলে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়বে। আমিও পড়েছি তাই ত বিয়ে করে এনেছি। ভাবছি আজ সারাদিন ঘুরব। বিভিন্ন আত্মীয়দের বাসায় যাব। সবাইকে ত আমার বউ দেখাতে হবে তাইনা? আসলে বিয়েটা হঠাৎ ই হয়। তাই কোনো আত্মীয়কে দাওয়াত করা হয়নি। আমি মোহনার মত সুন্দরী মেয়ে কে হাতছাড়া করতে চাচ্ছিলাম না। তাই এত্ত তাড়াহুড়ো করে বিয়ে।

মোহনাকে বললাম
-রেডি হও আত্মীয়র বাসায় যাব।
-রাতে যাই?
-রাতে কেন?
-আমার সূর্যের আলোয় এলার্জি আছে।
সূর্যের আলোয় ও যে কারো এলার্জি থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না।হয়ত সূর্যের আলোয় যায়না জন্যই এত সুন্দরী।
সন্ধার পর আমি আর মোহনা বের হলাম। একটা রিক্সা নিলাম। কিন্তু রিক্সাওয়ালা ভাইয়া জোয়ান হওয়া সত্বেও কিছুতেই রিক্সাটা টানতে পারতেছিল না।
ভাবলাম উনি হয়ত অসুস্থ। আমি মোহনাকে বললাম অন্য একটা রিক্সা নেই। মোহনা বলল
-নতুন বউকে রিক্সায় ঘুরাবা?
-আচ্ছা ট্যাক্সি নেই?
-ঠিকাছে।
আমরা একটা ট্যক্সি ভারা করলাম। রাতের নিস্তব্দতা ভেদ করে আমাদের ট্যাক্সি এগিয়ে যাচ্ছে।
আমি নিরবতা ভেঙে মোহনাকে জিজ্ঞেস করলাম
-আচ্ছা মোহনা তোমার শরীর এত ঠান্ডা থাকে কেন?
-হাহা কি বল আকাশ। আমায় তোমার ঠান্ডা লাগে? দুনিয়ার মানুষ ত আমায় হট বলে।
কেন তোমার মনে হয়না আমি হট?
সামনে থেকে ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল
-ম্যাম আপনি অনেক হট। আপনার হাসব্যান্ড এর চোখ টেরা।
-ইউউউ ব্লাডি ইডিয়ট।
আমি গালি দিয়ে বসলাম। কিন্তু গালি দিয়েই বা লাভ কি? আমার বউ যেখানে নিজেই নিজেকে এমন মন্তব্য করল আমি সেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভার কে কি বলব।

-দেখুন ভাই গালি দিবেন না। আমার ট্যাক্সি তে বসে আপনি আমায় গালি দেন? আপনার এত সাহস? সাথে,,,,,,,,,,,,,, নিয়ে ঘুরেন আবার ইংলিশ এ গালি ঝারেন?নামেন আমার গাড়ি থেকে আর এতই যখন ঠান্ডা লাগে আমারে দিয়ে যান। আমি গরম লাগলে শরীর ঠান্ডা করতে ব্যবহার করব।
চুড়ান্ত অশ্লীলতা রাগে আমার শরীর কাঁপছে।
-You scoundrel
কলার ধরে দিলাম থাপ্পড় ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে গেছি। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম ড্রাইভার টাকে। তারপর মোহনার হাত ধরে হাটা দিলাম।
-তুমি নিজেকে হট বল্লা কেন? কি বল এইসব? এসব কি কেও বলে? বলবানা আর কখনো। তুমি আমার বউ। তোমার মান আছে সম্মান আছে। এসব বলে নিজের মানসম্মান নষট কর না। আর একটু ঠান্ডা না হয় বলছি ই ত কি হয়েছে? আর বলব না। সরি বউটা।

আমার কথা বলার সময় হাত নাড়ানোর অভ্যাস আছে। হাত নাড়াতে গিয়ে কখন যে মোহনার হাত ছেড়ে দিয়েছি জানিনা। পাশে তাকিয়ে দেখি মোহনা নেই। আমি মোহনাকে খুজা শুরু করলাম কিছুক্ষণ পর মনে হল ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয় একটা ছায়া বিধঘুটে কালো ছায়া। সেটা যেন আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। অনেক্ষণ পর বুঝতে পারলেম অইটা আসলে মোহনা ছিল।
-কই গেছিলে?
-যে জোড়ে হাটো পিছিয়ে পড়ছিলাম। চল বাসায় যাই।
হাটতে হাটতে বাসায় আসার সময় আমার বার বার মনে হচ্ছিল কালো ছায়াটা যেন আমার পিছনে আসছে।

পরদিন সকালে উঠে খবরে দেখলাম হাইওয়ের পাশে সেই ট্যাক্সিড্রাইভার টার লাশ পাওয়া গেছে যে ট্যাক্সিতে আমরা ছিলাম। কীভাবে খুন করা হয়েছে জানা যায়নি । গলার কাছে দুটো ছিদ্র পাওয়া গেছে আর শরীর রক্তশূন্য ফ্যাকাসে। দেখেই ভয় পেয়ে গেলাম চোখ গুলো এখনো খোলা হাতের আঙুল গুলো হাইওয়ের দিকে তাক করানো।
মোহনা আমার জন্য চা বানিয়ে আনলো।
-মোহনা।
-বল।
-কাল রাতে যে ট্যাক্সি নিয়েছিলাম তার ড্রাইভারের লাশ পাওয়া গেছে।
-ও।
-তোমার চিন্তা হচ্ছেনা?
-চিন্তা করব কেন?
-কাল রাতে ড্রাইভারের লাস্ট যাত্রী আমরা ই ছিলাম। পুলিশ এসে ত আমাদের ই ধরবে।
-চিন্তা করনা পুলিশ আসবেনা।
-এতো শিওর কীভাবে হচ্ছ?
-তুমি জেনে কি করবে শুধু চিন্তা করনা।

আমি মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলাম যে পুলিশ আসবে আমায় এরেস্ট করে নিয়ে যাবে এইরকম কিছু। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করার পর ও পুলিশ এলনা আর আমি আস্তে আস্তে ব্যাপারটা ভুলে গেলাম।
এরমধ্যে আমি অফিস যাওয়া শুরু করলাম। রেগুলার অফিস করতাম। আমার প্রচুর ঘুম হত। মোহনাকে খুব একটা সময় দেয়া হতনা। সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে খেয়ে অফিস চলে যেতাম। আসতে আসতে রাত আটটা বাজত। ক্লান্ত পরিস্রান্ত হয়ে যখন বাড়ি ফিরতাম ফ্রেস হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম । মোট কথা মোহনাকে কোনোভাবেই সময় দেয়া হচ্ছিল না।
শুক্রবার করে ওকে বিকালে হাটতে নিয়ে যেতে চাইতাম ও রাজি হতনা। আর অইদিনের বিভৎস রাতের পর আমার আর রাতে বের হওয়ার সাহস ছিল না।

একদিন হঠাৎ আমি অফিসে পরে গেলামম। অনেকটা অজ্ঞান হওয়ার মত। আমাকে হসপিটাল এ এডমিট করা হল। মোহনা সন্ধার পরে এল। ডাক্তাররা বিভিন্ন টেস্ট করে জানালো আমার তেমন কোনো রোগ নেই কিন্তু শরীর এর রক্ত অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে। রক্তশূন্যতা হিমগ্লোবিন এর অভাব দেখা দিয়েছে। ইভেন আমায় কয়েক ব্যাগ রক্ত নিতেও হল। মোটামুটি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলাম। মোহনা সারাদিন একা একা থাকছে। আমার বউ আমি সময় দিতে পারছিনা জন্য আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছিল। তাই মোহনার জন্য একটা আয়া রেখে দিলাম। গ্রামে আমার বৃদ্ধ মা আর ছোট বোন থাকত। ওদের ও নিয়ে এলাম। মা বিছানায় পরেছেন। কিন্তু উনাকে নিয়ে আসা ছাড়া মোহনার একাকিত্ব দূর করার আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। তাছাড়া মা এর দেখাশোনা ছোট বোন ই করবে। আর মোহনার কথা বলার মানুষ ও পাওয়া গেল।

বিয়ের এতদিন হয়ে গেছে আজ অবধি মোহনা আমার কাছে কিছুই চায়নি। আজ হঠাৎ মোহনা বলল
-এই শুনছ?
-বল।
-আমাকে একটা জিনিস এনে দিবা।
আমি খুশি হলাম। মোহনা হয়ত আমার সাথে ইজি হওয়া শুরু করেছে।
-তোমার কি চাই বল?
-কালো বিড়াল।
কালো বিড়াল ও যে কারো চাওয়া হতে পারে আমার জানা ছিল না।
-প্লিজ প্লিজ প্লিজ একটা কিউট চেয়ে কালো বিড়ালের বাচ্চা এনে দিও।
অনেক খুজে আমি একটা কালো বিড়ালের বাচ্চা এনে দিলাম। আমার মা আদিম যুগের মানুষ ছিলেন তার এসব পছন্দ হল না। বিছানা থেকেও উঠতে না পারলেও তিনি বিড়ালছানা টাকে দূর করার জন্য উঠে পরে লাগলেন। আমার বোনের নাম টুম্পা। ক্লাস সেভেন এ পড়ে। সে ই আমার মা এর দেখাশোনা করে।
মোহনার জন্য মা আর টুম্পাকে এনে কোনো লাভ ই হয়নি। এখনো মোহনা একা ই থাকছে।

সেদিন অফিসের পর বাসায় এসে শুনি কালো বিড়ালটা মা এর পা এ কামড়ে দিয়েছে। মা চিৎকার করে কান্নাকাটি করে বলছে বিড়ালটা আমার সব রক্ত শুষে খেল রে ওরে আমার আকাশরে।

ঢাকা সহরে এরকম বিলাপ আগে কখনো কেও শুনেছে কিনা জানিনা। টুম্পা এসে বলল বিড়ালটা নাকি মা এর পা অনেক্ষণ কামড় দিয়ে ছিল। আমি পা দেখলাম দুইটা দাগ অখানে। একদম পা এর শিরার মধ্যে। আমি ভাবলাম কো ইন্সিডেন্ট। মা কে ইঞ্জেকশন দেয়ালাম। মোহনা তবু বিড়ালটাকে ছাড়েনি।

একদিন বাসায় এসে শুনি। মা টুম্পার হাতে বিড়ালটাকে ছাদে পাঠিয়ে সেখান থেকে ফেলে দিয়েছে। ততক্ষনাৎ মৃত্যু। ৫ তালার উপর থেকে মানুষ পড়ে গেলেই বাঁচে না। আর বিড়াল।
মোহনা মাকে কিছু বলেনি শুধু দরজা বনন্ধ করে কান্নাকাটি করেছে। এখনো কাঁদতেই আছে। আমি ওকে বুঝালাম যে আরো বিড়াল এনে দিব। ও তবুও কাঁদে।

মোহনা পুরো সাতদিন বাড়িতে বিড়ালের শোক পালন করল। হঠাৎ করেই বাড়ির অনেক কিছুই যেনো পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তন সূক্ষ আমি বুঝতে পারছিনা। মা এখন হঠাৎ ই হাটতে পারছেন। আমার খুব ভাল লাগছে। কিন্তু সুখ বেশিদিন সয়না।
মা একদিন আমায় এসে বললেন
-খোকা এই বাসায় কি আগে কেও মারা গেছে নাকি জিনের আছর আছে।
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-কেন মা?
-আমি ত রোজ কালো ছায়া দেখি। ছায়াটা আমার সাথে গল্প করে।
আমি আশ্চর্য হয়ে মা এর দিকে তাকালাম। এমন হওয়া সম্ভব নয় আর যদি হয় ও এটা ত ভয় এর কথা। মা এত স্বাভাবিক ভাবে বলছে কেন?
-জানিস ছায়াটা আমার পা ঠিক করে দিয়েছে। ছায়াটা বলেছে অই বিড়ালটাকেও এনে দিবে। আহারে আমার অমন করা ঠিক হয়নি বৌমার কত্ত স্বাধের বিড়াল।
আমাকে এইসব কথা বলার পরের দিন আমার মা মারা গেলেন। শরীর ফ্যাকাসে রক্তশূন্য আর ঘারে দুটো দাগ ঠিক ধমনী বরাবর। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মা এর মৃত্যু আমাকে ভীষণ শোক দিল।
শুধু টুম্পাটা একা হয়ে গেল।

আমার মোহনা এখন অন্তঃসত্ত্বা। আমি যে কি খুশি হয়েছি এইটা আমার প্রথম বাচ্চা। ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে কে জানে। তবে ছেলে মেয়ে যা ই হোক আমার জন্য ভাল। আমি মোহনা কে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাইনি। হঠাৎ ও নিজেই এসে বলল ও মা হতে যাচ্ছে। আমি এত খুশি হয়েছি যে সারা অফিসে মিষ্টি বিতরন করেছি। আমার খুব ভাল লাগছে। এখন মোহনার কেয়ার টুম্পাই নেয়। আমি যতক্ষণ না থাকি ছায়ার মত টুম্পা মোহনার সাথে থাকে।

মোহনার চার মাস রানিং। আমি ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাই ও আমার সাথে যায়না। বলে তোমার অফিসে সমস্যা হবে। আমিও ভাবি আমার বউটা কত্ত লক্ষি। ও সন্ধা সময় মাঝেমাঝে টুম্পা কে নিয়ে কোনো এক হসপিটাল এ গিয়ে চেকাপ করে আসে। টুম্পা ইদানিং কেমন যেনো হয়ে গেছে। আগের উচ্ছলতা মেয়েটার মধ্যে নেই। মেয়েটা আমার কথা শুনে না বুঝিনা ও কীভাবে এমন হয়ে গেল। সব কথার উত্তর। হুম আচ্ছা ঠিকাছে তে দেয়। ওর চেহারা দিন দিন রক্তশূন্য আর ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। মুখের দিকে তাকানো যায়না। আমার স্বাস্থবতী বোনটা হঠাৎ ই শুকিয়ে কাঠ হওয়া শুরু করছে।

সেদিন টুম্পা এসে হঠাৎ আমায় বলে
-ভাইয়া আমি আর এই বাড়িতে থাকবনা।
-কিন্তু তুই ত জানিস তোর ভাবির সাত মাস যাচ্ছে এই অবস্থায় তোর এখান থেকে চলে গেলেওওকে দেখবে কে?
-ভাইয়া প্লিজ আমায় গ্রামে চাচার বাসায় রেখে এস। এখানে থাকলে আমি বাঁচব না।
-আরে পাগলি এসব কি বলিস? এখানে এমন কি হল যে তুই এভাবে বলছিস? আমি কি তোকে কোনো অযত্নে রাখছি? মোহনা কি তোকে কিছু বলেছে? বল ও কি বলেছে তোকে।

-না ভাইয়া। ভাবী আমায় কিছু বলে নি। শুধু আমি এখানে থাকব না। আমার অনেক ভয় করে। আমি অই বিড়ালটার ছায়া দেখি। একদম কালো কুঁচকুচে ছায়া। আর মা কেও দেখি। মা ও ছায়া হয়ে আসে। আর কি কি যেনো বিরবির করে শুধু একটা কথা ই বুঝা যায় টুম্পা তুই এখানে থাকিস না। ভাইয় প্লিজজ একটু বুঝো আমি আর এখানে থাকতে পারবনা। আমায় চাচার বাসায় রেখে এস।

আমার মনে হচ্ছে টুম্পা নাটক করতেছে। মোহনা অসুস্থ তাই মোহনার একটু ফাই ফরমাইস ওকে খাটতেই হয়। তাই বলে এইভাবে নাটক করতে হবে?
-দেখ মোহনার ডেলিভারি হওয়া অবধি তোকে এই বাড়িতেই থাকতে হবে। ব্যাস এই বিষয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা। ওর ডেলিভারি হওয়ার পর তুই যেখানে ইচ্ছে সেখানে চলে যাস।

টুম্পা কাঁদতে কাঁদতে অন্য ঘরে চলে গেল। আহারে বোনটাকে দেখে আমার মায়াই হচ্ছে। হঠাৎ আমার একটা কথা মনে পরে গেল। মা মার যাওয়ার আগেও আমায় বলেছিলেন ছায়া দেখতেপান। টুম্পাও বলল ও ছায়া দেখছে। আচ্ছা ও কি সত্যি ছায়া দেখছে নাকি মা ওকেও বলেছিল ছায়ার কথা। এই বাড়ি থেকে মুক্তির জন্য মা এর কথার মত কথাই বানিয়ে বলছে? কে জানে।

কোনো এক অদ্ভুত কারণে আমাদের বাসায় একমাসের উপরে কোবো কাজের মহিলা থাকেনা। আর যে সুস্থ স্বাভাবিক কাজের মহিলা বাড়িতে আসে সে যাওয়ার সময় অসুস্থ ফেকাসে রক্তশূন্য অবস্থায় বিদায় নেয়। কাজের মহিলাও এখন দূষপ্রাপ্য হয়ে গেছে।

মোহনার আট মাস চলছে। এমন সময় আমার বোনটা বাড়ি থেকে পালালো। পালালো বলছি কারণ ও চিঠি লিখে গেছে।
‘ভাইয়া
তোর বাড়িতে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। মা এর শেষ স্মৃতিটুকু নিয়ে আমি এখান থেকে যাচ্ছি। আর শুন যেহেতু আমি চলেই যাচ্ছি তোকে একটা কথা বলে যাই। ভাবী কোনো স্বাভাবিক মানুষ না। ভাবি কথা বলতে বলতেই কয়েক হাত দূরে থেকেই মানুষের রক্ত খেয়ে ফেলতে পারে। ভাবীর থেকে সাবধানে থাকিস। আর ভাবীর বাচ্চাটাও স্বাভাবিক হবে না। কারণ ভাবী কোনো হসপিটাল এ যেত না। একটা পুরানো বাড়িতে যেত। আমায় বাইরে বসিয়ে রেখে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যেত। একদিন আমিও লুকিয়ে ভিতরে ঢুকি। ভাবীর বাচ্চা হবে ভ্যাম্পায়ার দের রাজা। সে চোখ দিয়েই মানুষের রক্ত পান করতে পারবে ভাবী যেমন পারে। ভাবী চাইললে দাঁত ও ব্যবহার করতে পারে। যাদের প্রতি তার আক্রোশ বেশি থাকে তাদের উপর ভাবী দাঁত ব্যবহার করে। আর ছায়া গুলা আমি দেখি সেগুলো ভাবি যাদের খেয়েছে তাদের ছায়া। আমার মনে হইছিল বিড়াল টাকে আমি মেরেছি। আসলে বিড়ালটার রক্ত ত আগেই ভাবি খেয়েছিল। আমি শুধু ওটার বড়িটা ফেলে দেই। আমি জানিনা তুই আমার কথা গুলা বিশ্বাস করবি কিনা। কিন্তু ভাই তুইই ত আমার মা এর পেটের ভাই তাই বলছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুই পালিয়ে যা প্লিজ। এছাড়া তোর প্রাণ বাচানোর আর কোন উপায় নেই। আর বাচ্চাটাকে মেরে ফেল।
ইতি
টুম্পা

টুম্পার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে আমার বোনটা পাগল হয়ে গেছে। ইশ এই যুগেও ভ্যাম্পায়ার বলতে কিছু হয় নাকি। নিশ্চই এটা বেশি গল্পের বই পরার ফলে হয়েছে অরে ছোট বেলা থেকে এত্ত এত্ত গল্পের বই কিনে দেওয়াই আমার ভুল হয়েছে।
আমি টুম্পাকে খুজতে বের হলাম। এই বিশাল সহরে কোথায় খুজব আমার বোনকে? কোথাও পেলাম না। ওর সব ফ্রেন্ডস আর আত্মিয়কে জিজ্ঞেস করে ওকে না পেয়ে যখন হতাস হয়ে গেলাম তখন আমি থানায় জিডি করে বাসায় আসলাম।

টুম্পার লাশটা একটা পুরোনো বাড়িতে পরে আছে। তার গলায় দুটো দাগ। দাঁত বসিয়ে দিয়েছে কেও। শরীরের সমস্ত রক্ত শুষে নিয়েছে কেও। মুখ রক্তশুন্য আর ফ্যাকাসে। আস্তে আস্তে কিছুদিন এর মাঝেই টুম্পার লাশটা একটা কংকালে পরিণত হয়।
আজ মোহনার ডেলিভারি হচ্ছে। ওর মুখ হাসি হাসি। ডক্টর রা কেও ওর পালস পাচ্ছেন না। সবাই চিন্তায় অস্থির। ইভেন অর হাতে যে স্যালাইন পুস করবে তার জন্য রক্তবালী ও খুজে পাচ্চে না। মোহনা আমায় ডাকল।
-আকাশ শুনো।
-বল।
-আমি মারা যাব। আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। আমার ছেলেকে দেখো।
আমার ছেলের নাম দিবে আমার নামের সাথে মিলিয়ে।
-কি বলছ এসব মারা যাবে মানে।আর আমাদের ছেলে হবে তুমি আগে থেকে কীভাবে জানলা।
-হেহে আমি জানি।
মোহনা কে অপারেশন থিয়েটার এ নিয়ে যাওয়া হল ওর সিজার করা হবে। কিন্তু সিজার করার আগেই নর্মাল এ বাবু হয়ে গেল। আর আমার মোহনা মারা গেল। মোহনার সুন্দর মুখটা হাসিমাখা হয়ে চিরদিন আমার মনের ভেতর বন্দি হয়ে রইল।

আমি আমার বাবুকে নিয়ে বাসায় এলাম।বাবুর নাম রাখব মোহন। নাম রাখার আহে আকিকা করব। তার আগে আমায় একটা কাজের মহিলা খুজতে হবে। এক ই সাথে বাবু আর অফিস সামলানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই আমি কাজের মহিলা খুজা শুরু করলাম। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না। তখন ভাবলাম আমি অফিসের কাজ গুলো বাড়িতে বসেই করব। যেই ভাবা সেই কাজ। ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ বাড়িতে করা শুরু করলাম। বাবুর সাথে আমার ভালোই সময় কাটতে লাগল।
এর মধ্যেই একদিন অফিসের এক মেয়ে কলিগ বাসায় এল। নাম রুপা। রুপা আমায় পছন্দ করত। সে আমার জন্য রান্না করল। বাবুকে কুলে নিল। কিন্তু বাবু কিছুতেই তার কুলে যায়না। আমার শান্ত বাবুটা অনেক কান্নাকাটি করল। রুপা অই দিনের মত চলে গেল।

আমি ভাবলাম এত কষ্ট করার চেয়ে রুপাকে বিয়ে করব। বাবু তখন আধো আধো কথা বলে। বাবা মা টুকটাক।
আমি রুপাকে বিয়ে করে আনলাম।

আমি অফিস যাওয়া শুরু করলাম। রুপা বাবু আর বাসার দেখাশোনা করে।
কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই বিপত্তি শুরু হল। রুপা বাবুর ভালই যত্ন করত। কিন্তু বাবু কিছুতেই রুপার কুলে যাবেনা। অনেক কান্নাকাটি করে বাবু। আরবকটা সমস্যা হল। রুপা কিছুদিন থেকেই ছায়া দেখতে পায়। এইবার সত্যি আমার ভয় হতে থাকল। টুম্পার কথা গুলা মনে হচ্ছে। আর আমি ভয়ে সিটিয়ে উঠতেছি। আমার ভয় আরো বাড়ল যখন রুপা বলল তোমার এই ছেলেকে নিলে আমার মাথা ঘুরে দূর্বল লাগে। আমি ভাবি এই মেয়েটা এত আধুনিক হয়ে এসব কি বলে।

একদিন আমি অফিস থেকে দেড়িতে বাসায় ফিরেছি। এসে দেখি বাসার সব লাইট অফ। আমার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি ছিল। সেটা দিয়ে দরজা খুলে দেখি রুপা বাবুকে নিয়ে সোফায় বসে আছে। বাবু রুপার কুলে বাবুর মুখ রুপার ঘাড়ে রুপার চোখ খুলা।
-এই রুপা এই।
-রুপা কোনো কথা বলছেনা। বাবু আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি ওর মুখে পরিষ্কার রক্ত দেখতে পারলামম। ভয়ে আমার ভেতরটা শুকিয়ে গেল। রুপার কোল থেকে বাবুকে নিয়ে রুপার ঘাড়ের চুল সরিয়ে দেখি সেখানে পরিষ্কার দুটো দাঁতের দাগ।
বাবুর দিকে তাকালাম। সে সদ্য গজানো রক্তমাখা দাঁত নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
রুপার রক্তশূন্য ফেকাসে শরীরটা মুহুর্তেই সোফা থেকে গড়িয়ে পরল।
আমার কোল থেকে আচমকাই বাবু পড়ে গেল। কিন্তু সে পড়ল না শূন্যে ভেসে রইল। আমি দিক্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পরেছি। একটা লোহার রড ছিল অইটা দিয়ে বাবুর মাথায় মারার ছেষ্টা করলাম। কিন্তু আমি অসফল। বাবু ভেসে ভেসে আমার কুলের কাছে এসে বলল,,,
-বাবাই তুমি এত পঁচা। আমি তোমায় কত্ত ভালবাসি আর তুমি আমায় মারতে চাও?
বলেই সে আমার ঘাড়ে মাথা রাখল। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে আমি ভাবছিলাম ৯ মাসের শিশু এত গুছিয়ে কীভাবে কথা বলে।

বাবা মা এর অস্বাভাবিক মৃত্যু শিশু মোহন অনাথ। পরেরদিন কাগজের হেডলাইন বের হল। এক নিঃসন্তান দম্পতি শিশু মোহনকে adopt করল।
তারা বুঝতে পারছেনা তাদের ওজন আস্তে আস্তে কীভাবে কমছে। এবং তাদের রক্তশূন্যতা কেন হচ্ছে!

#সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত