রিয়া রিকশার এক পাশে সরে গিয়ে আমার জন্য জায়গা করে দিয়ে বলল,
-উঠে আয়!
আমি কি করবো ভেবে পেলাম না।। এক বার মনে হলো একটা দৌড় দেই। এক দৌড়ে সোজা বাসায়।
রিয়া আবার বলল,
-কি হল? উঠে আয়!
এবার যেন একটু রেগেই বলল! আমি আর দেরী করলাম না,রিকশায় উঠে গেলাম। কি হবে পরে দেখা যাবে?রিয়া হায়েস্ট কি করবে দুইটা থাপ্পড় মারবে, ওর থাপ্পড় আগেও অনেক খেয়েছি! তবে এবারের থাপ্পড়ের কারণ টা অন্য হবে তাই একটু সমস্যা! রিকশায় উঠে যতটা সম্ভব গা বাঁচালাম যেন রিয়ার সাথে সামান্য একটুও না লাগে! রিয়া ব্যাপার টা বেশ ভাল।ভাবেই লক্ষ্য করলো! রিকশা চলা শুরু করতেই রিয়া জিজ্ঞেস করল,
-কেমন আছিস?
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। ওকে দেখে খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।যেন কোন কিছুই হয়নি। ওর ঠোঁটের দিকেও আমার চোখ পড়ল।হালকা লাল লিপস্টিক দেয়া কমলার কোয়ার মত ঠোঁট। আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,
-ভাল,
-কেমন ভাল?
-মানে? রিয়া একটু চুপ থেকে আবার শুরু করল,
-দুইদিন ধরে কোন খবর নাই,
-না আসলে
-আসলে কি?
আমি আবার রিয়ার দিকে তাকালাম।ওর মুখে আবার রাগ দেখা যাচ্ছে। ও যদি এখন আমাকে একটা থাপ্পড় ও মারে আমি কিছু বলব না,খুশিই হবো। আমার চুপ করে থাকা দেখে ও আবার বলল,
-সেদিন মজা পাইছিস!
ওর কথা টা আমার কানে ধাক্কার মত খেলো। এরকম কিছু ও বলবে ভাবিনি। সেদিনের ব্যাপার টা একটা এক্সিডেন্টই ছিল। ঘটনা দিন তিনেক আগের, রিয়া আর আমি এক সাথে রিকশায় করে ক্যাম্পাস থেকে ফিরছিলাম। বৃষ্টিও হচ্ছিল বেশ। রিকশায় দুজন প্লাস্টিকের নিচে একটু চেপে বসেছিলাম যেন গায়ে বৃষ্টি না লাগে। ব্যাপার টা তখনি হয়ে যায়। রিয়ার ভেজা ঠোঁটে একটা চুমু খাই।
আমি যে এই কাজটা করবো নিজেও ভাবিনি!ঘটনাটা হুট করেই ঘটে গেছে। রিকশায় সেদিন কেউ কোন কথাও বলিনি। রিয়ার বাসা আসাতে ও নেমে গেছে। নিজের প্রতি একটা খারাপ লাগা জন্ম নিয়েছিল,জন্ম নিয়েছিল অনুশোচনাও।স্যরি বলার চিন্তাও করেছিলাম কিন্তু কেন জানি ওর সাথে কথা বলতেও খারাপ লাগছিল।ক্যাম্পাসেও আসিনি এ কদিন, ও নিজেও আমাকে কোন ফোন দেয়নি,আমিও দেইনি! তবে আজকে টিউটোরিয়াল ছিল তাই আসা। এসেই ওর সামনেই পড়া! যদিও ওর সামনে আসতেই হতো,তবে ওর এমন আচরণ মোটেও আশা করিনি! আমি আস্তে করে বলল,
-আই এম স্যরি!
-কি বললি?
-বলতেছি যে, তুমি চাইলে আমরা বিয়ে করতে পারি
-কি করবি? বিয়ে!
-হুম,
-একটা চুমুর কারণে?প্রায়শ্চিত্ত করবি?
-প্রায়শ্চিত্ত না, অনেক আগে থেকেই আমি তোমাকে ভালবাসি আসলে! তাই ডাইরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিলাম!
-তিন দিন ধরে এই ভেবে বের করছিস!
-হ্যাঁ, তোমার যদি ইচ্ছা থাকে!
রিয়া কি যেন বলতে চেয়েছিল, সেটা বলতে গিয়ে চুপ করে গেল তবে সেটা না বলে সাথে সাথে বলল,
-দারা আগে বল তুই আমাকে তুমি তুমি করে কেন বলছিস?
-বিয়ের পর তো ডাকতেই হবে?
-তোকে কে বিয়ে করবে? এক ক্লাসে পড়লেও আমি তোর চাইতে বেশি ম্যাচিউর!
-ওহ! চুমু খাওয়ার সময় তো মনে হয়নি! রিয়া হেসে উঠল! হাসি মুখেই বলল,
-তুই তো বড় হয়ে গেছিস! আরেক টা চুমু খাবি!
আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও কি বলতে বা বোঝাতে চাইছে কিছুই বুঝছিনা। নিজেকে এখনো ছোটই লাগছে, বড় হলে নিশ্চয় বুঝতাম! আর এক সাথে পড়লে এই সমস্যা মেয়ে গুলো নিজেকে আন্টি ভাবতে শুরু করে!তাদের নজর ও থাকে বড় ভাইদের দিকে! ক্লাসের কোন তার ছেলে মরে গেলেও তা দেখবেও না। আমি মুখ ঘুরিয়েছি কিছু ববলার জন্য তখনি আমাকে অবাক করে দিয়ে রিয়া আমার ঠোঁটে আরেকটা চুমু খেয়ে বলল,
-কবে বিয়ে করবি,বললি না যে! এখনি করবি?
-এখনি বিয়ে করে খাওয়াবো কি?
-কেন এই যে এখন কার মতো চুমু খাওয়াবি!
এটুকু বলে রিয়া আবার হেসে উঠলো। আগের চাইতে জোরে! ও মজা করছে নাকি বোঝা যাচ্ছেনা! আমি চুপ করেই ছিলাম এতক্ষন। ও একাই হেসে যাচ্ছিল। কিছুক্ষন বাদে যখন ওর বাসা চলে আসলো,তখন ও রিকশা থেকে নেমে বলল,
-তোর ফেবুর পাসওয়ার্ড আমারে দিবি,আর তানিয়া নামের মেয়েটার সাথে আরেক দিন হেসে হেসে কথা বলতে দেখলে তোর ঠ্যাঙ ভাংবো!
-আচ্ছা, বলব না আর”
-আর শোন! তুমি বলতে একটু সময় লাগবে, হুট করে হবেনা!
-ঠিকাছে সমস্যা নাই!
রিয়া চলে যেতেই আমি সবুজ ভাইকে ফোন দিলাম। ওনার প্লান টা যে এভাবে কাজে লেগে ভাবিনি। তবে চুমুর ব্যাপার টা অনেক সাহসীকতার কাজ ছিল। তবে রিয়া যে এত দ্রুত পটে যাবে ভাবিনি, হয়ত ও আগে থেকেই পছন্দ করতো ঠিক আমি যেমন ওকে করতাম! তবে সবচাইতে আশ্চর্যর ব্যাপার ছিল রিয়ার আজকের চুমু! এই মেয়ে আমার চাইতেও বেশি সাহসী! আমি ওকে একটা চুমু খাওয়ার ক্ষেত্রে সময় নিয়েছি দুই মাস,ও দুই মিনিট ও ভাবেনি! সব ভালোই,তবে সবচাইতে ভাল হবে ও যখন আমাকে তুমি করে ডাকবে! না ডাকলেও মনে হয়না খুব একটা সমস্যা হবে। তবে আমার তানিয়ার জন্য আফসোস হলো, মেয়েটা বেশ সুন্দর ছিল! মিস করবো তানিয়াকে!